ফিল্ম ও মিডিয়া
রূপবান কি পেলো?
হাজার দর্শক মন মজাইয়া
নাচে গো সুন্দরী কমলা!
প্রেমিক পুরুষ আর রহিম মিয়া
রুপবানে নাচে কোমর দুলাইয়া!
যদিও বাংলা গানের জগতে এটা একটা খ্যাতনামা অশ্লীল গান, তথাপি গানটা কিন্তু রুপবান বা তথাকথিত রূপবানদের অবস্থান জানিয়ে দেয়। এই সুন্দরী কমলারা হাজার দর্শকের মনকে জিতে নিতে পারে, সাময়িক ফ্রি বিনোদন ও দেয়। ঠিক যেমন একটা মজাদার খাবার আপনাকে আনন্দ দেয়, একটা চমৎকার পোশাক আপনাকে আনন্দ দেয়, ঠিক তেমনি এইসব সুন্দরী কমলাদের নাচ ও মানুষকে আনন্দ দেয়। সুন্দরী কমলারা কিন্তু আনন্দ পায়না। তাদের এই পেশায় আসার পেছনে কাহিনী, বঞ্চনা কিছুই দর্শক জানতে ও পারেনা।
এ ক্ষেত্রে তারা অবজেক্ট। সাবজেক্টের লক্ষ্য পূরণই তাদের কাজ।
সারা পৃথিবীর মেয়েদের মতোই বাংলাদেশের লাক্স সুন্দরীরা ও শরীর নিয়ে লজ্জিত নয়। অকপটে শরীর নামক স্রষ্টা প্রদত্ত জিনিষ দিয়ে বাণিজ্য করছেন, আর জাগিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন মানুষের পাশবিকতা।
এই তো গতকালই খবর পড়লাম- ঘুমন্ত দাদীর শ্লীলতাহানির দৃশ্য দেখে ফেলায় ২ নাতিকে জবাই করে খু... করা হয়েছে।
আরও একটা উদাহরণ দেই! গত রমজানে একা পেয়ে শবে বরাতের রাতে ১৭ মাসের ফুটফুটে কন্যাকে রেইপ করেছিলো এক নরপশু।
আপনারা যে মানুষ থেকে পণ্য হচ্ছেন, সেটা শুধু আপনারা নিজেরা হচ্ছেন না!
অপার সুষমা আর সৌন্দর্যে ঘেরা আপামর নারী সমাজকেও সেই কাতারে নামিয়ে এনেছেন আপনারা। যার কারনে ১৭ মাস থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধার প্রতিও লালসার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে।
জেফ কলিন্স নামক এক মিডিয়া আইকন রাশিয়ায় গিয়েছিলেন প্লে বয় পত্রিকার মডেল সংগ্রহ করতে। তার অডিশনে লাইন দিয়েছিলো শত শত রুশ রমণী। যারা একসময় কারখানায় কাজ করে নিজের মেধা ও যোগ্যতার পরিচয় দিতো তারাও নিজের শরীরকে প্রলোভনের বস্তু বানাতে মরিয়া হয়ে উঠলো!
ফলশ্রুতিতে মস্কোর বাজারে বাজারে অলিতে গলিতে পর্ণ মুভির স্থুপ জমে উঠলো।
গৃহের কোণ থেকে মুক্ত হয়ে নারী সোজা নর্দমায় যেয়ে পড়লো। পারলো না নিজের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে। স্বীকৃতি পেলো ভোগের বস্তু হিসেবে ঠিক যেন রুটি আর মদের মতোই।
যাই হোক, অনেক অনেক লেইম লেখা পড়ি, সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে। এখানে নাকি সমাজের পিছিয়ে পড়া মেয়েদের উঠে আসার প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়!
অথচ, এখানে এসে একটা মেয়ে শুধুই ভোগ্য পণ্যে পরিণত হয়, আর সমাজের আপামর তথাকথিত অসুন্দর নারীদের মুখে একটার পর একটা বোঝা চাপিয়ে দেয়। নারী সমাজ আরও কোণঠাসা হয়ে যায়, একের থেকে অপরের সৌন্দর্য বাড়ানোর তাড়নায়।
শো পিস কিন্তু শো পিসই! শো পিস লেখার কলম ও নয়, পানি খাওয়ার মগ ও নয়। শো পিস ভাঙলে চোখের সৌন্দর্যের একটা সামান্য ঘাটতি পড়ে, কিন্তু কলমের মতো এর উপযোগ নেই।
আর অর্থনীতির ভাষায় যার উপযোগ যতো কম, বাজারে তার চাহিদা ও ততো নিম্নমুখী।
আমার কাছে এইসব কথিত সুন্দরীদের শো পিস ছাড়া কিছুই মনে হয়না। যেমন শ্রী দেবী, যেমন হেমা মালিনী, রেখা, ববিতা বা মৌসুমি!
এরা এখন আর দিল কাঁপানো অভিনয় করতে পারেনা। কিন্তু পুরাণ মডেলের শো পিসের বাজার কিন্তু নতুন শো পিস ঠিকই দখল করে নিয়েছে। একদিন এদেরও সময় ফুরাবে। বাজারে নতুন দ্রব্য উঠবে!
রূপবানরা শুধু দর্শকের মনই রাঙ্গাতে পারে। ঠিক যেমন বাইজিরা রাঙাত, ঠিক যেমন বারবনিতারা মন ভুলাত। একটাই পার্থক্য – এখন তারা প্রতিযোগিতা করে, আর সুন্দরী খেতাব নিয়ে ঘরে ফিরে। আগে বারবনিতাদের কেউ সুন্দরী বলে মাথায় তুলত না। অন্ধকারে নাকি সবই সুন্দর।
আর এখন যা হয় সবই আলোতে। ঠিক যেমন আলো ঝলমলে দোকানে আপনার পছন্দের বারবনিতা অপেক্ষা করছে। একটু বেছে নিতে হবে এই যা। এখন তাদের গায়ে নাম্বার লাগানো থাকে। কতোটুকু যোগ্য এবং পটু সে এই কাজে। এখন তার একটা স্বীকৃতি আছে। এই যা!
মূল কাজ! নিজেকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা, তা থেকে কিন্তু একটুও সরে আসেনি নারী! বদলায় নি তার মানসিক দাসত্ব ও
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)