মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ

মাথা নোয়ানো জীবন,সারমেয় ও অন্যান্য

মাথা নোয়ানো জীবন,সারমেয় ও অন্যান্য
border আগস্ট মাসের শোকের বাতাস সেপ্টেম্বরেও বওয়া নিয়ম । তবু এক অনাহুত ১৮ই এপ্রিলের প্রসঙ্গ আনতেই হল। দুঃখিত । বরাইবাড়ির কথা মনে আছে ? রৌমারির বরাইবাড়ি । একাত্তর সালে যেটা ছিল মুক্তাঞ্চল । বেঁচে থাকার আশায়  সারা দেশ থেকে লক্ষাধিক মানুষ পালিয়ে জড়ো হয়েছিল সেখানে । এদের সিংহভাগই আবার আরেকটু ভাল ভাবে বেঁচে থাকার জন্য সীমান্তের ওই পাশে পাড়ি জমাতে চেয়েছিল । ভারত সরকার  হয়ে পড়ল মহা বিচলিত । বিএসএফকে আদেশ দিল  তাদের পারাপার দমন করতে । অবশ্য তারা সেখানে শরনার্থী শিবির স্থাপনের ব্যবস্থা করে । ওষুধ , খাবার , পানির ব্যবস্থাও করে । তবে সেগুলো ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ।  আর পয়ঃ নিষ্কাশনের অবস্থাও ছিল ভয়াবহ । ফলে নানান রকম জীবানুবাহিত রোগে অসংখ্য অনাহারী মানুষ মরে গিয়েছিল । তাদের গর্ত খুঁড়ে চাপা দিয়ে সমাহিত করা হয়েছিল । রাত বাড়লে আবার শুরু হত মড়াখেকোদের উৎসব । গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে টেনে বের করে আনত এক একটা শরীর ।  কঙ্কালসার বেঁচে যাওয়া বাকি জীবন্তমৃতরা খুবলে খাওয়া লাশের পাশেই বিষ নিঃশ্বাস টেনে টেনে মাটি কামড়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিল । দেশ স্বাধীনের পরে পাক বাহিনীর আর ভয় ছিলনা ।   কিন্তু ছিল সেই গর্ত গুলো আর নতুন করে উপদ্রুত হওয়া শেয়াল শকুন । গরু চড়ানো , জমিতে হাল দেয়া থেকে শুরু করে রাতে একটু পেট  ভাসিয়ে ঘুমানোও হয়ে পড়ল অসম্ভব । কথা নেই বার্তা নেই নো ম্যান্স ল্যান্ডে কেউ পশু খাদ্য খুঁজতে এলেও ডাইরেক্ট শ্যুট! নিথর শরীর আবার বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিতকরণ । টেনে হিঁচড়ে সেই বিক্ষত শরীর কাটাতারের ওপাশে নিয়ে গিয়ে ময়না তদন্তের নামে আরও ৭-৮ দিন ফেলে রাখা । অতঃপর  গলিত শব কে এ দেশী সীমান্তরক্ষীদের কাছে হস্তান্তর । এটাই যেন নিয়ম ! ১৮ই এপ্রিল ২০০১ । মাঝ রাতে তিনশ র বেশী বিএসএফ জওয়ান হঠাৎ বরাইবাড়ি গ্রামে ঢুকে পড়ে গ্রামবাসীর ওপর অতর্কিত হামলা শুরু করে । মাত্র পঁচিশ জন বিডিআর এবং গ্রামবাসী মিলে শুরু করল  অবিস্মরণীয় প্রতিরোধ !   খবর পেয়ে আশে পাশের বিডিআর ফোর্স আস্তে আস্তে লড়াইয়ে যোগ দিল ।  তিনদিন পর্যন্ত চলে এই রক্তক্ষয়ী সংঘাত । ফলাফল বিএসেফের আত্মসমর্পণ । এ লড়াইয়ে শহীদ হয়েছিল ৩৩-রাইফেলস ব্যাটালীয়নের ল্যান্স নায়েক ওহিদুজ্জামান, সিপাহী মাহফুজার রহমান এবং ২৬-রাইফেলস ব্যাটালীয়নের সিপাহী আব্দুল কাদের। ভারতীয় পক্ষের নিহত হয় ১৬ জন বিএসএফ সদস্য। যাই হোক , সারা দেশের নির্যাতন বিরোধী মানুষ যখন আগ্রাসীর চূড়ান্ত  বিএসএফ এর নারকীয় হামলার বিরুদ্ধে  ইন্টারন্যাশনাল কোর্টে মামলা করার দাবী জানাচ্ছিল , তখন , ২২ শে এপ্রিল তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের অটল বিহারী বাজপেয়ীর কাছে এক টেলিফোন সংলাপে নিদেনপক্ষে তিনবার বিডিআরের প্রতিরক্ষামূলক আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান । তিনি এবং তার মন্ত্রীসভা এর পর বহুদিন রানা প্লাজা স্টাইলে রৌমারিতে পদধূলি দেননি । সে সময় পুষ্পস্তবক অর্পণ সহ নানাবিধ রাজ কার্জে তারা ব্যস্ত ছিলেন ।  নিহত তিনজন জওয়ানের মরদেহ রাষ্ট্রীয় সম্মানে সমাহিত করার কথা মাথার ভেতরেও আনেননি । দুঃখটা হয়ত এত বেশী প্রকট ছিল যে ধীরে ধীরে নানান ঘটনা প্রবাহে একদম বদলেই গেল বিডিআরের নাম । বদলে গেল বিডিআরের পোশাক । হালের বিজিবি এখন ট্রেনিং নেবে অসংখ্য বাংলাদেশীর রক্তে হাত রাঙানো বিএসএফের কাছে ! তাতে যদি দয়া করে তারা আর না মারে ! অন্ধকারের সুযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে যে ভয়ঙ্কর , তার দেয়া মৃত্যুর হার শূন্যে নামানোর আশ্বাস বুকে নিয়ে লড়তে জানা সীমান্তের পাহারাদারেরা এখন শিকারী সারমেয় প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষণ নেবে  ! ´তিনশ র বেশী হানাদার থমকে গিয়েছিল পঁচিশের প্রতিরোধে ´ এই সত্যিটা এভাবে বাতাসে মিলিয়ে দিতে পারাও সম্ভব ! একটা জাতির পক্ষে এত বেশী আত্মমর্যাদাহীন হওয়া সম্ভব !

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)