অনির্ধারিত

উঁচা বংশের লোক

উঁচা বংশের লোক

 সামনে বইসা আছে রঙিন উঁচা বংশের লোক।

কালা রইদ চশমায় নায়ক লাগে তারে। গলায় বান্ধা মাফলারের লাল গোলাপীতেও তাই। আজকাল আর কেউ সাইকেলে মোটরসাইকেলে মরদের খেমতা আটকায়া রাখেনা।

তারা বিদ্যাশ যায়।

মায়ে বাপে জমি বেইচা দিবে বইলা জবান দিছে, লেবুর গন্ধওয়ালা জমিটা বেচবে তারা, জবান দিছে।

আমার তিন বছরের টুনটুনিরে মায়ে বাপে দেইখা রাখবে জবান দিছে। আমি দেইখা রাখব সামনে বসা উঁচা বংশের লোকের ছেলেসন্তানদের। আমার সমস্ত মায়া মোহাব্বত, ঘাম রক্ত দিয়া আগলায়া রাখবো তাদের। মুরগী রাইন্দা ডাক দিব তাদের, “বাবারা খাইতে আসো- ভাত দিছি”!

মায়ে বাপে আমার টুনটুনিরে দেইখা রাখবে।

টুনটুনির বাপেও ছিল বিরাট উঁচা বংশের লোক। মায়ে বাপে তারে দিছিলো রক্ত বেচা ধানের গন্ধ। তারা ঘরের পোষা বউ এর হাতে বই খাতা উঠুক সইহ্য করতে পারত না। পালা মুরগী আর লাল শাক বেচা একশটা টাকাও না, অধর্ম এগুলি। সাদা ওড়নার উপর দিয়া ক্রস ডিজাইন আর গোলাপ ফুলের সিলাই ফোঁড়াইও আছিল দুই চক্ষের বিষ।কইছিলাম আমি মেট্টিক দিমু কয়টা দিন মায়ে দেইখা রাখবো মাইয়াডারে।   

মাইয়ার বাপে কইছিল উঁচা বংশের শইল্যের রক্ত নানীবাড়ি দেইখা রাখার মত কথা উঠানির সাহস আর জানি না দেখাই।   

মাইয়া মাইনষের মেট্টিকে কী কাম? পাকঘরে কয় চামুচ লবন ঢালবি তুই আমার আতা গাছে তুতা পাখি?

রাইতভর ধানকল আর আটাকলের কাম সারছিলাম ঢেঁকী পাড়াইয়া, আসমান ভাইঙ্গা পড়ে ঘুমে। উঁচা বংশের লোকে কইলো "মাইয়ালোকের শইল্যের এমুন বদগন্ধ, সইরা শো!"

গুঁড়া মাছ কুটছিলাম শীতের রাইতে, কয় "সইরা শো!"

পেটের বিষে কান্দে টুনটুনি- "সইরা শো!"  

এক রাইতে শুনি গঞ্জে আছেন তিনি উঁচা বংশের লোক, শাশুড়ি মায়ে আদেশ দিছে ঢেঁকীতে পাড়া দিয়া দিয়া  গীত গাবো আমি এখন থিকা মহাসুখে “হলদি ভানি মাখোরে মোর সখির গায়“...

ঘানি কান্ধে নিয়াও সে এক গীত গাইতেওছিলাম আমি সকাল বিকাল নিশি রাইত, কপালে আমার উঁচা বংশের লোক, সখীর কুলে নামছে এরপর দিয়া বংশের অরজিনাল বাত্তি।

তিন তালাক দিয়া কইলো ভাতে হইবো না।

সেই থিকা মায়ে বাপে আমার আছে লেবুর গন্ধওয়ালা জমি বেচনের ধান্দায়।

আরেক উঁচা বংশের খোঁজে। 

টুনটুনিরে দেখবেনা বইলা দিছে ট্রেনের ভিতর সামনে বইসা সিগ্রেটের ধুমায় ভাইসা যাওয়া রঙিন উঁচা বংশের লোকটা।

 সে আমারে ভাত দেবে, মেয়ে মানুষ এখন আবার ভাত খাবে।

মেয়ে মানুষ আমি শেষ রক্ত আর ঘাম দিয়া তার ঘর দেইখা শুইনা রাখবো।

টুনটুনিরে উঠানের কোণায় চিল্লায়া কানতে কানতে “মা গো তুমি যাইওনা গো আমারে লগে নেও” শুইনাও না শোনার ভেক ধরছি আমি, খেমতা নাই। 

কয়টা দিন না, অহন সারাজীবনের জইন্য আমার মায়ে বাপে দেখবে তারে।

জমি বেইচা পার করবে আমারে-

টুনটুনিরে কোন জমি কার জমি বেইচা কেডায় পার করবে কালা রইদ চশমার ওপর ছায়া পড়ছে আমার চেহারার- জ্বর আসে।

মেয়ে মানুষের আবার নিজের জঠর!

 খুশীতে কান্দিনা আমি,

উঁচা বংশের লোকেগো গীত গাই আমি যতদিন বাঁচি। 


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)