ফিল্ম ও মিডিয়া

না" এর চেয়ে নারীর শক্তি বেশী! ভূতের মুখে রাম নাম

না" এর চেয়ে নারীর শক্তি বেশী! ভূতের মুখে রাম নাম
ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির না " এর চেয়ে নারীর শক্তি বেশী শিরোনাম দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলাম আর কি!  কথাটায় আমার কোন দ্বিমত নেই, কিন্তু কথাটার কথকের কথাটা বলার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে।  যেসব নারীরা হার মানেনা, আকাশে উড়োজাহাজ ওড়ায়, সীমান্তে প্রহরা দেয়, সারাদিন অফিসে দৌড় ঝাপ করে, কিংবা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকতা করে তারা কোন না" এর পরোয়া করেনা তাতে কোন সন্দেহ নেই হয়তো !স্বাভাবিক! সমাজের হাজার বাঁধা আর শৃঙ্খল সত্ত্বেও নারী নিজের আপন যোগ্যতায় বিকশিত হচ্ছে হয়তো! কিন্তু, আজকে যারা আপনাকে আমাকে না এর চেয়ে নারীর শক্তি বেশী এই তত্ত্বে বিশ্বাস করতে বলছে, দুঃখের বিষয় হলেও সত্য তারা নিজেরাই এটা বিশ্বাস করেনা! তারা যদি বিশ্বাস করতোই তাহলে নারীর শক্তি যে নারীর রুপের নয় গুনে এই কথাটার ধারক বাহক হিসেবে কাজ করতো। আপনারা হয়তো ভুলে গেছেন ঐ বিজ্ঞাপনটির কথা! যেখানে একটা মেয়ে কালো হওয়ায় চাকরী পায়না। এরপর বান্ধুবির পরামর্শে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ব্যবহার করে সুন্দর হয়ে এরপর চাকরী পায়, এরপর সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরকম অনেক বিজ্ঞাপনই প্রতিদিন নারীর শক্তিকে অপমান করে যাচ্ছে। তাহলে কি দাঁড়ালো তাদের ভাষ্যমতে! সুন্দর চামড়া ছাড়া নারীর স্বীয় যোগ্যতা গুন সবই অধরা, সবই অর্থহীন!এই কৃষ্ণকলি কিংবা শ্যামলবরণ মেয়েদের জন্য না শব্দটি বারবার আঘাতের মতো মনে হয়। বারবার নারীকে পদদলিত করে এই ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপনে উচ্চারিত হওয়া অস্পষ্ট একটি কথা- তুমি সুন্দর না তুমি সুন্দর না তুমি সুন্দর না এই একটি যায়গায় নারী হার মেনে যায়, নারী ভীষণভাবে পরাজিত হয় বিধ্বস্ত হয়, ব্যাগ ভর্তি মেকআপ, ড্রয়ার ভর্তি ফেয়ারনেস ক্রিম, আর রাজ্যের প্রসাধনী মেখেও গায়ের রং পার্মানেন্ট ফর্সা করা যায় না। নারী এখানে পরাজিত। আর এই দুর্বলতা যারা বারবার আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় তারাই বারবার নারীকে পরাজিত করে দেয়। তাদের মুখের হার না মানা নারী শব্দটা ভীষণ বেমানান! সব জয় করা নারী এখানে বিধ্বস্ত! অপদস্ত এই একটি না এর কাছে নারীর সব যোগ্যতা, সব মহিমা, চারিত্রিক শীতলতা সব মিথ্যা হয়ে যায়! এই একটি না। এই একটি না এর কাছে একটি শ্যামবরণ যুবতির সুন্দর একটা সংসারের স্বপ্ন মিথ্যা হয়ে যায়, এই একটি না এর কারনে উচ্চ শিক্ষিতা তরুণীর ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যায়, এই একটি না এর কারনে নারীকে এক খণ্ড মাংস পিণ্ড ভাবা হয়, এই একটি না এর কারনে নারী শাশুড়ির কটাক্ষের শিকার হয়, সমাজের উপহাসের পাত্র হয়। এই একটি না এর কারনে পাত্রীর চাহিদা তালিকার ফর্দে শুধু ফর্সা মেয়ে চাই লেখা থাকে। ভালো মেয়ে চাই, যোগ্য মেয়ে চাই এই কথা কোথাও লেখা থাকেনা। এই একটি না এর কারনে মেয়ে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হলে সে ফর্সা কিনা সবার আগে এটা জানতে চাওয়া হয়! এই রং ফর্সাকারী ক্রিমের কোম্পানির মালিকেরা খুব বিপদে আছেন। ভারতের সেন্সর বোর্ড বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ করেছে এইসব বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে। তাই এখন নতুন ভেইক ধরেছে। আসলে কিন্তু কথিত ফর্সা হওয়া, ফর্সা হওয়ার মানসিকতা, সমাজে এমন চামড়া সর্বস্ব মানুষ তৈরি করাই এই কোম্পানির মালিকদের পেট চালানোর একমাত্র উপায়!

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)