সাহিত্য

সায়িন্স ফিকশন;সায়িন্স মিডিয়াম স্কুল

সায়িন্স ফিকশন;সায়িন্স মিডিয়াম স্কুল
১... ২০২০ সাল। জানুয়ারীর ১৫ তারিখ। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টালো সাব্বির হোসাইন। আজ রাজধানীর নতুন একটি স্কুলে ৫ম শ্রেণীর প্রথম ক্লাস করেছে। ক্লাস করে যারপরনাই আনন্দিত সে। প্রথম দিন কোন সাবজেক্ট নিয়ে আলোচনা হয়নি, বরং প্রত্যেক ষ্টুডেন্টের সামনে ছিলো একটা করে ল্যাপটপ, স্যার সবাইকে ইচ্ছেমতো ইউজ করতে বলেছিলেন। সাব্বির গেমস খেলেছিলো। ক্যালেন্ডার উল্টিয়ে রেখে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো, বাবা মা দুজনই কিছুক্ষণ আগে ডাইনিং য়ে এসেছেন, ডিনারের সময় হয়ে গেছে তাই।  সাব্বির বসেই স্কুলের সব কথা একনাগাড়ে বলেই যাচ্ছিলো। হঠাৎ বাবাকে প্রশ্ণ করলো, -আমাদের স্কুলের নাম সায়িন্স মিডিয়াম কেন? -সবকিছু বিজ্ঞানভিত্তিক চলবে তাই, যেমন ইংলিশ মিডিয়াম, বাংলা মিডিয়াম...... -হুম বাবা তাতো বুঝলাম, কিন্তু ইংলিশ বাংলাতো ভাষার নাম, সায়িন্স তো আর কোন ভাষা না এটা এক ধরনের পদ্ধতি মাত্র! ওর বাবা ছেলের বিশ্লেষণী জ্ঞান দেখে অবাক হন খুশি হয়ে বলেন, -এখন বিজ্ঞান এতোটাই এগিয়ে যে সেই মাধ্যম দিয়ে আলাদা শিক্ষা বিশেষ জরুরী হয়ে পড়েছে, আধুনিক বিশ্বে তোমাদের চেয়ে কম বয়সীরা এখন নিজেরা এক একজন সায়িন্টিস্ট, ভাবতে পারো? বিস্মিত হয় সাব্বির, -তাই বাবা! আসলে সে কারণেই আজ স্যার বললেন," বিজ্ঞানের চেয়ে বেশী শক্তিশালী, দ্রুতগামী, আর কিছু নেই এই পৃথিবীতে, আমি খুব খুব খুশি বাবা, দেশের প্রথম সায়িন্স স্কুলে আমি প্রথম ক্লাস করতে পেরেছি বলে। সাব্বিরের মা মুখের খাবার শেষ করেন, -তোমার স্যার একটু ভূল বলেছেন, তিনি বিজ্ঞানকে সবচেয়ে শক্তিশালী বললেন, অথচ মানুষই বিজ্ঞান সৃষ্টি করেছে, আল্লাহর দেয়া জ্ঞান ব্যবহার করে। সাব্বির আর কিছু বলেনা মাথা চুলকায়, চিন্তা করে মায়ের কথায় সায় দিতে ইচ্ছে করেনা, বরং স্যারের কথায় ওর কাছে বেশী আকর্ষণীয় মনে হয়। তাই কথা না বাড়িয়ে খাবার শেষ করে। ২... গভীর রাত। ঘুমে অচেতন সাব্বির। হালকা হালকা শীত, লাগায় গায়ে কাঁথা জড়িয়ে নিয়েছে। ঘরে নীল ডিম লাইট জ্বলছে, হঠাৎ সাব্বিরের ঘুম ভেঙ্গে যায় একটা কন্ঠের কথা শুনে, কন্ঠটিতে কোন মায়া নেই, বলছে, -আমি আসছি তোমাদের স্কুলে, আমিই তোমাদের সবাইকে ছাড়িয়ে সমাপনীতে বোর্ডে প্রথম হবো, তোমরা কেউ পারবেনা আমার সাথে। রাগে গজগজ শব্দ হয় সাব্বিরের কন্ঠে কিন্তু ওর মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয়না শত চেষ্টা করেও পারেনা, কথা বলার চেষ্টা করতে করতে ঘেমে একাকার হয়ে যায়। আর ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় অনুভব করে গলা শুকিয়ে গেছে। বেড সাইডে রাখা ওয়াটার পট থেকে পানি পান করলো। ৩... এক সপ্তাহ পর... সায়িন্স মিডিয়াম স্কুলের মূল গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলো সাব্বির। ওর বন্ধু রাকিব দৌড়ে এসে ওর পাশাপাশি হাঁটা শুরু করে বললো, -সাব্বির মজার কথা শুনেছো? -কী? -আমাদের স্কুলে নতুন একজন ষ্টুডেন্ট এসেছে, আর ওকে নিয়ে গোটা স্কুলে তো মহা আলোড়ন, ও  নাকী সব পারে এমন কিছু নেই যা ও পারেনা! আনমনে ভাব কেটে সজাগ হয় সাব্বির, ওর মনে পড়ে স্বপ্নের কথা, কিন্তু রাকিবকে কিছু না বলে ক্লাসরুমে ঢুকে সেই ছেলেটিকে দেখে পায়, ছেলেটিকে সবাই ঘিরে রেখেছে, সাব্বিরকে পাত্তাই দিচ্ছেনা কেউ, কিন্তু রাকিব সাব্বিরের সঙ্গ ছাড়েনি। স্যার ক্লাসে আসার পর সবাই যে যার জায়গায় বসলো, কিন্তু স্যারর ল্যাপটপ অন না হওয়ায় টচিং শুরু করতে পারছিলেননা। নতুন ঐ ছেলেটি দাঁড়িয়ে বললো, -স্যার! -বলো! -আমি অন করে দিতে পারবো! চেষ্টা কে দেখি? -অবশ্যই এসো! স্যার সামনে গেলো কয়েক সেকেন্ড ল্যাপটপ হাত দিয়ে ধরে থাকলো আর সাথে সাথে অন হলো ল্যাপটপ! স্যার উৎফুল্ল কন্ঠে, -নাম কী তোমার? ফ্রিডো রোজারিও। -অ আচ্ছা অনেক খুশি হলাম, তোমার মতো ষ্টুডেন্ট পেয়ে! সাব্বির ফ্রিডোর কন্ঠে সেই স্বপ্নে শোনা কন্ঠের মতো কাঠিন্যতা খুঁজে পেলো, আবারো রেগে গেলো সাব্বির। ৪... পড়াশুনাতে খুব মনোযোগী সাব্বির। ফ্রিডোর থেকে এগিয়ে থাকতেই হবে।  এই স্কুলে ষ্টুডেন্ট নেয়া হয়েছে খুব বেছে বেছে একটা এলাকা থেকে হাজারের মধ্যে একজনকে নেয়া হয়েছে! সাব্বিরও খুব মেধাবী, সমাপনীতে বোর্ডে প্রথম হওয়ার মতো! ওর মা ওকে এতোবেশী মনোযোগী হতে দেখে খুশি হলেন। একটুপরে কিচেন থেকে গলা একটু উঁচু করে, -সাব্বির, ফ্রিডো এসেছে ড্রয়িং রূমে, কথা বলবে তোমার সাথে। ভ্রু কুঁচকে গেলো সাব্বিরর, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত আটটা বাজে, অষ্পস্ট সরে, -ফ্রিডো! এসময়? এবার মায়ের ডাকের জবাব দিতে, -হ্যা মা যাচ্ছি! ড্রয়িংরুমে ঢুকে ফ্রিডোকে ছোফায় বসে থাকতে দেখল সাব্বির, অবাক হলো ওর হাতে আটকে থাকা লাল রঙ্গের সুইচমতো কিছু একটা দেখে, যেটি ওর ডান হাতের কব্জিতে লেগে আছে। দেখে মনে হচ্ছে স্থায়ীভাবে লাগানো। প্রচন্ড আশ্চর্যান্বিত হয়ে ফ্রিডোর সামনে দাঁড়ালো সাব্বির। ওকে আশ্চর্য দেখে ফ্রিডো বললো, -আমি মানুষ নই রোবট! সাব্বিরের মুখ অটোমেটিক হা হয়ে যায়, আপনাতেই এক কদম পিছিয়ে যায়, একটু একটু ভয় এসে জমে যায় ওর মনের কোণে, -রোবট! -হ্যা, আমাকে আমেরিকায় বানানো হয়েছে! তবে আমার পুরো শরীর যান্ত্রিক নয়, মৃত মানুষের বডির ভেতরে যন্ত্র বসানো!! আমাদেরকে বিভিন্ন মুসলিম দেশে পাঠানো হয়েছে বিশেষ কারণে, বিজ্ঞানীরা প্রমান করতে চান যে, একজন সাধারণ মানুষের চেয়ে বিজ্ঞানের শক্তি অনেক বেশী......... -তাই নাকী!!? -হ্যা সত্যিই তাই, আমার হাতে যেটা দেখছো, সেটা একটা কনট্রোল সিস্টেম। আমি এখন তোমার সাথে যে বিষয়ে কথা বলছি সে বিষয় বদলে যেতে পারে। এই সূইচটির সাথে রিলেশন আছে একটা রিমোর্টের, যা একদল লোকের হাতে আছে, আর তাদের সাথে আমেরিকান বিজ্ঞানীদের যোগাযোগ আছে........................... ৫... ফ্রিডো চলে গেলে আম্মুর কাছে যায় সাব্বির, -কী করছো আম্মু! -এইতো বাবা বই পড়ি। -একটু কথা ছিলো। -বলো! কেঁদে ফেলে সাব্বির, -আমিতো বোর্ডে প্রথম হতে পারবোনা! সাব্বিরের চোখের অশ্রু মুছে দিয়ে কাছে টেনে নেন ওর আম্মু, -কেন বাবা কী হয়েছে? -ফ্রিডো ফার্স্ট হবে, ও যে রোবট! -কী? রোবট! চমকে ওঠেন আম্মু। একটু চুপ থাকার পর ওর আম্মু বললেন, -শোন, সাব্বির সেদিন ডিনার করার সময় একটা কথা বলে ছিলাম মনে আছে তোমার? হ্যা সূচক মাথা নাড়ায় সাব্বির। ওর আম্মু তবুও বলেন, -আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে জ্ঞান দান করেছেন, আর সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে মানুষ বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়কে বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে, তার মধ্যে রোবটও একটি। খুব আগ্রহী হয় সাব্বির এই সেনটেন্সের পর, -সেটা কী আম্মু! -ল্যাপটপ চলে কিভাবে বলোতো! সেটআপের মাধ্যমে, তাইনা? সি ডি (কমপ্যাক্ট ডিসকের) মাধ্যমে সেট আপ দিতে হয়, আর সেটআপ দেয় কে? ঐ সিডিটা তৈরী করলো কে? -মানুষ?! মানুষইতা, তাইনা আম্মু? -হুম ঠিক বলেছো, আর সেট আপ না দেয়া হলে, আগের সবটা মুছে যাবে তাইনা? আসলে ওটা এক ধরণের ম্যামরী, বা স্মৃতি যো সবসময় থাকেনা,  ওটা একটা যন্ত্র কারণ যন্ত্রকে মানুষ সৃষ্টি করেছে! কিন্তু মানুষের স্মৃতি আজিবন থেকে যায়! কারণ মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন! ৬... কিন্তু আম্মু, ও ল্যাপটপ অন না হলে ও অন করতে পারে। ওর আম্মু বলেন, -যন্ত্র নষ্ট হলে যনত্র দিয়েই ঠিক করতে হয়, ঐ রোবটের মধ্যে ঠিক ডিসকের মতো কিছু বিষয় লোড করে দেয়া আছে সম্ভবত! -ওর মধ্যে মনে হয় আমাদের ক্লাসের সব পাঠ্য বই লোড করা আছে তাইনা আম্মু! ওর মা হাসেন, -হুম তাতো আছেই, আর আছে বলেই ও চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। তবে কী আমার ছেলে ফ্রিডোকে ভয় করবে? -না আমমু আমিতো মানুষ, মানুষের উপরে কেউ যেতে পারেনা। আমিই ফার্সট হবো ইনশাআল্লাহ! ওর মায়ের ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে, আম্মুর হাসি দেখে তৃপ্তি পায় সাব্বির বললো, -বাবা কখন আসবে? -আরো দেরী হবে, তুমি ডিনার সেরে নিতে পারো...... -না আম্মু তোমাদের সাথেই... আরো একটা প্রশ্ন ছিলো। -কী? -তাহলে রোবটদের মধ্যে সাধারণত থাকেইনা , বা লোড করা যায়না এমন কিছু আছে কী? -ওদের কোন অনুভূতি নেই, দুঃখ, কষ্ট, হাসি, কান্না, এসবর কোন অনুভূতি নেই। যখন যে কাজের জন্য কমান্ড দেয়া হবে শুধু ঐ কাজই করতে পারবে এর বেশী কিছু পারবেনা, কিন্তু মানুষ তা পারে। অবাক হয় সাব্বির, ওর ধারণা ছিলো রোবট সত্যিই মানুষের চেয়ে সব ব্যাপারে শক্তিশালী! নিমিষেই দূর হয়ে যায় ওর এ ভূল ধারণা, খুব খুশি হয় সে, ভুল করেনা স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জানাতে, অষ্পষ্ট স্বরে বলে, -আলহামদুলিল্লাহ!

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)