
.......................................................
৯.
একমাস পর।
মৌমিতার সময় শেষ হয়ে আসছে। মৌমিতার ক্যান্সার হয়েছে এটা কেউ ওকে না বললেও ও জেনে গেছে।ও লক্ষ্য করেছে ওর চোখের নিচে অনেক কালি পড়ে গেছে। যদিও মৌমিতা অনেক সুন্দরী, মায়ার মতো নয়। রাতে ঘুম হয়না বললেই চলে।ও চুপচাপ শুয়ে থাকে মাকে বুঝতে দেয়না ও জেগে আছে, কারণ প্রতি রাতেই কামরুননাহার ওর মাথা নাড়েন আর নিঃশব্দে কাঁদেন। মৌমিতা অংক কষছিলো। হঠাৎই ভাবনার জগতে হারিয়ে যায়। মৌমিতা এখন আর জেদ করেনা, হাবীবের সাথে মিশতে যে চেষ্টা ও করেছিলো সেই চেষ্টা আর করেনা। মৌমিতা বুঝতে পেরেছে যে হাবীব কোন মেয়ের সাথেই ঘণিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরী করতে চায়না। হয়তো ও ওর স্ত্রীকে খুব ভালোবাসবে। খুব কষ্ট হয় মৌমিতার, এই কথাটি ভেবে যে, হাবীব অন্য কাউকে বিয়ে করবে তাকে ভালোবাসবে, কান্না এসে দুচোখের পুরোটা জুড়ে ভীড় করেছে, আটকানোর চেষ্টা করেনা মৌমিতা দু গন্ড বেয়ে ঝরতে থাকে অশ্রুগুলো। কামরুননাহার দু মগ চা নিয়ে এসে,
-চা...... কী হয়েছে মৌমিতা কাঁদছো কেন?
সম্বিত ফিরে পেয়ে,
-ও! না কাঁদছিনা, চোখে কী যেন পড়েছিলো, তাই দাও মা চা খেয়ে নিই, টোস্ট বিস্কুট আছে?
কিছু বলার আগেই কলিং বেল বেজে ওঠে, কামরুননাহার খুলেই হাবীবকে দেখতে পান, ওর হাতে বাজারের ব্যাগ। অবাক কন্ঠে,
-হাবীব! তুমি? এসব কী বাবা?
-কী জানি আন্টি মা এগুলো পাঠিয়েছে।
কামরুননাহার ব্যাগ হাতে নিয়ে,
-এসো বাবা ভেতরে এসো। ব্যাগের ভেতরে অনেক আইটেমের খাবার জিনিস সাথে টোস্ট বিস্কুটও। হাবীবকে ড্রয়িংরুমে বসতে দিয়ে ব্যাগ সহ মৌমিতার রুমে গেলেন, মৌমিতাকে টোস্ট বিষ্কুট দিলেন, মৌমিতা মলিন কন্ঠে,
-কে মা?
-হাবীব।
আনন্দে উদ্বেলিত ওর কন্ঠ,
-হাবীব! কোথায়?
-ড্রয়িং রুমে।
-যাবো মা?
কামরুননাহার অনুমতি না দিয়ে পারলেননা। বললেন,
-যাও।
হাবীব টি টেবিলে রাখা পেপারটি মনোযোগ দিয়ে পড়ছে।
মৌমিতা ওর মুখোমুখি একটা সোফায় বসলো। উচ্ছল কন্ঠে,
-কেমন আছেন।
হাবীব মাথা তুলে একবার তাকালো মৌমিতার দিকে মুচকী হেসে,
-আছি ভালো আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?
মৌমিতার হাবিবের প্রতিটি আ্যাটিচিউট ভীষণ পছন্দ। হাবিবের মুচকী হাসি দেখে মৌমিতা থ মেরে গেছে, তাকিয়ে আছে ওর দিকে আর ভাবছে, এতো সুন্দর করে কেউ আবার হাসতে পারে নাকী।
হাবীব দ্বিতীয়বার প্রশ্নটি করে, এবার মৌমিতা উত্তর দেয়,
-হ্যা ভালো আছি খুব ভালো।
কামরুননাহার আসেন চা নাস্তা নিয়ে, হাবীব বললো,
-আন্টি কেমন আছেন?
-এইতো বাবা আল্লাহ যেমন রেখেছেন, নাও একটু নাস্তা করো।
-আপনিও বসুন আন্টি। আর মৌমিতা তুমি একটু ঘরে যাও ওনার সাথে কথা আছে।
মন খারাপ হয়ে যায় মৌমিতার। ও বুঝে নেয় হাবীব কি বলবে, খুবই কাঁদতে ইচ্ছে করে ওর। খুব দ্রুত নিজের রুমের দিকে যায়।
হাবীবের পারসোনালিটি বেশ দৃঢ়, যা বলে সবসময় সত্য এবং দৃঢ়তার সাথে, মাথা নিচু করে হাবীব,
-আন্টি আমার বাবা মা বা আপনারা মৌমিতার সাথে আমার যে সম্পর্কের প্রস্তাব করেছেন, সেটা অনুচিত একটা প্রস্তাবনা। একজন মানুষের জীবনের দুটো পার্ট, একটা এই পৃথিবীতে আর একটা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে, আমি মৌমিতার সাথে যে সম্পর্ক এই কয়েকদিন রেখেছি তাতে হয়তো মৌমিতা খুব খুশি, কিন্তু ওর, আমার পরবর্তী জীবনে কোনরকম মঙ্গল বয়ে আনতে পারবেনা।
বিব্রত বোধ করেন কামরুননাহার, হাবীবের কথাগুলো ফেলে দেয়ার নয়, খুব সুন্দর কথা বলেছে সে,
-আসলে বাবা আমি এ ব্যাপারে তোমার বাবা মাকে বলিনি ওনারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমিতো তোমার মাকে না করেছিলাম.........
আন্টি আমাকে ভুল বুঝবেননা আপনার কথার মধ্যে কথা বলছি, একটু থেমে, আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।
অকস্মাৎ যেন বিদ্যুৎ চমকেছে এমনই ভঙ্গীতে কামরুননাহার হাবীবের দিকে তাকালেন, মাথা নিচু করে হাবীব অপেক্ষা করছে ওনার উত্তরের, কিন্তু উনি যেন বাক হারিয়ে বোবা হয়ে আছেন। কয়েক মিনিট অতিক্রম হয়েছে, দুজনই চুপচাপ। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে অশ্রুভরাক্রান্ত কন্ঠে,
-তুমি খুবই ভালো ছেলে বলেই একথা চিন্তা করতে পেরেছো, কিন্তু আমি তোমার প্রস্তাব সমর্থন করে তোমার জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারিনা বাবা।
-আন্টি আমি বাবা মাকেও বলেছি আপনারা প্লিজ ভেবে দেখবেন। আমি এখন উঠতে চাই।
১০.
আরমান গত কয়েকদিন যাবৎ মায়ার সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক রেখেছে, একসাথে ঘুমাচ্ছে, খাচ্ছে এমনকী অফিসেও বের হচ্ছে একই সাথে। বিকালবেলা, চৌধুরী বাড়ীর সবাই একসাথে নাস্তা করছে। আশরাফ চৌধুরী এখন আরমানের সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছেন। মায়ার মোবাইল বেজে ওঠে, ওর মা ফোন করেছে স্পিকার অন করলো সবাইকে শুনানোর জন্য,
-মা কেমন আছো?
-ভালো, মায়া কেমন আছো মা?
-ভালো, .........
-তোমার শশুর শাশুড়ী কেমন আছে?
-ওনারাও ভালো আছেন, মা মৌমিতার কী অবস্থা?...
-মায়া তোমরা একটু আসো, আরমানসহ আজ চলে আসো কথা আছে, জরুরী কথা।
মায়া বললো,
- ঠিক আছে মা।
আশরাফ চৌধুরী দ্রুত কন্ঠে তোমরা দেরী না করে বেরিয়ে পড়ো। আরমান বললো,
-মা কিছু বলছনা যে?
আনোয়ারা চৌধুরী বললেন,
-যাও যাও রেডি হও।
রুমে ঢুকে আরমান বললো,
-আজকে তুমি আমাকে ড্রেস বের করে দেবে, তোমার পছন্দের ড্রেস পরবো।
মায়া হেসে,
-আচ্ছা, ঠিক আছে। তবে একটা কথা না বললে না বলায় থেকে যাবে, সেটা হলো, তুমি যেটাই পরো তোমাকে সেটাতেই মানায়।
তাই নাকী! লিপি কে দেখে আরমান,
-এই লিপি ড্রাইভারকে রেডি থাকতে বলোতো।
লিপি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে,
-ভাইজান ড্রাইভার তো দ্যাকলাম রেডিই আছে, কি জানি এই ড্রাইভার হুট কইরাই কই যায় আবার হুট কইরা দেহি একবারে রেডি।
-তাই নাকী! আশ্চর্য তো ড্রাইভার জানলো কী করে, আমরা বেরোবো। মায়াও অবাক হলো।
গাড়ীতে পাশাপাশি দুজন। আরমান মায়ার সাথে খুঁনসুটিতে ব্যাস্ত। আরমান বলল,
-আম্মা আমাদেরকে কেন ডাকলো বলোতো?
-কী জানি আমার খুব টেনশান হচ্ছে, মৌমিতার কী অবস্থা আল্লাহ জানে। আরমানের কাঁধে মায়া মাথা রেখে কথাগুলো বললো।
ড্রাইভার সবটাই জেনে এসেছে, কামরুননাহার কেন ডেকেছেন, চুপচাপ আছে তবুও। আরমান ড্রাইভারকে লক্ষ্য করে,
-তোমার নাম কী?
-সাব্বির।
-গ্রামের বাড়ী কোথায়?
-নীলনদের পাশের গ্রামে।
অবাক হলো মায়া আরমান দুজনই,
-কী! তুমি কী পাগল নাকী? মিশরের নীলনদের কথা বলছনা?!
-হ্যা
-বাংলা বলছো কী করে?
-শিখেছি। দ্রুত গাড়ীর ব্রেক চেপে,
-সামনে অনেক লোকের ভীড় স্যার, অনেক লোকজন এখানে।
-তাইতো! এক্সিডেন্ট করেছে নাকী? আচ্ছা তুমি দেরী করোনা পাশ দিয়ে চলে যাও।
ভেতরে ঢোকার সাথে সাথে মৌমিতা আর মায়া দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো, মৌমিতা এখনও ওর খুশির খবরটা শোনেনি, মায়া মৃদু হেসে,
-কেমন আছো মৌমিতা?
-এইতো আপু তোমরা একসাথে এসেছো দেখে খুব ভালো লাগছে, ভাইয়া এটা রিয়াল সম্পর্কতো?
বিব্রত হয় আরমান,
-হ্যা যা দেখছো ঠিক, আম্মা কোথায়?
-মা আসছে, একটু রান্নাঘরে। মায়া রান্না ঘরের দিকে যায়, আরমান মৌমিতার পিছু পিছু গিয়ে মায়ার রুমটাতে ঢোকে।
এরপর নাস্তা, রাতের খাওয়া, হালকা কিছু গল্প। সব সেরে মৌমিতা পড়তে যায় নিজের রুমে। তখন হাবীবের ব্যাপারটা মায়া আর আরমানের সাথে শেয়ার করেন কামরুননাহার, মায়া খুব খুশি হয়,
-মা খুব ভালো কথা, ওর বাবা মায়ের প্রতিক্রিয়া কী?
-ওরা তো কিছুই বলেনি যা বলার হাবীব বলেছে।
আরমান মৃদু কন্ঠে,
-আমাদের জন্য এ ব্যাপারটা পজেটিভ, কিন্তু তারা কী আদৌ ভালোভাবে নেবে? এটা বড় ব্যাপার। ওনাদের সাথে কথা বলা দরকার।
কামরুননাহার বললেন,
-এটা ঠিক বলেছো। তোমরা কী যাবে?
মায়া সম্মতি জানায়, আরমান বললো,
- হ্যা সেটাই বরং ভালো।
১১.
অনেক আলোচনার পর বিয়ে হয়ে যায়। মৌমিতা ভাবতেই পারেনি এমন কিছু একটা হবে। ওর মনে হচ্ছে ও মারাই যাবে আনন্দের আতিশয্যে। বাসর ঘরে মৌমিতা একা, হাবীব ভেতরে ঢোকে দরোজা লাগিয়ে। মৌমিতাকে প্রাণ ভরে দেখে নেয় হাবীব, অনেক কথাবার্তা, একসাথে চলাফেরা থাকলেও ভালোভাব কখনো দেখেইনি। মৌমিতার পাশে বসে,
-শরীর কেমন আছে তোমার?
হাবীবের দিকে তাকাতে লজ্জা পায় মৌমিতা, মাথা নিচু করে,
-ভালো,
-আমাকে দেখবেনা? তোমার দৃষ্টিতো আমার সাথে কথা বলতে চাইতো, আমি সে সুযোগ দিতে খুব ভয় করতাম। এখন সুযোগ দিয়ে দিলাম, যত ইচ্ছা চোখ দিয়ে কথা বলো।
-পারবোনা!
-না পারতেই হবে, জানো মৌমিতা, এই মূহুর্ত থেকে তোমাকে হারানোর ভয়টা আমাকে আঁকড়ে ধরেছে, মনে হচ্ছে তোমাকে ছাড়া আর এক মুহুর্তও নয়......
মৌমিতার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, তাকায় হাবীবের দিকে,
-তুমি খুব ভালো হাবীব! আমি কী এমনি তোমাকে......
-থাকনা ওসব, আজ কোন কান্নাকাটি নয়, এসো আমাদের জীবন সাজানোর প্লান করি।
- কী রকম?
প্রথমত, কাল সকাল বেলা আমরা দুজন ঢাকায় ছলে যাবো, ওখানে আমরা আমাদের ছোট্ট একটা সংসার সাজাবো, তুমি যাবেতো আমার সাথে?
স্বপ্নরাজ্যে হারিয়ে যায় মৌমিতা, ভাবে এও আবার সত্যি নাকী! মানুষের জীবনে এতো সুখ কখনো আসে কী! ভাবতে পারেনা সে।
এভাবেই চলছিলো, সময় এভাবেই চলে যায়। মায়া মা হতে চলেছে। চৌধুরী পরিবারের উত্তরাধীকারী আসতে চলেছে। আনন্দের বন্যা এই পরিবারে, পারলে সবাই মিলে মায়াকে যেন মাথায় তুলে রাখে। আরমান অফিস থেকে ফিরলো, অস্থির কন্ঠে,
-সাব্বির কোথায় জানো?
মায়ার মন খারাপ, মলিন কন্ঠে,
-কেন নেই?
-না ছিলোনাতো, অন্য একজনকে দিয়ে কোথায় যেন গেছে। ওর হাবভাব আমার অদ্ভুত লাগে, তাও যাকে রেখেছে সেতো কেবল ড্রাইভিং শিখেছে এমন হাবভাব।
অস্থির কন্ঠ মায়ার,
-সমস্যা হয়নিতো?
-না।
বাবা মা আমেরিকায় পৌছেছেন?
-হ্যা পৌছে ফোন করেছিলেন তোমারটা বন্ধ পেয়ে অফিসে করেছিলো।
-তুমি ড্রেস চেঞ্জ করে নাও আমি লিপিকে নাস্তা দিতে বলি।
-মায়া!
পিছু ফিরে মায়া,
-হুম!
-তুমি ঠিক আছোতো?
-হ্যা কেন বলোতো? তোমাকে আজ অন্যরকম মনে হচ্ছে যে! আমার মনটা বাবা মার জন্য কেমন জানি করছে, বড্ড ফাঁকা লাগছে। তুমিও কী সেজন্য?
-না কিছুনা, তুমি বসো আমার পাশে, আমি এখান থেকই লিপিকে নাস্তা দিতে বলি।
মায়া বুঝলো আরমান কিছু একটা লুকাতে চাইছে, তবুও জোর করেনা, এতো অধিকার কোথায় ওর? দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
-আচ্ছা বসছি।
১২.
মৌমিতার ছোট্ট সংসার। হাবীবের ভালাবাসায় ধন্য মৌমিতা। মৌমিতা হাবীবের কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখেছে, হাবীব ওকে বুঝিয়েছে, এই পৃথিবীটা শুধুমাত্র মানুষের পড়াশুনার করা, জ্ঞান অর্জন করার স্থান। মানুষ পড়াশুনা করে যেমন পরীক্ষা দেয় তেমনি বিষয়টি। পুরো জীবন জুড়ে যে যেমন জ্ঞান অর্জন করে, সে অনুযায়ী কাজ করবে, সে ঠিক তেমনি ফলাফল পাবে। আর ফলাফলটা নির্ধারিত হবে মৃত্যুর পর কেয়ামতের দিন। আর পৃথিবীর সকল জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎস আল কুরআন, সেটা যে যত পড়বে ততো তার জ্ঞান বাড়তে থাকবে, সে অনুযায়ী সে কাজ করলে, মৃত্যুর পরের ফলাফলটা তার জন্য অনেক সুখের হয়ে ধরা দেবে। মৌমিতা মায়াকে ফোন করে হাবীবের এ কথাগুলো শেয়ার করে আর মলিন কন্ঠে বলে,
-আপু পিচকী টা কেমন আছে?
ওপার থেকে মায়া,
-পিচকী? কে?
-হুম বুঝলেনাতো, তোমার ছোট্ট, আদুরে, যে আমাকে খালামুনি বলবে।
-ও, আচ্ছা! এখনই দেখি আদর দিয়ে বাদর বানানোর চিন্তা,
-বাদর? সুন্দরতো! ওকে সত্যিই আদর দিয়ে বাঁদর বানিয়ে দেবো, দেখবে তোমার কোন কথাই শুনবেনা, বরং আমার কথামতো চলবে আর আমাকে বস বলবে।
হেসে দেয় মায়া,
হাবীব ক্লাস করে ফিরে এসেছে, কাজের ছোট্ট মেয়েটি দরোজা খুলে দিয়েছে, হাবীব চুপচাপ একটু আড়ালে দাড়িয়ে মৌমিতাকে দেখছে, আর ওর উচ্ছলতা ভরা কথাগুলো মনের রেকর্ডিংয়ে গেঁথে রাখছে, বড্ড কম সময়ের অতিথী মৌমিতাটা!
-তাইতো বুঝতে পারছি......
-আপু!
চমকে ওঠে মায়া, হঠাৎ ওর এমন করে ডাক দেওয়ায়,
-আমি পিচকীটাকে দেখতে পাবো তো!
মায়া হঠাৎই সম্বিত ফিরে পায়, মৌমিতার কল্পনার সাথে বাস্তব থেকে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলো। কেঁদে ফেলে ওপারে, কিন্তু এপারের মৌমিতাকে বুঝতে দেয়না,
-হ্যা অবশ্যই দেখবে,
-আপু ওকে দেখার খুব ইচ্ছে আমার, কিন্তু. আমিতো ওকে দেখতে পাবোনা, তার আগেই........
শব্দ করে কেঁদে ফেলে মৌমিতা, হাবীব দ্রুত এগিয়ে আসে মৌমিতাকে জড়িয়ে নেয়, মোবাইল পড়ে গেলেও ডিসকানেক্ট হয়নি, মায়া মৌমিতাকে ডাকতে থাকে, হাবীবও কাঁদে বেশ কিছুদিনের জমানো কান্না একসাথে করে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে, ওপারে মায়াও কাঁদে।
অনেকটা সময় পর স্বাভাবিক হয় ওরা, দুজনই ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে, সন্ধা পার হয়েছে অনেক আগেই। হাবীব মৃদু কন্ঠে,
-মৌমিতা তুমি বলোতো আমার কী কী খেতে ভালো লাগে দেখিতো এতোদিনে কী জেনেছ!
-আমি সব জানি......
-কিন্তু তোমার সবকিছুতো আমি জানিনা, তাহলে কী হলো? শুধু দুইটা খাবারের কথা জানি, আইসক্রিম আর ফুচকা।
-জানতে চাও?
-হুম।
-নুডলস, শুটকী মাছ, অবশ্য সেটা শুধুমাত্র মায়ের হাতের রান্না, আপু রান্না করলেও এতো ভালো হয়না, চিকেন ফ্রাই, দই, ছানার মিষ্টি! আমি জানি হাবীব তুমি কৌশলে আমার পছন্দগুলো শুনে নিচ্ছ। আমি তোমার নিজের মধ্যে কোন অপূর্ণতা থাকতে দেবনা, সে জন্যই বলছি। এতে আমি না থাকলেও তুমি তৃপ্তি পাবে আমি জানি।
চুপ হয়ে যায় হাবীব এখন ঠিক কী বলা উচিত হাবীব ভেবে পায়না, আর সে মুহুর্তেই হাবীবের মোবাইল বেজে ওঠে, মায়া ফোন করেছে,
-আসসালামু আলাইকুম আপু, কেমন আছেন?
-আছি হাবীব, এখন মৌমিতা ঠিক আছেতো?
-হ্যা ঠিক আছে আমরা দুজন নাস্তা করছি।
লাউড স্পিকার দেয় হাবীব,মৌমিতাও শুনতে পায়,আরমান ওপাশ থেকে কথা বলে,
-হাবীব তোমরা কিছুদিনের জন্য বিনোদনগরে এসো, সব আত্মীয় স্বজনের বাসায় যাওয়া দরকার না? বিয়ের পরের দিনইতো চলে গেলে।
হাবীব কিছু বলার আগে মৌমিতা কথা বলে ওঠে, হেসে বলে
-ভাইয়া তুমি আমার মনের কথা কী করে বললে? আমি কিছুক্ষণ আগেই হাবীবকে একথা বলবো বলে ভাবছিলাম।
মায়া হেসে দেয়, আরমানও হেসে,
-ভাই বোন কীনা? ভাই বোনেরই তো মনের মিল থাকে।
হাবীব মুচকী হেসে,
-ভাইয়া আমিও এমনটিই ভাবছিলাম। আসবো দু একদিনের মধ্যেই। আপু মা কেমন আছেন?
মায়া স্বাভাবিক কন্ঠে,
-মা ভালো আছেন, চাচীরা আছেন সাথে, মৌমিতা তোমার সাথে কথা হয়নি?
-হ্যা আপু সকালে হয়েছিলো।
-হাবীব তোমার বাবা মা ভালো আছেন?
-হ্যা ওনারাও ভালো আছেন।
কথা শেষ করে মোবাইল রেখে দেয় হাবীব। ওরা এশার নামাজ পড়ে বের হবে শপিং করতে, তারপর ঘুরবে, খাবে।
................................................................
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)