
.............................................
৫.
ফজরের আজান ভেসে আসছে কাছাকাছি কয়েকটি মসজিদ থেকে । কী সুমধুর কন্ঠের আজানগুলো, মায়া খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে। আজান শেষ হলে অজু করে এসে নামাজ পড়ে নেয় মায়া। পরে মৌমিতাকেও নামাজ পড়ার জন্য ডাকে,
-মৌমিতা ওঠো নামাজটা পড়ে নাও।
মৌমিতার ঘুম জড়ানো কন্ঠ,
-হ্যা আপু।
-তোমার ভাইয়াকে ডাকোতো একটু।
-উনি আবার নামাজ পড়ে নাকী?
-হুম পড়ে।
-আচ্ছা আপু ডাকছি।
কিন্তু তার আগেই আরমান উঠে বসলো, হেসে বললো,
-এখন কেমন লাগছে?
- ভালো, ভাইয়া আমি আর আপু নামাজ শেষে একটু হাসপাতালের ছাদে যাবো, তুমি কী যাবে?
-না মৌমিতা, আমি নামাজ শেষ করেই অফিসের দিকে চলে যাবো।
-অ, কিন্তু নাস্তা না করে প্লিজ যেওনা ভাইয়া।
-আচ্ছা তাহলে আমি বড় খালামনির ওখানে খেয়ে যাবো ঠিকআছে? কথাটা বলে হাসলো আরমান।
হঠাৎ আরমান মায়াকে লক্ষ্য করে,
-বাবা মা কী আছেন ওখানে নাকী চলে গেছেন?
-চলে যাওয়ারই কথা, বাবা এমনটাই বলেছিলেন।
বের হয়ে যায় আরমান।
ছাদে উঠে দুবোন অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, নিজেদের বিষয় ইসলামের মৌলিক ইবাদাত, ফরজ কাজগুলো সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা। অনেকটা সময় ওরা ছাদেই থাকলো। মৌমিতাকে এখনও জানানো হয়নি ওর ক্যান্সার। হঠাৎই মৌমীতা মায়াকে প্রশ্ন করে,
-আপু আমার কী এমন হয়েছে যে হাসপাতালে থাকতে হবে? আমি কী পরীক্ষা অবধী বাঁচবো?
-মায়ার দৃষ্টি ছলোছলো করে, মৌমীতাকে লক্ষ্য করে,
-এসব কথা বলোনা মৌমীতা, ইনশাআল্লাহ তুমি ঠিক হয়ে যাবে। এখন চলো মা হয়তো এসে গেছেন।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৌমিতা,
-চলো আপু। একটু পরে মৌমিতা মলিন কন্ঠে ছাদ থেকে নামতে নামতে,
-আপু তুমি কী এখন চলে যাবে?
-না
-তোমার অফিস?
-দু দিনের ছুটি নিয়েছি।
-ও! খুব ভালো। ওরা কেবিনে প্রবেশ করেই ওদের মা কামরুননাহারকে দেখলো নাস্তা নিয়ে এসে রেডি করছেন, মায়া বললো,
-মা কখন এসেছো?
-এইতো মা এখনই।
-আরমান ওখানে গিয়েছিলো?
-হ্যা নাস্তা করে বিদায় নিয়ে অফিস গেলো।
মর্নিং চেক আপের জন্য ডাক্তার এসেছেন। চেক আপ করে বের হবার পর মায়াও পিছু পিছু এসে,
-এখন ওর কী অবস্থা?
ডক্টর দাঁড়িয়ে যান,
-আমি ডাকতাম আপনাদেরকে, যাই হোক, এখন কেমো থেরাপি দিতে হবে তিনমাসের মতো, তাতে একেবারে সুস্থও হতে পারে আবার......
- কী বলছেন!? সুস্থ না হওয়ার সম্ভাবনাও আছে?
-হ্যা, তবে ওকে আজকের কেমো থেরাপি দিয়ে দিলে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। সপ্তাহে তিনটা করে দিতে হবে।
-এসে এসে দিলেই চলবে?
-হ্যা। হঠাৎই মৌমিতা আসে,
-কী আপু এখানে কী করো? ......
ওর কথা শেষ না হতেই ডক্টর তাহমিদের স্ত্রী ডঃ ওয়াহিদা এসে,
-ও তুমি এখানে? মৌমিতার দিকে তাকিয়ে,
-এর কথায় কী বলেছিলে বাসায়? মৌমিতা?
-হুম।
মৌমিতা অবাক কন্ঠে,
-আন্টি আমাকে চেনেন?
-হ্যা চিনিতো, বিনোদনগরে থাকোনা? ওখানেতো আমরা মাঝে মাঝে গিয়ে থাকি।
-ও! চলে যান দুজনই।
মৌমিতার চোখে কিছু একটা খেলা করছে দেখে মায়া আশ্চর্য কন্ঠে,
-মৌমিতা কী ব্যাপার? তুমিও কী চেন ওনাদেরকে?
-হ্যা আপু, ঠিক ওনাদেরকে নয়, ওনাদের ছেলেকে।
-কী!
-হ্যা ওর নাম হাবীব, বুয়েটে পড়ে।
-কবে থেকে চেন?
-এইতো দেড় থেকে দু বছর হবে।
ওরা কেবিনের দিকে যেতে থাকে, মায়া মৃদু কন্ঠে,
-সে কী তোমাকে চেনে?
-জানিনা আপু। কিন্তু ওকে আমার ভালো লাগে......
মৌমিতার দৃষ্টি ভরা লজ্জা আর মিনতি,
-আমি কী বাঁচবো আপু? দ্রুত কেবিনে ঢোকে মৌমিতা, মায়াকে কিছুই বলতে দেয়া।
৬.
বিকাল বেলা।
মৌমিতা বসে আছে ওর পড়ার টেবিলে। কিন্তু বই হাতে নয়। ওর দৃষ্টি জানালার দিকে। কামরুননাহার রান্নাঘরের পাট চুকিয়ে মেয়ের কাছে এসে বসলেন, মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন অনেক্ষণ, মৌমিতা মায়ের মলিন মুখমন্ডলের দিকে তাকিয়ে,
-মা কিছু ভাবছো নাকী?
হাসার চেষ্টা করলেন মেয়ের সামনে,
-না মা তোকে দেখছি।...... কলিং বেল বাজলে কামরুননাহার উঠতে চাইলেন, কিন্তু মৌমিতা বাধা দিয়ে,
-মা তুমি বসো আমি খুলছি।
মৌমিতা গিয়ে খুলে দিয়ে দেখলো ডাঃ ওয়াহিদা এসেছেন, অবাক কন্ঠে,
-আন্টি আপনি?
কামরুননাহার তো ওনাকে দেখেই অবাক, ওনার কলেজ ফ্রেন্ড, বিস্মিত কন্ঠে,
-ওয়াহিদা না?
অবাক হন ডাঃ ওয়াহিদা, প্রশ্নকারীর চেহারা চেনা চেনা, কিন্তু চিনতে পারেননা,
-খুব চেনা মনে হচ্ছে, কিন্তু...... কামরুননাহার?!
-হুম।
-ওমা তোমাকেতো চেনাই যাচ্ছেনা, মৌমিতা তোমার মেয়ে?
-হ্যা। এসো ভেতরে এসো, তুমি আমার মেয়েকে চিনলে কী করে?
ডঃ ওয়াহিদা বসে বসতে,
-আমিতো ওকে দেখতে আসলাম গতকাল এখানে এসেছি। আর আমার হাজব্যান্ড, ডঃ তাহমিদ মৌমিতার চিকিৎসক।
-ও তাই! উনি তোমার হাজব্যান্ড? দেখেছো কলেজ শেষতো যোগাযোগও শেষ হয়ে ছিলো।
অনেক গল্প করলেন দু বান্ধবী মিলে, স্মৃতিচারণও করলেন সাথে হালকা নাস্তা সেরে নিলেন। এ সময় ডঃ ওয়াহিদার মোবাইল বেজে উঠলো, রিসিভ করে,
-হ্যা হাবীব কেমন আছো বাবা?
ওপার থেকে হাবীব,
-মা তুমি কোথায়?
-কেন কী হয়েছে? আমি তোমার নাহার আন্টির বাসায় গল্প করেছিলাম নাহারের কথা মনে পড়ে?
-হ্যা মা, ওনার বাসার ঠিকানাটা বলো।
বিস্মিত কন্ঠে ডাঃ ওয়াহিদা,
-তুমি ঢাকা থেকে ফিরেছ! তোমার এখানে আসতে হবেনা, আমি আসছি।
মোবাইল ব্যাগে রেখে হাসতে হাসতে,
-নাহার আমি উঠছি, আমার ছেলে হাবীব ঢাকা থেকে এসেছে, অবশ্য সকালে বলেছিলো সারপ্রাইজ দেবে।
কামরুননাহার মৃদু কন্ঠে,
-তোমার ছেলেকে নিয়ে এসো একদিন।
-আচ্ছা তোমরাও এসো, মৌমিতা বাসায় এসো, ঠিক আছে?
মৌমিতার এক্ষুনি চলে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ইচ্ছেটাকে দমন করে,
-আসবো আন্টি কালকেই, আপনার ছেলে কতদিন থাকবে?
প্রশ্নটা করে নিজের কাছেই ওর নিজেকে ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া মানুষ মনে হলো লজ্জায় লাল হয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। এক্ষেত্রেই প্রবাদ বাক্যটা মিলে যায় “চোরের মন পুলিশ পুলিশ”
অথচ ডাঃ ওয়াহিদা স্বাভাবিক কন্ঠে,
-এই পনেরো বিশ দিনের মতো, এসো হ্যা পরিচয় করিয়ে দেবো। আসছি, আল্লাহ হাফেজ।
৭.
রাত্রিবেলা।
খাবার টেবিলে মায়া, আর ওর শশুর শাশুড়ী। আরমান নেই ও মাঝে মাঝেই খুব দেরীতে ফেরে তাই ওর জন্য কেউ অপেক্ষা করেনা মায়া প্রথম প্রথম অপেক্ষা করতো কিন্তু আশরাফ চৌধুরী কড়াকড়ি ভাবে বলে দিয়েছেন, যে তোমাকে মূল্যায়ন করেনা তার জন্য আবার কিসের অপেক্ষা তুমি টাইমলি আমাদের সাথে খেয়ে নেবে বৌমা। আশরাফ চৌধুরী ছেলের এহেন আচরণে খুব কষ্ট পান নিজেকে মায়ার কাছে অপরাধী ভাবেন। আরমানের সাথে প্রয়োজন ছাড়া উনি কথা বলেননা। খাবার খাচ্ছেন আর হালকা কিছু কথা বার্তাও চলছে তিনজনের মধ্যে। মায়ার মোবাইল বেজে উঠলেও আশরাফ চৌধুরী আর আনোয়ারা চৌধুরী নিজেদের মধ্যে কথা চালিয়ে গেলেন, মায়া রিসিভ করে,
-হ্যা মৌমিতা কেমন আছো?
মৌমিতার গদগদ কন্ঠস্বর,
-আপু আমি আজ খুব খুব খুশি!
মায়াও আনন্দিত কন্ঠে,
-তাই! কী ব্যাপারে?
-আপু ডাঃ ওয়াহিদা আছেননা?
-হ্যা হ্যা কী হয়েছে ওনার?
-উনি আম্মুর কলেজ ফ্রেন্ড, আর ওনার ছেলে ঢাকা থেকে এসেছে।
-ও আচ্ছা এই ব্যাপার তাইতো বলি!
-আন্টি আমাদের বাসায় এসেছিলেন, আমাকে যেতে বলেছেন। আচ্ছা আপু রাখছি আম্মু খেতে ডাকছে।
মায়া রেখে দেয় মোবাইল, দীর্ঘশ্বস ফেলে, আশরাফ চৌধুরী মলিন কন্ঠে,
-কী হয়েছে বৌমা?
-বাবা মৌমিতার ফোন ছিলো। খুব খুশি হয়ে কথা বলছিলো, কিন্তু ব্যাথার সময় কতো কষ্টই যে পায়। তারপর আবার কেমোথেরাপি যেদিন দেয় সেদিন তো খুব কাহিল থাকে......
-টেনশন করোনা মায়া, দোয়া করো ও যেন সুস্থ হয়ে যায়।
হঠাৎই একটা অনাকাংখিত আনন্দের ঘটনা ঘটে যায় এখানে, মায়ার নাম্বারে আরমানের কল আসে, রিসিভ করে,
-হ্যালো!
-কে মায়া?
-হ্যা.........
-আচ্ছা শোন আজকে আমি বাসায় ফিরছিনা, তোমাকে জানালাম, আর বাবা মাকে তুমি জানিয়ে দিও।
মায়ার আনন্দ আর ধরছেনা, আরমান ফোন করে ওকে কিছু একটা জানাচ্ছে। বললো,
-আচ্ছা!
-কেন ফিরবনা জানতে চাওনা?
-কেন!
-অফিস থেকে ভিজিটে এসেছিলাম, তাই থেকে যেতে হচ্ছে, কাল বিকালের মধ্যে বাসায় ফিরবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ হাফেজ।
মায়া নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা, আনোয়ারা চৌধুরী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন, মায়া একনাগাড়ে সব বলে শেষে বললো,
-আপনার ছেলের ফোন ছিলো।
-তাই! দুজনই একসাথে বলে উঠলেন।
-হ্যা বাবা। আজ ফিরবেনা সেটা জানালো।
-ও খুব ভালো কথা।
-আমি উঠি বাবা। সম্মতিসূচক মাথা নাড়েন আশরাফ চৌধুরী।
মায়া নিজের রুমে গেলো।
কিছুক্ষণ পরে, লিপি ডাইনিং টেবিল পরিষ্কার করে নিজের খাবার নিয়ে মায়ার রুমে ঢুকলো, বললো,
-ভাবী আমি এইহানে বসে খাই?
-হ্যা খাও, কিন্তু কেন?
-কতা আছে।
মায়া মুচকী হেসে,
-কী কথা বলো।
-ভাইজান কী আগে কাউরে ভালোবাসতো?
এবার বিরক্ত হয় মায়া,
-লিপি বর্তমানটা ঠিক থাকলে তবেই না অতীত আর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করা যায়, এসব প্রশ্ন কখনো করবেনা।
-ভাবী আপনের কষ্ট দেখলে আমার খুব খারাপ লাগে।
মায়া খেয়াল করলো লিপি কাঁদছে। মায়ার দৃষ্টিও জলে ভরে গেলো, অবাক হয়ে লিপিকে দেখছে সে, দেখলো ওর ঐ মুখটাতে কতো সরলতা। লিপি নিঃশব্দে খাওয়া শেষ করে বের হয়ে গেলো। মায়া এশার নামাজ পড়ে শুয়ে পড়লো, স্বপ্ন দেখলো, সেই স্বপ্নদূত একটা নদীর ওপার থেকে মায়ার দিকেই এগিয়ে আসছে, তার পরণে ঘি কালারের পাঞ্জাবী আর সাদা ট্রাউজার। মায়া কেন যেন তাকে ডাকছে, স্বপ্নদূতের মুচকী হাসির ঢেউ যেন উছলে পড়লো নদীর পানির জোৎস্না মাখানো সুন্দরে। মায়ার সামনে এসে দাড়ায়,
-কী হয়েছে?
-আপনি সেদিন চিরকুটে যে কথাগুলো লিখে দিয়েছিলেন সেগুলো সত্যিই খুব মূল্যবান। আরো কিছু সেরকম থাকলে দিননা......
আরো একটি কাগজ বের করে মায়ার হাতে দেয় স্বপ্নদূত।
চলে যায় স্বপ্নদূত। মায়া কাগজটি খোলে তাতে লেখা,
“প্রভুর প্রিয়তম হওয়ার চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর নেই। তার সান্নিধ্য পেলে পৃথিবীর সকল মামা মমতা পাওয়া না পাওয়া তুচ্ছ একটি ব্যাপার, অতএব প্রতিটি সময় সেই স্বত্তাকে স্মরণ করুন। স্বপ্নদূত।
৮.
বিকেলের পড়ন্ত রোদের আলো দেখছে হাবীব। প্রকৃতির বড় ভক্ত সে। নিজেদের বাসা থেকে দুই কিলোমিটার দুরে একটা শানবাঁধানো পুকুরঘাট। সেখানে বসে দেখছিলো কিছু হাঁস সেই পুকুরে সাতার কাটছে, মাঝে মাঝে পানিও খাচ্ছে।
মোবাইল বেজে উঠলে চমকেই ওঠে,ওর মায়ের ফোন,
-আসসালামু আলাইকুম, ডক্টর আপনার পেশেন্টের জন্য কী আল্টিমেটাম আছে বলুন!
- হাবীব মাঝে মঝেই ওর মা বাবাকে এভাবে সম্বোধন করে।
-খুব দ্রুত বাসায় এসো বাবা।
হাবীব সিরিয়াস হয়ে,
-কেন মা কোন সমস্যা? আসছি, আমি এক্ষুণি আসছি।
রিকশা নিয়ে বাসায় যায়। ভেতরে ঢুকেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো, মৌমিতাকে দেখে।
মৌমিতা ওকে দেখার সাথে সাথে নিজের নিয়ণ্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে এমন অবস্থা।
হাবীব কিছু না বলে দ্রুত মায়ের কাছে যায়,
-কী হয়েছে মা?
-ও এসেছো? তোমার বাবা রুমে তোমাকে ডাকছে তবে তার আগে এসো ওর সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দিই, ও হলো মৌমিতা, আমার কলেজ ফ্রেন্ডের মেয়ে, আর মৌমিতা তুমি তো চেনই, মৌমিতা উৎফুল্ল কন্ঠে,
-আপনি কেমন আছেন?
-এইতো আলহামদুলিল্লাহ। আপনি ভালো আছেনতো না?
উত্তরের অপেক্ষা নাকরেই চলে গেলো বাবর রুমের দিকে, মৌমিতার মন খারাপ হওয়া দেখে ডঃ ওয়াহিদা,
-ও এরকমই, চিন্তা করোনা পরে ঠিক হয়ে যাবে, তারপর এসোতো তোমার সাথে গল্প করি।
ডক্টর তাহমিদ পাশেই ওনার ক্লিনিকে যাবার জন্য রেডি হচ্ছিলেন হাবীবকে দেখে,
-এসো হাবীব।
-বাবা বের হচ্ছো?
-হ্যা। তবে তোমাকে গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলি, মৌমিতাকে দেখলেনা?
-হ্যা বাবা।
-ঐ মেয়েটা ব্রেইন ক্যান্সারের রোগী। সময় নেই খুব বেশী, শেষ চেষ্টা হিসেবে কেমো থেরাপি দেয়া হচ্ছে। তবে ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। একটু থেমে, মেয়েটা তোমাকে খুব পছন্দ করে।
বিস্মিত হয়ে ওঠে হাবীব , কারণ ও মেয়েটাকে চেনেইনা।
ডঃ তাহমিদ বলতে থাকেন,
-তোমাকে এক কাজ করতে হবে ওর সাথে ফ্রেন্ডলি চলতে হবে, ও যে কথাগুলো শুনতে পছন্দ করে তোমাকে সেভাবেই কথা বলতে হবে.........
-বাবা তুমি কী ভেবে কথাগুলো বলছো?
-হ্যা আমি ভেবেই বলছি, একজন পেশেন্টের জন্য একজন ডাক্তার হয়ে বলছি, আমি জানি তোমার জন্য কঠিণ হবে তবুও............
-অসম্ভব বাবা!
-তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো? আমি মেয়েটার মাকে কথা দিয়েছি।
চুপ হয়ে যায় হাবীব, ডঃ তাহমিদ মলিন কন্ঠে,
-তুমি তোমার গাড়ীতে করে ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবে।
-আমি পারবোনা বাবা, এটা উচিত নয়।
-কারো জীবনের জন্য...... মৌমিতা হাবীবের শেষ কথা শুনে মলিন কন্ঠে,
-আংকেল আমিতো একাই যেতে পারবো।
তাহমিদ হেসে,
-না মা ও যাবেতো।
মৌমিতার আবারো ব্যাথা উঠে যায়, আর শরীর প্রচন্ড দুর্বল থাকায় মাথাঘুরে পড়ে যায়, হাবীব এবার ওর বাবা মা দুজনের দিকেই একবার করে তাকায়,
-আচ্ছা ঠিক আছে। পরে মৌমিতা একটু সুস্থ হলেই হাবীব পৌঁছে দিতে গাড়ী নিয়ে বের হয়ে, গাড়ী চলছিলো আপন গতিতে। মৌমিতার ফোন বেজে ওঠে, রিসিভ করে,
-হ্যা আপু।
-তুমি কী এখন গাড়ীতে?
বিস্মিত কন্ঠে,
-হ্যা! তুমি কী করে জানলে। মা বলেছে নাকী?
-নাতো মা বলেনি আমি তোমার পেছনের গাড়ীতে, ব্যাংক থেকে ফিরছি। তোমার সাথে হাবীবও আছে?
-হ্যা! আপু আমার কিন্তু ভয় করছে, তুমি কী করে জানলে এখন তো অন্ধকার হয়ে এসেছে।
-ড্রাইভার বললো।
-ওমা সে কি কালকেই তো বললে, নতুন ড্রাইভার রেখেছো, আমাকে সে চিনলো কী করে?
-তাইতো!
হঠাৎই ড্রাইভারের পেছনে একটা চিরকুটে দেখতে পেলো, আপনার বোনকে কৌশলে এড়িয়ে যান, আমি স্বপ্নদূত।
মায়া নিজেই এবার চমকে উঠলো, মৌমিতাকে এড়িয়ে যেতে,
-ঐ একটু দুষ্টুমি করছিলাম, সত্যি হয়ে গেলো এখন রাখছি হ্যা।
-আচ্ছা আপু। .......................................
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)