
১.
একাকী অন্ধকার রুমে বসে আছে মায়া। স্মৃতিতে ভেসে উঠেছে এক স্নিগ্ধ অতীত, যে স্মৃতি আজও এই বিষাদময় মূহুর্তে সামান্য হলেও সুখের দোলা দিয়ে যায়। ওর বাবা ছিলেন সাদা মাটা একজন মানুষ, মায়াকে খুব আদর করতেন, মায়ের মমতাও ছিলো অসাধারণ তৃপ্তিময়, ছোটবোনের চেহারায় মায়া খুঁজে নিতো পরিপূর্ণতা। আজও মায়ার বাবার বলা কয়েকটি বাক্য খুব মনে পড়ে, বাবা বলেছিলেন, “আম্মু ভালো মানুষরা পৃথিবীতে রুপের বিচার করেনা, তারা করে গুনের বিচার, তুমি তোমার গুণকে বিকশিত করে দাও, দেখবে সবাই তোমাকে ভালোবাসছে। শুধু রূপ দিয়ে কিছুই হয়না মা, শুধু মাত্র চোখের খোরাকই জোগাতে পারে, কিন্তু গুণ, অন্তরের প্রতিটি কোন থেকে সমস্ত কালিমা ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়......... কেঁদে ফেলে মায়া। ওর বাবার কথাগুলো সত্যি ছিলো দু বছর আগে অবধী। মায়া বেশ ভালো ষ্টুডেন্ট ছিলো, সবাই খুব প্রশংসা করতো। কারণ ওর রেজাল্টে সবার মন ভরে যেতো। ওরা থানা শহরে থাকে, বিয়েও হয়েছে একই শহরে, শহরটির নাম বিনোদনগর। মায়া যখন ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ার তখন বাবা মারা যান। মা আর বোনের পুরো ভার পড়ে যায় মায়ার উপরে, খুব কষ্টে বায়ো কেমিষ্ট্রতে অনার্স শেষ করে ব্যাংকের চাকুরীতে জয়েন করলো , পাশাপাশি মাষ্টার্সও শেষ করলো। হঠাৎই একদিন মা এসে মায়াকে বললেন,
- মায়া তোমার বয়স হয়েছে, এখন বিয়ে করা দরকার। একটা প্রস্তাব এসেছে, ছেলে বিদেশে কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করেছে, ফিরবে দু এক মাসের মধ্যে। ছেলে নাকী বাবার পছন্দ করা মেয়েকেই বিয়ে করবে, ছেলের বাবা বিশাল সম্পদের মালিক, আশরাফ আলী চৌধুরী। উনি বারবার আমাকে বলেছেন তোমাকে ওনার পুত্রবধু করবেন বলে। আমি আর না করতে পারিনি। ছেলে দেশে ফিরলেই বিয়ে হবে।
মায়া তখন বলেছিলো,
-ছেলের আমাকে দেখা দরকার, না দেখলে পরে সমস্যা হতে পারে, এমনকী পছন্দ নাও করতে পারে।
মায়ার ছোটবোন দুজনের কথা শুনতে শুনতে বলেছিলো,
-আপু এতো চিন্তা করছো কেন ছেলেতো বলেইছে সে তার বাবার পছন্দে বিয়ে করবে। এরপর............
মায়ার সাথে ছেলেটির বহুবার ফোনে কথা হয়েছে, মায়া প্রত্যেকবারই বলেছে,
-আমার গায়ের রং কিন্তু কালো, আমি ততোটা সুন্দরী নই, আপনার আমাকে দেখা উচিত।
ছেলেটি বলতো,
-নিজেকে কেউ কোনদিনই সুন্দরী মনে করেনা, আপনি যাই বলেন না কেন আমি আপনাকেই বিয়ে করবো।
বিয়েটাও দুতিন মাসের মধ্যেই হয়ে যায়।
কিন্তু মায়ার বাবার কথাগুলো তখন থেকে যেন অচল হতে শুরু করেছে, অথবা ঐ কথাগুলো বিয়ে পরবর্তী জীবনে একজন নারীর স্বামীর জন্য প্রযোজ্য নয়। বিয়ের পরে শুধু প্রথম রাতটুকু স্বামীকে কাছে পেয়েছিলো তারপর আরও ও দু বছর অতিবাহিত হয়েছে, আজ পর্যন্ত মায়ার স্বামী মায়াকে ভালোবেসে কাছে টানেনি। আরমান চৌধুরী মায়ার হাজব্যান্ড আজও মায়াকে ভালোবাসী কথাটুকুও বলেনি। আরমান অনেক সুন্দর হ্যান্ডসাম একজন যুবক...... ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে পড়েছিলো মায়া,কলিং বেলের শব্দে চমকে ওঠে। অশ্রু মুছে ঘরে আলো জ্বালালো, আরমান এসেছে, রাত প্রায় বারোটা বাজতে চললো। মায়া কাজের মেয়েটিকে ডেকে,
-লিপি তুমি খুলে দাও।
লিপির দৃষ্টিতে মায়ার জন্য সহমর্মিতা কারণ ও জানে মায়া আরমানের সামনে গেলেই বাজে আচরণ করে,
-দিতেছি ভাবীজান।
আরমানের রুমে মায়ার জায়গা নেই, তবুও আরমান বাইরে থেকে ফেরার আগে মায়া রুমটা পরিচ্ছন্ন করে রাখে।
লিপি ফিরে এসে হন্তদন্ত হয়ে বললো,
-ভাবী ভাইজানরে খুব দুর্বল মনে অইতাছে, ওনার এককী হাটার মতো অবস্থা নাই সাথেওতো কেউ নাই......
মায়া ছুটে যায় এগিয়ে নিতে, মায়াকে দেখেই,
-বলেছিনা তুই আমার সামনে কখনো আসবিনা, তোকে দেখলে আমার বমি আসে......... আরো অনেক বাজে ধরণের কথা। মায়া সাইডে দাড়ায়, ওর দৃষ্টি ঝাপসা। মায়া রান্না ঘরে ঢুকে খাবার রেডী করে লিপির হাতে দেয়,
-লিপি ওকে খাবারটা দিয়ে এসো।
২.
ভোরবেলা মায়া রান্নাঘরে নাস্তা তৈরী করছে। ওর শাশূড়ী মিসেস আনোয়ারাও আছেন রান্নাঘরে, মায়ার দিকে তাকিয়ে মলিন কন্ঠে,
-মায়া তুমি কাল সারারাত ঘুমাওনি তাইনা?
মায়া ইতস্তত কন্ঠে,
-না মা মানে... আপনি জানলেন কী করে?
-জানি আমি, তোমার চোখ দেখেই বুঝতে পারছি।
মায়ার মাথায় হাত রাখেন শাশুড়ী মা,
-কিছু মনে করোনা মা, আল্লাহ হয়তো তোমার পরীক্ষা নিচ্ছেন, তুমি ধৈর্য ধরো। মায়ার খুব কান্না পাচ্ছে, কিন্তু নিজেকে খুব কঠোরভাবে দমন করলো, পাশেই লিপি নিরবে অশ্রু ফেলছে । আনোয়ারা চৌধুরী রান্না ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। ছুটা বুয়া রান্নাঘরের দরোজায় এসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, মায়া নিজেকে সামলে নিয়ে,
-খালা কিছু বলবেন?
বুয়া মাথা নাড়লো, হ্যা সূচক।
মায়া মৃদু স্বরে,
-কী?
-আপনার চাচা আসছে, বড় সাব ওনার লগে কতা কইতাছেন, আপনারে ডাকতাছেন।
ওড়না মাথায় দিয়ে ড্রয়িং রুমে গেলো, একদিনের মেহমান আসলে সাধারণত ওখানেই বসানো হয়। সুসজ্জিত এই ড্রয়িং রুমটির দরোজায় দাড়িয়ে মায়া ওর ছোট চাচাকে দেখতে পেয়ে, আবেগী কন্ঠে,
-ছোট চাচা তুমি? কেমন আছো?
শশুরের পাশে বসে চাচার মুখোমুখি হয়,
ছোট চাচা রাজিব আকমল কিছুই বলতে পারছেননা যেন, আশরাফ চৌধুরী মায়ার মাথায় হাত দিলেন, উনিও কিছুই বলছেননা। লিপি নাস্তা নিয়ে ঢুকলো। আরমানও এসেছে, আরমান মায়ার আত্মীয় স্বজনের সামনে মায়ার সাথে খারাপ আচরণ করেনা কখনোই, ভেতরে ঢুকে সালাম দেয়,
-ছোট চাচা কেমন আছেন? সবাই ভালো আছে বাসার?
এবার মুখ খুললেন ছোট চাচা,
-বসো বাবা, আমার পাশে বসো। ভালো কী করে থাকি বলোতো.........
থেমে গেলে মায়া অস্থির কন্ঠে,
-চাচা বলছনা কেন কী হয়েছে?
আনোয়ারা চৌধুরীও ঢোকেন,
-কী হয়েছে ছোট বেয়াই?
এবা আশরাফ চৌধুরী কথা বলে ওঠেন,
-মায়া আমি বলছি মা তুমি ভেঙ্গে পড়োনা, আসলে তোমার ছোট বোনের ব্রেনে ক্যান্সার ধরা পড়েছে, ও এখন হাসপাতালে, জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেছে, তুমি আর আরমান তোমার চাচার সাথেই চলে যাও, পরে আমরাও আসবো। মায়ার কানে কে যেন গরম শীশা ঢেলে দিলো, প্রচন্ড গরম হয়ে এসেছে, মাথা ঝিমঝিম করছে। আরমান বললো,
-চাচা আপনি আমাদের অন্য গাড়ীতে মায়াকে নিয়ে যান আমি অফিস শেষে আসবো।
৩.
হাসপাতালে ছটফট করছে মায়ার ছোট বোন মৌমিতা। অস্পষ্ট গোঙ্গানীর আওয়াজ বেরুচ্ছে মুখ দিয়ে। মায়ার মা কামরুননাহার, মেয়ের শিওরে বসে মাথা নাড়ছেন আর নিরবে অশ্রু ফেলছেন। মৌমিতা এবার এস এস সি পরীক্ষা দেবে। ও মায়ের দিকে তাকিয়ে নিজেকে শক্ত করতে চাইছে। কিন্তু এতোটা কষ্ট এর আগে কখনো হয়নি মৌমিতার। ওর মনে হচ্ছে মাথার মগজগুলো ফুটছে। মৌমিতার গোঙ্গানো কন্ঠস্বর,
-মা তুমি কেঁদনা, আমি ঠিক হয়ে যাব দেখে নিও, তুমি শুধু দোয়া করো।
নিরব হয়ে যায় মা মেয়ে দুজনই, হাসপাতালের ছোট্ট এই কেবিনে ডাক্তার প্রবেশ করেন, ডাক্তারকে দেখে মৌমিতা অস্থির কন্ঠে,
-ডক্টর, আমার মনে হচ্ছে মগজগুলো বের করলে ভালো লাগবে......
ডাক্তার এসে খুব দ্রুত মৌমিতাকে ঘুমের ইনজেকশন দিতে বললেন পাশে ঔষধ ও ইনজেকশনের পাত্র হাতে দাড়ানো নার্সকে। নার্স ইনজেকশন পুশ করলো। ডাক্তার তাহমিদ কামরুন নাহারকে লক্ষ্য করে,
-মাথা ব্যাথা কতদিন থেকে?
- দু বছর তো হবেই, মাঝে মাঝেই বলতো মা মাথা ব্যাথা করছে, পরে প্যারাসিটামল খেলেই ভালো হয়ে যেতো। কিন্তু গতরাতে ব্যাথাতে অস্থির হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
ডাক্তার মৌমিতার দিকে একবার তাকালেন দৃষ্টিতে মায়াবী ছায়া, মলিন কন্ঠে,
-মেয়েটাতো অনেক ছোট! বলেই বেরিয়ে যান, উনি বের হওয়ার সাথে সাথে টিফিন ক্যারিয়ার হাতে কেবিনে প্রবেশ করেন মৌমিতার বড় খালা কাকলী বেগম, আর খালাতো ভাই মিনহাজ। ওনারা জেলা শহরেই থাকেন। মৌমিতাকে ঘুমাতে দেখে, বোনের পাশে বসেন, শান্তণা দিয়ে অনেক কথা বলেন, টিফিন ক্যারিয়ার পাশের টেবিলে রাখেন, মিনহাজকে লক্ষ্য করে,
- মিনহাজ তোমার ওটাও রেখে দাও।
মিনহাজ ক্লাস এইটে পড়ে, মৌমিতা ওর দু বছরের বড় হলেও খুব ঘণিষ্ঠ বন্ধুত্ব ওদের। মিনহাজ কেঁদেই ফেলে। কামরুননাহার মলিন কনঠে,
-মিনহাজ কেমন আছো বাবা?
মিনহাজ চোখ মুছে,
-খালামনি আপুর কী হয়েছে?
কামরুননাহার কিছু বলার আগেই ঝড়ের বেগে কেবিনে প্রবেশ করলো মায়া। পেছনে রাজিব আকমল। মায়া কিছই বলতে পারলোনা মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো কিছুক্ষণ। কাকলী বেগম মায়ার কাঁধে হাত রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে কাঁদলেন খানিকক্ষন। মায়া স্বাভাবিক হয়ে মিনহাজকে কাছে টেনে নিয়ে,
-এই দু বছরে অনেক বড়ো হয়ে গেছো তুমি, কেমন আছো? কিসে পড়ো?
-ভালো আপু, এবার জে এস সি পরীক্ষা দিবো।
-তাই? খুব ভালো।
কামরুননাহার রাজিব সাহেবকে প্রেসকিপশন বের করে দিয়ে,
-এই ঔষধগুলো একটু আনতে হবে।
-হ্যা ভাবী দাও আমি নিয়ে আসছি।
কাকলী বেগম মলিন কন্ঠে,
-মায়া জামাই আসবেনা?
-আসবে খালামনি, অফিস শেষে।
যোহরের আজান ভেসে আসে কাছেরই এক মসজিদ থেকে, মায়া ওর মাকে লক্ষ্য করে,
-মা আমি হোটেল থেকে খাবার নিয়ে আসছি, মৌমিতা এখন কী খাচ্ছে, ডাক্তার বিশেষ কিছু কী খেতে বলেছেন?
-না তবে বেশী বেশী কাঁচা পেঁপে আর সালাদ খাওয়ার কথা বললো।
কাকলী বেগম বললেন,
-মায়া হোটেলের খাবার খাওয়ার বা খাওয়ানোর কোনরকম চিন্তা মাথায় রেখোনা, আমি তোমাদের সবার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে এসেছি, আর সব বেলার খাবারই নিয়ে আসবো।
মিনহাজ বাইরে যাচ্ছিলো দেখে মায়া বললো,
-মিনহাজ কোথায় যাও?
-আপু আমি একটু মসজিদে যাবো।
অবাক হয় মায়া,
-তুমি নামাজ পড়ো? তাও আবার মসজিদে গিয়ে!
মিনহাজ বের হয়ে যায়, কামরুননাহার, কাকলী বেগম মায়া তিনজনই নামাজ পড়ে নেয়।
মৌমিতা জেগে মায়াকে দেখে খুশি হলো, এখন ওর মাথা ব্যাথা অনেকটা কম।
অনেক পরে মিনহাজ কেবিনে ঢুকলো রাজিব সাহেবের পিছুপিছু। মৌমিতা ওকে দেখে উঠে বসে কাছে ডাকে,
-মিনহাজ কেমন আছো ভাইয়া?
-আপু কী হয়েছে তোমার?
-কী জানি মাথা ব্যাথা করে শুধু।
মায়া নামাজ শেষ করে এসে মৌমিতার কাছে বসলো, বুকে জড়িয়ে নিলো। বললো,
-তোমার কী খেতে ইচ্ছে করছে?
-কি জানি বুঝে পারিনা।
৪.
সন্ধার একটু আগে আরমান কেবিনে ঢুকলো, শাশুড়ী মা খালা শাশূড়ী, মিনহাজের সাথে ফরমালিটিমুলক কথাবার্তা সেরে মৌমিতার পাশে বসলো,
-এখন কেমন লাগছে মৌমিতা?
-এইতো ভাইয়া মোটামুটি।
- আরমান অনেক খাবার দাবার এনেছে সেগুলো শাশুড়ীমার হাতে দিয়ে,
-আম্মা এগুলো মৌমিতার জন্য।
-এগুলোর কী দরকার ছিলো বাবা?
মায়া নামে যে কেউ একজন এখানে আছে সে ব্যাপারে খেয়াল নেই আরমানের।
মৌমিতা মলিন কন্ঠে,
-ভাইয়া, তুমি কিন্তু আজকে যাবেনা।
-না মৌমিতা যেতে হবে আমি কালকে আবার আসবো।
-না ভাইয়া তোমার আর আপুর সাথে আমার অনেক কথা জমে আছে। ভালো হতো থাকলে, আম্মু না হয় খালামনিদের ওখানে যাবে......
-ঠিক আছে মৌমিতা থাকবো,
-থ্যাঙ্ক ইউ ভাইয়া।
সন্ধা সাড়ে সাতটার দিকে, আশরাফ চৌধুরী ও আনোয়ারা চৌধুরী আসলেন। কামরুননাহার বেগম তাদের সাথে কথা বলছেন।, কাকলী বেগম, মিনহাজ বাড়ি চলে গেছে। মায়াও নেই, ওর খালার বাসায় গেছে খালাকে সাহায্য করতে, কারণ ওর শশুর শাশুড়ীর খাবারের ব্যবস্থা ওখানেই করা হচ্ছে।
প্রায় নয়টায় মায়া আর মিনহাজ ফিরলো খাবার নিয়ে, মৌমিতা মায়া আর আরমানের জন্য। আশরাফ চৌধুরী, আনোয়ারা চৌধুরী আর কামরুননাহার বেগমকে মিনহাজ ওদের বাসায় নিয়ে গেলো। ডাক্তার এসে চেক করলো, মৌমিতা মলিন কণ্ঠে,
-ডক্টর আমাকে ঘুমের ঔষধ দেবেননা প্লিজ।
ডাক্তার কথা রাখলেন।
মৌমিতা আরমানকে লক্ষ্য করে কোন রকম ভূমিকা ছাড়ায়,
- ভাইয়া, আমি তোমার আর আপুর খুব সত্য একটা কথা জেনে ফেলেছি, ভাইয়া তুমি আপুকে সহ্য করতে পারোনা শুধু আমাদের সামনে ভালো আচরণ করো, কেন ভাইয়া আমার আপুতো খুব ভালো......
আরমান এরকম কথা শুনবে বুঝতেই পারেনি, তবুও স্বাভাবিক কন্ঠেই,
-কেউ জেনে গেলে তার কাছে লুকানোর কিছু নেই, তবে তুমি যা বলছো তা সত্য, আমি মন থেকে যাকে মেনে নিতে পারিনা তাকে কী করে ......
মায়া চুপচাপ কোন কথাই বলছেনা, একদম চুপচাপ, আরমান বললো,
-ওকে আমার ভালো লাগেনা,......
মৌমিতা কেঁদে ফেলে,
-ভাইয়া তুমি এমন কেন? তুমি আপুর জীবনটা নষ্ট করে দিলে, আপু তোমাকে বিয়ের আগে কতোবারইতো বলেছিলো যে, আমাকে দেখা দরকার আপনার।
-সেটাইতো ভুল মৌমিতা।
-নিজের ভূলের কারণে অন্যকে কষ্ট দেয়া কী উচিত ভাইয়া?
-মৌমিতা তুমি এখনও অনেক ছোট, এসব কিছু তোমার বোঝার বাইরে.........
মায়া মলিন কন্ঠে,
-মৌমিতা এসব থাকনা, এতো কথা তোমার বলা যাবেনা, সুস্থ হয়ে নাও তখন বলবে। সিস্টার!
একজন নার্স ভেতরে প্রবেশ করে, মায়া দ্রুত কন্ঠে,
-ওর ঔষধগুলো দিয়ে দেন।
-ঠিক আছে.........
মৌমিতা মলিন হাসে,
- আপু তোমার এভাবে কতোদিন নিজেকে কষ্ট দিয়ে তোমার বরের কু কীর্তি লুকাবে? থাক তুমি যখন চাইছোনা বলবোনা।
নার্স এবার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে যাবার আগে,
-কাল থেকে ওকে কেমো থেরাপি দিতে হবে।
-কেমো ছাড়া কোন উপায় নেই?!
-না। বের হয়ে যায় নার্স, মৌমিতা ঘুমিয়ে পড়েছে।
আরমান কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে থাকে, মায়া কথা বলে,
-আপনাকে কিছূ কথা আমি বলতে চাই।
-আমি শুনতে চাইনা,
-না শুনতে হবে, আপনি কী চান সেটা আমার জানা দরকার। আসলে আমি আপনার মতো সুন্দর, হ্যান্ডসাম একজন হাজব্যান্ড পেয়েছি, কিন্তু আপনার পাশে আমাকে মানায়না, আর এ যোগ্যতা কখনো হবার নয়। এটা এমন এক যোগ্যতা যা আল্লাহ প্রদত্ত। আপনি আমার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্তই নেন না কেন আমি তা মেনে নেব। তবে আমার একটা অনুরোধ, আপনাদের বাড়ী থেকে আমাকে তাড়াবেননা। আমার মা তাহলে হার্টফেল করবে, আর বোনটা খুব কষ্ট পাবে, দেখলেনইতো আজ ওর অবস্থা.........
মায়াকে থামিয়ে দেয় আরমান,
-ঠিক আছে ঠিক আছে, এতো কথার কী আছে ? শুনলামইতো। কথা শেষ করেই আরমান শুয়ে পড়লো কেবিনে অন্য একটি সিঙ্গল বেডে। মায়া খুব কাঁদছে কী জানি, কিসের জন্য ওর মনটা ভেঙ্গে যাচ্ছে, চিৎকার করে কাঁদলেই যেন হালকা হতে পারবে, কিন্তু এই পৃথিবীর কোথাও গিয়েও যেন ওর সে উপায়টিও নেই!
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো মায়া। হঠাৎ স্বপ্ন দেখলো, একজন যুবক এসে ওকে একটা চিরকুট দিলো, তাতে লেখা,
“শত দুঃখ কষ্টকে নিমিষেই দুর করে পারবে
একটিমাত্র উপায়ে, আর তা হলো মহান স্বত্তার দরবারে আতমসমর্পন করলে।“ স্বপ্নদূত
মায়া অবাক কন্ঠে,
-কে আপনি?
যুবকটি চলে যাচ্ছে, কিন্তু মায়া স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে লোকটি বলেছে,
-আমি এই আসমানও যমীনের একমাত্র স্রষ্টার অধম এক সৃষ্টি।
ঘুম ভেঙ্গে যায় মায়ার। ....................................................
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)