ধর্ম ও গবেষনা

আশ্রয়

আশ্রয়
-তুমি একটু দাঁড়াও এখানে। আমি মসজিদ থেকে নামাজটা পড়ে আসি। বলেই হাসান মসজিদে দৌড় দেয়।  ঈদের পর পর নতুন বিয়ে হওয়া বিশাল ঝামেলার ব্যাপার। আজ এর বাসায় দাওয়াত তো কাল আরেকজনের বাসায়। দাওয়াত খেতে খেতে জামাই বউ ২জন ই ফুটবলের মতো ফুলে যাবে মনে হয়।  কিছুই করার নেই তার। বেড়াতে যাচ্ছে এক আত্মীয়র বাসায়। বাস থেকে নামতেই মাগরিবের আজান দিয়ে দিলো। বাস স্ট্যান্ড থেকেও বাসা অনেক ভিতরে। আর ঢাকা শহরের এই অঞ্চলটা বেশ অনগ্রসর হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব ভালো না। এখান থেকে ঐ আত্মীয়র বাসায় যেতে যেতে মাগরিবের সময় থাকবেনা। তাই হাসান নেমেই ভাবল নামাজ পড়ে নিবে। কিন্তু যূথীকে কোথায় রেখে যাবে তাও একটা ব্যাপার। আবার মসজিদটা ও খুব কাছে না। যূথীকে বলল- তুমি একটু আশেপাশে ঘুরো। আমি নামাজ টা পড়ে আসি ৫ মিনিট পরে। হাসান চোখের পলকে হারিয়ে যায়। আর ওভারব্রিজের নীচে যূথী দাড়িয়ে থাকে। তার ও মন চায় নামাজটা পড়তে। কিন্তু মসজিদে মহিলাদের কোন যায়গা নেই। ওদিকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। একা একা রাস্তায় মেয়ে মানুষ দাড়িয়ে থাকা মহা বিপদ। ওভার ব্রিজের নীচে একটা ফ্লেক্সি লোডের দোকান। দোকানে একটা লোক বসে আছে, আর চেয়ে চেয়ে যূথীকে পর্যবেক্ষণ করছে। ব্যাপারটা রীতিমতো অস্বস্তিকর। কেন লোকটা এভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে । নিজের পোশাক আর গেট আপ আবার দেখে নেয় সে। তাকে কি খুব খারাপ দেখাচ্ছে? কই না তো! এদিকে ৫ মিনিট পেরিয়ে গেছে অনেক ক্ষণ হয়। হাসানের কোন খবরই তো নেই। আজব তো ছেলেটা! নতুন নতুন বিয়ে হইছে । মাঝে মাঝে সুযোগ পেলেই নিজেকে সিঙ্গেল ভাবে নাকি কে জানে! ওদিকে ফ্লেক্সি লোডের দোকানদার দোকান ছেড়ে যূথীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ঈদ মৌসুম। রাস্তাঘাট নীরব। অনেক ব্যস্ত রাস্তাও মানুষ শূন্য। যূথীর একটু একটু ভয় হতে থাকে। কিছু না ভেবেই হাটা ধরে। অজানা , অচেনা যায়গা। কিছু দোকান পাট খোলা আছে যদিও। যূথী একটা দোকানে ঢুকে পানি কিনে, বসে বসে খায় , এটা একটা সময় নষ্ট করার উপায়। আর মনে মনে আত্ততুষ্টি লাভ করে। উপদ্রবটাকে সরানো গিয়েছে তাহলে! কিন্তু, পানি খেতে আর কতক্ষন অপচয় করা যায়! যূথী বের হয় খাওয়ার দোকান থেকে। বাটার দোকান টা তখনো খোলা। সে ঐ দোকানে ঢুকে বিভিন্ন জুতা দেখতে থাকে। আর ফাকে ফাকে হাসান কে ফোন দেয়। হাসানের আবার এক অভ্যাস, সাড়া বছর মোবাইল সাইলেন্ট। এর মধ্যে হটাত শো রুমের সিঁড়ির দিকে নজর পরে ওর। আরে! সেই লোকটা ই না? যে এতক্ষন পিছু করছিলো! কি বিপদ! এখানে আসলো কীভাবে! যূথীর মতো সে ও জুতা দেখার ভাব করে। আর যূথী যেই জুতার সামনে দাড়ায় লোকটা ও সেটার সামনে দাড়ায়। বাটার শো রুমের লোকরা ও খুব বিরক্ত। যূথী প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে ঘুরছে। কিন্তু , কেনার কোন লক্ষন নেই তার মাঝে। কিন্তু, যূথী ভাবছে অন্য কথা। এখান থেকে বের হলেই তার বিপদ, এই লোক কি করতে চাচ্ছে সে বুঝে উঠছে না। এর মধ্যে চেষ্টা করতে করতে হাসান ফোন ধরল। -এই তো বাবা! আসছি তো! -তোমার আজকে আর আসা লাগবেনা। আমি বাসায় গেলাম। তুমি নামাজ পড়তে থাকো -আরে রাগ করো কেন? -রাগ করবো না! আনন্দে নাচবো? জানো! এখানে কি হচ্ছে? - আর বোল না! ঐ যে আমার ছোট বেলার বন্ধু রাকিবের সাথে দেখা হয়ে গেলো। ও ওর বাসায় নিয়ে এসেছে ৫ মিনিটের জন্য। - ও তাই নাকি! ভালো তো! তুমি এতো কেয়ারলেস! - তুমি একটু অপেক্ষাই তো করেছ। কেউ তো তোমাকে নিয়ে যাচ্ছে না রাস্তা থেকে। - ঠিক আছে । তুমি থাকো। আমি যাই - আরে বাবা, আমি চলে এসেছি, তুমি কই? -বাটার দোকানে। -আচ্ছা, আসছি। জামাই এসেছে শুনে যূথী আর সময় নষ্ট করে না। দৌড়ে ২ তালা শো রুম থেকে নীচে নামে। ফলোকারি ব্যক্তি ও সাথে সাথে শিকারের পিছনে দৌড় দেয়। নীচে হাসানের সাথে জুথিকে কথা বলতে দেখে ফলো কারী তাড়াতাড়ি ভাগে। ওদিকে যূথীর চোখে পানি। পিছনে ফিরে হাত তুলে দেখিয়ে বলে- ঐ দেখো! ঐ লোক আমার পিছু করেছে এতক্ষন। হাসান তাকাতে তাকাতে পিছুকারী পগার পার হয়েছে। যূথী একে একে সব ঘটনা খুলে বলে। হাসান নিজেকে খুব অপরাধী ভাবতে থাকে। এই যায়গায় যে মাজারের নারী পাচারকারীদের আখড়া সে তো ভুলেই গিয়েছিলো! লোকটা হয়তো তাদেরই কেউ। তার জন্য বউ এতো কষ্ট পেলো। কিন্তু, তার তো নামাজ পড়তে হবে, আর যূথীর নামাজ ও কাজা হয়েছে, কিন্তু কিছু করার নেই। হাসান ভাবে, কতো মসজিদে কতো যায়গা খালি পড়ে থাকে। আজ নাহয় সে আনন্দ ভ্রমনে বেড়িয়েছে। কারো মা অসুস্থ ও তো থাকতে পারে, ডাক্তার দেখানোর দরকারে নামাজের সময় ও বাহিরে আসতে পারে, কোন নারী যে কোন দরকারে নামাজের সময় বাহিরে যেতে ও তো হতে পারে, কিংবা এভাবেই কোন স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে বের হলে রাস্তায় বউকে অপেক্ষমান রেখে নামাজে যেতে হতে পারে! মসজিদের কতো যায়গা পরে থাকে, মা বোনদের জন্য একটু ইবাদতের যায়গা বরাদ্দ থাকলে কি আজ এই দিন দেখতে হতো। যূথীর মুখ এখনো শুকিয়ে আছে। আজ তার রাগ হয়েছে স্বামীর অবহেলায়। অনেক বার ইনিয়ে বিনিয়ে সরি বলেও তার রাগ কি ভাঙ্গানো যাবে? হাসান চিন্তায় অধীর হয়ে যায়। বউয়ের রাগ তার একটু ও ভালো লাগে না যে.........।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)