সাহিত্য

ডিরেক্ট সাইনের পরবর্তী অবস্থা!

ডিরেক্ট সাইনের পরবর্তী অবস্থা!
একমনে পেপার পড়ছে জাহিদ,পড়তে পড়তে আবার হাই ও তুলছে!ঘুমের আমেজটা এখনো যায়নি,তার উপর এভাবে অপেক্ষা করতে করতে ঘুম ঘুম ভাব আসাটাই স্বাভাবিক। একবার ঘড়ির দিকে তাকালো,৭.১০ বেজে চলছে। ৭.৩০টা বাজার পর আর এক সেকেন্ডও যে সে ঘরে থাকবে না,এটা সাদিয়া ভালো করেই জানে,কিন্তু তা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত টেবিলে নাস্তার অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে না! ভাবছে আর ৫মি দেখবে,তারপর বের হয়ে বাইরে থেকে নাস্তা করে নিবে। হঠাত মনে পড়ল মোবাইলটা চার্জেই রেখে এসেছে,দ্রুত বেড রুমে যেয়ে মোবাইলটা নিয়ে আসল। ততোক্ষনের মধ্যে সাদিয়া টেবিলে নাস্তার প্লেট রেখে জাহিদকে না দেখে একাই বলতে লাগল, -এই যে,খবর নাই এখন আর!নাস্তা নিয়ে আসলাম,আর জনাব ঘরে যেয়ে বসে আছেন,খালি আমি দেরি করলেই দোষ! জাহিদ দ্রুত এসে টেবিলে বসতে বসতে বলল, -হুম,তোমার ই তো দোষ!বাজে কয়টা এখন?কই দেখি,দাও নাস্তা। সাদিয়া ভ্রু কুঁচকে প্লেট এগিয়ে দিলো। সেদিকে তাকিয়ে জাহিদ মনে হলো শক খেয়েছে!কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে খুক খুক করে কাশল,তারপর বলল, -এই বস্তু গুলোর নাম কি? সাদিয়া বিরক্ত কন্ঠে বলল, -তোমার মাথা!কি নাম জানো না?জীবনে দেখো নাই? -নাহ,জানিও না,এবং জীবনেও দেখি নাই! -ফাযলামো বন্ধ করো,চুপচাপ ডিম ভাজি টা দিয়ে রুটি খাও! জাহিদ আগের চেয়ে কন্ঠের জোর বাড়িয়ে বলল, -রুটি?!!দিস ইজ রুটি?!এরকম স্টাইলের রুটি তো দুনিয়ার কোথাও পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না!আচ্ছা,তুমি রুটি কেন বানাতে পারো না বলতো? প্রশ্নটা শুনে মাথায় আগুন ধরে উঠলো যেনো!এভাবে না বললে কি হতো না!একে তো সাত সকালে উঠে নাস্তা বানালাম,আর সে কি না মুখে দেওয়া বাদ দিয়ে এটার সমালোচনা করে যাচ্ছে!তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে অনভ্যস্থ হাতে না হয় একটু বাঁকা হয়ে গেছে,তো কি খাওয়ার অযোগ্য হয়ে গেছে!জাহিদের এই স্বভাবটার সাথে সাদিয়া এখনো অভ্যস্থ হতে পারে না!হুট করে একটা কথা বলে ফেলে,এটা বুঝে না যে কথাটা অন্য কারো পক্ষে সহ্য করাটা খুব কষ্টকর হতে পারে! সাদিয়া রাগ কন্ট্রোলের চেষ্টা করে বলল, -তোমার এখন দেরি হচ্ছে না?চুপচাপ খেয়ে নাও প্লিজ। জাহিদ এবার বিরক্তিভরা কন্ঠে বলল, -এইরকম অদ্ভুদ ডিজাইনের রুটি খাওয়ার জন্য এতক্ষন ধরে বসে থাকতে হবে জানলে,সেই কখনই বের হয়ে যেতাম!ধ্যাৎ,দাও ডিমটা দাও,ওটা খেয়েই যাই আজকে! সাদিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল!আর কিছু বললো না। জাহিদ,ডিম খেয়ে লাঞ্চ বক্সটা নিয়ে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে যেয়ে থমকে দাঁড়ালো!সাদিয়া এখনো ঐভাবেই চেয়ারে বসে আছে,তারমানে সে খুব মন খারাপ করেছে!নিজের উপরই একটু রাগ লাগল!দিনের শুরুতে এতোটা কি না বলতে হতো না?কি বলতে যেয়ে যে মুখ ফুসকে কি বলে ফেলে,বলার সময় নিজেরও খেয়াল থাকে না!একবার যেয়ে সরি বলবে ভাবল কিন্তু পরক্ষনেই দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে আস্তে করে বলল, -আমি বের হয়ে যাচ্ছি! সাদিয়া চেয়ার থেকে উঠে দরজার কাছে এসে,খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, -কখন ফিরবে? -নট শিউর,কেন? সাদিয়া ভ্রু কুঁচকে বলল, -আমি কাল রাতে বলেছিলাম,যে আজ আমি বিকেলে বাইরে যাবো। জাহিদ জুতার ফিতে ঠিক করতে করতে বলল, -ওহ,হ্যাঁ বলেছিলে,বান্ধবীদের সাথে দেখা করবে,ওকে...তবে আমার মনে হয় আজ একটু দ্রুতই কাজ শেষ হয়ে যাবে!সন্ধ্যার আগেই ফেরা হতে পারে! সাদিয়ার মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো!এমনি দিনে জনাব রাত ৮টার আগে বাসায় ফিরতে পারেন না,আর আজ সে একটু বের হবে,আজকেই তার দ্রুত ফেরার সুযোগ হয়! সাদিয়া একবার ভাবল কিছু বলবে না,তারপর ভাবল না বলতে তো আজকের যাওয়াটাও বাদ দিতে হবে!আজকে বাদ দিলে আবার কবে সবাই এক সাথে বসার সুযোগ হবে কে জানে! তাই কিছুটা বিরক্ত গলায় বলল, -শোনেন জনাব,আজ যদি আপনার অফিস বিকেলেই শেষ হয়ে তারপরেও আপনি সন্ধ্যার আগে বাসায় আসতে পারবেন না,আর যদি আসেন তাহলে কিছু সময় একাই থাকবেন,দরকার হলে ঐ মোড়ের টং এর দোকানে বসে চা এর সাথে হাওয়া মিশিয়ে খাবেন,ওকে? জাহিদ সাথে কিছু বলল না,ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে খানিকটা সময় ভেবে বলল, -আচ্ছা ঠিক আছে!এবার শান্তিমত আমি যাই? সাদিয়া হেসে বলল, -হুম,সাবধানে যেও,আসসালামু আলাইকুম।                             ----------------০--------------- কাঠের মতো শক্ত রুটির পিৎজ্জা তে সস লাগাতে লাগাতে মায়িশা জিজ্ঞেস করলো, -আচ্ছা,সাদি,তুই তোর জামাই কে কি নামে ডাকিস? সাদিয়া মেনুর দিকে মনোযোগের সাথে তাকিয়ে থেকে বলল, -কি নামে মানে?তার নাম তো জাহিদ! -আরে নাহ,মানে আজকাল তো দেখি কাপলরা একে অন্যকে আহ্লাদ করে কত্তো নামেই ডাকে!চকলেট,স্ট্রবেরি ইত্যাদি! তো তোরাও তো বেশ হ্যাপি কাপল,তোরা কোন নামে ডাকিস না! সাদিয়ার ঠোঁটের কোণে খানিকটা হাসি ফুঁটে উঠলো। মেনু পড়তে পড়তে বলল, -হুম ডাকি তো,সে আমাকে ডাকে 'ঘূর্ণিঝড়' আর আমি ডাকি 'শেঁকল'! মায়িশা হতভম্ব হয়ে একবার সাদিয়ার দিকে তাকালো!পিৎজ্জাতে কাঁমড় বসাতে নিয়েও থেমে গেল! -ঘূর্ণিঝড়?!!এটার মানে কি?! -আরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম শুনিস নাই কখনো?ঐ যে সিডর,আইলা!ঐরকম ই কিছু একটা! এমন সময় হাঁপাতে হাঁপাতে আমি চেয়ারে এসে বসলাম। সালাম বিনিময়ের পর বললাম, -সরি লেট করে ফেললাম!শোন,পিতজা-ফিতজা খাবো না,অন্যকিছু অর্ডার কর। সাদিয়া কিছু বলার আগেই মায়িশা বলল, -জানিস?আমাদের এই লাভ বার্ডস একে অন্যকে কি নামে ডাকে?ঘূর্ণিঝড় আর শেঁকল! আমি পানি খেতে খেতে বললাম, -আনকমন নাম!খারাপ কি?নাম যা ই হোক,তাহারা যদি একে অপরকে ভালোবেসে ডাকে তো সমস্যা কি? বাট এই নামটা বেশিই আনকমন!তো এই নামের শানেনুযূল কিরে? সাদিয়া আমার জন্য জুসের অর্ডার দিয়ে,পিৎজ্জা তে চামচ বসাতে বসাতে বলল, -আমার ধারণা,জামাই ইজ ওয়ান কাইন্ড অফ শেঁকল!এর তালা সিস্টেম অটোম্যাটিক,একবার লক হইলে আর খুলবে না,হাতুড়ি দিয়ে ভাঙ্গা ছাড়া!! আর জাহিদের ধারণা,বউ ইজ দ্যা শ্যাডো অফ ঘূর্ণিঝড়!যেহেতু সে ঘূর্ণিঝড় এলাকার ছেলে,তাদের কাছে নাকি গোছানো কিছু ভালো লাগে না,তছনছই ভালো লাগে!আর আমি যেহেতু তার ভাষ্যমতে তান্ডব করতে পছন্দ করি,তাই আমার নাম ঘূর্ণিঝড়! এমন বক্তব্য শোনার পর আমাদের অবস্থা হলো দেখার মতো!মায়িশা হাসতে গিয়ে সস এর কাপ ফেলে দিয়েছে,আর আমি,পানি মুখে নিয়ে মুখ চেপে আছি,না পারছি গিলতে না পারছি হাসি কন্ট্রোল করতে!সাদিয়া আমাদের অবস্থা দেখে মিটমিট করে হাসছে। অনেকক্ষন পর স্বাভাবিক হয়ে বললাম, -দেখছিস মায়িশা?কেমন ভালোবাসা এদের!আমি মুগ্ধ থেকে বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছি! সাদিয়া আগের মতোই হাসতে হাসতে বলল, -ভালোবাসার আর কি দেখলি,যখন রান্না করে টেবিলে খাবার রাখি,তখন তো যেই ভালোবাসা দেখা যায়,সেটা শুনলে তো মায়িশার বিয়ের শখ দ্বিগুণ হয়ে যাবে!কষ্ট করে আগ্রহ নিয়ে একটা কিছু তৈরী করে টেবিলে রাখি,আর জনাব এমন ভাবে মুখে নিবে,যেনো তাকে দশ মণ ওজন বইতে বলা হয়েছে! মায়িশা খুক খুক করে হাসল! আমি বললাম, -থাক আর বলা লাগবে না!এতো সুখের গল্প একদিনে মুখস্থ করতে পারবো না!বুঝতে পেরেছি,বর্তমানে তোদের ডিরেক্ট সাইনের পরবর্তী অবস্থা কেমন চলছে!                               -----------------০------------------------ ঘড়িতে সময় ৯টার কাঁটা ছাড়িয়ে গেছে,সাদিয়া ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে আবার বই পড়ার দিকে মনোযোগ দিলো। বাসায় ফিরেছে মাগরিবের আগেই,এসেই জাহিদকে এসএমএস করেছে,বাট জাহিদ কোন রিপ্লাইও দেয়নি,এখন পর্যন্ত ফেরার নাম নেই! বসুন্ধরার এই এরিয়াটা দিনের বেলায় খুব সরব হলেও সন্ধ্যা হলে একদম ভূতরে নীরবতায় ঢেকে যায়,কেমন যেনো ভয় ভয় লাগে! এশার নামায শেষ করে কল দেয় জাহিদের মোবাইলে। মোবাইল বন্ধ! কয়েকবার ট্রাই করে,একই রেজাল্ট! সাদিয়ার ভ্রুঁ দুটো আপনাতেই কুঁচকে উঠে! মোবাইল রেখে কিছুক্ষন পায়চারী করতে থাকে... ঘড়িতে সময় দশটা বেজে চলছে,সেই সাথে সাদিয়ার টেনশনের গতিও বাড়ছে। মনে মনে হাজারো বাজে ভাবনা উঁকি দিচ্ছে! কোথায় গেলো মানুষটা?কোন সমস্যা হয়নি তো?! একটা সময় বাধ্য হয়ে গাজীপুরে শ্বাশুড়ির কাছে কল দেয়। কিছুক্ষন কথা বলার পর শ্বাশুড়ি বললেন, -তুমি আজ কোথাও গিয়েছিলে নাকি?জাহিদ একা একাই আসল! -জ্বী?ও আজকে আপনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো?! -হ্যাঁ,কেন তুমি জানো না?!এসে তো আবার বেশিক্ষন বসলো না,চলে গেলো। শ্বাশুড়ির অবাক হওয়া কন্ঠের জবাবে সাদিয়ে সাথে সাথে কিছু বলল না! আচ্ছা,ঘটনা তাহলে এই!আর আমাকে জানায় নি,যাতে করে আমি টেনশন করি!বাহ... আসুক আজকে!ওকে চুপ থাকতে দেখে ওর শ্বাশুড়ি বলল, -আজ কি রেঁধেছো সাদিয়া? সাদিয়া সাথে সাথে জ্বিভে কামড় দিলো!এই সেরেছে,সে যে রান্নায় কি পরিমাণ ব'কলম তা আম্মা ভালো করেই জানে,আর এই জন্যই সব সময় জিজ্ঞেস করে!আমতা আমতা করে বলল, -ইয়ে,আজকে বেশি কিছু রান্না করিনি!শীম,আলু আর টমেটো দিয়ে শিং মাছ,আর ডাল! -পরশু দিনও না  বললে,এই তরকারী রান্না করেছো,আবার আজো করেছো? সাদিয়া কি বলবে ভেবে পেলো না!একই তরকারী পর পর দুই দিন রান্না করলে কি সমস্যা?আপাতত,এই তরকারীটাই খুব ভালো হয় ওর হাতে,বাকী আইটেম গুলো কেমন কেমন জানি হয়!আর উনার ছেলে জাহিদ তো যেই মানুষ... মজা না হলে,ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে চৌদ্দবার বক বক করবে,সেই ভয়েই তো বেচারী রান্না করে খুব ভয়ে ভয়ে! ওকে চুপ থাকতে দেখে শ্বাশুড়ি হেসে ফেললেন, -আরে মেয়ে,এতো চিন্তার কি আছে?প্রথম প্রথম এমনই হয়,ধৈর্য্য ধরে,আন্তরিকতা নিয়ে চেষ্টা করো,দেখবে সব শিখে ফেলেছো,সংসারে এসে সংসার করা শিখবে না তো কোথায় শিখবে!এক কালে আমরাও এমনই করেছি,আর আমি জাহিদকে বলেছিও,রান্না ভালো না হলে যেনো বকাবকি না করে,কিন্তু আমি জানি ও খাবারের ব্যাপারে একটু বেশি সেন্সেটিভ,তাই রিএক্ট করে ফেলে!তবে তুমি কিন্তু বেশি কষ্ট পেও না,ঠিক আছে?একটু ধৈর্য্য রেখো। সাদিয়া চিন্তিত মুখে বলল, -হুম! আরো কিছুক্ষন কথা বলে,ফোন রাখলো। মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলো!একে তো ঐ লোকটার বাসা ফেরার খবর নাই,তার উপর আবার রান্না! আশ্চর্য মানুষ!একটা দিন আমি একটু বাইরে গেলাম,আর সে আধা ঘন্টা সময় ওয়েট করতে পারলো না?উল্টো আমাকে টেনশন করানোর জন্য আমার এসএমএস,কল কোন কিছুর রিপ্লাই করলো না!                               ----------০----------- ১১টার দিকে কলিংবেল বেজে উঠলো,সাদিয়া ঘুম ঘুম চোখে চারপাশে তাকালো!একবার মনে হলো,কাউকে ডেকে বলতে,দরজাটা খুলে দেয়ার জন্য,কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ল,এই বাসায় সে একাই থাকে। হাই তুলতে তুলতে দরজা খুলে দিলো। জাহিদ আড়চোখে বার কয়েক সাদিয়ার দিকে তাকালো,কিন্তু রিএকশন দেখতে পেলো না!মনে মনে কিছুটা অবাক হলো,এত দেরি করে আসলো,অথচ একবারো জিজ্ঞেস করলো না,'আজ এতো দেরি হলো কেন?বাড়ি ফেরার কথা কি ভুলে গিয়েছিলে?'! ইত্যাদি। সাদিয়া স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, -তোমার মোবাইলে মনে হয় চার্জ নেই,বন্ধ হয়ে আছে তাই না? -হুম?!না মানে,বিকেলের দিকে শেষ হয়ে গেছে!পরে আর চার্জ দেয়া হয়নি! -ওহ আচ্ছা!তুমি কি খাবে কিছু?নাকি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছো? জাহিদ একটু অবাক হওয়ার ভান করে বলল, -বাইরে থেকে খেয়ে আসব মানে?!বাইরে কি তুমি খাবার পাঠিয়েছিলে আমার জন্য? সাদিয়া ভ্রু কুঁচকে বলল, -আমার হাতের খাবার তো তুমি ঘরেই খেতে পারো না,সেখানে বাইরে কি করে খাবে বলো?বাইরে আমার থেকে হাজার গুণ সুস্বাদু খাবার মানুষ রান্না করে,ওগুলো খেয়ে এসেছো কি না তাই জিজ্ঞেস করেছি! -ওওও,আচ্ছা!কিন্তু বাইরে তো আমার কোন বউ নাই,তাহলে কেউ ভালো রান্না করে রাখলেই বা কেমনে খাই বলো? সাদিয়ার মেজাজটা আরেক ডিগ্রী উপরে উঠলো,আবার হাসিও পেলো! কিন্তু তারপরেও মুখটা গম্ভীর করে বলল, -ঢং এর কথা বাদ দিয়ে,বল রাতে কি খাবে? নাকি গাজীপুর থেকে খেয়ে এসেছো? জাহিদ এবার হো হো করে হাসতে লাগল!ওর হাসি দেখে সাদিয়াও না হেসে পারলো না। জাহিদ হাসতে হাসতে বলল, -তাই তো বলি,ওয়েদারটা আজকে এতো শীতল কেন?ম্যাডাম অলরেডি জেনে গেছেন,তাই না? -জানবো না?ফোন ধরো না,ম্যাসেজ দিচ্ছো না,তো খোঁজ-খবর তো করতেই হবে নাকি?নিজে তো মনে মনে প্ল্যান করেই রেখেছো,আমাকে টেনশন করানোর!আবার বলে,জেনেছো দেখছি! জাহিদ আরো কিছুক্ষন হেসে বলল, -যাইহোক,তোমার ধারণা ঠিক,আমি খেয়েই এসেছিলাম,কিন্তু এখন আবার ক্ষিধে লেগেছে!কি আছে দাও সাদিয়া ফট করে বলল, -কিচ্ছু নেই!একবার খেয়ে এসেছো না?আর খাওয়া লাগবে না! -প্লিজ,সত্যিই ক্ষুধা লাগছে,এখন তো আরো বেড়ে যাচ্ছে!কিছু না থাকলে নুডুলস করে দাও! সাদিয়া নাক-মুখ কুঁচকে কিচেনে গেল,মনে মনে বিড় বিড় করতে লাগল! ''কি এক যন্ত্রণায় আছি!একদিন বেশি না খেলে কি হয়?রাত বাজে সাড়ে ১১টা,এখন আমাকে করতে হচ্ছে রান্না!আবার সেই সাত সকালে উঠতে হবে,নাশতা-লাঞ্চ বানাতে হবে!উফফ...!'                                      ---------০---------- নুডুলস,সালাদ,সস সহ সব গুলো আইটেম একসাথে সাজিয়ে টেবিলে রেখে,জাহিদ কে খেতে ডাকল,কিন্তু জাহিদ রুম থেকে বলল, -প্লিজ একটু এখানে নিয়ে আসো না!টিভি দেখতে দেখতে খাই! সাদিয়া বিরক্ত গলায় বলল, -তুমি এখানে এসে খাও,না হলে বিছানায় খাবার পড়ে নষ্ট হবে। -হবে না,তুমি একটু নিয়ে আসো! সাদিয়ার মেজাজ আরেক দফা বাড়লো,তবুও সে ট্রেতে খাবার গুলো সাজিয়ে বিছানার পাশেই টুল টেনে রাখল। জাহিদ একবার সেদিকে তাকিয়ে বলল, -পানি কই?প্লিজ,ঠান্ডা মিশিয়ে এনো! সাদিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,কিছুক্ষণ জাহিদের দিকে তাকিয়ে থাকলো!তারপর আবার ডায়নিং থেকে পানি এনে টেবিলে রেখে,বিছানায় বসল।                           জাহিদ কিছু না বলেই চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো!সাদিয়া শুয়ে পড়লেও কান দু'টো রেডিই ছিলো,ভেবেছিলো আর কিছু না হোক,নুডুলসটা ভালো হয়েছে কি না,তা অন্তত বলবে!কিন্তু নাহ,কোন কথাই নেই,চুপচাপ খেয়ে ট্রে-বোতল ডায়নিং এ রেখে আসল জাহিদ! সাদিয়ার হঠাত করেই মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে গেলো!খুব একলা মনে হলো নিজেকে... একটা সময় ছিলো,যখন ওর হাতের আধা-কাঁচা,লবনহীন বিস্বাদ নুডুলস খেয়ে আব্বু প্রশংসা করতে করতে অস্থির হয়ে যেতো, 'আমার মা'মণি আজকে আমাকে অনেক মজার নুডুলস রান্না করে খাইয়েছে,ইনশাআল্লাহ,ভবিষতে ওর হাতের রান্নার স্বাদ আল্লাহ আরো বাড়িয়ে দিবেন'! ছোট ভাই সুহাইল তো সময়-অসময় নেই,হুট করে বসে আবদার করতো, -সাদি'পু,একটু নডুলস রান্না করে দাও না,প্লিজ,প্লিজ,প্লিজ! তখন অনেক বিরক্ত লাগতো!কিন্তু ওর তৈরী সেই কোন রকমটাই ওরা যখন খেয়ে আনন্দ প্রকাশ করতো,তখন খুব ভালো লাগতো!আর এখন? অনেক আনন্দ নিয়েও যদি কিছু রান্না করে,তবুও কোন সাড়া-শব্দ শুনতে পায় না!তবে খারাপ হলে আবার ঠিকই শুনতে পায়!এটা শুধুমাত্র জাহিদ ই করে তা না,ফ্যামিলিতেও এমনটাই দেখেছে,হয়তো বলবে,'ওমুক এই আইটেমটা অনেক সুন্দর করে রান্না করে','তোমারটাও ভালোই হয়েছে,তবে উনার হাতেরটা অসাধারন'ইত্যাদি। একেই বলে বোধহয়,বিয়ে পূর্ব আর পরবর্তী জীবন,যে দু'টোর মাঝে রয়েছে ছোট ছোট কিন্তু বিশাল দূরত্বের পার্থক্য! খুব সাধারন কিছুও এখানে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর,আবার কিছু ব্যাপার থাকে যা সাধারন হয়েও অসাধারন! একটু আগের বিষয়টা নিয়ে জাহিদের সাথে এক দফা ঝগড়া করা যেতো,কিন্তু সব সময় মেজাজ দেখাতে ভালো লাগে না,বিশেষ করে,যখন বার বার বলা সত্ত্বেও ইচ্ছা করে একই ভুল মানুষ করে তখন আর রিএক্ট দেখাতে ইচ্ছে করে না!                      -----------০--------- বাসায় ফিরে অসময়ে জাহিদ কে দেখে অবাক হলো সাদিয়া!তার উপর আজকে জাহিদের এক কলিগের বাসায় দাওয়াত ছিলো,সাদিয়ার ক্লাস ছিলো বলে তার একাই যাওয়ার কথা,কিন্তু জাহিদ গিয়েছিলো বলে তো মনে হয় না!গেলে সন্ধ্যার আগে বাসায় আসার কথা না। হাত-মুখ ধুয়ে এসে ফ্রিজ থেকে খাবার নামিয়ে গরম করতে দিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, -তুমি ও বাসায় যাওনি আজকে? জাহিদ এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়লো। -কেন যাওনি?! মোবাইলের দিকে তাকিয়েই বলল, -দুপুর বেলা খাবারের টাইম,গল্প করার না!ও বাসায় গেলে দুপুরে খাওয়াটা মাটি হতো! -মানে?বুঝলাম না! জাহিদ মোবাইলটা রেখে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, -আমার কলিগ কাইয়ুম ভাই এর বৌ আমরা গেলে অলওয়েজ খাবার কিনে এনে খাওয়ান,আর দুপুর বেলা বাইরের খাবার খাওয়ার জন্য কারো বাসায় যাওয়ার কোন মানে নেই,তারচেয়ে বাসায় খাওয়াই বেস্ট!যা আছে একটু নেড়ে-চেড়ে দাও,আমার আরেক কলিগ ও আসবে,তারও যাওয়ার কথা ছিলো,বাট আমি যাবো না দেখে সে ও যাবে না,তাই আমি আসতে বলেছি! সাদিয়া অবাক হয়ে জাহিদের দিকে তাকিয়ে থাকল,কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু কলিংবেল বেজে উঠায় আর বলতে পারলো না। টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখে সাদিয়া,চানাচুরের বয়ামটা নিয়ে বেড রুমে এসে বসলো,ক্ষিধে বেশ ভালোই লেগেছে,কিন্তু ভাত যা ছিলো তা তিন জনের জন্য যথেষ্ট না,তাই আবার রান্না করতে হবে,মেহমান গেলেই বসাবে! কিছুক্ষন পর কিছু লাগবে কি না,জিজ্ঞেস করার জন্য দরজার কাছে আসতেই শুনতে পেলো,জাহিদে কলিগ বলছে, -তাই তো বলি,জাহিদ ভাই কেন এখন আর বাইরে খেতে চায় না!ভাবি তো মাশায়াল্লাহ দারুন রান্না করে জাহিদ নিচু কন্ঠে বলল, -আস্তে বলেন,আপনার ভাবি কিন্তু জানে না!তার ধারণা,সে খুব ভালো রাঁধতে পারে না! -কি বলেন?!আপনি কখনো প্রশংসা করেন না? -উহু!দুইটা কারণ আছে তার,এক হচ্ছে,আপনার ভাবি এখন খুব আগ্রহ নিয়ে আন্তরিকতার সাথে রান্না করে,যদি বলি ভালো হইছে,আমি শিউর ও আর এতো মনোযোগ দিয়ে রাঁধবে না,এই টিপস আমাকে এক বড় ভাই দিছে!আর দুই,আমি যখন বলি রান্নাটা ভালোই হয়েছে,তবে আরো ভালো হতে পারতো,আরো প্র্যাক্টিস দরকার,তখন রাগে তার চেহারার যে এক্সপ্রেশন হয়,তা দেখার অনেক আনন্দ আছে! বলতে বলতে দু'জনেই হেসে গড়িয়ে পড়ে অবস্থা! সাদিয়া দাঁতে দাঁত চেপে কোন কথা না বলে বিছানায় এসে বসলো। একবার মনে হলো,আম্মু কে ফোন করে বলতে, 'তোমরা খুঁজে খুঁজে এই রকম ভয়ংকর খারাপ একটা লোকের সাথে কেন আমাকে বিয়ে দিলে?আমার এখন ইচ্ছে করতেছে,এই লোকের মাথার সব গুলো চুল ছিঁড়ে ফেলে দিতে!' পরক্ষণেই আবার মনে হলো,কাউকেই বলার দরকার নেই!সে আমাকে জ্বালিয়ে মজা পায় না?ঠিক আছে,দেখবো আমিও...                                    ------০------ আজকেও ব্রেকফাস্টে পুর্তগালের মানচিত্র টাইপ রুটি বানিয়েছে সাদিয়া!জাহিদ তা দেখে বলল, -তোমার জন্য যদি বিজ্ঞানীরা স্পেশালি গোলা রুটি বানানোর মেশিনও আবিস্কার করে,আমার মনে হয় তারপরেও তোমার রুটি গোল হবে না কোনদিন!!এত গুলো দিন চলে গেল,এখনো একটা গোল রুটি বানাতে পারলে না তুমি?! সাদিয়া খুব স্বাভাবিক কন্ঠে,হাসি হাসি মুখ করে বলল, -আমি ইচ্ছে করেই এরকম রুটি বানাই,এবং বানাবোও! জাহিদ বড় বড় চোখ করে বলল, -কেন?আমার সাথে তোমার কি শ্ক্রুতা?! -কোন শক্রুতা নেই,তবে পাশের বাসার ভাবি বলেছেন,জামাইদেরকে যতই ভালো করে রান্না করে খাওয়ানো হোক না কেন,তারা কোনদিনই বউয়ের রান্নার প্রশংসা করবে না!তাই যেভাবেই তোমাকে দেই না কেন,মন্তব্য তো একই করবা,সুতরাং খাও এভাবেই! -ছিঃ,তুমি মানুষের কথা শুনে আমাকে খারাপ রান্না করে খাওয়াও?!তোমার কমনসেন্স এতো খারাপ? -হুম,খুবই খারাপ আমার কমনসেন্স,এবং রান্না তো আরো খারাপ এবং তোমাকে এগুলোই খেতে হবে,আর না পারলে বাইরে খাবে,আমার কি?! জাহিদ এবার বিরক্ত হলো মনে হয়! -উফফ,বাইরেই যদি খাবো তাহলে আর বিয়ে করেছি কেন?তুমি একটু ভালো করে রান্না করলেই তো হয়!তুমি সংসার নিয়ে একটু সিরিয়াস হতে পারো না? সাদিয়া কোন কথার জবাব না দিয়ে হাসতে হাসতে কিচেনের দিকে গেলো। আর জাহিদ চোখে-মুখে বিরক্তি অবাক মিশিয়ে তাকিয়ে রইল।                                       --------০------ চা এ চিনি মেশাতে মেশাতে সাদিয়া আপন মনেই হাসতে লাগল!মানুষ কতো অদ্ভুদ হয়!ওর এখন আর জাহিদের ওসব কমেন্টস শুনে একটুও রাগ লাগে না,বরং মজাই লাগে! অথচ আগে কতো কষ্টই না পেতো... মুখে যা ই বলুক না কেন,মানুষ টার মনে যে কোন খেদ নেই,যে বিরক্তিটা মুখে দেখায় তা যে মনে নেই,এই ই তো অনেক!সংসার জীবনটা তো অনেকটা এই চা এর মতোই! তেতোর সাথে মিষ্টি মিশিয়ে তৈরী হয় অসাধারন সুস্বাদু ফ্লেভার,আপাতত জাহিদ চা পাতার মতো তেতো হয়েই থাকুক,দুধ-চিনি না হয় সে ই মেশাবে! :) সাদিয়া-জাহিদের ডিরেক্ট সাইনের পূর্বের লিংক!- https://suknopataa.blogspot.com/2013/10/blog-post_14.html  

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)