পরিবার ও আমি (বিয়ে ,দাম্পত্য,শিশু লালন পালন )
আনন্দ তুই কোথায় থাকিস, বল?

লিপস্টিক পছন্দ করি না, মেয়ের ক্লাসরুমে উঁকি দিয়ে দেখি, কড়া লিপস্টিক দিয়ে আছে। ভালো করে তাকালাম, দেখি ক্লাসের সবকয়টার একই দশা। একটু রেগে ক্লাসটিচারের দিকে তাকাতেই উনি ইশারা করে বোর্ডের পাশে একটা চার্ট পেপার দেখিয়ে দিলেন। তাকিয়ে দেখি, একটা মায়ের ছবি আঁকা, কোলে একটা বাচ্চা। মা'টার সারা গা জুড়ে ছোট্ট ছোট্ট ঠোঁটের চুমু, লাল টুকটুকে। লিপস্টিকের মাহাত্ন্য বুঝলাম, কিন্তু টিচারকে থাঙ্কু বলতে পারছি না, চোখ দিয়ে দুনিয়ার সব আনন্দরা তরল হয়ে জমা হয়েছে, কান আর নাকের আগায় জ্বলুনি...
অফিসে যাবার পথে, অন্যদিকে ফিরে গাড়িতে আমার সামনের জায়গায় একটা ছোট্ট প্যাকেট রেখে যান একজন মানুষ, কিছুই হয়নি এমন ভাব ধরে। ভেতরে কেচি দিয়ে কাটা দেড় ইঞ্চি বাই দেড় ইঞ্চি পানের টুকরা, চুন মাখানো, আর সুপারী- ধুয়ে কাপড়ে মোছা। প্যাকেটের নিচে লাল-হলুদ মিষ্টি মশলা। আমিও কিছু দেখিনি এমন ভাব করে প্যাকেটটা ব্যগে রেখে আগের দিনের প্যাকেট সামনে রেখে দিই। এতো ভালোবাসা কোত্থেকে আসে?
পৃথিবীর সবচেয়ে কর্মঠ আর নিখুঁত মা, আমার বাচ্চাদের অযত্ন (!) করতে দেখে হাতে মুখে শাসন করে অশ্রুসজল চোখে তাঁর বাসা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য করেন। ভুল করে ফেলে যাওয়া কোন কিছু নিতে এসে শুনি, সেই মা-ই ফোনে বলছেন, 'মেয়েটা আর নাই। অফিস, ভার্সিটি সেরে আবার এসে কানের কাছে ঘ্যনঘ্যন করে কিছু রানতে হবে কি না, আজকে যা তা বলে বিদায় করে দিসি!' আমার চোখে সাত সমুদ্র তের নদীর ভিড়...
একটা স্টাডি সার্কেল থেকে বের হয়েছি, রাস্তায় চায়ের টং থেকে মন মাতানো সুঘ্রাণ... তিনজনে মিলে চা নিয়েছি... কথায় কথায় সময় পার। আরেকজন রিকশা ঠিক করে ডাক দিলো... চায়ের দাম দিয়ে ভোঁ দৌড় দিবো... চা ওয়ালা আমার বেখেয়ালীপনায় বিরক্ত হয়ে জানালো, "ওই যে একটু আগে খাড়ায় ছিলো, হে-ই তো চায়ের দাম দিয়া গেসেগা"। স্টাডি সার্কেলের সেই সদস্য ততক্ষণে চা শেষে দৃষ্টির আড়ালে। মাত্র তিন কাপ চায়ে এমন মন ভরানো যায়? Money can sometimes buy happiness, though a very little of it!!
হাতে রান্নার কালিঝুলি, দরজায় গিয়ে বিদায় দিতে পারিনি। অনেকক্ষণ পর মনে হতে মন খারাপ করে দরজা আটকাতে গেছি, দরজার ওপাশ থেকে এতোক্ষণ চোরের মত দাঁড়িয়ে থাকা একটা মানুষের হাত এসে হাতটা ধরে, 'আল্লাহ হাফেয' বলে আমার আটকে যাওয়া হার্টবিট দ্বিগুণ জোরে চালু করে সাইকেলের চাবির ঝনঝন শুনিয়ে দৌড়! পাগল এভাবেই জোড়া মিলিয়ে বানান আল্লাহ?
যখনই অনেকগুলো কষ্ট একই দিনে এসে মাথায় ঘিরে ধরে, এইরকম মুহূর্তগুলো পকেটের লুকানো কোণা থেকে বের করে এনে ঘ্রাণ নিয়ে আবার রেখে দেয়া যায়, নেশার মত। কষ্টগুলো কমে যায় না, কিন্তু বয়ে নেয়ার শক্তি এসে যায়। মানুষ কি বিচিত্র সৃষ্টি, কি ভয়ানক শরীর নির্ভর, আবার কী প্রচন্ড মন-সর্বস্ব!!
"সাড়ে তিন হাত নৌকার খাঁচা
মন মাঝিরে ঘন ঘন জোড়া...
সেই নৌকা খান বাইতে আমরণ
মন মাঝিরেহাড় হইলো গুড়া রে...
মাস্তুলে উঠিয়ারে মাঝিমন মাঝি রে
এদিক-ওদিক চায়...
পেছন ফিরা চাইয়া দেখো রে
মন মাঝি রে
বেলা ডুইবা যায় ও'রে.."
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)