সাহিত্য

আক্ষেপ

আক্ষেপ

অর্পার দাম্পত্য জীবনের আপাতত একটাই সমস্যা,জামাইর উপর শ্বশুর বাড়ির প্রভাব বেশি। এই প্রভাবটার কারণে অর্পাকে কখনো কষ্ট করতে হয়নি,মানুসিক বা শারিরীক কোনদিকেই না কিন্তু তার কাছে সব সময় ই মনে হয়,' ও আসলে পুরোপুরি আমার না'৷ 

অর্পার মা প্রা  দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন,জামাইটার সবই ভালো শুধু তোকেই মূল্য কম দেয়,সব কিছুর আগে নিজের মা,বোনেরা আসে! 

 

মায়ের বাসায় গেলে অর্পা আজকাল প্রচন্ড বিরক্ত হয়। তার মনে হয়,এটা এখন আর ওর বাসা না। ভাবি আসার পর সব চেঞ্জ হয়ে গেছে আগে এরকম মনে হয়নি!ভাবিকে দেখলেই কেমন বিরক্তি লাগে। অথচ ভাবি তাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়, কথা বলতে চায় মিশতে চায় কিন্তু অর্পা বেশিক্ষণ নিজের রাগ ধরে রাখতে পারে না। ভাবি চুপ করে নিজের কাজে ফিরে যায়। প্রথমে না বুঝলেও এখন অর্পা বুঝে,আসলে ও ভাবির মাঝে নিজের অপূর্ণতা গুলো দেখতে পায়। ওর মনে যা যা অভাব ভাবির মনে তা নেই। এটা বুঝলে অর্পার নিজেকে প্রচন্ড ব্যর্থ কেউ মনে হয়। 

 

ভাইয়ার বিয়ের সময় অর্পা নিজেকে নিয়ে বেশ আনন্দিত ছিলো। সবাই বলছিলো,ভাবি আর যাই হোক,অর্পার মতো সুন্দরী না,গুণি না। ভাইকে মনে হয় না সে সুখে রাখতে পারবে! 

কিন্তু ৬মাসের মধ্যেই সবার সুর পালটে যায়। আর যাই হোক,গায়ের রঙ এ কিছু আসে যায় না,অমায়িক ব্যবহার আর আন্তরিকতার দিক থেকে ভাবি সবার মন ছুঁয়ে ফেলে। 

 

একদিন দুপুরে অর্নব, একমাত্র ছোট বোনের প্রিয় ফ্লেভারের আইসক্রিম,চকোলেট নিয়ে বোনের বাসায় আসে,অর্পা বেশ খুশী হয়,ভাই এসেছে সেই উপলক্ষ্যে অনেক কিছু রান্না করে ভাইয়ের জন্য। ওদিকে হাসপাতালে অর্পার ননাস তার বাচ্চাকে নিয়ে ভর্তি,আইসিইউ তে। সবাই খুব পেরেশান শুধু অর্পার মধ্যেই স্বাভাবিক ভাব। 

ভাই খেতে বসে অস্বস্তিতে ভুগেন,টেবিল ভর্তি খাবার কিন্তু অর্পা মাত্র ২টা আইটেম বক্সে দিল হাসপাতালে শ্বাশুড়ি-ননাসের জন্য,ওদিকে এই বাসার সবার মুখ অন্ধকার বাচ্চাটার জন্য কেবল অর্পার মুখ ই ঝলমলে। বিষয়টা ভালো লাগেনি, সব চেয়ে বড় কথা,ও জানতোই না যে এই বাসায় এরকম সিরিয়াস একটা সময় যাচ্ছে,জানলে এভাবে এখানে আসতও না। কি ভাববে অর্পার শ্বশুর বাড়ির সবাই!ওর জামাই! 

 

কথায় কথায় অর্নব বললেন- আমার মনে হয়,হাসপাতালে একবার দেখা করতে যাওয়া উচিত,কোথায় আছে ওরা,ঠিকানা দিস তো। 

অর্পা বেশ হাল্কা সুরে বললো- সবার যেতে হবে না,মা একবার গিয়েছিলো সেদিন। তুমি আবার যাবে কেন?

ভাই অবাক হলো,কই আমি তো জানিনা! 

-এত করতে হবে না ভাইয়া। আমি তো আছিই! সারাদিন এদের ফরমায়েশ খাটতে খাটতেই তো দিন যায় আমার। আজ হাসপাতাল তো কাল শ্বশুরবাড়ি পরশু এই আয়োজন সেই করো! 

বোনের কন্ঠের ঝাঁঝ বুঝে চুপ করলো অর্নব। বাড়ির একমাত্র ছেলের বউ সে,শ্বাশুড়ি চান সব ও করুক উনার আরো ২মেয়ে আছে তাদের কে ও সময় দেন,গ্রামে যান। অন্যদিকে অর্পার কাছে সংসারের এতো কিছু ঝামেলার মনে হয়,ওকেও কেন সব করতে হবে? এই এক প্রশ্নেই আটকে আছে আজ ২বছর। 

প্রসংগ পাল্টাতে অর্ণব বললো, 

-অর্পা তোর ভাবির সাথে একটু বন্ধু হবার চেষ্টা করিস সে তোকে অনেক পছন্দ করে,ওর তো কোন বোন নেই। 

অর্পা চুপ থেকে বেশ ঝাঁঝের সাথেই বলে- ভাইয়া,তোমার কি মনে হয় আমি খুব সুখে আছি?আমার মনে সুখ নাই এটা কি তোমার বুঝতে এখন কষ্ট হয়? যেখানে আমিই ভালো নেই সেখানে আরেকজন কে ভালো করে দেখবো কিভাবে? সব সময় তো সম্ভব না। 

অর্নব হাল্কা সুরে বললেন-  সমস্যা তো সবার ই কম বেশি থাকে,তবুও তো সবার সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে হয়। 

অর্পা আগের মতো ই বললো- এই সংসারে আমার চাইতে সবার অগ্রাধিকার বেশি,আর আমাকে বলছো নিজের আগে তোমার বউকে মূল্য দিতে? বউ হিসেবেও আমার মূল্য নাই বোন হিসেবেও এখন খারাপ হচ্ছি! ভালো। 

অর্নব আর কথা বাড়ালেন না। 

বাসায় ফিরে মা কে অল্প কথায় যা দেখে এসেছে বললেন -মা,পরিবারে তো সবাই সবার কথা ভাববে দেখবে বুঝবে এটাই হওয়া উচিত তাই না? অর্পা আমি একলা বড় হয়েছি কিন্তু আমার সব সময় ই একটা পরিবারের আগ্রহ ছিলো,বাবা-মা সবাইকে নিয়ে। তোমাদের কে আমার বউ বিরক্তিকর মনে করবে,বোঝা ভাববে এটা যেমন মানতে পারবো না তেমনি অর্পাও সব সময় ওদেরকে নিয়ে বিরক্ত হয়ে সেটা এভাবে প্রকাশ করবে এটাও খুব বিবেকে লাগছে!

মা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন- বিষয়টা যদি কেউ ঠিক করতে পারে সেটা একমাত্র ওর জামাই। তার পক্ষেই সম্ভব অর্পাকে মানুসিক ভাবে শান্তি দেয়া। স্বামী যদি সাথে থাকে তাহলে বউ সবই করতে পারে,এটা তুই না বুঝলে বৌমা কে জিজ্ঞেস করে দেখিস। 

অর্নব আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসলেন নিজের রুমে। বোনটার জন্য খারাপ লাগছে,এভাবে হয়তো অর্পাও বুঝবে হয়তো তখন দেরিও হয়ে যাবে কি না কে জানে! 

 


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন
হাত খরচ

হাত খরচ

শুকনোপাতার রাজ্য

৩ সেপ্টেম্বার ২০২৪

কাজেমা

কাজেমা

শুকনোপাতার রাজ্য

৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩