পশ্চিম গালিলি। মাহমুদ দারবিশের গ্রাম যেখানে। ইজরায়েলি দখলদারদের হাত থেকে মাত্র সাত বছর বয়সেই পরিবারের সাথে পালিয়ে বাঁচতে হয়েছিল তাকে। বছর গেলে যখন ফিরে আসার সুযোগ হয়েছিল তখন প্রিয় বইগুলোর ছেঁড়া পাতা, নির্মম ধুলো, লুটিয়ে পড়া খিড়কী দরজা আর নিদারুন স্তব্ধতা ছাড়া আর কোনকিছুই অবশিষ্ট ছিলনা তার মতন অসংখ্য ফিলিস্তিনিদের জন্য। দারবিশ তখন যেন নৈশব্দে ডুবে গেলেন আকণ্ঠ। কবিতায় অব্যক্ত যন্ত্রণার উপশম খুঁজতে গিয়ে দেখা পেলেন পাথর পিঞ্জরে জন্ম নেয়া অলৌকিক ফুলের। শৈশবেই দারবিশ স্বরচিত কবিতা পাঠের আসরে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন,
চাইলেই সোনা রোদে খেলতে পারো
পেতে পারো রঙিন পুতুল
আমি পারিনা!
ঘর আছে তোমার
আমার নেই কিছুই;
উৎসব আনন্দ ঘিরে থাকে তোমাকে
নাগাল পাইনা আমি তার,
একসাথে খেলতে পারিনা কেন তুমি আমি?
(“You can play in the sun as you please, and have your toys, but I can’t. You have a house, and I have none. You have celebrations, but I have none. Why can’t we play together?”)
পরিণামে ওই অতটুকু বয়সেই শাসানো হয় তাকে, ইজরায়েলি সরকারের মদদপুষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। পরিবারও পড়ে যায় হুমকীর মুখে। সেই থেকে নিজেকে চিনতে পারার শুরু। দারবিশ রূপকের আশ্রয় নিয়েই চালিয়ে যেতে লাগলেন তার অনবরত সংগ্রাম। গোটা মাহমুদ দারবিশের শরণার্থী জীবন এবং হারানো মাতৃভূমির মুক্তির লড়াই মূর্ত হয়ে ওঠে একেকটা আমসিয়া কিংবা সান্ধ্য কবিতা পাঠের আসরগুলোতে। দারবিশের বুকের পাঁজরে জন্ম নিয়েছে ক্ষোভের ডুমুর, সেই ডুমুর ভীষণ শক্তিতে শত্রুপক্ষের ট্যাংক গুঁড়িয়ে দেবে তাই শঙ্কিত ভূমিদস্যুর দল সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবধি অগুণন ডুমুরের জনককে ঘরে আটকে থাকার সমন জারী করলো। যেন নবী ইউসুফ (আ) এর আর্তি প্রতিধ্বনিত হল পৃথিবীর বুকে আবারো। কখনো পাথর ছুঁড়ে কখনো পরম আদরে গড়া আঙ্গুর বাগানে বিষ ঢেলে আক্রোশে আহত করতে চাইলো তাকে।
দারবিশের কাঁধের ওপর কেন প্রজাপতি চড়ে বসলো, ফসলের শিষ কেন পরমাবেগে ঝুঁকে পড়ল কিংবা উড়ন্ত পাখিরা কেন তারই হাতের চেটোয় নেমে আসে শুধু, সে ভীষণ অপরাধে বুঝি কারাগারেও বন্দী করে ফেলেছিল হিংসুক।
“ডানাহীন পাখিরা” শিরোনামে দারবিশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় তার যখন মাত্র উনিশ বছর বয়স। ইজরায়েলি কম্যুনিস্ট পার্টির অর্থায়নে প্রকাশিত “রাকাহ”র সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন কিছুদিন। কাজ করেন ইজরায়েলি ওয়ার্কার্স পার্টির পত্রিকা আল ফাজরেও। তবে ইজরায়েলি রাষ্ট্রের নীতির সাথে আপোষ করেননি কখনো। সম্পাদনার দায়িত্ন পালনের সময় ক্রমাগত লিখে গিয়েছেন “Leaves of the Olive Tree,” “A Lover from Palestine,” and “End of the Night” এর মত অগণিত প্রতিরোধের কবিতা যেগুলো ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনে অসামান্য প্রেরণা যুগিয়ে গিয়েছে।
এরপর তিনি কখনো মেটাফোরে আবার কখনো ভীষণ সরাসরি কবিতার পঙক্তিতে তুলে এনেছেন ফিলিস্তিনিদের প্রতিদিনের জীবনকে। আরববিশ্বে তাই দারবিশ ভীষণ স্বতন্ত্র এক প্রতিরোধের প্রতিক। রক্তাক্ত স্বভূমের স্বাধীনকামী মানুষেরা তাকে পাঠ করে অসামান্য অনুপ্রেরণায় ঋদ্ধ হয় এখনো, প্রতিদিন।
অবরোধকালে
মেঘের কাছে একজন নারীর একান্ত নিবেদন:
জড়িয়ে ধরো আমার ভালবাসাকে শক্ত করে
আমার জামা ভিজে আছে তার রক্তে
যদি নাইবা হতে পারো শ্রাবণধারা হে প্রিয়,
বৃক্ষ হয়ো
উর্বরতায় সিক্ত কোন বৃক্ষ হয়ো
আর যদি বৃক্ষ না হতে পারো, তবে ঠিক পাথর হয়ো
আদ্রতাতে ভেজা কোন পাথর হয়ো
পাথরও হতে না পারলে প্রিয়,
চাঁদ হয়ো চাঁদ হয়ো
প্রিয়তমের স্বপ্নে দেখা চাঁদটিই হয়ো
শোকার্ত জানাজায় একজন নারী তার শায়িত পুত্রকে কত কথা জানিয়ে দেয় নিবিড় আলাপনে,
কথারা যেন থেমে না থাকে তাই বুঝি ছেলেটিও বলতে লাগল:
অবরোধকালে, সময় তো শুন্যতা
এই রূপান্তর চিরন্তনতাকে করে দেয় সুকঠিন
শূন্যতাও বদলে যায় সময়ে; অবরোধকালে
কেবলই বিলম্বিত সে সময় গতায়ু দিন আর গর্ভস্থিত আগামীর জন্য।
A State of Siege
A woman asked the cloud: please enfold my loved one
My clothes are soaked with his blood
If you shall not be rain, my love
Be trees
Saturated with fertility, be trees
And if you shall not be trees, my love
Be a stone
Saturated with humidity, be a stone
And if you shall not be a stone, my love
Be a moon
In the loved one’s dream, be a moon
So said a woman to her son
In his funeral
He goes on to add:
During the siege, time becomes a space
That has hardened in its eternity
During the siege, space becomes a time
That is late for its yesterday and tomorrow
আমাদের জমিনে
আমাদের জমিনে,
আর এই সেই প্রভুর বাণীর সন্নিকটে নিষণ্ণ,
জলদেহে জড়ানো মেঘ ছাউনিটা
আমাদের জমিনে,
এই তো সেই বিশেষ্যের বিশেষণ থেকে বহু দূরের,
অবিদ্যমানতার মানচিত্র
আমাদের জমিনে
তিলবীজসম ক্ষুদ্র স্বর্গীয় দিগন্ত,
সাথে তার জুড়ে থাকে লুকোনো ফাটল এক
আমাদের জমিনে,
আর এই হল সেই জরাজীর্ণতা
বুনো হাঁসের ডানা, পবিত্র গ্রন্থাবলী কিংবা
চিনে নিতে পারা জখমদাগের সাথে সাদৃশ্য যার
আমাদের জমিনে,
আর এ হল বিদীর্ণ পাহাড়ে ঘেরা,
নবাগত অতীতের অপেক্ষায় ওঁত পেতে থাকা
আমাদের জমিনে,
এ তো যুদ্ধের বিনিময়মূল্য,
সুতীব্র ক্ষুধা এবং দহন থেকে অন্তীম প্রয়াণের স্বাধীনতা
আর আমাদের জমিন,
তার রক্তাক্ত রাত প্রহরে
এক রত্নপাথরের মতন দূরে বহুদূরে ঝলকায়-
দীপ্তি ছড়ায় তার শরীরে দৃশ্যমান সবটুকু...
অথচ অদেখা অন্তস্থলে,
আমাদের নিঃশ্বাস নেবার পথ
আটকে আসতে থাকে ঠিক ততটাই।
To Our Land”
To our land,
and it is the one near the word of god,
a ceiling of clouds
To our land,
and it is the one far from the adjectives of nouns,
the map of absence
To our land,
and it is the one tiny as a sesame seed,
a heavenly horizon … and a hidden chasm
To our land,
and it is the one poor as a grouse’s wings,
holy books … and an identity wound
To our land,
and it is the one surrounded with torn hills,
the ambush of a new past
To our land, and it is a prize of war,
the freedom to die from longing and burning
and our land, in its bloodied night,
is a jewel that glimmers for the far upon the far
and illuminates what’s outside it …
As for us, inside,
we suffocate more
(Source: Four Poems of Palestinian Resistance by Mahmoud Darwish: Ariel Rodriguez.)
Photo: https://khaledbeydoun.substack.com/p/silence-for-gaza-by-mahmoud-darwish
( লেখাটি Women Express ম্যাগাজিনে প্রকাশিত)
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)