সাহিত্য

পু্ঁচি ও পুচকির গল্প

পু্ঁচি ও পুচকির গল্প

সকাল থেকে মুনিয়া বাড়ি মাথায় তুলেছে,তার একটা বিল্লি চাই,চাইই চাই আজি এক্ষুণি!বাসার ছোট্ট চাচাত বোন,মামাতো ভাইকে নিয়ে একটা বিড়ালের বাচ্চা অনুসন্ধান টিমও করে ফেলেছে।তাদের কাজ হবে নাকি, বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বিড়ালের বাচ্চা খুঁজে বের করা।মুনিয়ার ছোট্ট ভ্রাতা মাহিনকে রীতিমতো বারবিকিউ পার্টি ঘুষ দেবার কথাও জানিয়েছে,যদি ওর বিশাল বিচ্ছু বাহিনী কিছু একটা করতে পারে।মাহিনও সিরিয়াস, সকাল থেকে একটার পর একটা বন্ধুকে নক করছে।
বাসার সবাই তো অবাক,এতোদিন পর মুনিয়ার আবার বিড়াল পোষার শখ কেন হলো!শৈশবে তার বিড়াল নিয়ে আদিখ্যেতা, সবাই সহ্য করেছে শিকারী বিড়াল ছিলো সেটা,আজ সাপ ধরে নিয়ে আসতো,কাল শালিক...শিকার ধরে খেলা করাই যেন ওর শখ ছিলো!মুনিয়ার দাদাভাই তবুও মুনিয়া বলতে অজ্ঞান,প্রথম নাতনি ওনার,কলিজার আধখান!তিনিও তার পরিচিতদের কাছে খোঁজ নিচ্ছেন!এতোসব কাণ্ডকারখানা দেখে কে বলবে, মুনিয়া সবেমাত্র স্নাতক শেষ করেছে!
দিন পনেরো পর মুনিয়ার আনন্দ দেখে কে!বিল্লি ইজ কামিং,ছোট্ট গুলগুলে তুলতুলে শরীর তার!সাদা রঙের মাঝে কমলা রং,মাথার কাছটাতেও কমলা রং ইতিউতি ছড়িয়ে।ওর নরম শরীরে হাত বুলিয়ে আনন্দ,ডাক নামও রেডি প এ চন্দ্রবিন্দু উ-কার,চ এ ই-কার, পুঁচি!বাড়িময় ওর নামডাক,সকালে রোদে বসতে পুঁচিকে চাই,দুপুরের খাবারেও ওকে চাই,রাত্রিতে লেপের উপরও ওর আধিপত্য!

গল্পের ফ্লাশব্যাকে আমরা পিছনে যাই,গত তিনমাস আগে মুনিয়ার প্রথম সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবার আগেই, হারিয়ে যায় অধরা জগতে!শরীরের যন্ত্রণা ব্যথা,একশো চার টেম্পারেচার সঙ্গী করে অনাগতের প্রস্হানের কষ্ট আলাদা করতে পারেনি পনেরো দিনের উপর!তারপর, রক্তশূন্য সাদা চোখে বাগানের শিউলী গাছটার নিচে তাকিয়ে থাকতো সকাল সাজে!ছোট্ট শরীরটা যে ওখানেই শুয়ে আছে নিভৃতে,সকালে সকল ভালোবাসা নিয়ে শিউলীরা ঝরে পড়ে!যোহরের সলাতের শেষ দু 'রাকাতে স্হিরতা রাখতে পারে না আর মুনিয়া,সলাত শেষে কালো থমথমে ঘুম নিয়ে বেরোতে পারে না।বাসার পিচ্চিগুলো অস্হির করে তুলবে,খালামনি কি হয়েছে,ফুপী কি হয়েছে তোমার!আহনাফটা তো আরো দুষ্ট হয়েছে,আদুরে কন্ঠে বলে,আমাদের অন অ্যান্ড অনলি দুলাভাই, মিস্টার প্রফেসর কি বকেছে তোমায়?এক্ষুণি পাপাকে বলছি দাড়াও!বড়মামা এসব শুনলে আবার মাহমুদকে নিয়ে সিরিয়াস মনস্তত্ত্ব আলোচনায় বসে বারোটা বাজাবেন,এমন সাইকো সাইকাটিস্টও হয়,বড়মামাকে না দেখলে বোঝা যেতো না।এদিকে পুঁচির আগমন দুপুরবেলাটা উপভোগ্য করেছে,বেশ কয়েকমাসে পুঁচি দুধ ছেড়ে মাছ খেতে শিখেছে!মাহমুদ বিড়াল সহ্য করতে পারে না একদম, তাও এই আধপাগলীর জন্য বিসর্জন দিয়েছে।ক্লাস মিস দিয়ে মুনিয়ার পাগলামী তো সামলাতে হয় না,এতেই খুশি সে।

ছয় মাস পরের কথা,মুনিয়া নতুন করে কনসিভ করেছে,বাসার সবাই খুশি!পুঁচিও কি খুশি,কে জানে!অনলাইনে ক্লাসটাইমটাতে পুঁচি গা ঘেষে বসে থাকে!সন্ধ্যার চায়ের কাপে বিস্কুটে ভাগ বসায়,মুড়ি খায়।মুনিয়ার স্বাস্হ্য সচেতনটা এতোটা তীব্র পর্যায়ে পৌছেছে বিল্লিকে সুগারী ফুড দেবে কী না,তাও নিয়ে হেলথজার্নাল ঘাটে!কেমন সুন্দর করে মাতৃত্বের পরশে অবুঝ প্রাণীটি সিক্ত হয়,ওর ক্ষুদ্র সত্তা কি উপলব্ধি করেছিলো!হয়তো ভালো করেই করেছিলো,না হলে এতো অভিমান করে ছেড়ে গিয়েছিলো কেন!

এক চন্দ্রালোকিত রাতে মেহরীমা আসলো মুনিয়ার কোলজুড়ে।এক সপ্তাহ পর হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরলো যখন, বাসায় তখন চাঁদের হাট।মেহরীমাকে ঘুম পারিয়ে যখন পুঁচির খোঁজ করছে মুনিয়া কোথাও সাড়া নাই!মাহমুদকে অনুরোধ করে, সিড়ি ভেঙ্গে উপরে আসতেই দেখে পুঁচি ওর দোলচেয়ারটায় বসে,কোল নিতে হাত বাড়াতেই এমন একটা কান্ড করে বসলো! একদম মিয়াঁও করে মুনিয়ার হাতে আচড়ে দিয়ে পালালো,স্যালাইনের সুচ ফোটানো জায়গাটায় লেগেছিলো!মাহমুদ দেখেও বকলো না,এ্যান্টিসেপটিক লাগিয়ে ডাক্তারকে ফোন করলো।সেদিন রাতে ঘুমাতে শেষে দেখে পুঁচি গুটিশুটি পাকায়ে ঘুমায়ে আছে,মেহরীনের নতুন কম্ফির উপর!আর তো পারা যায় না,যা করার বড়মামা শ্বশুর সাহেবই করতে পারবেন।মুনিয়া বাসায় থাকলে কি কিচ্ছু করা যায়,তার উপর কোন কারন তো ঘটেনি....

পরদিন বিকেলবেলা, পুঁচি মেহরীনের হাত থেকে খেলনা বল নিতে গিয়ে আঁচড়ে দিলো।আর যায় কোথায়,মেহরীন হাত-পা ছুড়ছে, মুনিয়াই বড্ডো বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিলো পুঁচিকে।সন্ধ্যায় বড়মামা মাহমুদকে ডেকে পাঠিয়েছেন, ওদের ফিরতে রাত দশটা, ফ্রেশ হয়ে শুতে এসে মুনিয়া দেখে, পুঁচি আসেনি শুতে!মনটা খচখচ করে ওর,তখন বড্ডো লেগেছিলো হয়তো ওর।সকালে রকিং চেয়ারে গা এলিয়ে, মেহরীনকে দোলনায় শুইয়ে খেলছিলো তখনো ওর দেখা নেই, আর তখনি অদ্ভূত ব্যাপার যেটা ঘটলো মেহরীন আধো বোলে "মিয়াঁও" বলে হাত-পা ছুড়ছে!দুপুরে মুনিয়ার খেতেও ইচ্ছে করলো না,কেমন স্বার্থপর লাগছিলো ওর!

ওদিকে গত সন্ধ্যায় পুঁচিকে বড়মামারা অন্য বাসায় পোষ্য দিয়ে এসেছিলেন,তারাও চুপচাপ হয়ে আছেন।মুনিয়াও খায়ও না ঠিকমতো,এদিকে মেহরীন হাত-পা ছুড়ে মিয়াঁও আ...আ....আতো।তৃতীয়িন সকাল বেলা মুনিয়া শাওয়ার নিতে গেলো মেহরীন ঘুম পাড়িয়ে,একটু পর শোনে মেহরীনের মিয়াঁও আ মা আ....,দোলনার মধ্যে কম্ফর্টার দখল করে পুঁচি লেজ নাড়ছে।মেহরীন গুলুমুলু হাত দিয়ে ছুঁতে চেষ্টা করছে......!


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)