উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

শাঁখের করাত

শাঁখের করাত
‘শাঁখের করাত’, যার দুই দিকেই ধার থাকে, অতএব যেদিকেই ঘুরানো হয় সেদিকেই সব কাটে। আমার মতো অনেকেই হয়তো শাঁখের করাত দেখেননি, তবে একটু লক্ষ্য করলেই মানুষরূপী অসংখ্য শাঁখের করাত দেখতে পাবেন। এবার শাঁখের করাত জাতীয় কিছু গল্প বলি। সাজ্জাদ সাহেব একদিন ইস্ত্রি ছাড়া, ময়লা কলারের একটা শার্ট পরে অফিসে আসলেন। পাশের কিউবিকলগুলোতে ফুসর ফিসির, ‘ ওয়াইফ মনে হয় একদম খেয়াল রাখে না, নাইলে আয়রন ছাড়া ময়লা শার্ট পরে কেউ অফিসে আসে?’ এই সাজ্জাদ সাহেবের বউই একদিন হন্তদন্ত করে, সাত সকালে, বাচ্চাদের টিফিন, সকালের নাস্তা, স্বামীর লাঞ্চ তৈরি করে, স্বামীকে প্রতিদিনের মতো ফিটবাবু বানিয়ে অফিসে পাঠিয়ে, নিজের কাপড়টাই আয়রন করার সময় পাননি। তাই বাইরে গিয়ে আড়াল থেকে শুনতে হলো, ‘একদম রুচিহীন মহিলা, নাইলে এই কুঁচকানো কাপড় পরে কেউ বাইরে আসে?’ এদিকে ঝুমুর পড়েছে এক বিড়ম্বনায়, গ্রামের বাড়ি থেকে শাশুড়ি মা বেড়াতে এসে বললেন, ‘কি বউমা! আমার ছেলে তো শুকায় কাঠ। ইস, নখ গুলো কি বড় বড় হইছে, এগুলা কাইটা দিতে পারো না। আমার ছেলেতো এক গ্লাস পানি নিয়াও কখনো খায় নাই। আহারে!!! বাবা তোর মনে হয় কোন যত্নই হয়না’। খানিক ভুঁড়ি সমেত নাদুস নুদুস ছেলেটার দিকে আপাদমস্তক তাকিয়ে, ঝুমুর বুঝেই উঠতে পারে না, এই লোক কোন দিক দিয়ে শুকিয়েছে। কয়েক মাস পর, ঝুমুরের স্বামী মাইল্ড হার্ট এ্যাটাক করলো। শাশুড়ি মা হম্বিতম্বি করে হাজির, ‘ইচ্ছা মতো খাওয়াইলেই হইলো, তেল কম দিয়া একটু বুইঝা শুইনা রানবা না। তোমার আর এতো সাবধানে রান্নার সময় কই, চাকরিজীবী বউ ঘরে আসলে যা হয় আরকি......’ এই গল্পটা একজনের কাছ থেকে শোনা, এক অবিবাহিত ভদ্রলোক অফিসে বসে আফসোস করছেন, ‘ বউ নাই, তাই প্রায় সকালেই নাস্তা না খেয়ে আসতে হয়’। পাস থেকে এক ভদ্রমহিলা বললেন, ‘ভাই, আমাদেরও ‘বউ’ নাই, কিন্তু আমরা নাস্তা খাইয়াও আসি খাওয়াইয়াও আসি!!!’ এবার গল্পের সারমর্ম বলি, যেই মায়েরা ছেলে সন্তানকে, ‘ছেলে না...’ বলে বলে বিকলাঙ্গ মানুষ হিসাবে এমন ভাবে গড়ে তুলেন, যে নিজের যত্নটাও নিজে নিতে শিখে না, এই আশায়, ‘একদিন তো বউ নামক শিক্ষিত বেবি সিটার নিয়ে আসব’, তাদের উদ্দেশ্যে বলি, সামাজিক নিয়মেই মেয়েরা সাধারণত, রান্না বাটি, হেঁশেল ঠেলার কাজটা করে থাকেন, এবং পুরুষরা সংসারের জন্য আয় করে নিয়ে আসেন, সেটা একটা সামগ্রিক কাজ, কারণ সংসারটা দুজনের। কিন্তু এটার অর্থ এটা নয় যে, নিজের ছেলের সেলফ কেয়ারটাও পরের মেয়ের ঘাড়ে চাপাবেন, কারণ আপনার ছেলে বিকলাঙ্গ বা ম্যান্টলি রিটার্ডেট নয়। পরের মেয়ে অসুস্থ হলে, মীনার কার্টুনের ডায়লগের মতো, ‘কাজ করো, আরাম করো, পানি খাও, কাম করো, সব ঠিক’, বলার জন্য রেডি না থেকে, বরং নিজের পুত্র সন্তানটিকে রেডি করেন স্বাবলম্বী হতে। বউ কিছু না পারলে যেমন বলা হয়, ‘মা কিছু শিখায় নাই’। তেমনই, ছেলে যদি নিজের শার্ট আয়রন করতে না যানে, তাহলে তার ডবল শোনা উচিত, ‘বাপ-মা কিচ্ছু শিখায় নাই’। কারণ, তার বাবাকেও হয়তো সে কখনো আয়রন করতে দেখে নাই। ‘স্ত্রী স্বামীর সেবা করবে এটাই তো ভালোবাসা’, কথাটা ভুল, কারণ ভালোবাসা একতরফা হয় না, স্ত্রী যদি স্বামীর জুতা পালিশ করে দেন তবে স্বামীরও উচিত, ক্লান্ত স্ত্রীকে এক কাপ চা বানিয়ে খাওয়ানো। স্ত্রী যদি স্বামীর পা টিপে দেন, তবে স্বামীরও উচিত, স্ত্রীর পা টিপে দেওয়া। স্বামী যদি মাসের চারটা উইকেন্ডে, দশটা এগারোটা অব্দি ভোঁস ভোঁস করে ঘুমান, তবে অন্তত একটা উইকেন্ডে খু...্তি হাতে নিয়ে স্বামীর তার স্ত্রীকে বলা উচিত আজকের দিনটা তোমার। আর মেয়ে সন্তানের মায়েরা, যারা খুব হা হুতাশ করেন, ‘আমার মেয়েটা তো কোন কাজই পারে না, শ্বশুর বাড়ি যাইয়া যে কী করবে। ‘মেয়ে মানুষের’ কাজ না শিখলে হয়?’ কাজ শেখার ক্ষেত্রে ‘মেয়ে মানুষ’ নামক আলাদা প্রজাতি না বানিয়ে, বলতে শিখু..., ‘মানুষ (নারী এবং পুরুষ) কাজ না শিখলে কী হয়?’ আর হ্যাঁ, আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে কন্যা সন্তানকে আলাদা ভাবে একটা জিনিস একটু বেশী শেখানো উচিত, আর তা হচ্ছে আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ