সাহিত্য

শর্ট নাটক - অজান্তে (সড়ক দুর্ঘটনা)

শর্ট নাটক -  অজান্তে (সড়ক দুর্ঘটনা)

 

দৃশ্য - ১
আসিফ-সামিয়ার বাসা।
সময় - সকাল ৭:৩০
আসিফ - ২৫
সামিয়া - ২২
মাইশা - ৭

(সামিয়াকে রান্নাঘরে ডিমের অমলেট বানাতে দেখা যাবে। একসময় প্রায় দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে স্কুল ড্রেস ঠিক করিয়ে দিতে দেখা যাবে। আসিফ অফিসের পোশাকে ড্রেসিনের সামনে চুল আচড়াতে দেখা যাবে। খানিক পরই ডাইনিং টেবিলে তিনজনই, মাইশার চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু)

সামিয়া : মাইশা চোখ খোলো মা, দেরী হয়ে যাচ্ছে দ্রুত নাস্তা করো। স্কুলের গাড়ি তোমাকে না নিয়েই চলে যাবে তো।

আসিফ : মেয়েটার সকালের ঘুম হয়ই না। ডে শিফটে দিলেও পারতাম।

সামিয়া : এভাবে বলোনা তো আসিফ। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা সুন্নাত আর শরীরের জন্যও ভালো।

আসিফ : হুম তা ঠিক বলেছো।

মাইশা : আম্মু তুমি একটু খাইয়ে দাও না। আমি আরেকটু ঘুমিয়ে নিই খেতে খেতে। এরপর থেকে খুব ভোরে ঊঠে যাবো। আম্মু প্লিজ।

(আসিফ সামিয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকী হাসবে। সামিয়া মাইশার মুখে খাবার তুলে দিবে)

সামিয়া : আমার আম্মুটার তো সাত বছর হয়ে গেছে। এখন থেকে ফজরের সময় উঠে ফজরের নামাজ পড়ার প্র্যাকটিস করতে হবে। তাই না আসিফ?

আসিফ : হ্যা তো আর আমার দেখে নিও ঠিকই শুরু করতে পারবে।

মাইশা : তাহলে আমাদের একসাথে জান্নাতে দেখা হবে বলো আব্বু?

আসিফ : হ্যা মা। ইনশা আল্লাহ!

দৃশ্য - ২
আসিফের বাসার গেইটে সামিয়া দাড়ানো। স্কুল গামী মেয়ের কপালে চুমু দিবে। আসিফ মেয়ের স্কুল ব্যাগ কাধে নিয়ে নিবে। আর মেয়ের হাত ধরে সামনে এগুতে শুরু করবে।

সামিয়া - মাম্মাম ক্লাস ওয়ার্ক মনোযোগ দিয়ে করবে ঠিকাছে?

মাইশা পেছনে তাকিয়ে - জ্বি আম্মু, তুমি পুডিং বানিয়ে রেখো আমি ফিরে এসে খাবো।

সামিয়া - আচ্ছা মা, আল্লাহ হাফিজ।

আসিফ মাইশা সমস্বরে - আল্লাহ হাফিজ।

(আসিফ মেয়ের হাত ধরে স্কুল মাইক্রোর দিকে এগুবে)

আসিফ : অফিস থেকে ফেরার পথে আমার আম্মুর জন্য কি নিয়ে আসবো?

মাইশা - ফেরার পথে তুমি আমার আব্বুকে নিয়ে এসো!

(কথা শেষ করেই মাইশা গাড়ীর দিকে দৌড়াবে। মেয়ের এতো সুন্দর কথা শুনে বিস্মিত হয়ে আবেগে নিজেও দোড় দিয়ে মেয়ের হাত ধরবে)

আসিফ : অবশ্যই আমি আমার মেয়ের আব্বুকে নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ! কিন্তু আমার আম্মুটাকেও যে সাবধানে চলতে হবে। রাস্তায় কত গাড়ি আসে এভাবে দৌড়ানো যাবেনা মা! ঠিক আছে?

মাইশা - ঠিক আছে আব্বু।

(মাইক্রোতে উঠে যাবে মাইশা জানালা দিয়ে আসিফের দিকে তাকাবে)

মাইশা - আব্বু আল্লাহ্ হাফিজ

আসিফ - আল্লাহ হাফিজ মা!

(দৃশ্য -৩)

(আসিফ অফিস ডেস্কে কাজে ব্যাস্ত। একজন কলিগ পাশ দিয়ে হেটে যাবে একটু উবু হয়ে আসিফের ডেস্কে দাড়াবে)

কলিগ - আসিফ ভাই জানেন আজ রোড এক্সিডেন্ট হয়েছে।

(আসিফ কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই, কাজ অব্যাহত রাখবে)

আসিফ - এটা তো নিত্য দিনের খবর ভাই। সড়কে কোনরকম সাবধানত নেই। কোথায়?

কলিগ - হাউজিবিল্ডিং এ। এগারোটার দিকে একটা স্কুল গাড়ী ......!

আসিফ - ও ...... (আকস্মিক চমকে কলিগের দিকে তাকাবে, প্রায় চিৎকার করে) কোথায়?

(কলিগ ও আতংকিত হবে, বাকিরা উঠে দাড়িয়ে যাবে আসিফের এমন হঠাৎ চিৎকারে)

কলিগ - হাউজবিল্ডিং এ আসিফ ভাই। স্কুল গাড়ীতে সাত আট বছরের বাচ্চারা ছিলো। ফেইসবুকে ছবি এসেছে।

আসিফের চোখ লাল হয়ে এসেছে। ছবি দেখার আগেই। মবাইল হাতে নেয়ার আগে হাত কাপবে ওর ছবিতে মাইশার রক্তাক্ত মুখ দেখে গুমরে কেদে উঠবে)

আসিফ - সাদিক ভাই এই যে দেখেন এটা আমার মা ভাই। আজ সকালেই সে জান্নাতে যাবার স্বপ্ন দেখেছিল জানেন!!

(উপস্থিত সবার চোখ ভিজে উঠবে, আসিফকে দৌ ড়ে অফিসের গেইট পেরুতে দেখা যাবে, পিছু পিছু আরো ক'জন কলিগকেও)

বার বার প্রতিধ্বনিত হবে মাইশার বলা কথাটুকু (তাহলে আমাদের একসাথে জান্নাতে দেখা হবে বলো আব্বু!! )


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন