ধর্ম ও গবেষনা

রাসুল (সা.) এর শিশু ও সাহিত্য প্রেম

রাসুল (সা.) এর শিশু ও সাহিত্য প্রেম

শিশুটির একটি শখের পাখি ছিল। পাখিটি লালচে রঙের। সে তাকে খুব স্নেহে লালন-পালন করতো।প্রায়ই সে পাখিটি নিয়ে তার প্রিয় মানুষটির কাছে আসত। পাখিটিকে নিয়ে ছোট খাটো একটা আড্ডা জমে উঠতো। ঘটনাক্রমেই হঠাৎ করে পাখিটি একদিন মারা যায়। শোকাগ্রস্ত হয়ে পড়ে শিশুটি।পাখিটি ছিল তার বন্ধুর মত, খেলার সাথী। প্রিয় বন্ধু বিয়োগে প্রায়ই সে কান্না করতো। মন খারাপ হয়ে যেত তার। তার এই বিচ্ছেদ বেদনাকে ভুলিয়ে দিতে এগিয়ে আসলেন তার সেই প্রিয় মানুষটি। শিশুটির নাম ছিল উমায়ের। আর আরবী ভাষায় ‘পাখি’ শব্দের প্রতি শব্দ হলো ‘নুগায়ের’। উমায়ের ও নুগায়ের শব্দের মাঝে ধ্বনি ও উচ্চারণগত মিল আছে। তাই তিনি শব্দ দুটো দিয়ে একটি কবিতার শ্লোক তৈরি করলেন এবং শিশুটির কাছে গিয়ে মিষ্টি স্বরে বললেন-

‘ওহে আবু উমায়ের! কোথায় গেল তোমার নুগায়ের?’

 

ভালবাসা আর অফুরন্ত আন্তরিকতা মিশ্রিত এই ছন্দগত শ্লোকটি প্রিয় মানুষটির কণ্ঠে শুনে উমায়ের পাখির দুঃখ ভুলে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে হেসে উঠলো।

কে ছিলেন উমায়েরের এই প্রিয় মানুষটি?? মানবতার কান্নায় যিনি বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছেন। প্রেম দিয়ে তিনিই তো বিশ্বকে জয় করেছিলেন।আঁধারের পৃথিবীতে আলোর মশাল হাতে হেঁটেছিলেন যিনি, হ্যাঁ তিনিইতো দয়ার সাগর, সর্ব কালের শ্রেষ্ঠ মানব, শ্রেষ্ঠ নেতা ও রাসুল, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)। আর শিশুটি ছিলেন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আনাস (রা) এর ছোট ভাই আবু উমায়ের (রা)।

রাসুল (সা) কোন সফর থেকে ফিরে আসার সময় শিশুরা তাকে মাঝে মাঝে ঘিরে ধরতো। তিনিও তাদের কাছে টেনে নিতেন। কুশল বিনিময় করতেন। একবার দুই শিশু বায়না করে রাসুল সা. এর উটের পিঠে উঠে বসে। একজন তার সম্মুখে আর আরেকজন তার পিছনে। যে পিছনে বসেছিল সে ফোঁড়ন কেটে অন্যজনকে বললো,

‘আমি রাসুলের সামনে বসেছি আর তুমিতো পিছনে!’

এবার পিছনের জনও রাসুলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘আমি তো নবীজির গায়ের সঙ্গে মিশে আছি।‘

তখন সামনের জন নবীজির বুকের সাথে হেলান দিয়ে বললো,

'আমি এবার নবীজির বুকের সাথে’।

সর্বশেষ, পিছনের শিশুটি রাসুল সা. কে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘আমি রাসুল সা. কে দু-হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেছি’।

সামনের শিশুটি এবার আর বলার মত কিছু পেল না। রাসুল সা. তখন নিজে থেকে তার গায়ে হাত রাখলেন শিশুটি আনন্দিত হয় উঠলো।

এভাবেই একজন রাষ্ট্রনায়ক হয়েও তিনি শিশুদের সাথে কৌতুক ও খেলায় মেতে উঠতেন। ব্যস্ততার অজুহাতে তাদেরকে এড়িয়ে না গিয়ে সময় দিতেন। আন্তরিক বন্ধুর মতই চোখের চাউনিতে মনের ভাষাকে বুঝে নিতেন।

শিশুদের প্রতি আল্লাহর রাসুলের (সা) ভালোবাসা ও আন্তরিকতার এমন অজস্র উদাহরণ রয়েছে। তিনিই এক হাতে ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন, ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্রে হাতে তলোওয়ার তুলে নিয়েছিলেন আবার তিনিই আরেক হাতে কোমলতার চাদরে মানুষকে কাছে জড়িয়েছিলেন ভালবাসা-প্রেম ও মমতায়।


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)