ইন্টারন্যাশনাল উইমেন

কেনা বউ

কেনা বউ

আজকাল নাকি বউ কেনা যায়, আগে যেমন সেবাদাসী বা রক্ষিতা কেনা যেতো। 
মেয়ে মানুষ সত্যিই কেনা যায়, অল্প কিছু কাগুজে নোটের বিনিময়ে। কখনো দেহ, কখনো সৌন্দর্য, লালিত্য কখনো বা গোটা মানুষটাই। এলিফ্যান্ট রোডের দামী বাথরুম টাইলস থেকে শুরু করে গরু ছাগল কিংবা আলু পটলের মতো মেয়ে মানুষ কেনা যায়, হররোজ! 
ভারতে কেনা যায় গরু ছাগলের দামে। সেদিন আল জাজিরাতে মুখলেসার কথা পড়লাম। যাকে মাত্র ১২ বছর বয়সে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিলো এক ৭০ বছরের বুড়ার কাছে। এই বিক্রিটা বারবার হয়, মেয়াদভিত্তিক। টাকাটা পায় বাবা মা ভাই।
মেয়াদ ফুরালে আবার বিক্রি হয়, গরু ছাগলের জিল্লতির একটা শেষ আছে। কিন্তু মুখলেসাদের কষ্টের সত্যিই কোন সীমা নেই। 
হারিয়ানা রাজ্যে জেন্ডার রেশিওতে বিস্তর ঘাটতি থাকায় অন্য রাজ্য থেকে মেয়ে মানুষ কিনে আনা হয়। অভাব আছে নিজেদের, কিন্তু অভাব পূরণের জন্য মানুষ ও দোকানের বস্তুর মতো কিনে নেওয়া হয়। মানুষের সাথে যে মানবিকতার সম্পর্ক তা এক প্রকার জলাঞ্জলি দিয়েই। 
মুখলেসা হয়তো গ্রামের মেয়ে,সুবিধাবঞ্চিত নারী । কিন্তু মিশেল ওবামা? সভ্যতার ঘরের পুত্রবধূ ! মানুষকে বস্তু হিসেবে দেখার মানসিকতা থেকে তার ও রক্ষা নেই। এই তো কয়দিন আগেই দুজন আমেরিকান সরকারী নারী কর্মকর্তা তাকে নিয়ে বর্ণবাদি মন্তব্য করেছে। একজন লিখেছে- এমন কালো হুতুম প্যাঁচার চেহারার ফাস্ট লেডি দেখতে দেখতে চোখ পচে গেছে। হোয়াইট হাউজে মেলানিয়ার মতো ক্লাসি কাউকেই দেখতে চান তিনি। 
এই হল মানুষের মূল্যায়ন, যার ষোল আনাই বাহ্যিক। কই একজন havard স্কলার আর কোথায় মেলানিয়ার মতো রংবাজ চরিত্রহীন মডেল! ক্লাসির সংজ্ঞাটা তাহলে কী? 
আর এখানে এই দেশেও নারী কদাচিৎ মানুষের মর্যাদা পেয়েছে। বুশরারা , তনুরা, পূজারা আর তাদের মতো অনেকেই বারবার চিৎকার করে বলে দিয়ে যায়, নারী মানুষের আকার পেলেও মানুষের মর্যাদা আজও পায়নি। 
সবাই বলে- এতো এন জি ও কাজ করছে, এতো সচেতনতা এতো লেখালেখির পরেও নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছেনা কেন? 
আসলে একটা পুকুরের উপরিতলের পানি ছুঁয়েই যেমন বলা যায়না যে গোটাটা পুকুর চষেছি, ঠিক তেমনই একটু ঘ্যান ঘ্যান করেই সব নির্যাতন বন্ধ করা যায়না।
মোখলেসাদের ১২ বছর বয়সে ৭০ বছরের বুড়ার কাছে বেঁচে দেওয়া জীবন, জীবন্ত কবরে যাওয়ার চেয়েও কষ্টকর। তাদের ভাষ্যমতেই- এরচেয়ে মরে যাওয়া সহজ।

একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ দেখতে চাই, একটা ক্ষিপ্র হাত। যে হাত জীবন্ত কন্যা শিশুকে কবর দেওয়ার মাটি ঠেলে সরিয়ে দিবে। শক্ত হাতে প্রতিরোধ গড়ে দিবে। কবর থেকে তুলে এনে সোজা বসিয়ে দিবে মানবতার স্বর্ণমন্দিরে। যেখানে নারী মা, মেয়ে, কিংবা ঘরের রাণী।সর্বোপরি জলজ্যান্ত একজন মানুষ। যেখানে শরীর দেখিয়ে খাদ্যবস্তুর মতো লালা ঝরানো যায়না। যেখানে নারীর পরিচয় একজন মানুষ, বস্তু নয়।


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)