পাতালপুরীতে অতীতচারণ
পরের দিন নিদার স্কুল খোলা। মামীও কাজে গিয়েছে। সাহিল সকালবেলা কিন্ডারগার্টেনে ফোন করে বলে দিয়েছে যে, ঘরে ভাগ্নে আসায় তাকে অনেক দায় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আজকে সে যেতে চায়না। পরে ওদের শিক্ষিকা হাসতে হাসতে ঘটনার সত্যতা জানার জন্য ক্রসচেকও করেছেন। সুতরাং সাহিলও আমাদের আজকের সফরসঙ্গী।
মামা আমাদের টুনেলবাননা (পাতাল রেল) করে সিটি সেন্টার, গামলাস্তান দেখাতে নিয়ে যাবে এরকমই পরিকল্পনা। আজকের দিনটা অবশ্য আগেরদিনের মত গোমড়ামুখো না। তুলনামূলক উষ্ণ। সাথে আশাজাগানিয়া হালকা রোদ।
সুইডেনে মাটির নীচে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে তারপর রেলপথ বসানোর প্রক্রিয়া অতটা সহজে হয়নি। মাটির উপাদান কঠিন শীলা। যার কারণেই এমন কিছু আবিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় যা সহজে এবং মাপজোখ ঠিক রেখে এই কঠিন শীলা চূর্ণ করে পথ তৈরি করে দেবে। তখন সুইডিশ রসায়নবিদ ও প্রকৌশলী আলফ্রেড বের্নহাড নোবেল ডায়নামাইট নামের বিস্ফোরক আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কার ধ্বংস নয় বরং মানবকল্যাণে বিস্ফোরকের ব্যবহারের অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকলো।
হামবুর্গেও দেখেছি পাতালরেলের সুড়ঙ্গপথের দেয়ালগুলোতে চমৎকার সব বানী, চিত্রকলা আছে। যেগুলো একটা শহর, কখনো পুরো দেশকেই আসলে প্রতিনিধিত্ব করে। রাষ্ট্রীয় হালচালের অনেক কিছুই দেয়ালচিত্র বা গ্রাফিতি দিয়ে বোঝা যায়। স্টকহোমের টুনেলবাননাও নানারকম বিমূর্ত চিত্র, কথামালার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করতে চেয়েছে।
Collected photo of Stockholm Underground Metro Station T.
স্টকহোম রেলওয়ে ব্যবস্থাপনার খুব ভাল একটা দিক হচ্ছে এস্কেলেটর কিংবা সিঁড়ির পাশাপাশি বেশী পরিমাণে লিফটের (Hiss) উপস্থিতি যেটা বেবী স্ট্রলার ঠেলে নেয়া মা হিসেবে খুব উপকারী লেগেছে। যতগুলো দেশে ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে, সুইডেনে এই সুবিধাটার কথা আলাদা ভাবে বলতেই হয়। চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে স্ট্রলার ওঠানামার বিষয়টা আমার কাছে সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছে।
Metro Solna Centrum (collected)
ট্রেনের রেকর্ডেড ভয়েস বেশ মেলোডি মাখিয়ে একের পর এক স্টেশনের নামগুলো বলছিল থামার আগে। টেনে টেনে বলছিল যেমন নেস্ত্রাআআ (Next) আবার ঠেলে ঠেলে বলছিল মিড-সমার-ক্রানসেন অথবা হর্ন-স্ঠুল । জার্মান ভাষা নতুন শুনলে একটু পাষাণ পাথরের মত বা কাঠ কাঠ লাগে। সুয়েডিয় ভাষা আবার বেশ সুরেলা। যদিও উত্তর জার্মান ভাষা থেকে উৎসারিত তবু বিবর্তনে মিল হারিয়ে গেছে অনেকটাই । তারপরেও কিছু শব্দ তো অবশ্যই মিলে যায়।
সেঝ মামার পেশা ছিল সাংবাদিকতা। দেশে বেশ একটা সময় ধরে বহুল প্রচারিত এক দৈনিকের এসিস্টেন্ট এডিটরের দায়িত্বে ছিল। ছিল সেখানকার সাহিত্য-সাময়িকীর বিভাগীয় সম্পাদক। টিভি-রেডিওর নিয়মিত কুশলী। ঐরকম উড়ে বেড়ানো দুরন্ত সময় রেখে এসে এখানে পুরোদস্তুর ভিন্নধর্মী প্রশাসনিক কাজে নিজেকে বেঁধে ফেলেছে এখন। সুইডেনকে জানতে চাইলাম তাই রিপোর্টিং শুরু করল। পুরনো অভ্যাস, ভোলেনি।
সুইডিশদের ভাইকিং এজে ছিল লুণ্ঠননির্ভর জীবন। এরপর কিছুটা ভদ্রস্থ হয়ে কৃষিকাজ, বুনন শিল্প বা ব্যবসায়ে আদি সুইডিশরা মনোযোগ দিল। তবে জীবনযাত্রার মান তেমন উন্নত ছিলনা। মাত্র একশ বছর আগেও কৃষিনির্ভর দেশটির মানুষ না পারতে উত্তর আমেরিকা চলে গিয়েছিল। ১৮৮০ সালেই গিয়েছিল লক্ষাধিক মানুষ। কিন্তু যারা থেকে গেল তারাই কিন্তু অর্থনীতির চাকা মোটামুটি এমন ঘুরানো ঘুরালো যে সুইডেনকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এটা কিভাবে সম্ভব হল সেই প্রশ্নের উত্তর আসলে এক কথায় বলতে গেলে তারা গত দুইশ বছরে আর কোন যুদ্ধ বিগ্রহ বা হানাহানিতে যায়নি। এক ভাইকিংরাই যা করে গেছে তাই যথেষ্ট।
ভাইকিং শব্দটা নরওয়েজিয়ানদের নরস্কভাষা থেকে এসেছে। এই নরস্কভাষায় ভাইকিং মানেই হল জাহাজে উঠে অন্যের সর্বনাশ করা। অন্যের সর্বনাশ করতে করতে সম্ভবত সুইডিশরা বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল। তাই শান্তির সন্ধানে আছে এখন পর্যন্ত।
মাঝখানে অবশ্য সামান্য অশান্তি করেছিল আজকের নিরপেক্ষ ও শান্তিপ্রিয় দেশটি। নাৎসি বাহিনীকে নরওয়ে আক্রমণের পথ দেখিয়ে দিয়েছিল তারা। কিন্তু সরাসরি নিজেদের গায়ে রক্তের দাগ লাগাতে দেয়নি আর কখনো।
১৯২০ সালে ক্ষমতায় আসা সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টিই সুইডেনের ঘুরে দাঁড়ানো ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূল কারিগর। উনত্রিশের ছড়িয়ে পড়া গ্রেট ডিপ্রেশনের শিকার হলেও দ্রুতই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছিল এবং ১৯৩৮ সালেই পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু জীবনযাত্রার মানের দেশ হিসেবে খোদ আমেরিকার গণমাধ্যমগুলোর স্বীকৃতি পেয়েছিল। সোশ্যাল ডেমোক্রেটিকরা মানুষের ভেতর এমন ধারণার বীজ বুনে দিয়েছে যে মাতৃগর্ভ থেকে আমৃত্যু একজন সুইডিশ, রাষ্ট্রের মূল্যবান নাগরিক। রাষ্ট্র তার মৌলিক চাহিদার দিকে যত্নবান হতে বাধ্য। রাষ্ট্র যেহেতু যত্নবান সে কারণে নাগরিকও রাষ্ট্রের প্রতি যত্নবান। তারা স্বানন্দে ট্যাক্স দিতে পছন্দ করে। ট্যাক্সে ফাঁকিঝুকি এখানে বিরল।
২০০৬ সালে মডারেটরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে অবশ্য রাষ্ট্রের মালিকানায় থাকা অনেক প্রতিষ্ঠান বেসরকারী মালিকানার কাছে হাত বদলও হয়। করনীতির অনেক অদল বদলও হয়েছে তবে সমাজ কল্যাণ ধারণা সবসময়ই অগ্রাধিকার পেয়েছে।
(সুইডেনে গিয়েছিলাম ২০১৩ সালে। ২০১৪ সালের পর থেকে আবার সোশ্যাল ডেমোক্রেটদের বেছে নিয়েছিল সুইডিশ জনগণ। আর ভ্রমণের রিভিউ লিখতে বসেছি এমন একটা সময়ে যখন টান টান উত্তেজনায় তাদের জাতীয় নির্বাচন শেষ হল মাত্র। একটু বর্তমান চারণ করতে ইচ্ছে করছে তাই।
সোশ্যাল ডেমোক্রেট- লেফট- গ্রিন পার্টির সমন্বিত শক্তি লাল-সবুজ ব্লকের পক্ষে ৪০.৬% ভোট, এবং রক্ষণশীল মডারেট-লিবারেল-সেন্টার-ডেমোক্রেটদের মিলে গড়া রাইট ব্লক, যার নেতৃত্বে আছেন উলফ ক্রিসটারসন, এদের প্রাপ্ত ভোট ৪০.৩%।
উত্থান ঘটেছে জিমি অ্যাকসনের নেতৃত্বাধীন উগ্র জাতীয়তাবাদী এবং ফ্যাসিস্ট চরিত্রের সুইডিশ ডেমোক্রেটসের। তৃতীয় শক্তি হিসেবে তাদের ঝুলিতে ১৭.৬ শতাংশ ভোট। সরকার কে গঠন করতে যাচ্ছে সেটা এখনও অনিশ্চিত। অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন। ভোটের সমানুপাতিক অংশ ধরে পার্লামেন্টে দলগুলোর আসনের বণ্টন হবে।
প্রধানমন্ত্রী স্টেফেন লোফেনের অধীনে সোশাল ডেমোক্রেটস এককভাবে ২৮.৪ শতাংশ ভোট পাবার পরেও পুনরায় সরকার গঠন করতে পারবে কি পারবেনা নির্ণীত হয়নি এখনো। তবে সুইডেনের ইতিহাসে মধ্য বাম পন্থীদের এবারই সবচেয়ে আশাহত হবার মত ফলাফল হয়েছে। স্টেফেন লোফেনের নেতৃত্ব নিয়ে কথা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। আয় বৈষম্য বৃদ্ধি অথবা শিক্ষা- স্বাস্থ্য খাতে দরকারী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এইসমস্ত অভিযোগ ছাড়াও জার্মানির কট্টর Die Alternative für Deutschland ( AfD) এর মত সুইডিশ ডেমোক্রেটসরাও অভিবাসন সমস্যার সুযোগ নিয়ে রাজনীততে ব্যপক প্রভাব ফেলতে পেরেছে।
এখন আমি আবার সেঝ মামার তৎকালীন রিপোর্টিং এ ফিরে যাচ্ছি।)
সুইডেনে বিগত কয়েকশ বছর ধরে রাজতন্ত্র জারি থাকার পর উনবিংশ শতাব্দীতে এসে রাজনৈতিক দলই নাগরিকদের একচ্ছত্র আস্থাভাজনের মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পেরেছিল। তারা রাজার ক্ষমতাকে নিছক অভিভাবকের ক্ষমতাতেই নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। যে কোন ধরণের নির্বাহী ক্ষমতার রাজার থাকেনা। তার ক্ষমতা কেবল আনুষ্ঠানিকতায়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের পরামর্শে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন হল রাজার কাজ।
আমরা রাজা প্রসঙ্গে এলাম আবার সেন্ট্রাল ষ্টেশনেও এসে পড়লাম। দ্বিতীয় প্রসঙ্গে আলোকপাত করা বেশী জরুরী তাই খবরাখবর থামিয়ে নেমে পড়তে হল।
মাঝিরে...
স্টকহোমের কত নাম! জলের নগরী, ইউরোপের ভেনিস, বিউটি অন ওয়াটার, সম্পদ রক্ষাকারী নগরী, লম্বা দ্বীপ, ১৪ দ্বীপের শহর। সবগুলোই অর্থ বহন করে। সুরূপা বাল্টিক সাগরের ওপর ছোট বড় ১৪টি দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠা আজকের স্টকহোমের শুরুটা অন্তর্গত ছোট দ্বীপ হেলজেন্সহোম থেকে, এখানে বর্তমানে সুইডেনের ন্যাশনাল পার্লামেন্ট অবস্থিত। । স্টকহোম মূলত আর্কিপেলাগো বা অনেকগুলো দ্বীপের সমষ্টি। প্রতিবেশী দেশ এস্তোনিয়া, স্টকহোম থেকে কিছু দূরের ভিন্ন শহর সিগটুনা আক্রমণ করেছিল ত্রয়োদশ শতাব্দীতে। তখন সিগটুনার মানুষ ম্যালারিন লেকে নিজেদের সম্পদ ভাসিয়ে দিয়ে নতুন দ্বীপে জনপদ গড়ে তোলে। নাম দেয় রক্ষিত স্থানের দ্বীপ বা স্টকহোম।
আমার তো মনে হল স্টকহোমের নাম রঙিন দ্বীপ দেয়া দরকার। এত বিচিত্র রঙের স্থাপত্য! ব্লন্ড চুলের শাদা রঙের মানুষের পাশাপাশি ডার্ক চকলেট, মোকা, খয়েরী, হলুদাভ, পিঙ্গল কত রঙের মানুষের সমারোহ!
শীতের শেষের দিকে বসন্তের আকাঙ্খা একটু একটু করে প্রবল হতে থাকে। এত রঙ একসাথে পেয়ে বসন্ত ছুঁয়েছে আমাকে অনুভূতির স্পর্শই পেয়ে গেলাম।
স্টকহোমের সবচেয়ে প্রাচীন এলাকা গামলাস্তান যাব আমরা। বোকা আমার নাম শুনে চট করে মাথায় যে ছবি এসেছিল ওরকম কিছু আসলে জায়গাটির বিশেষত্ব না। এর বিশেষত্ব মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ায়, আদি মানুষের অস্তিত্বের টুকিটাকিতে।
গামলাস্তান আর রঙ
এই পুরনো শহরটি ইউরোপের অন্যতম সংরক্ষিত মেডিয়েভাল টাউন। সাপের মত সরু চিত্র বিচিত্র এলাকাটির পাথুরে রাস্তায় নির্জনতা কখনো এসে ধরা দেয়। তখন মনে হয় কোন ভাইকিং বুঝি ওঁত পেতে আছে বহুবর্ণা মেডিয়েভাল বাড়ি অথবা ক্যাথেড্রালের আড়ালে।
একটা বিষয় অবশ্য অস্বস্তি দিচ্ছিল। পর্দার বা কল্পনার ভাইকিংরা মাথায় যে শিং হেলমেট দেয় সেই ঘটনা আসলে সত্যি না। মিথের ওপর সোয়া মিথের মত উনবিংশ শতাব্দীর চিত্রশিল্পীদের বানানো মিথ। ছেঁড়া ছেঁড়া তুষারের আবহ হলেও ভাইকিং সাহেবকে শিঙের হেলমেট ছাড়া কল্পনায় আনা বেশ দুরহ লাগলো। এমনকি মিথলজির মহাপুরুষ থরও সামনে আসছিল না। এক চোখে কালোপট্টি লাগানো জনি ডেপ পাইরেটকে দেখতে পাওয়াটা এখানে অবান্তর। কল্পনা কোন হিসেব মানলে তো এত চিন্তা ছিল না!
অন্তর ঠাণ্ডা করা লেকগুলো যেন ইশারায় ডেকে ডেকে পুরনো পৃথিবীর ভুলে যাওয়া বার্তা জানাচ্ছিল আমাদের।
গামলাস্তানে আরও অনেক দেখেছি। রাজা কার্ল ষোলতম গুস্তাভ এবং রানী সিলভিয়ার সরকারী আবাসন কুংলিগা স্লোটেটের এক ঝলক দেখেছি। নোবেল মিউজিয়ামের লেকের উন্মত্ত বাতাসে সেই সময়কে অনুভবও করেছি। এই দেখাগুলো আমার গ্রীষ্মপর্বের জন্য তোলা থাকুক।
সাহিলের দিকে একটু মনোযোগ দিতে হচ্ছে। অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি হয়েছে। কিছু চায় বাবার কাছে। হয়ত তার জন্য নিষিদ্ধ কোন খাবার। বাবার সাথে নীচু অথচ সুরেলা সুইডিশে জোর দিয়ে দিয়ে অভিমানপ্রসূত কথা বলছে।
স্টকহোমের সিটি সেন্টার বা সংলগ্ন এলাকায় নানারকমের মনুমেন্ট। মেডিয়েভাল ড্রাগন থেকে শুরু করে পিস্তলের স্কাপচার। সাহিল বেশী ত্যক্ত করায় মামা নন ভায়োলেন্স স্ট্যাচু অব টুইস্টেড গানের নীচে দাঁড় করিয়ে রাখল। রাগে ঠোঁট উল্টে আছে সে। আমি আমার বেবী স্ট্রলার পাশে নিয়ে মীনার গল্প বলে ওকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করলাম। বাংলাদেশে এই গল্প খুব পছন্দ করেছিল সাহিল। দুই একে দুই, দুই ক্রোনা চার, তিন ক্রোনা ছয়ের নামতাও প্রায় মুখস্ত করে ফেলেছিল। কিন্তু না, এবার বরফ গললো না। তবে আস্তে করে ফরমায়েশ জানালো,
"মাঝিরে..."
আমার ভাইয়ের মন খারাপ। আমি কী চুপ করে থাকতে পারি? পিস্তলের প্যাঁচ লাগা নলের দিকে তাকিয়ে এবার চাপা গলায় “ও দাঁত মাজিরে...” গাওয়া লাগলো আমার।
টুকটুকি! শিকু! হালুম! তোমরা সবাই আমাকে ফেলে কোথায় গেলে!
নন ভায়োলেন্স স্ট্যাচু অব টুইস্টেড গান। এই নলের নীচে দাঁড়িয়ে "মাঝিরে..." গাওয়া হয়েছিল।
মন খারাপের দিন
-আমি না হয় আম্মুদের, আব্বুর শেষ স্মৃতিটুকু, আমার এত সাধের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মাটির ঘ্রাণের অভ্যাস সওওব দূরে রেখে এসেছি বলে মাঝে মধ্যেই ছটফট করি। আপনার ছটফটের কারণ কি? আপনার তো জ্ঞাতি -গুষ্টি, ডেন্টিস্ট্রির মত এত ডিমান্ডেবল ক্যারিয়ার সব এখানে, সব!
- আমার বাংলাদেশের হাউকাউ ভাল্লাগে জুম্মি। বাংলাদেশে মানুষজন চারিদিকে এই যে কত কথা বলে, কত কাহিনী করে আমার এগুলিই ভাল্লাগে। এখানে শীত মানে গা ঠাণ্ডা করা কেমন একটা ফিলিং। ডিপ্রেশনের ভয়। এর ভেতর শীতে আমার মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ে। কত মানুষ যে প্রত্যেক বছর শীতকালের ডিপ্রেশনে মরল!
ভৌগলিক ফ্যাক্টর ইউরোপে উচ্চ স্বেচ্ছামৃত্যুহারের কারণ বলে পত্র পত্রিকায় মাঝে মধ্যে খবর দেখি। হিমাংকের নীচে বিশ ত্রিশ তো তুড়ি মেরে নেমে যায়। এত বড় একটা দেশের জনসংখ্যা এক কোটিও হয়নি এখনো। প্রবল শীতে সূর্যহীন তুষারনগরীটি বিরানভূমির চেহারা নেয়। মানুষ অনেকটাই গৃহবন্দি হয়ে পড়ে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়ে। পরকালচিন্তাও নড়বড়ে অথবা শুন্য যার কারণে বাঁচার অর্থ এবং মানসিক ভারসাম্য দুটাই হারিয়ে ফেলে। অবসাদ জনিত আত্মহ...র মত ডিভোর্সের বা ব্রেক আপের ঋতু হিসেবে এখানকার শীতকে উপমা দিলে ভুল হবেনা। অবসাদে জর্জরিত মানুষের কাছে জগত সংসার, প্রেম সব তুচ্ছ।
আরও অনেক প্রবাসী বাংলাদেশীর কাছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান শীতের অবসাদের কথা পরবর্তীতে জেনেছি। শীতের কথা মনে পড়লে একটু বিষণ্ণ হয়ে পড়তে দেখেছি অনেককেই।
তবে জীবনের সুন্দর অর্থ নিয়ে তারা ভাবেনও। নানান দিক থেকে নানান দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। সময়টা শীত গ্রীষ্ম যাই হোক না কেন সাধ্যানুযায়ী সময়ের গোছানো বিনিয়োগ সঙ্ক্রান্ত মৌলিক চিন্তা।
স্রষ্টা বিশ্বাসের কথা যদি বলি, প্রবাসে এসে দুই ধারার জীবন যাপনেরই বহু উদাহরণ থাকে। বিশ্বাসী হিসেবে আমার মূল্যায়ন, স্রষ্টা বিশ্বাস বা ধারণা থেকে নেয়া সিদ্ধান্ত অতটা আরোপিত না। নিজ চিন্তাশক্তি থেকে নেয়া সিদ্ধান্ত । যার কারণে যে যতটুকুই চর্চা করুক পড়াশোনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার একটা প্রবণতা থাকে।
আমাদের নিদা দেখলাম বাবার পেছনে মায়ের নামাজের ওড়না নিয়ে দাঁড়ায়। আবার সাহিল যখন মায়েরই আরেকটা ওড়না মাথায় কষে পেঁচিয়ে জামাতে শামিল হয়, নিজের সর্বোচ্চো বুঝবুদ্ধির প্রতিফলনই সেখানে পাওয়া যাবে।
বড় ভাল লাগে দেখতে।
প্রথম পর্বের লিঙ্ক :
ছবি সূত্র:
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)