উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

করুণা

করুণা
পর্ব-১০ (শেষ পর্ব)     সাহানা মৌমিতার দিকে তাকায়, ওর চোখেমুখে হাজারো প্রশ্ন! ডায়েরী বন্ধ না করে উল্টে রেখে মৌমিতার মাথায় হাত রাখে, -কী ভাবছো? ৭ এপ্রিল ২০০০। আজও ঘরে সাপ ঢুকেছে। আমি দৌড় দিতে গিয়ে থেমে গেলাম। মানষিক ষ্ট্রেস ভীষণ ভাবে আমাকে কুপোকাত করে ফেলছে আমি আর পারছিনা চারেদিকে অন্ধকার হয়ে যায়, আমি পড়ে যাই। যখন চোখ খুললাম, তখন দেখি গাইনী ডাক্তার আমাকে চেক করছেন, থমথমে কণ্ঠে, -আপনারা যত্ন না করতে পারলে ওনাকে ওনার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিন, এভাবেতো সাধারণ  মানুষই টিকতে পারেনা, আর অন্ত-স্বত্তা নারী পক্ষে এসবতো দুঃসহ ব্যাপার। ওখানে কেউ ছিলোনা, আনিস মাথা নিচু করে কথাগুলো হজম করছে। ৮ সেপ্টেম্বর ২০০০। গোধূলীর আলোয় আমি আনিসের মুখটা দেখছি, ওর কাঁধে মাথা রেখে বসে আছি, থমথমে অস্থির চেহারা আনিসের।   সাহানা এসেছিলো ওর বরকে নিয়ে কবে বিয়ে হলো জানলামইনা, এই অভিযোগ করলে ও বললো, থাক বুবু তোর শশুরতো এসব পছন্দ করেনা, তুই ভালো থাকলেই হলো! ভালো থাকিস! ওকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করলাম, কিন্তু ও গেলোনা জড়িয়ে ধরে কাঁদলো অনেক্ষণ! চলে গেলো ওরা! আমি আনিসকে বললাম, -কী হয়েছে? একদিন একটা মূহুর্ত কী আমার সাথে কাটানো তোমার জন্য অস্বস্তিকর? -না তা নয়, মোহনা (২য় স্ত্রী) অযথায় রাগরাগি করেতো! আল্ট্রাসনোগ্রাম করে ডাক্তার কী বলেছেন বল্লেনাতো! -কিছুইতো বলেনি তুমি শুনলেনা! আচ্ছা তোমাদের বাসায় এতো সাপ কেন? -আনিস প্রসঙ্গ পাল্টায়, দ্যাখো পাখিরা কী সুন্দর নীড়ে ফিরে যায়......... ৯ সেপ্টেম্বর ২০০০। আমি রাতে সাপের স্বপ্ন দেখতাম শুধু, আমি শুনলাম আমার শাশুড়ী মা নাকী জেনে গেছেন মেয়ে হবে! আমি তাদের মুখটাও স্বপ্নে সাপ হয়ে যেতে দেখেছি। আমার মেঝেতে পা ফেলতে ভীষণ ভয় করতো! আর মোহনাতো আনিসকে আমার ধারে কাছেও আসতে দেয়না। বাসায় যোগাযোগ হয়নি এই কয়েকমাস। প্রতিদিন বাবার, মা আর সাহানার জন্য অপেক্ষা করেছি! ওরাও আসেনা! আমার কী তাহলে কেউ নেই! আমার মাথায় শো শো আওয়াজ হয় যেন, আর সাথে সাথে পুরো মাথা, হালকা বেলুনের মতো হয়ে যায়! মাথার ঘিলু, টিলু সব যায় কই বুঝিইনা! ১০ জানুয়ারী ২০০১। সকাল ১০ টা ডাক্তার আজই ডেলিভারীর ডেট দিয়েছে! আমাকে এখন হাসপাতালে নেয়া হবে!  ডায়েরীতে আর কিছু লেখা নেই । এখন ২০১২ সাল!   টেলিফোন বেজে ওঠে বলে। একটু শংকিত কন্ঠে, এতো রাতে কার ফোন! রিসিভার কানে ধরে, -হ্যালো! কে বলছেন? -আপনি কী সাহানা? -হ্যা আপনি কে? লাইনটা কেটে যায়, মোহনা জেগে উঠে এসেছে, সাহানাকে জড়িয়ে ধরে, -ঐ ঘরে সাপতো! অনেক সাপ! তুমি দ্যাখোনা! সাহানা ওকে থামানোর চেষ্টা করে, মৌমিতা এসে মাকে জড়িয়ে ধরে, ধরা গলায় বলে, -মা! মূহুর্তে কান্না থামায় মোহনা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে, রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে দুরে অনেক দুরে চলে যায় সে হাসি, একটিবারও প্রতিধ্বণি হয়না! সাহানা মোহনাকে ধমক দেয়, -বুবু! তোমাকে সুস্থ হতে হবে! তোমার কথা ভাবতে ভাবতে বাবা, মা আজ না ফেরার দেশে, তুমি সুস্থ হয়ে সমস্ত অন্যায়ের বদলা নেবে! মোহনার হাসি দ্বিগুণ বেড়ে যায়! মৌমিতা মাঈশা দেখছে, মৌমিতা বললো, তারপরে তুমি মায়ের খোঁজ পেয়েছো কী করে? - তুমি জন্মাবার পর পরই তোমার মা সাপ সাপ বলে চিৎকার করতে করতে বাইরে বেরিয়ে যায়,  অনেক শক্তি খাটিয়েও কেউ ওকে আটকাতে পারেনি, তখন আমি তোমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরি! পরে, গত দুবছর আগে আমি বুবুকে রেললাইনে দেখেছিলাম! এতোটা বছর কোন খোঁজ ছিলোনা! ঢাকার প্রতিটি থানায় পুলিশ ফোর্সকে ছবি সহ বর্ণনা দেয়া হয়েছিলো। থেমে যায় সাহানা, আবারো বেজে ওঠে টেলিফোন, -হ্যালো কে? -আমি আনিস সাহানা তোমার দুলাভাই! তোমার বুবুর খোঁজ পেয়েছো!? হতবাক হয়ে অনেকটা সময় টেলিফোন কানেধরে থাকে, কিছুই বলেনা!! সমাপ্ত        

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ