উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)
করুণা

পর্ব-৯
৩১ মার্চ২০০০।
আজ অনেকবার বমি করলাম। কিছুই খেতে পারছিনা।
১ এপ্রিল ২০০০।
আনিস ওর মাকে এপ্রিল ফুল বানালো। মা ছেলে দুজন হাসতে হাসতে শেষ। আমি কাছে গেলে হাসি বন্ধ করলো, আমি বললাম
-এপ্রিল ফুল মুসলমানদের জন্য না। এই দিনে মুসলমানদেরকেই ঠকিয়েছিলো , খ্রি............
আনিস আমাকে জোরে ধমক দেয়, এমনিতেই শরীর খুবই দুর্বল, আবার ওর ধমক, এরপর আমার আর দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থা অবশিষ্ট নেই।
২ এপ্রিল ২০০০।
সকালে আনিস অফিস যাওয়ার আগে ওকে বললাম,
-আমাকে বাসায় রেখে অফিস যাও। পরে ফেরার সময় নিয়ে এসো। কতোদিন বাবা মা সাহানার সাথে যোগাযোগ নাই!
আনিস কিছুই বললোনা বেরিয়ে গেলো।
আমি শুয়ে শুয়ে ভাবলাম মেয়ে হলে তার নাম কী রাখবো! মৌমিতা নামটা আমার ভীষণ পছন্দ!
৩ এপ্রিল ২০০০।
আনিস ওর মামাতো বোনের সাথে বাড়িে ফিরলো, বেশ হাসিখুশি। আমার এসব ভালো লাগেনা, মানুষ এসব কাজিনদেরকে যতোটা কাছের ভেবে হাসি তামাশা করে, আসলে তাতো উচিত না, ভালোও দেখায়না। আনিস রাতে ঘরে আসেনি। কি জানি! কোথায়, খারাপ কোন ধারণা করলামনা! কিন্তু সারা রাত অস্থিরভাবে কেছে শুধে এপাশ ওপাশ করেছি, আর কেঁদেছি প্রচুর!
৪ এপ্রিল ২০০০।
আনিসের ডাক শুনতে পেয়েছি, মোহনা মোহনা বলে ডাকছে, আমি যত দ্রুত পারলাম ওর পাশে গেলাম, কিন্তু ওর মামাতো বোন বললো,
-এই ভাবী তোমাকে ডাকেনিতো, আমার নামও মোহনা! মাঝখানে আমাদের সম্পর্ক একটু খারাপ হয়েছিলো তাই বিয়েতে আসিনি। আমার নামে তোমার নাম বলেইতো আনিস তোমাকে বিয়ে করেছে......... ঠিকনা আনিস!
আমি ওর কথা সহ্য করতে পারছিনা আমার খুব কষ্ট হচছে............... আমি আমার অস্তিত্বকে ধিক্কার জানাতেও দ্বিধাবোধ করলামনা। আনিস আমাকে নয় অন্য কাউকে ভালোবেসে আমাকে বিয়ে করেছে। আমার পুরো পৃথিবী যেন অন্ধকার হয়ে আসছে। কিছুই দেখতে পাইনি।
মাঈশা মৌমিতা দুজনই কেঁদে ফেলেছে। ওরা খুব কাঁদছে, সাহানা খন্দকার ওদের রুমে লাইট জ্বলতে দেখে, দরজা নক করে,
-মৌমিতা! লাইট জ্বালানো কেন? দরজা খোল!
ওরা ডায়েরী লুকিয়ে রাখেনা, দরোজা খুলে দেয়, মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। সাহানা খন্দকারের বোঝার কিছুই বাকী নেই, সেও কাঁদে,
-মিতালীই মোহনা!বুঝেছো?
মৌমিতা, ধরা গলায়,
-আমি তার মেয়ে তাইনা মা?
সাহানা খন্দকার সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে,
-হুম!
সাহানা খন্দকার এবার নিজেই ডায়েরীটা হাতে নেয়,
৫ এপ্রিল ২০০০।
অনেক রাত আনুমানিক একটা হবে। আনিস আমার পাশে বসে আছে। আমার হাতে স্যালাইনের সুই ফুড়ানো, শেষ হয়েছে, তাই আনিস খুলে দিলো। ডিম লাইটের হালকা আলোয় আনিসকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে, আমি ওর মুখমন্ডলে হাত বুলালাম, ও চোখ বন্ধ করলে আমি বললাম,
-আনিস আজ তোমাকে একটা কথা বলবো শুনবে?
-বলো!
-তোমাকে ছাড়া আমি সম্পূর্ণ অর্থহীন! জীবনে সব ক্ষেত্রে সব কিছু হারালেও তোমাকে হারাতে পারবোনা! আমি আর লিখবোনা আনিস! কথাটা বলতে আমার দম বন্ধ হয়ে এসেছিলো যেন! আনিস আমাকে খাবার খাইয়ে দিলো, পাশে শুয়ে বললো,
-দরকার নেই বাদ দেয়ার, মোহনা তুমি লিখতে পারো!
-রাগ করে বলছো?
-না! একটা কথা বলার আছে তোমাকে!
-কী!
-আমি মোহনাকে বিয়ে করবো!
আমার চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে, আমি এতো কষ্ট কী করে সহ্য করবো, কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
-আনিস দয়া করো আমায়! তু তুমি বলো আমাকে কীভাবে চলতে বলবে আমি সেভাবেই চলবো!
-এখন যে আমি তোমাকে আমার সাথে রেখেছি, এটাই দয়া বা করূণা বলতে পারো!
-তুমি আমার সাথে এমন করতে পারোনা আনিস, আমি বলছিতো, র কোনদিন বাসায় যাওয়ার কথাও বলবোনা।
আনিস কিছুই বলেনা, একটু পরেই ওর নাক ডাকার শব্দ পেলাম! কী নিশ্চিন্ত ঘুম ওর, কিন্তু আজও যে আমার ঘুম হবেনা! চলবে......... (আগামী পর্বে সমাপ্য)
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)