বিবিধ

চিত্রল বার্লিন (২য় পর্ব)

চিত্রল বার্লিন (২য় পর্ব)
"ভাবছো তুমি চুপচাপ শহরে-গ্রাফিতি আঁকা দেয়ালজুড়ে"
 
লোহালক্কড় বেড়িয়ে আছে কোথাও। কোথাও পলেস্তারা খসে পড়া ইট। এভাবেই সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মহান এক দেয়াল। ফ্রেঞ্চ চিত্রশিল্পী চেরী নরের তুলির আঁচড়ের মাধ্যমে ফ্রিডম অব সেন্সরশীপের খোলা খাতা- পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত ক্যানভাসে পরিণত হয় একসময়ের অবরোধের প্রতীকটি। বিশ্বব্যপি চলমান বঞ্চনার প্রতিবাদ লেখা হয় এখানে, রাজনৈতিক কার্টুন-ট্রল সব থাকে এখানে।
                                   টোপোগ্রাফি দেস টেরর
 
দেয়াল সংলগ্ন মনুমেন্টের উন্মুক্ত প্রদর্শনীতে বার্লিন দেয়ালের আগাগোঁড়া ধারণা দেয়ার ব্যবস্থা করেছে বার্লিন সিনেট। এই ব্যবস্থার নাম টোপোগ্রাফি দেস টেরর। বিশ্বযুদ্ধ, নাৎসি বাহিনীর উত্থান, একচ্ছত্র অধিপতি জনাব ফিউরার উন্ড রাইখসকানৎলার (বলেন দেখি কে এটা?), দেয়ালের কিছু খণ্ডচিত্র বর্ণনাসমেত দেয়া ছিল। সময় নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে পারলে প্রেক্ষাপট বোঝা সহজ হয়।
                                                      গ্রাফিতি
 
ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি ও তার ফিউরার হিটলার সাহেব ছক কেটে ঠাণ্ডা মাথায় ধবংসের খেলাটি খেললেন। বিপর্যস্ত অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, পরিবেশ ও বন্য প্রানী সংরক্ষনের জন্য অভূতপূর্ব আইন প্রনয়ন, জনগণের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য সুলভ মুল্যে ফোক্স ওয়াগন গাড়ির ব্যবস্থা করা একদল মানুষ(!) কত নির্মমভাবে জাতিবিদ্বেষ দেখিয়েছে! হলোকাস্ট তো বটেই রোমানীয় যাযাবর, সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী, বিকলাঙ্গ সহ কোটি মানুষ মেরেছে! গ্যাটোর খোঁয়াড়, মালবাহী গাড়িতে স্তুপে স্তুপে শিকার, গ্যাস চেম্বার, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের ভয়াবহতার সাথে বিশ্ববাসীকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। এরা ছিল মেধাবী, এরা ছিল কর্মঠ।
 
নাৎসি বাহিনীর সদস্য এবং জার্মান প্যারামিলিটারির বিরাট অফিসার ওয়ার্নার ভন ব্রাউন রকেট তো বটেই প্রথমবারের মত লং রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল আবিষ্কার করে মহাকাশবিজ্ঞানের নতুন সূচনা করেন। ওনার গুরুদেব অ্যাডলফ হিটলার সাহেবের ফরমায়েশে ওই মিসাইল তৈরির সময় এবং নিক্ষেপের পর অন্তত ২১ হাজার মানুষ ভয়ঙ্করভাবে মারা যায়। জীবন তো বটেই, মেধা ও কর্মক্ষমতার কী নিদারুণ অপব্যয়!
 
আর কত, দেয়ালে যে পিঠ ঠেকে গেল! বার্লিন প্রাচীরের শরীরে মানুষ তাই একটি সংঘাতহীন পৃথিবীর আকুতি জানায়।
 
 
খামাখা কারণ দর্শাই
 
১। রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার বার্লিনে তার পদধূলি দিয়েছিলেন। সেই সম্মানে শহরের সবচেয়ে উঁচু স্থাপত্য টেলিভিশন টাওয়ার সম্বলিত জায়গাটির নাম অ্যালেকজান্ডার প্লাতজ। দর্শনার্থীরা বার্ড আই ভিউ ট্রাই করতে পারে এখান থেকে। আমি আমার চোখেই দেখে কুলাতে পারছিনা, পাখির চোখে দেখব কী!
 
২। অষ্টদশ শতাব্দীতে জার্মানি একটা যুদ্ধে জিতেছিল। সেই জেতা স্মরনীয় রাখার জন্য ট্রিউম্ফাল কলাম বা ভিক্টোরিয়া বিজয় স্তম্ভ বানিয়ে রেখেছে জার্মানরা। স্তম্ভের কিছু অংশে ওঠা যায়। একবার উঠেছিলামও মনে হয়। কাছাকাছি একটা আন্ডারগ্রাউন্ড ধরে রাস্তা পার হবার সময় এক লোক মনের সুখে বেহালা বাজাচ্ছিল। সামান্য মাথা ধরায় আমার স্তম্ভ স্মৃতি বিলুপ্ত কেন হল বুঝতে পারছিনা।
 
৩। বার্লিন গেট বা ব্রান্ডেনবুর্গ গেট তো একটা সিগ্নেচার স্থাপত্য। গ্রীক মিথলজির অসংখ্য থিম, কোয়াডরিগার সামনে অনেক মানববন্ধন হয়। এত কিছু বাদ দিয়ে মানববন্ধনের ছবি কেন মাথায় আসল জানিনা। এছাড়াও সাথের কার রেসিং গেম খেলোয়াড়টি বার্লিনে এসে মাইকেল জ্যাকসন তার শিশুপুত্রকে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে জানালায় নাকি বারান্দায় এনেছিল তার আলাপ জুড়ে দেয়ায় সেই বিষয় নিয়েও ব্যস্ত ছিলাম। আর আমার পায়ে ফোস্কাও পড়েছিল।
                                                 মানববন্ধন এলাকা
 
৪। পার্লামেন্টের (বুন্ডেসটাগ) স্ট্রাকচার দেখেছি দূর থেকে। চমৎকার একটা কাঁচের অর্ধগোলকের মত। ছোটবেলায় দেখেছি সায়েন্স ফিকশনের এলিয়েনরা এরকম দালানে গবেষণা করত। বুন্ডেসটাগের বেশী কাছে কোনবারেই যাইনি। কে জানে কেন যাইনি। প্রত্যেকবার তো আর পায়ে ফোস্কা পড়ার কথা না।
 
৫। প্যারিজার প্লাতজ আবার বার্লিন গেটের কোল ঘেঁষে এবং হাত ধরে। অ্যান্টি নেপলিয়োঁ জোটের দ্য ব্যাটল অব প্যারিসের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে প্যারিসের সাথে মিল রেখে নাম রেখেছে প্যারিজার প্লাটজ। এমন একটি ঐতিহাসিক জায়গায় আমি নিকোল ভাবী- যারা-বেঞ্জামিনের সাথে পানি পান করেছি।
                                                        প্যারিজার প্লাতজ 
 
৬। ডেঙ্কমাল ফুওর ডি এরমরডেটেন ইউডেন অয়রোপাজ হল একটা প্রতীকী সমাধি। হলোকাস্টে নিহত পুরো ইয়োরোপের ইহুদীদের স্মরণে নির্মিত। সত্যিকার কবর হলে বাঁধাই করা সিমেন্টের ওপর অন্যরা পা ঝুলিয়ে বসলেও আমি বসতাম না। প্রতীকী বলেই কিছুক্ষণ বসে ছিলাম।
                                                            প্রতীকী সমাধি                           
                                                                                      
প্রথম পর্বঃ https://bit.ly/2MipYvk
 
শেষ পর্বঃ https://bit.ly/2yzP06W

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ