বিবিধ
ইছ ছিরে !! দীবার মতন !!

আজকে দীবা রাণী আম কাটতে গিয়ে আঙ্গুলটাই কেটে ফেলেছে । পুরো আঙ্গুল গোল হয়ে কেটে একটা কোনা কোনরকমে ঝুলে ছিল কেবল । দীবার মা সেই ঝুলে পড়া অংশটুকু, থেকে যাওয়া অংশের সাথে চেপে ধরে এক দৌড়ে মহেশ ডাক্তারের কাছে গেল এই মাত্র । রুমার মা , পূজার মা , ঝিনুকের মা , রুমা , পূজা , ঝিনুক এরা সবাই রাস্তায় গোল হয়ে আঙ্গুল কর্তন প্রক্রিয়া নিয়ে আলাপ চারিতায় ব্যস্ত যখন , তখন তুলি চুপচাপ গাছ তলায় দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে ভাবছে ,
দীবার রক্ত লাল... দীবার রক্ত লাল !
অথচ এতদিন তুলির চিন্তাটা ছিল অন্যরকম কিছু । খুবই ঝাপসা ঝাপসা , ধোঁয়া ধোঁয়া । তুলির মা বলে , তুলির চেহারা নাকি একেবারে ´´দিদি তেরা দেবার দিওয়ানার´´ মাধুরীর মত । শুধু মা না , তুলির ছোট খালামনি , রোশনি ফুপু,নানী এদের সবার ধারণা , মাধুরীর হাসি আর তুলির হাসি এই বয়সেই একদম এক রকম । তাহলে বড় হলে কি অবস্থা টা হবে ?
সেদিন ছোট খালামণি তুলি চুল আঁচড়াতে চায়নি বলে মুখ ভেংচে বলেছিল ,
-এই মেয়ে মাথা আঁচড়াস না ক্যান ? চুলের একি অবস্থা ! কয়দিন পর এত সুন্দর সিল্কী সিল্কী চুলগুলা যখন কোঁকড়ার কোঁকড়া হবে দীবার মতন , তখন খালি আফসোস করবি , ক্যান যে মাথা আঁচড়াইতাম না !
তুলি প্রতিদিন গোসল করতে পছন্দ করেনা । কিন্তু মা ঠিক একটা নিষ্ঠুর মহিলার মত তুলিকে ছোবা দিয়ে ঘষে ঘষে গোসল করায় প্রত্যেকটা দিন ।
´´খালি রইদে রইদে ঘুরোস সারাদিন ...সারাদিন খালি খেলার তাল ! চামড়াটা পুইড়া কয়লা হইয়া যাইতেছে কোন চিন্তা নাই ! ছেমড়ি , দুইদিন পর মাধুরী ছুইটটা দীবা হবি !´´
তুলির মামীর একটা মেয়ে হয়েছে গত পরশু , আর নানী আজও মাকে ফোন করে আক্ষেপ করেছে । মেয়েটা বাপের মত কার্ত্তিক কাটিং চেহারার কিছুই পেলনা । মায়ের চেয়েও কালো কুৎসিত হয়েছে। ঠিক যেন তুলিদের পাশের বাসার দীবার মত খ্যাঙরা কাঠি আর কুচকুচে কালো । যদি কখনো তার ছেলের মত বোকা কোন ছেলেকে পটাতে পারে তাইলে ভাল বিয়ে হবে... নাহলে এর বিয়ে দিতে জান বের হয়ে যাবে !
রোশনি ফুপুর নাচের ক্লাসে একটা ভীষণ ঝগড়াটে মেয়ে আছে । কিছু হলেই নাকি শয়তানের মত চেহারা করে তেড়ে মেড়ে আসে ঝগড়া করতে । নাচের স্যার রোশনি ফুপুর নাচ একটু বেশি পছন্দ করে আর এইটা, ওই মেয়ে সহ্যই করতে পারেনা। তুলি জিজ্ঞেস করলো ,
-ফুপু , মাইয়াটা কি অনেক সুন্দর ?
-ইছ ছিরে ! সুন্দর ! পুরা দীবার মত সুন্দর !
- ও ।
পুজার বানী পিসির গায়ে হলুদে সব বাচ্চারা সেজে গুজে ফুলপরী হয়ে এসেছিল । সবাই মিলে নাচ করবে একটু পর । দীবাও একটা ভীষণ হলুদ শাড়ি পরে , হলুদ চুড়ি পরে হাসতে হাসতে ঢুকল । পূজার আরেক পিসি চন্দনা বলল ,
হায় হায় দীবা রাণী , এইরহম ভূতের বাচ্চার মত তরে ক্যাডা সাজায় দিছে রে ?
দীবা রাণী সাথে সাথে মাথা নিচু করে তার কালো চেহারা আরও দ্বিগুণ কালো করে বলল ,
´´ মা ।´´
কিছুদিন আগে ভাঙ্গা কাঁচে তুলির পা কেটে গেলে দাদী চিৎকার করে বলেছিল ,
´´এহ হেরে কতডি রক্ত বাইরাইছেরে ! সাদা পাওডা গেছে এক্কারে লাল টকটকা হইয়া !´´
এতকাল তুলির ভাবনায় ছিল , বুঝি তার রক্তের রঙই লাল...আর আজকে অবাক হয়ে দেখল , দীবার রক্ত লাল ! টকটকে লাল !
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)