অতি সাধারন একটা অবিশেষ ছবি। কিন্তু এর পেছনের গল্পটা আমাকে নাড়া দেয়। আমার বিবেক কে দংশন করে। আমাকে পরাজিত করে লজ্জিত করে। আমার দ্বায়িত্ব জ্ঞান আর সামাজিক দায়বদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
ঔযে ২ টা নির্ভেজাল হাসি, ছোট্ট ২ টা মেয়ে.....
ওদের আজ খুব একটা ভাল লাগার দিন গেছে। তারা আজকে মনের মত ঘুরেছে, হাওয়াই মিঠাই আর ঝালমুড়ি খেয়েছে। পথ কুড়িয়ে বকুল, হাসনাহেনা, কাঠালচাপা, কৃষ্ঞচূড়ায় -- জামার আচল ভরেছে। ভরদূপুরে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজেছে। আম ভর্তা আর গাছপাকা জামরুল খেয়েছে। বিশাল উচু নাগরদোলায় উঠে অবাক শহরটা দেখেছে।
ঠিক ধরেছেন ওরা শ্রমিক। আমরা সোকলড সিভিলাইজড সোসাইটি পিপল ওদের নাম দিয়েছি "কাজের মেয়ে"।
ছোটজন হলো পরিবারের সবচেয়ে বড় কন্যা। এইতো ক'দিন আগে তার চতুর্থ বোন এর পৃথিবীতে আগমনের খবরটা সে ফোনেই শুনলো। এক পরিবারে এক ছেলের আশায় ৪ টা মেয়ে! কি নির্মল একটা হাসি দিয়ে বলছে " আন্টি আমার না আরো একটা বোন হইসে।"
বলেই বেমালুম ভুলে গেলো। ২ দিন পর নতুন বোনের নামটাও সে আর মনে করতে পারলোনা।
আর পাশের জন- তথাকথিত এক বাবার এক মেয়ে। এই বাপের আবার এক মেয়ের পর ২ টা ছেলে পেয়েছে, তাদের আর সন্তানও চাইনা তাই অনটনের সংসারে শান্তুি আনতে মা টার পেট কাটিয়ে এনেছে( ইউটেরাস ফেলে দিয়েছে)। অতঃপর অতিরিক্ত রক্তশূন্যতায় মা এখন সজ্জাশায়ী। মেয়ের জন্য সেই বাপের খুব নাকি কলিজাটা পুড়ে। তাই মাস না পেরোতেই মেয়েকেই ফোন দিয়ে টাকা চায়। নাহলে আবার বাপের আরেকটা বিয়ে করতে হবে,কারন মাতো এখন সংগত কারনেই বাবার বাড়ি।
তো এই সহজ হিসেবগুলো মিলাতে আজ তারা ভাগ্য পরিহাসে আমাদের কাছে। ওদের শৈশব, গ্রাম ছাড়া রাঙামাটির পথ, ঝিঝি পোকার ডাক, পুকুরে ডুব দিয়ে সাতার, গাছর ডালে দোল খেয়ে আকাশের তারা গোনা, ঝড়ে পড়া কুড়োনো আম ভর্তা, মাঠ পেরোনো ইসকুল সব পেছনে ফেলে এরা নির্মল মুগ্ধতা নিয়ে আপনার আমার জন্য করেই যাচ্ছে। বিনিময়ে পাচ্ছে কিছু টাকা একটু ভাল জায়গায় বিয়ে বা কিছু যৌতুক বা বন্দক রাখা পৈতৃিক ভিটা, একটা গরুর খামার,একটা ভ্যান,একটা সেলাই মেশিন। এভাবেও একটা জীবন কেটে যায়, কেটে যাচ্ছে বছরের পর বছর।
কি ভাবছেন - হ্যা দেশটা বহুদূর এগিয়েছে । সদ্য স্বীকৃতিপ্রাপ্ত উন্ননয়শীল ওভারপপুলেটেড দেশে এরাই ওভারপপুলেশন এর কারন। তাই এই জনসংখ্যাকে আমরা জনশক্তির লিস্টেই গুনিনা।আমরা যখন অনেক সমাজ সেবা করি,দেশের প্রতিনিধিত্ব করি, বিভিন্ন ডে সেলিব্রেট করি বা কেন নিউজ হয়, কভারেজ হয়, লাইমলাইট হয়, সেল্ফিময় ইভেন্ট, জাগরন আর আন্দোলন হয় -তখন এই মেয়েটাই হয়তো আপনার আমার সন্তানকে খাওয়াচ্ছে, ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে।
কি অদ্ভুত না! নিজের অনিশ্চিত জীবন ভুলে আমার নিশ্চিন্ত সংসার, সন্তানকে গড়ে দিতে যন্ত্রের মত খেটে যায় ওরা। মনের কথাগুলো বন্ধ মনের জানালায় ডুকরে হারিয়ে যায় ওদের। কারন ওরা তুচ্ছ। জীবনের মানে বুুঝতে নেই ওদের। আমাদের শিক্ষা আর সমাজ সংস্কারের কোন পাতায়ও ওদের থাকতে নেই।
ওরা আসবে, যাবে। অন্য শহরে,অন্য সংসারে,স্বামীর ঘরে। হয়তো নির্যাতিতা হবে অথবা ৪/৫ সন্তানের মা। অভাবের তাড়নায় কলিজার টুকরাকে কোল ছাড়া করবে অথবা সজ্জাশায়ী হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনবে মায়ের মত।
"আহারে জীবন!"
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)