সাহিত্য

একটি পাঁচ মাসের পান্ডুলিপি

একটি পাঁচ মাসের পান্ডুলিপি


বারান্দা পেরিয়ে সামনে বাগানে পায়চারী করছে শফিক,চিন্তায় ডুবে আছে।একটু ঘামছেও বটে,হুমায়রাকে নিয়ে ভাবছে।কি অভিমানী মেয়েরে বাবা,সেই কখন থেকে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।অফিসের কাজে আসতে দেরী হয়ে গেছে আসতে,এতো করে বুঝালো।রাজকন্যার মান ভাঙ্গানো এতো কঠিন,শ্বশুর আব্বা আগে যদি বলতেন!বসন্তের ঠান্ডা এসে মনটা কেমন কোমল করে দেয় শফিককে,আনমনে হেসে কিচেনে যায়,এক মগ চা বানিয়ে এসে নিজের ডেস্কে বসে সুন্দর একটা রঙিন নীল কাগজে লিখতে বসে যায়।অফিসের কাজ সেরে, বন্ধু মাহমুদকে ফোন করে,পরিবারসহ আসতে বলে দেয়।
হুমায়রার প্রিয় সখা নোশিনের বর, মাহমুদ সাথে পিচকু তালহা,তারান্নুম। শফিক জানে,এরা আসলে হুমায়রার অভিমান সব বাতাসে কর্পুরের মতো উড়ে যাবে।
অভিমানের সময়,জোসনাবিলাস বেড়ে যায় হুমায়রার,পাতার পর পাতা লিখে চলে,কতো গল্প কতো কবিতা,নতুন আসা অতিথিকে নিয়ে তাঁর একশত'র উপরে কবিতা লেখা শেষ।যখন কোন বান্ধবীর সাথে কথা বলে,কবিতা পড়ে শুনায়,"কেমন হলো, বলো না!" বলে অস্হির করে ফেলে সবাইকে।সব্বাই এক গাল হেসে বলে,খুব সুন্দর, মাশা'আল্লাহ।কি যে খুশি হয় সে।শফিক অবশ্য তাঁর অনুপ্রেরণা দেওয়ার কমতি নেই,বলেছে আরো সুন্দর করে লিখো,কবি চাচার বাসায় গিয়ে একদিন পান্ডুলিপি দেখিয়ে আসবো।হুমায়রা একগাল হেসে বলে,"কি ছাইপাশ লেখা,কে পড়বে বলো!"তবুও,অবসরে লিখে চলে আনমনে,ইদানিং কতো আইডিয়া ভর করে, ওর মাথায়।শপিং গিয়ে কতো-শতো ধরনের কলম কিনে জড়ো করেছে।কতো রং,কতো কালিতে সে আঁকে স্বপ্ন।

শেষ রাত্রিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় শফিকের,টেবিলে হুমায়রার নতুন ডায়েরী খোলা পড়ে আছে,নীল-সবুজ কালিতে সে লিখেছে,
" অনুরণনে আজ বিভোর তনুমন,
কালোর ভাঁজ কেটে আসবে,
জানি ভালোবাসার নিরব ক্ষন!
আলোয় আলোয় দেখব তোকে,
সিজদায় পিয়ে, তুই যে হীরামন।"
ভয়ে ভয়ে পরের পাতা উল্টায়,অনুমতি না নিয়ে অবশ্য পড়ে না শফিক।আজ কেমন চাপ অনুভব করছে, চোখ দিয়ে অজোরে শীতল অশ্রু।
 "গোলাপ না হাসনাহেনা,
কদম না কৃষ্ণচূড়া
প্রিয়রবের ভালোবাসা
তোমায় ছুঁয়ে থাক।
ফেরদৌসের মাঝে,
তুই যে সুরভি গোলাপ!
পাগলী মেয়েটা কি যে করে না,ভয় ভয় হয় শফিকের।একরাশ চিন্তায়, কেমন ভারী হয়ে আসে ওর মাথা।সালাতে দাড়িয়ে যায়,প্রভুর সামনে,আশ্রয় পাবার আকুলতায়।সূরা ফুরকানের সেই আয়াতটা,,"وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِن
ْ
أَزْوٰجِنَا وَذُرِّيّٰتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا"
মুনাজাতে কখন ঘুমিয়ে গেছে সে,হুমায়রার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো তার।

পরদিন নোশিন এসে,ডাক্তারআপার কাছে নিয়ে যায়,হুমায়রাকে।একটু চিন্তিত ছিলেন,তিনি। সাবধানে থাকতে বললেন,ঔষুধ দিলেন।হুমায়রাকে দেখে এতোটা চিন্তিত মনে হলো না,কতো স্বপ্নেরা তাঁর মাথায় ঘুরঘুর করছে।নোশিনের তো ওর কথা শুনতে শুনতে ঘুম এসে যায়।হুমায়রা বলে,জানিস,নোশিন,"আমার ময়না'টার নামও তালহা রাখবো,তোর তালহা'র সাথে জোড় পাতিয়ে দেবো।কেমন,সুন্দর না বল?"নোশিন একটু আনমনা হয়,হাসির কোনে কান্না ছলকে আসে বলে,"রাখিস,একশো বার,আমি কি নিষেধ করেছি!"দুই সখা বুকে বাড়িয়ে কিছুক্ষন মিশে থাকে,দু'জনই একই কথা আঁকছে মনে কে জানে!
লেখকেরও মাঝে মাঝে কষ্ট হয়,কেন জানেন!সবসময় কি সুন্দর পরিণতি লেখা যায়।বুক ভারী হয়,বেদনার মেঘ জমে তবুও,
দিনটা ছিলো অন্য সাধারন দিনগুলোর মতোই...।সেলফোন বাজছে শফিকের,অফিস থেকে কোন কাজে বাইরে সে।হুমায়রা ওয়াশরুমে পা পিছলে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।নোশিন-মাহমুদ ভাবীরা এসেছেন মেডিকেলে, জ্ঞাণ ফিরে এসেছে ওর,কিন্তু,বাবুটা মিসকারেজ হয়ে গেছে।তিনদিন পর বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে হুমায়রাকে, নোশিন অবশ্য সারাদিন পাশে ছিলো।কিন্তু,চুপচাপ শফিক বারান্দায় বসে থাকে,শেষ রাতে হুমায়রার ডায়েরীতে লেখা, কবিতাগুলো পড়ে। একবার,বারবার বহুবার পড়ে, আনমনে।
নতুন আগন্তুকের অপেক্ষায় ডায়েরীর প্রতিটা পাতা, কেমন গুনগুন করে ওঠে।


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)