উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)
করুণা

পর্ব- ৭
বিকালবেলা, মৌমিতা মাঈশা খেলার মাঠে এক পাশে দাঁড়ায়। আজ মেয়েদের খেলার অবস্থা নেই মাঠটিতে, ছেলেদের দখলে। ওরা খেলতেও আসেনি মিতালীকে নিতে এসেছে। অপেক্ষা করছে, কিন্তু অপেক্ষার সময় যে এতো বেশী হয় ওরা জানতোনা। একটু পরেই মিতলীকে আসতে দেখে ওদের দৃষ্টিতেই খুশির ছাপ ভেসে ওঠে। মিতালীর দিকে এগিয়ে যায় দুজন দুপাশে ওর হাত ধরে, মিতালী খুশিতে গদগদ কন্ঠে,
-কী তোমরা কী ভেবেছো আমি ভয় পাইনা!
মৌমিতা অবাক কন্ঠে,
-একথা কেন বলছো?
-তোমরা আমার হাত ধরলে যে, ভয় পেয়ে ধরেছো না?
মাঈশা চটপট কন্ঠে,
-আরে না… আমরাতো ভালোবেসে তোমার হাত ধরেছি…… আমরা তোমাকে খুউউউউউউউব ভালোবাসী।
অর্থহীন দৃষ্টিতে মাঈশার দিকে তাকায় মিতালী, শূন্য সে দৃষ্টিতে নেই কোন আক্ষেপ, নেই কোন চাওয়া, অথবা কোন অনুভূতি! ওরা আর কথা বলেনা দুজন প্রায় টানতে টানতে বাসায় নিয়ে গিয়ে সোফায় বসায়, মৌমিতা মাঈশা ফিসফিস করে কথা বলছে, মাঈশা বললো,
-মৌমিতা, মা রাগ করবেনা তো!
-না আম্মু আরো খুশি হবে দেখিস!
হঠাৎই মিতালী সোফার উপরে পা তুলে বসে, ভীত ও কাঁপা গলায়,
-সাপ আছে নাকী?!
ওরা দুজনই তাকায় মিতালীর দিকে, ওরা ওর দৃষ্টিতে ভয়ের ছাপ দেখতে পায়, দ্রুত কাছে চলে যায়, অস্থির কন্ঠে মৌমিতা বলে,
- না না সাপ নেই! সাপ আসলেতো আমরা সাপকে মারবো!
মিতালী খুশি হয়, হাসতে হাসতে বলে,
-অ তোমরা সাপ মারতে পারো?
দুজনই সমস্বরে বললো,
-হুম!
সাহানা খন্দকার আছরের নামাজ শেষ করে ড্রয়িং রুমে এসে অবাক কন্ঠে,
-কী ব্যাপার, কখন নিয়ে এসেছো!
-এইতো মা এক্ষুনি, মা তুমি কী রাগ করবে? মাঈশা বলে।
-না মা রাগ করিনি, করবওনা, আমিও এটাই চাচ্ছিলাম। বুবুরতো অনেকদিন গোছল হয়না, একটু গোছল কারিয়ে ভাল জামা কাপড় পরাবো!
মেয়ে দুটোকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দেয় সাহানা।
ওরা নিজেদের ঘরে যায় ডায়েরীটা পড়তে, সাহানা খন্দকার একটু উঁচু গলায়,
-এখন ঘরে কেন? বাইরে খেলতে যাও।
মৌমিতা দরজা লাগিয়ে দিতে দিতে,
-মা এখন পুতুল খেলবো!
এবার পড়ে মাইশা,
২৬ শে ফেব্রুয়ারী, ২০০০।
রাত্রিবেলা, আনিস প্রায় ১২ টার সময় ঘরে আসলো, অনেক আত্মীয় স্বজন, কাজিনদের সাথে আড্ডা দিয়ে। আমি মাথা ব্যাথা করছে বলে আগেই ঘরে এসেছি। আনিস আসতেই আমি কেঁদে ফেললাম, ও ব্যাস্ত হয়ে আমার কাছে এসে বললো কী হয়েছে সোনা, কাঁদছো যে! আমি বললাম বাবা মার কথা মনে পড়ছে, যাওয়া হচ্ছেনা কেন! আমাকে তোমার এক ভাবী বললো, বিয়ের পর নাকী এ বাড়ীর বউরা বাবা মার সাথে সম্পর্ক রাখতে পারেনা! আনিস মুখ ঘুরিয়ে নেয় অন্য দিকে, বলে, না না তা কেন হবে, উনি তোমার সাথে দুষ্টুমী করেছেন। আমি কাল তোমাকে বইমেলা থেকে ওখান দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবো! আমি তখন খুশি হয়ে ওর বুকে মাথা রেখেছিলাম, আর ওর শার্টের বোতাম নখ দিয়ে খুটছিলাম, আর বলেছিলাম, আবার বই মেলায় নিয়ে যাবে! তুমিতো বই প্রেমি! আনিস দুষ্টুমি করেই বলেছিলো, তোমার নামের ঐ লেখিকাকে দেখতে হবেনা! কী জানি আমার এ ধরণের দুষ্টুমিও ভালো লাগেনা……। চলবে………
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)