১
এই পাখিটার ডানার ভাঁজে, একটু ধূসর রঙ
পেটের কাছে হলদে মায়া, সাজ বাহারের ঢঙ।
এই পাখিটার চোখ দেখিনি, একলা আছি, তাই
চোখের মাঝে অস্থিরতা, লুকিয়ে ফিরে যাই।
২
সপ্তা ঘুরে ফের এসেছি, ধূসর পাখির গাঁয়
হলদে পেটে ঝলসানো রোদ, দৃষ্টি ফিরে যায়।
বেগুন ঝোপে, কাশের ফুলে একশ পাখির ঝাঁক
আর, মনের মধ্যে চিপিক চিপিক তিনটা পাখির ডাক।
৩
সারিবাঁধা পেঁপের বাগান, কলাপাতার ছায়,
বাদলা দিনের রোদটা ডাকে, আয় আয় আয়!
একটু হারাই, ফের খুঁজে পাই, হাতে নানান কাজ,
কি যেন নাই, হারিয়ে গেছে, মন ভালো নেই আজ।
৪
ঝলমলে রোদ, বৃষ্টিভেজা
রাত্রি বিকেল, সকাল সাঁঝ,
শহর জুড়ে পথ হেঁটেছি
কাঁধের ঝোলায় হরেক কাজ।
শহরতলীর অলস পথে
রোদ গড়িয়ে দুপুর হয়,
পাতার ফাঁকে তেকোনা রোদ
আগলে রাখে ঘোর মায়ায়।
আলোর খেলা ভাল্লাগেনা
ঘুম পাচ্ছে খুব, ভীষণ
চোখের পাতায়, কপাল শিরায়
ক্লান্তি জমা অনেকক্ষণ।
৫
এই শনিবার রাত্রিদিন আর
সেই শনিবার ভোর
এক পা করে কাছে গেছি
আবার দূরে, তোর।
শহরটা আজ মস্তো বড়ো
দীর্ঘ লাগে পথ
তোর সাথের এই রাস্তাগুলোয়
উড়তো যেন রথ।
ব্যস্ত এখন জীবন যাপন
ব্যস্ত আমি তুই,
সেলুলয়েড পর্দা মাঝে
মনের ভুলে, ছুঁই!
ক্লান্ত রাতের ডিম আলোতে
হাতড়ে সময় খুঁজি
পথ ভোলা এক প্যাঁচার ডাকে
সকাল এলো বুঝি!
৬
আকাশজোড়া বিলের বুকে
আসছে ওরা ঝাঁকে ঝাঁকে
বালিহাঁসের পিছু পিছু
সাদা বকের ছা,
বালির বুকে নরম পায়
ছাপ ফেলেছে কী মায়ায়
শীতের দেশের ধূসর স্মৃতি
রোদে ধুয়ে যা।
বিষুব দেশের নরোম রোদে
দিকজোড়া সব বিল, হ্রদে
গাছের ছায়ায়, মাটির কাছে
পাখির ছুটির দিন,
ঘুম ফেলে তোর কাছে এসে
ঝিমুনী খুব বাসে বসে
ছুটির ঘন্টা বাজেনি তাই
সামনে কাজের দিন।
৭
ছুটির দিনের ঋণ জমেছে
সময় ঘড়ির কাঁধের 'পরে
আজ সকাল হতেই হুড়োহুড়ি
সূর্যঘড়ির সময় ধরে।
রোদ মেখে গায়, মাথায়, হাতে
অচেনা সব ব্রীজের নিচে
আদ্যিকালের পথের পাশে
স্থবির জীবন, আমরা বাসে।
লেদ মেশিনের ঘরঘরানি
ধোলাইখালের ফুটপাথে,
দেশ গড়ে যায় কারিগর তার
ছোট্ট কালো কালো হাতে।
পদ্মা তোমার চিরল বুকে
সূর্য গলে হয় সোনালী
আবার, রোদ মরা দিন সন্ধ্যে গড়ায়
চাঁদের আলোয় রুপালী।
স্বপ্ন দেখি চাঁদ পকেটে
শহরটাকে বেড়াই চষে,
দুঃখ মুছি মানুষগুলোর
একটু আলো বিলাই হেসে।
প্রিয়জনের স্পর্শে ঘ্রাণে
এই শনিবার ছুটির দিন,
একশ বছর বাঁচার লোভে
এই শনিবার বাড়ায় ঋণ।
বোনাসঃ
গতির পথে রাস্তা বলে,
সমুখ পানে আয়
পেছন থেকে, স্মৃতি ডাকে,
হাতড়ে সময় যায়।
জীবন খাতায়, গতির সাথে
ভাব করেছিস তাই,
পুরোন মানুষ, কান্না, হাসি
কিচ্ছু মনে নাই?
ভুলে যাবার, মনে রাখার
ঝক্কি যায় আর আসে,
প্রতিদিনের চায়ের মগে,
রাস্তা,ধূলোয় মিশে।
(শনিবারের ছড়া সিরিজের শুরুটা খুব আচমকা। পুরো সেমিস্টার জুড়ে শনিবার শনিবার করে আশুলিয়া যেতে হোল। যাবার পথে ঘুমিয়ে নেয়ার ইচ্ছা থাকতো, কিন্তু এই পথের মায়া ভুলে ঘুমানো খুব কঠিন কাজ। অদ্ভুত মায়াভরা রাস্তা, দুইপাশে বিল, কখনও টঙ দোকান, গ্রাম্য হাট। বাসভর্তি দুষ্ট বালক বালিকার দল, গান হাসি কৌতুকে মাতোয়ারা। আর একজন সম্মানিত কলিগ, ডিপার্টমেন্ট হেড, যিনি সাথে করে করে নিয়ে নিয়ে এই আশ্চর্য সুন্দর ক্যম্পাসের আদ্যোপান্ত দেখিয়ে ছেড়েছেন অলস জুনিয়রকে। শুধু একটাই সমস্যা, সাত সকালে বাসায় দেখে যাওয়া বাচ্চাদের আর বাকিদের সাথে দেখা হয় পনর ঘন্টা পরে, গভীর রাত্রিতে। এই শোক সব অপার সৌন্দর্যের সাথে মিশে এবড়োখেবড়ো করে দিতো।
প্রায় তিন মাস পর, পুরো পরিবার একসাথে ছিলাম এই শনিবারে। বাচ্চাদের গায়ের ঘ্রাণ, গোল মুখগুলো মনে করার প্রাণপণ চেষ্টা করতে হয়নি সারাক্ষণ, সুন্দর কিছু দেখলেই সাথে সাথে ডেকে দেখিয়েছি, অভাববোধ ছিলো না আর।
#শনিবারের_ছড়া সিরিজ আপাতত এটুকুই। পরে হয়ত অন্য কোন সিরিজ চলবে, অন্য নামে।)
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)