উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

"পাকিস্তানী নারীঃ ৬ টি গল্প লজ্জার, লাঞ্চনার আর যুদ্ধ করে টিকে থাকার।"

"পাকিস্তানী নারীঃ ৬ টি গল্প লজ্জার, লাঞ্চনার আর যুদ্ধ করে টিকে থাকার।"

Image may contain: 1 person, smiling, selfie and closeup

জারা জামাল এপ্রিল ৯ ২০১২
শেয়ার হয়েছে, টুইটার, লিংকেদিন।

আয়েশা, বয়স ১৮
দরিদ্র ঘরের মেয়েদের প্রত্যেকের ইচ্ছে থাকে, অনেক বেশি শিক্ষা অর্জণের জন্য স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেতে।কিন্তু আমাদের মত অনেকের সেটা ভাগ্যে থাকে না। যেদিন আমার ভাই জন্ম নিল, আমি আর তারপর বেশিদিন স্কুলে যেতে পারিনি। দিন দিন বেড়ে চলেছিল বাড়ির কাজকর্মের দায়িত্ব।আমার বাবা আমাকে বলেছিলেন, আমাকে অবশ্যই বাড়িতে থাকতে হবে কাজ করার জন্য।

যে রাতে তার(ভাইয়ের) জন্ম হল, আমার পুরো পরিবার খুব আনন্দ করে তা উদযাপন করেছিল।আমি আমার চাচার বাড়িতে গিয়েছিলাম বেশি করে পাউরুটি নিতে। আমি জানতাম না সেখানে কোন যুবক ছিল।খালি বাড়ি পূরোটা, সে আমার কাছে আমাকে পাবার সুবিধা নিতে চাইছিল। সে যা করতে চাইছিল আমি ঐ ব্যাপারে কিছুই বুঝতাম না। সে আমার বুকে স্পর্শ করলো। আমি কিছু বোঝার আগেই আমার মুখ সে কাপড় দিয়ে বেধে ধ... করতে শুরু করে। আমি হাটতে খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম, যখন বাড়ি ফিরিছিলাম।নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না আর মাথাও ব্যাথাও করছিল প্রচন্ড।

এমন ঘটনা অনেক গ্রামে ঘটে থাকে। তরুনী মেয়ে ধ... করে, খু... করে, কিন্তু কেউ তাদেরকে কিছুই করতে পারতো না। একজন নারী যদি গুণ সম্পন্ন না হতো তাহলে তার বিয়ে হতো না। কিন্তু পুরূষ এমন খারাপ কাজ করলেও সেসব উপেক্ষা করে যাওয়া হয়, ভুলে যাওয়া হয় আসলে কি ঘটেছিল। আমাকে এমন করার কারণে না সে কোন শাস্তি পেয়েছে, বরং আমাকে হুমকী দিয়েছে। লোকজনো সেসব ভুলে যেতে পারে, কিন্তু আমি কখনো ভুলতে পারব না। সে বিয়ে করে আর সুখে শান্তিতে জীবন অতিবাহিত করতে শুরু করে।আমি নিজেকেই দোষ দিই; আমার সাথে আসলে যা ঘটেছে তা আমার দুর্ভাগ্যের কারণেই।

যখন আমি কাজ শুরু করলাম, আমি খুব ভীত ছিলাম। আমি অনুমান করি এটাই স্বআভাবিক, আমি তখন দশ বছরের। আমি যে বাড়িতে কাজ করছিলাম, সেখানে আমার দায়িত্ব ছিল শিশুদের দেখাশুনা করা;তাদেরকে রেডি করে দেয়া, খাওয়ানো, আর তাদের সাথে খেলা।আমি তাদেরকে অনেক আনন্দ দিতাম। আমি অনুভব করতাম আমিও তাদের মতোই। আমি আমার শিশুসুলভ আচরণ থেকে অনেক আগেই সরে এসেছি। শিঘ্রই আমি আমার গ্রামে নিজের বাড়ির চেয়েও সেখানে কাজ করে নিজেকে নিরাপদ আর সুখি ভাবতে শুরু করি। আমাদের গ্রামে মাতাল, অশ্লিল মানসিকতার লোক আর অন্যকে হেয় করার মতো লোক দিয়ে ভরা ছিল; ঠিক আমার বাবার মতো।

সে সময় আমরা করাচিতে একটা ছোট্ট বাড়িতে থাকতাম সেখানে একটাই রুম ছিল আর রুমের মেঝে ভাংগা ছিল।আমি যখন বাবা মাকে দেখতে যেতাম, মনে হত আমি তাদেরকে খুব বিরক্তিতে ফেলেছি।  যখন ছোট্ট ছিলাম আমার বাবা মাকে লজ্জাহীনদের মতো মারধোর করতো। আমার পুরো পরিবার সে ব্যাপারে জানতো। এটা গোপন ছিলো না। আমার মা খুবই বাধ্য ছিলেন; তিনি বাবাকে কিছুই বলতেন না। মা বাড়ি থেকে কাজের জন্য বের হতেন সকাল আটটায় আর ফিরতেন মধ্যরাতে। যদিও তিনি খুব ক্লান্ত থাকতেন তবু বাবাকে খুশি রাখতে সবকিছু করতেন; দৌড়ে বাড়ি ফিরতেন, আর তার পছন্দমত সবই রান্না করতেন।আমাদের গ্রামের সব পুরুষ এভাবে স্ত্রীকে মারতেন, আর নারীরাও এগুলো সহ্য করে যেতেন। হয়তো এটা এক ধরণের ভয়, হয়তো এক ধরণের হতাশা, আমি এমন চুপ থাকার মানে বুঝতাম না।

 আমি আরো বড় ভয় পেয়েছিলাম। যখন আমি বড় হতে লাগলাম, আমার বাবার পরিবর্তন দেখতে পেলাম। বাবা ধুমপান করে, ড্রাগ নেই আমার আয় থেকে। সে এক সময় আমার পাশে ঘুমাতে শুরু করে। মধ্যরাতে সে আমাকে নোংরা ভাবে স্পর্শ করে এবং আমার জামা খুলে ফেলে।আমি ভীত ছিলাম, তাই আমি ঘুমের ভান করে থাকতাম। তারপর সে আমাকে সে...ুয়ালী লাঞ্চিত করে বাবা হয়ে। প্রতি রাতে আমি ঘুমাতে ভয় পেতাম। আমি স্ব্পনেও বাবার কাছে ধর্ষিত হই। আমি শুনেছিলাম, তুমি যদি তোমার স্বপ্ন কাউকে না বল তাহলে এটা আর কখনোই ঘটবে না।তাই আমি কাউকে বলতাম না।

এসব ঘটনার পর, আমি ফিরে গিয়েছিলাম তার(মহিলা) কাছে আমি যার চাকুরী করতাম। তিনি আমার বাড়িতে ঘটে যাওয়া ব্যাপারগুলোর ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন, আর আমি তাকে বিশ্বাসও করতাম। জানুয়ারীতে আমি গর্ভবতী হই আর তিনি আমার মেডিকেলের সব ব্যায়ভার বহন করেন। তিনি সব সময় আমার দেখাশোনা করতেন। একজন নারীর নাম যশ খ্যাতি পাকিস্তান সমাজের কাছে ঠুনকো একটা ব্যাপার। আমি তাকে অনুরোধ করলাম, তিনি যেন আমাকে ছুটি না দেন, আর আমাকে তার সাথেই রেখে দেন, তার বাড়িতে,যেখানে আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করি। জাজ না করেই তিনি আমাকে গ্রহণ করলেন। আর তার বাড়িতে নিজের মেয়ের মত একটা স্থান দিলেন; যে স্থান আমার বাবা-মা আমাকে দিতে পারেনি।

চলবে...

অনুবাদঃ টুইংকল


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ