বিবিধ

মেয়ের কাছে মায়ের চিঠি

মেয়ের কাছে মায়ের চিঠি

মাম্মাম,
ভালো আছিস? এই লেখা যখন পড়বি তখন বেশ বড় তুই। তুই তখন সাত মাসে একটু একটু করে আমার ভেতরটায় বেড়ে উঠছিস। যেদিন আল্ট্রাসনোগ্রাম করে ফিরছিলাম, সেদিন কি এক প্রশান্তি জমে ছিলো ভেতরটায় ডাক্তার বলেছে, "মেয়ে বাবু"! কেমন যেন তখনই মনে হয়েছিল একটা জান্নাত হতে পারিস তুই আমার। সেই দিন থেকে তোকে নিয়ে কত প্ল্যান, কত আশংকা, কত উদ্বিগ্নতা!

আমি তোকে কোন পুরুষ আত্মীয়ের কাছে একাকী রাখতে ভয় পেতাম। কারণ খুব করে মনে হতো  এতো আস্থার সম্পর্ক গুলো, এতো শ্রদ্ধার সম্পর্কগুলো তোর কাছে বিষাক্ত হয়ে না যায়। আমি জানি সব অঙ্গনে "Me too" আন্দোলন করা যায় না, সবাই পারে না। নাহ, এতে নিজের সম্মানের ভয় থেকে যায় শুধুই সে কারণই নয়, কেউ কেউ ক্ষমা করে দেয়। আবার হয়তো বা তাকে ফাঁসিয়ে দিলে অন্য কেউ উদ্বুদ্ধ হয়ে যেতে পারে এই ভয়ে।

তবে জানিস! যারা বোঝে না পর্দার গুরুত্ব, তারাও এই নোংরা স্পর্শগুলি অনায়াসে টের পেয়ে যায়। বিশ্বাস কর আমি তোকে ভয় দেখাচ্ছি না। সাবধান করছি, এই পৃথিবীর কিছু কিছু পুরুষের কাছে নারী শুধুমাত্র একটা তাজা মাংসের ঘ্রাণ, শিশু হোক বা বৃদ্ধা! ওরা সম্পর্ক চিনে না শুধু শরীর চেনে। ছোট্ট কোমল মেয়েগুলোকে এমন নোংরা স্পর্শের জন্য যারা বেপর্দা, সামাজীকতাকে দায়ী করে আমার শুধু মনে হয় এরা বেজন্মা! এরা হারামজাদা! তুই এই শব্দ উচ্চারণ না হয় নাই করলি কিন্তু এ ব্যাপারে এর চেয়ে ভালো করে কিছু উপাধি দেয়ার আমার ইচ্ছে হলো না।

ছোট্ট মা আমার, তুই যখন মমতা ভরে, দুইটা ছোট ছোট হাত দিয়ে কত আগলে রাখার মতো দায়িত্ব পালন করিস - তখন খুব বিস্মিত হই আল্লাহ মেয়েদেরকে মমতার খনি বানিয়েছেন! অথচ এই পুরুষগুলো কিভাবে পারে এমন ক্ষুদ্র মানুষের বিশাল পবিত্রতাকে অপমান করতে! কি করে এতো কোমল হৃদয়কে ছিন্ন ভিন্ন করে দিতে পারে! কান্না পায় আমার এসব মনে পড়লে! খুব করে! ভেতরটায় কেমন গুমড়ে ওঠে জানিস!

এমন একটা সমাজ ব্যবস্থায় বেড়ে উঠছিস তুই, যেখানে সম্পর্কের গভীরতা নেই। শ্রদ্ধা নেই, নেই এতোটুকু সৌন্দর্য! কেবল ভূল ভাবে অভিনয় করে টেনে নিয়ে যেতে হয় আত্মীয়তা। যেখানে একজন মানুষের কোন স্বার্থ নেই, সেখানেও নিজের কথাকে উপরে রাখবে বলে কুটনামী করে মানুষ! কি বিশ্রী দেখায় এমন মানুষ কে তা শুধু আমি বুঝি! হয়তোবা আরো অনেকেই বোঝে।

থাক তোকে অনেক আশংকার কথা বললাম! এবার একটু আশার কথা বলি, কিছু কিছু পুরুষ আছে যারা এতো বেশি আস্থার জায়গা দখল করে থাকে, যাদের কাছাকাছি যেতে পারলে ধন্য মনে হতে পারে তোর। ওরা তোর সাথে কথা বলবে মাটির দিকে তাকিয়ে। নারীকে ওরা সম্মান করে, যত্ন করে, ভালোবাসে। কারণ ওরা জানে যত যা - ই হোক এই নারী কখনো আমার মমতাময়ী, কখনও আমার জীবন গোছানোর একচ্ছত্র রানী। কখনোবা সুপারহিরো মনে করা ছোট্ট তুলতুলে নরম সম্পদ! এরা সব ক্ষেত্রে কেয়ার করে। ওরা জানে তুই রাস্তা পার হতে জানিস, তারপরও তোর হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দিবে (যখন তুই বৈধ সম্পর্কে আছিস)!

এই পুরুষদের মধ্যে কেউ খুব শ্রদ্ধার, কেউ স্নেহের, কেউ ভালোবাসার! এদেরকে ঐসব নোংরা দের সাথে গুলিয়ে ফেলিস না। আর মানুষ চিনতে শিখে নে তাহলে আর ভূল করবি না।

ভালো থাকিস! এপার ওপার!

তোর মা


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ