সাহিত্য

মিষ্টি বিকালে একদিন

মিষ্টি বিকালে একদিন

 

মৌটুসী মিষ্টি একটা মেয়ে,মাথার দুু'পাশে দু'টা জুটি বেধে ঘুরে বেড়ায়,খেলে, হাসে,পুতুলের বিয়ে দেয়,বিকালে মাঠে খেলতে যায়।দাদীমা রাতে মজার মজার গল্প শোনার,তাঁর সময়ের ঘুরি উড়ানো,ছুটে বেড়ানো শৈশবের কথা বলেন।ও ক্লাসে ফাইভে উঠেছে এবার, ফাস্ট হওয়াতে মেঝো চাচু তাকে নোটবুক পাঠিয়েছেন।মৌটুসির পাশের বাসার ছেলেটা ভারী দুষ্টো,ক্লাস এইটে পড়ে,ডিভাইসগুলোর পোকা।তার বাসায় আব্বা-আম্মা দু'জনই অফিসে, রাতে ফেরে,ওর সময় কাটে কম্পিউটার, ট্যাব গুতিয়ে।মৌটুসি অবশ্য খেলাধুলা,ছড়ার বই পড়তে বেশ পছন্দ করে।বিকালে দোলনায় দুলে,সাইকেল চালিয়ে বেশ কাটে সময় তার।

মৌটুসী খুব খুশি,তার নতুন একটা টুকটুকে বোন হয়েছে,মুনিয়া।মুনিয়াকে নিয়ে বেশ ব্যস্ত থাকতে হয়,ওর আম্মুকে।রাতে একা একা পড়া করতে গিয়ে,ওর মন খারাপ হয়।দাদীমাও,ওর বড় চাচুর বাসায় গিয়েছেন, সেখান থেকে গ্রামের বাড়িতে যাবেন।ইশ্,মৌটুসীর গল্প শোনা হয়না।এরমধ্যে,পাশের বাসার দুষ্ট ফাহিম আসে,ওর গিফটের নোটবুকটা দেখতে।সে কিসব গেইম ইনস্টল করে,কার্টুন নোটবুক এ দিয়ে দেয়।আম্মুকে না বলে,মৌটুসী মাঝেমাঝে গেইম খেলে,ওর বাইরে বের হওয়া কমে যায়।

মৌটুসীর আব্বুও অফিস থেকে ফিরে,কাজ নিয়ে বসে যান।মেয়ের কোন বায়না,আবদার তিনি ফেলেন না।একদম বন্ধুর মতো আচরন করেন,কখনো বকা দেন না।এ নিয়ে শাকিলা অবশ্য একটু রেগে যান,তিনি দেখেছেন,বাবা-মার গাইডেন্স কতোটা জরুরি। প্রয়োজনে শাসন করতে হবে,যেটা কল্যাণকর সেটা বুঝিয়ে বলতে হবে,সব আবদার রক্ষা করতে হবে, এটা তিনি মানেন না।মৌটুসীর বাবাকেও বলেন,"মেয়েটাকে বেশী ভালবাসো,ঠিক আছে,তবে যেটা ওর জন্য ক্ষতির সেটাতে আসকারা দিও না"।মৌটুসির আব্বুর আদরে বেশী ঘিষে থাকে,মুনিয়া আসার পর শাকিলাও একটু বেখেয়াল, বলা যায়,সামলে নিতে কষ্ট হচ্ছিল।

একদিন ফাহিম তার ট্যাব নিয়ে এসে, কি একটা গেইম খেলে,যেটাটে কিনা,নেট কানেকশন লাগে।মৌটুসীর বাবার থেকে ইন্টারনেট পাসওয়ার্ড নেয়,ওর নোটবুকেও নামিয়ে দেয়।সেদিন বিকালে মারজান,রাফিজা এসে খেলতে ডেকে যায়,কিন্তু,মৌটুসী গেলো না।সকালে শাকিলা নাস্তা রেডী করে ডাকতে গিয়ে দেখে,মৌটুসী এখমো ঘুমোচ্ছে।পাশে নোটবুকটাতে এখনো আলো জ্বলে আছে।

রাতে ওর বাবাকে বলতেই,তিনি হেসে বললে,কি বুদ্ধি, দেখেছো,কতো অল্পেই নোটবুকটা চালাতে শিখে গেছে,আমিও সবগুলো কমান্ড এখনো পারিনি।শাকিলা আর কিছু বললেন না,মুনিয়াকে নিয়ে ঘুম পাড়াতে গেলেন।

এদিকে ক্লাসটেস্টের রেজাল্ট দিয়েছে,মৌটুসী ফাস্ট গার্ল হয়েও,আজ নাম্বার কম পেলো,তৃতীয় হয়েছে।মার্কসিট দেখাতেই,ওর আব্বু অবাক তার ময়নাটা তো কখনো খারাপ করে না..বিকালে মারজানা,রাফিজাও এসে বললো,ক্লাসে একটু অমনোযোগী হয়ে গেছে,খেলতেও গিয়ে খুব একটা মিশে না,ওদের সাথে।মাহফুজ সাহেব বুঝলেন,মেয়ের আবদার রক্ষা করে,উল্টো কি খারাপটাই না করেছেন।সেদিন বিকালে মৌটুসীকে নিয়ে গলফ খেলতে বেরুলেন...

[সন্তান প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে,এটাতে যারা গর্ববোধ করেন, ঠিকাছে,কিন্তু এর ব্যবহার আসলেই কি আপনার সন্তানের সঠিক বিকাশে কাজে লাগছে কি না খেয়াল রাখু...,আর বাবা-মা, বন্ধুর মতো নয়,সন্তানের অভিভাবক, সুস্হ বিকাশে আর্দশ হন।]

 


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)