উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

করুণা

করুণা
পর্ব-৬ মৌমিতা মাঈশা আজ ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেছে। বাবার পাশে বসে আছে। ওরা জেনেছে বাবা আজ সাত দিনের জন্য চিটাগাং যাবে, সত্য কিনা তা পরীক্ষা করতে,কারণ বাবা গেলেই মিতালীকে বাসায় নিয়ে আসার প্লাণ ওদের।  জুবায়ের খন্দকার ল্যাপটপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অবাক ও হাস্যোজ্জ্বল কন্ঠে, -আরে , আজ দেখি ভোরের পাখি হয়ে গেছে আমার টুনটুনিরা! মাঈশা অভিযোগ করে, -বাবা আমি টুনটুনি না আমি মোরগ! মৌমিতা শব্দ করে হাসে, বাবার মুখের দিকে তাকায়, -বাবা, ও নাকী মোরগ, তাহলে ওর নাম "মাঈশ" হওয়া দরকার......... জুবায়ের খন্দকার হঠাৎ করেই মৌমিতাকে ধমক দেয়, কর্কশ কন্ঠে, -কী হচ্ছে এসব? হ্যা! মাইশা মৌমিতা দুজনই ভীত দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকায়, সাহানা খন্দকার রান্নাঘর থেকে দ্রুত এসে অগ্নিমূর্তি হয়ে জুবায়ের খন্দকারের দিকে তাকায়, -কী কোন সমস্যা!? জুবায়ের খন্দকারও আগুনসম দৃষ্টিতে তাকিয়ে, -সমস্যা কিনা বোঝনা?! ওরা দুবোন পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে নিজেদের ঘরের দিকে যায়, সাহানা খন্দকার দাঁতে দাঁত চেপে, -ঐ সমস্যাটা বিয়ের আগেই পরিষ্কার করেছিলাম, এখন নতুন করে কোন রকম সমস্যা আমি সহ্য করবোনা, কোন একটা দিন নেই যে তুমি মেয়েটাকে ধমক দাওনা.........এতো কিসের রাগ তোমার......... -পাগলের গোষ্ঠি কিনা, এমন মনে হবেই, সব জেনেশুনে এই ভুলটা যে আমি কেন করতে গেলাম। জুবায়ের খন্দকারকে খুব বেশী রাগতে দেখে সাহানা খন্দকার হঠাৎই চুপ হয়ে যায়, দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে যায়। মৌমিতা মলিন কন্ঠে মাঈশাকে, -বাবা আমাকে একটুও ভালোবাসেনা, শুধু বকা দেয়......... মাঈশা সে কথার জবাব না দিয়ে, বললো, -মৌমিতা, আমি একটা ডায়েরী পেয়েছি! -কীসের? -কী জানি এখনও পড়িনি, দরোজা লাগিয়ে আসি? -হ্যা যা। মাঈশা দরোজা লাগিয়ে দিলে মৌমিতা স্পষ্ট কিন্তু ধীরে ধীরে পড়তে থাকে, তারিখ-২১শে ফেব্রুয়ারী-২০০০। " আমার নাম মোহনা, আজ আমার স্পেশাল দিন। আজকেই আমার বিয়ে হয়েছে।  আমার স্বামীর নাম আনিসুর রহমান। শশুরবাড়ী নারায়নগন্জ, আমাদের বাসা ঢাকার মহাখালীতে, বাবা সরকারী চাকুরী করেন। ওখানে বাবা মা আর ছোট বোন থাকে। আমি আনিসুরকে পেয়ে খুবই খুশি। আমি যেন কোন এক উজ্জ্বল তারকার দেখা পেয়েছি, আমার প্রতি তার ভালোবাসা অত্যধিক এটুকু বুঝেছি। তারিখ-২২শে ফেব্রুয়ারী-২০০০। বাড়িতে যাওয়ার কথা কিন্তু আমার শশুরমশাই নাকী এতো নিয়ম কানুন মানতে পছন্দ করেননা, তাই যাওয়া হলোনা। শশুরমশাই এলাকার নামী দামী মানুষ, সবাই তাকে খুব শ্রদ্ধা করে। আনিসুর আজ আমাকে বই মেলায় নিয়ে যাবে! তবে ওর জন্য একটা স্পেশাল সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে! আমি জানি ও খুব খুশি হবে। বইমেলার এটা স্টলে দাঁড়ানোর সাথে সাথে আমার নাম ঘোষনা করা হলো আমার বইটার জন্য আমাকে পুরস্কৃত করা হবে। আনিসুর অবাক কন্ঠে, -দেখেছো তোমার নামে নাম মেয়েটির, দেখার ইচ্ছে হলো যে! আমি দুষ্টুমী করে বললাম, -আমাকেই দ্যাখো অন্য মেয়েকে কেন দেখবে! ও দুষ্টুমী করলো কিনা বুঝলামনা, কিন্তু ওর কথাটা শুনতে আমার কেন জানি ভেতরটায় একটুখানি আঘাত লক্ষ্য করলাম, অবশ্য নিজেকে এই বলে প্রবোধ দিলাম, আমি একটুতেই বেশী কষ্ট পাই! ও বলেছিলো, -তোমাকে দেখতে না চাইলেওতো সারা জীবন দেখতে হবে, ঐ মেয়েকে তো আর দেখতে পাবোনা। আমি অনেকটা সময় ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম! কিন্তু সেখানে দুষ্টুমীর কোন ছাপও দেখলামনা! যেখানে ঘোষণা হচ্ছে সেখানে দুজনই দাঁড়ালাম বারবার আমার নাম ঘোষিত হচ্ছে, আমি ইচ্ছে করেই যাচ্ছিনা, কারণ আমি জানি আমার পুরষ্কার ঠিকই আমার ঠিকনায় চলে যাবে, কিন্তু  আর বইয়ে আমি আমার ছবি দেইনি তাই কেউ আমাকে চিনতে পারছেনা। তারিখ-২৬শে ফেব্রুয়ারী আজও বাসায় যাওয়া হলোনা, বাবা মা সাহানার কথা খুব মনে পড়ছে, আর বাসায় নিশ্চয়ই পুরস্কারটা এসেছে। আচ্ছা ওরাওতো আসতে পারে কেন আসছেনা! আমার কান্না পাচ্ছে। কিন্তু এখানে কাঁদলে কে কী মনে করে............ থেমে যায় মৌমিতা। ওর মা দরজায় নক করছে, মৌমিতা মাঈশা, তোমাদের বাবা চলে যাচ্ছে এসে দেখা করো! ওরা ডায়েরী লুকিয়ে রেখে বের হয়, জুবায়ের খন্দকার, হাসিমুখে, -তোমাদের কী চাই? মাইশা উচ্ছল কন্ঠে, -বাবা অনেকগুলা টেডিবেয়ার, আর বারবি-ডল! মৌমিতা কিছুই বলেনা, জুবায়ের খন্দকার না জেনেই চলে যাচ্ছে, সাহানা খন্দকার হাসি মুখে আমার প্রিন্সেসের কী চাই? মৌমিতা মলিন কন্ঠে, -বাবা যা নিয়ে আসবে আমি তাই নেব! জুবায়ের খন্দকর একবার পেছনে তাকায়, কিছু না বলেই চলে যায়। চলবে.....................                  

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ