উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

করুণা

করুণা
  পর্ব- ৪ ভোরের আলো এখনও ফুটে ওঠেনি।  মিতালী ঘরটির চারপাশে অহেতুক ঘুরছে, আর হাসছে খুব শব্দ করে। নিঃসঙ্গ এই নারীর জীবনে ঘটে গেছে মহা বিপর্যয়, জীবনকে মূল্যায়ন করতে চেয়েছিল ন্যায় সঙ্গত, নিজস্ব মূল্যবোধের পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু সফলতা তো আসেইনি বরং আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে আজ নিজের স্বত্তার কাছেই চিরদিনের মতো নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে। হাসি শেষ করে এবার কান্নার পর্ব শুরু হয়। এর মধ্যেই ঘরে ঢোকে সাহানা খন্দকার, হাতে পোটলা, খাবারের পোটলা ওটা । ধাক্কা খায় সাহানা খন্দকার মিতালীর  সাথে, মিতালী গুটিশুটি হয়ে একটু সরে দাড়ায় মলিন কন্ঠে বলে, -তোমার কি লাগলো? সাহানা খন্দকার মুচকী হাসে, -না...... এসো খেয়ে নেবে। -খাবনা! কথাটা শেষ করে ঘরের ভেতরে পেতে রাখা চৌকিতে উঠে বসে। -দ্যাখো জেদ করোনা, আজ এমনিতেই আমার মনে হচ্ছিলো পিছু পিছু কেউ এসেছে! কিছুই বোঝেনা মিতালী, আগের মতো ঠায় বসে থাকে, সাহানা  মলিন কন্ঠে, -তুমি না খেলে আমিও কিন্তু সারাদিন না খেয়ে থাকবো! এবার নেমে আসে মিতালী, আদুরে দৃষ্টিতে সাহানা খন্দকারের দিকে তাকায়, আর ওর পাশে বসে মুখ হা করে রাখে, সাহানা আবারো হাসে, নলা মুখে তুলে দিয়ে  দিয়ে, -তোমার কী মনে পড়ে, তুমি কতো কবিতা লিখতে! গল্প লিখতে!  ......... জানালার ওপাশে দেওয়ালের আড়ালে মৌমিতা মাঈশা কান পেতে আছে,সাহানা খন্দকারের এই সেনটেন্স শুনে ওদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়, মাঈশা ফিসফিস করে, -মিতালী লেখক ছিলো! মা তো......... মৌমিতা ওর মুখ চেপে ধরে, -চুপ মাঈশা, তুই এতো কথা বলিস দেখেই তো ধরা পড়ে যাই। মিতালী সাহানা খন্দকারের কথায় কোন কর্ণপাতই করেনা, সাহানা খন্দকার, বলতে থাকে, -তুমি আল মাহমুদের ঐ কবিতাটা আবৃত্তি করে ফার্স্ট হয়েছিলে মনে পড়ে? ঐযে "বখতিয়ারের ঘোড়া" । মন পড়ে কবি নজরুের কবিতাগুলো তোমার ভীষণ পছন্দ ছিলো? "ভীরু" কবিতাটা! সাহানা খন্দকার মিতালীর মুখে খাবার উঠিয়ে দিয়ে আবৃত্তি করার চেষ্টা করে, -আমি জানি তুমি  কেন চাহনাকো ফিরে। গৃহকোণ ছাড়ি' আসিয়াছো আজ দেবতার মন্দিরে। পুতুল লইয়া কাটিয়েছে বেলা আপনারে লয়ে শুধু হেলা ফেলা, জানিতেনা,আছে হৃদয়ের খেলা আকুল নয়ন নীরে ..................... সাহানা খন্দকার বাধ্য হয়ে থেমে যায়। হাসতে থাকে মিতালী, অট্টহাসিতে ভোরের অন্ধকার খান খান করে ভেঙ্গে যায়, প্রভুর দেয়া সূর্যের আলো তখন মিতালী মুখমন্ডল ছুঁই ছুঁই করে, কিন্তু মিতালী আগের মতো আর সে আলোয় প্রাণ ভরায়না, সে মূর্ছা যায়। চলবে...............  

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ