সাহিত্য

অন্ত্যমিল-১

অন্ত্যমিল-১
life lessons ‘’গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে বলো কি হবে?জীবন খাতার ছিন্ন পাতা,শুধুই বেহিসাবে পরে রবে!’’ হুটহাট আনমনে কিছু গান মনের মাঝে সুর তোলে যার সাথে বাস্তবতার কোন মিলই নেই!বিষয়টা খেয়াল করতেই মনে হলো,অনেকক্ষন ধরে টাইপ করতে করতে মাথাটা কেমন যেনো ধরে আসছে মনে হচ্ছে। চেয়ারে হেলান দিয়ে কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকা গেলে ভালো লাগতো,কিন্তু হাতের কাজটা শেষ করতে হবে অনেক দ্রুত। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে কাজে মনোযোগ দিলো অদিতি। ঘড়ির কাঁটা ৩টা ছুঁই ছুঁই করছে,দুপুরে খাওয়া হয়নি এখনো,ভেবেছিলো বাইরে থেকে কিছু আনিয়ে খাবে বাট এখন মনে হচ্ছে একবারে বাসায় যেয়েই খেতে হবে। হাতে কাজ থাকলে কেন জানি সেদিন সময়কে হাজার চেষ্টা করেও নাগালে পাওয়া যায় না,কিভাবে যে চলে যায় সময় কে জানে! জীবনের সময় গুলোও কি ঠিক এভাবেই যায়? নাকি শুধু সুখটাই নাগালের বাইরে থেকে যায়! মাঝে মাঝে মনে হয় সব কাজ এক পাশে রেখে কিছুটা সময় কেবল জীবনের সময় গুলোকে নিয়ে ভাবা যেতো কিন্তু পরক্ষনেই মনে হয়,এতো ভাবার সময় কই?আর কি ই বা হবে এতো ভেবে? কিছু কি আর বাকী আছে হওয়ার? সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে চূলোয় ভাত চড়িয়ে দিয়ে দ্রুত ফ্রেশ হলো অদিতি। এই মুহুর্তে তরকারী রান্না করার মতো শক্তি নেই,আজ ফেরার পথে বাসে সিট খালি ছিলো না,তাই দেড় ঘন্টার রাস্তার পুরোটাই দাঁড়িয়ে এসেছে,কী যে ক্লান্ত লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয়। ফ্রিজ খুলে দেখলো একটাই ডিম আছে,বাজার আর তেমন কিছু নেই। এ মাসে ভালো করে বাজার করা হয়নি,যখন হাতে যতটুকু টাকা এসেছে ততোটুকুই বাজার করা হয়েছে। কি করা যায় ভাবতে ভাবতে ডিমটা হাতে নিয়েও আবার রেখে দিলো,আজকে সুমিত আসবে,আর শুধু ভর্তা-ডাল দিয়ে রাতের খাবার সে কখনোই খেতে পারবে না,তাই সাথে যদি একটা ডিম ভাজি থাকে তাহলে অনেকটাই সম্ভব। চূলো থেকে ভাত নামিয়ে ডাল আর আলু সেদ্ধ বসালো তারপর নিজের জন্য পেঁয়াজ-কাঁচা মরিচ নিয়ে প্লেটে ভাত বাড়লো। খেতে খেতে মনে হলো,দীর্ঘ জীবন হলে থাকার এই আরেক বিশাল সুবিধা বটে!যেকোন সময় পেঁয়াজ-কাঁচা মরিচে দারুন ভাবে খাওয়া সেরে নেয়ার অভ্যাস তৈরী হয়। যা এই সংসার জীবনে এসে ভালো কাজে লাগছে বলা যায়! অদিতির জন্য খাওয়ার টেবিলে দু’চার পদ তরকারী থাকা চাই এমনটা না,কিছু না থেকে স্রেফ পেঁয়াজ-কাঁচা মরিচ থাকলেই যথেষ্ট। কিন্তু সুমিত এর বেলায় আবার অবস্থা ভিন্ন!খাবার টেবিলে কয়েকপদ না হলে মুখে খাওয়া ঢুকে না,সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কখনো যদি অবস্থা খুবই কঠিন হয় তাহলে সুমিত না খেয়ে থাকবে তবুও কোন রকমে এক তরকারী দিয়ে তার খাওয়া সম্পন্ন করা সম্ভব না। বিয়ের পর প্রথম দিকে এই ব্যাপারটা নিয়ে যথেষ্ট সমস্যা হতো অদিতির,হয়তো ফাইনাল পরীক্ষা চলছে কোন দিকে তাকানোর অবকাশ নেই সেই অবস্থাতেও সুমিতের জন্য কয়েক রকমের রান্না করতে হবে,যে দিন করেনি সে দিন সুমিত না খেয়েই হয়তো অফিসে গেছে আবার ফিরে এসেও না খেয়েই ঘুমিয়েছে!শুনে তো শ্বাশুড়ির সে কি রাগ-বকা চলতো,তার একমাত্র ছেলে কে বউ ঠিক মতো রেঁধে খাওয়ায় না কি ভয়ানক কথা! কলিংবেলের শব্দে চমকে উঠে অদিতি!সুমিত এতো দ্রুত চলে আসলো?! ভাত মাখা হাতেই দরজা খুলল,পাশের বাসার ইরা এসেছে। অদিতি কে দেখে হাসিমুখে সালাম দিয়ে বলল, -সরি ভাবি,অসময়ে আসলাম! -না ঠিক আছে,আমি বাসায় থাকিই তো এই সময়টা তাহলে অসময় হবে কেন?এসো এসো। চেয়ারে বসতে বসতে অদিতির খাওয়া দেখে ইরা বিস্ময় নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, -সে কি?!! সারাদিন পর বাড়ি ফিরে এই খাওয়া খাচ্ছেন? কেন?কিছু রান্না করে যাননি? অদিতি হেসে বলল, -নারে ভাই,আসলে রাতে ঘুম কম হয়েছে তা সকালে উঠে কোন রকমে শুধু তোমার ভাই কে নাস্তা-লাঞ্চ রেডি করে দিয়েছি!তার উপর আবার বাজারও করা হয়নি ঠিক মতো,তাই এসে ঝটপট আর কিছু তৈরী করতে পারলাম না। ইরা মাথা নেড়ে বলল, -হুম বুঝেছি!আমি অবশ্য বাজার করার দিক থেকে নিশ্চিন্ত আছি। আপনাদের ভাই এই দিকে খুব সজাগ,মাসের বাজার টা আমাদের বাসার এবং আমার শ্বশুড় বাড়ির দু’টোই মনে করে করবে আবার অফিস থেকে আসার পথে রোজ ফোন করে জিজ্ঞেস করবে কিছু লাগবে কি না! আমি তো মাঝে মাঝে বিরক্ত হই,দু’জনের সংসারে আবার রোজ কি লাগবে জিজ্ঞেস করা লাগে! কিন্তু তারপরেও ফোন তার করা চাই ই...! ব্যস শুরু হয়ে গেলো ইরার রোজকার ননস্টপ কথোপকথন। অদিতি কিছু না বলে নিরবে হাসল। এই ইরা ক’মাস আগেও নতুন সংসার শুরু করে রোজ সে কি হুলস্থুল কান্ডই না করতো!প্রায় দিন ই হয় অদিতির সাথে আর না হয় মা কে ফোন করে নাক ফুলিয়ে কাঁদছে,বিকেলে জামাই বাসায় আসলে সারাক্ষণ তাকে নিজের কথায় আর না হয় কাজে ব্যস্ত রাখছে। ওর কাজ-কর্ম দেখে অদিতি ভাবতো,এই মেয়ে মনে হয় না সংসার করতে পারবে!প্লেটে খাবার তুলে দেয়া ছাড়া আর কোন কাজই ইরা ঠিক মতো করতে পারতো না,রান্নার সময়ও দেখা যেতো জামাই পাশে দাঁড়িয়ে আছে,সব কিছু রেডি করে দিচ্ছে এবং এখনো বেশির ভাগ দিন ইরা রান্না করে সন্ধ্যার পরে জামাই বাসায় ফিরলে! কিন্তু ধীরে ধীরে আগের চাইতে এখন অনেক দক্ষ হয়েছে ইরা। প্রায় দিন ই নিজে নিজেই নতুন কিছু রান্না করে অদিতির জন্য নিয়ে আসে,জামাইকে সারপ্রাইজ দেয়। অদিতির মনে হয়,সংসারে সুখের বাতাস ধরে রাখার জন্য যখন যতটুকু জানলা-দরজা খুলে রাখা দরকার ইরা তা বেশ নিপুন ভাবে করে,কিন্তু কিভাবে করে সেটাই অদিতির জন্য বুঝা কষ্টকর! কে জানি অদিতি সংসারে এই ব্যাপার গুলোর সাথে একেবারেই পরিচিত না। ইরার মুখে সারা দিন কি হয়েছে তার গল্প শুনতে শুনতে ওর কাছে তাই বেশির ভাগ সময় মনে হয়,এই বুঝি ইরা বলবে,যে ওর জামাই কড়া ভাষায় ধমকাবে!ওর শ্বাশুড়ি ওকে অনেক অপমান করবে আর তখন মেয়েটা হয়তো তারই মতো আড়ালে চাপা কান্নায় চোখ ফুলাবে। চলবে...

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন