বিবিধ

উপেক্ষিত নারী অস্তিত্ব

উপেক্ষিত নারী অস্তিত্ব
ss প্রাসঙ্গিক চিন্তা থেকে বলছি। নারী বরাবরই সকলের কাছে এক উপেক্ষিত অস্তিত্ব! একাধিক কারণ বশতই নারী অধিকার, নারীর অবস্থান বিষয়ক ব্যাপারগুলো লিখতে গেলে আপনাতেই দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। মনে হয় কোনটা রেখে কোনটা লিখবো, কেননা নারী সর্ব ক্ষেত্রে উপেক্ষিত, লাঞ্চিত, ও বিতর্কিত! মেয়ের বাবা মাকে শত অন্যায় দেখেও চুপ থাকতে হয় এই ভেবে  তার কন্যাটির উপরে নির্যাতন করা হতে পারে, অথবা তার মেয়েকে বের করে দেয় কিনা। প্রতিটি সংসারে নারীকেই চুপ থেকে ভয়ংকর পরিস্থিতি সামলে নিতে হয়। ব্যতিক্রম ঘটে দু এক ক্ষেত্রে। কখনো কখনো এমনও সময় আসে সংসারে অশান্তির জন্য মেয়ের বাবা মা অব্দি মেয়েকেই দোষারোপ করে, নয়তো বলে দেখো মা "মেয়ে হয়ে জন্মেছো এগুলো তো সহ্য করতে হবে"  পয়েন্টটি নোট করে রাখার মতো কিন্তু! মেয়ে হয়ে জন্মেছো! আহা! এই জন্মানোটাই বোধহয় পাপের, গুণাহের! অথচ এই কন্যা শিশুটিই বাবা মায়ের জান্নাতের কারণ হতে পারে। অপরদিকে ছেলের বাবা মা বুক ফুলিয়ে বলে থাকেন, "আমরা ছেলের বাবা মা এখনতো আমাদের পায়ের উপরে পা রেখে বসে বসে খাওয়ার পালা"। খেয়াল করেন পার্থক্যটা, বাবা মা! মেয়ের বাবা মায়ের উদ্বিগ্নতা! আর ছেলের বাবা মায়ের গর্ব! এমনটাই কী হওয়ার ছিলো? এই সমাজের কাছে প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি! যখন দাম্পত্য জীবনের পারিপার্শ্বিক ব্যাবস্থা গুলো শুরু হতে থাকে, তখন নতুন জীবন শুরু করতে যাওয়া দুজন মানুষ একটা বিশ্বাস নিয়ে পথচলা শুরু করে এই বিশ্বাস গুলোর মধ্যে অন্যতম অন্য কারো দিকে তাকাবেনা। কিন্তু দুঃখের বিষয় সমাজে প্রচলিত দু একটা বাক্য মন খারাপ করে দেয়, যেমন "পুরুষ মানুষ, হাজার ভালো হোক অন্য মেয়ের দিকে তাকাবেই" ঘটনা - ১ একজন পরিচিত চাচার ঘটনা বলছি, তার পরপর তিনটি মেয়ে হয়, এবং যথারীতি অন্যদের সমালোচনা, আবার মেয়ে! চাচারও মন খারাপ, বাড়ি ফিরে গিয়ে অসুস্থ চাচীকে বেধড়ক মার পিট শুরু করে দেন। অথচ এ সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে ঐ বেচারী মহিলার কী আদৌ কোন হাত ছিলো? নাকী কারো হাত থাকে? বাবা মা কারো কোন করণীয় নেই এ ক্ষেত্রে। অথচ সমাজে নারীকেই সবসময় দোষারোপ করা হয়। প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্ম হলে, বলা হয় নিশ্চয়ই মায়ের কোন পাপ ছিলো! বাবার পাপে এমনটা হতে পারেনা? বাবার কারণে এমনটা হতে পারেনা? এ সমাজ কেন শুধু নারীকেই দোষ দিয়ে থাকে কেন? বিজ্ঞান বলে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে ছেলে না মেয়ে হবে এটা বাবার ক্রোমোজোমের উপর নির্ভর করে, সংগৃহিত তথ্য সূ্ত্রটি তুলে ধরছিঃ "এক্ষেত্রে মায়ের সে...-ক্রোমোজম X এর সাথে বাবার কাছ থেকে আসা X বা Y এর মধ্যে যে কোন একটি মিলিত হতে পারে। সাধারনত মায়ের কাছ থেকে আসা সে...-ক্রোমোজম X এর সাথে বাবার X মিলিত হলে সন্তানটি কন্যা (XX) এবং বাবার Y মিলিত হলে সন্তানটি পুত্র (XY) হয়। ডিম্বাণূর সাথে শূক্রাণূর মিলন ঘটলে ভ্রুণের যে কোষটি গঠিত হয় তাতে মানুষের ক্ষেত্রে ডিম্বাণূর ২৩টি (২২টি অটোজম + ১টি সে...-ক্রোমোজম X) এবং শুক্রণূর ২৩টি (২২টি অটোজম + ১টি সে...-ক্রোমোজম X/Y) মিলে মোট ৪৬টি ক্রোমোজম (২২জোড়া অটোজম + ১জোড়া সে...-ক্রোমোজম XX/XY) থাকে। এর ব্যতিক্রম ঘটলেই নানা রকম অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়"। আর মেয়ে সন্তান কখনোই বাবা মায়ের জন্য খারাপ কিছু বহন করেনা বরং ভালো কিছুর সু সংবাদ বহন করে। *** যার গৃহে কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহন করল, অতঃপর সে তাকে (কন্যাকে) কষ্টও দেয়নি, তার উপর অসন্তুষ্ট ও হয়নি এবং পুত্র সন্তানকে প্রাধান্য দেয়নি, তাহলে ঐ কন্যার কারনে আল্লাহ তা’য়ালা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। (মুসনাদে আহমদ ১:২২৩) ***যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান হবে, এবং সে তাদেরকে এলেম-কালাম, আদব-কায়দা শিক্ষা দিবে, এবং যত্নের সাথে প্রতিপালন করবে ও তাদের উপর অনুগ্রহ করবে, সে ব্যক্তির উপর অবশ্যই জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। ঘটনা - ২ ছেলের বাবা মা দেরকে হর হমেশা বলতে শুনেছি আমি ছেলের মা হুহ্! শুধু এখন বসে বসে খাওয়া, দামী পোশাক পরে ঘুরে বেড়ানো। ছেলের বউ আসবে সংসারের সব কাজ বুঝে নেবে (যেন কাজের মেয়ে আনার কথাই ভাবেন শাশুড়ী মহোদয়াগণ)। আমার খুব কাছের এক মানুষের বিয়ের সময় বরের মা এক পর্যায়ে বলেছিলেন, "ওনাকে বলে দিয়েন যেন গলা নিচু করে কথা বলে আমি ছেলের মা আর উনি মেয়ের মা। এখনতো উঁচু গলায় কথা বলবো আমি"। আর মেয়ের বাবা মা ভয়েই চুপসে থাকেন, মেয়ের কোন ভূল হোক চাই না হোক মেয়ের হয়ে তারাই যেন মেয়ের শশুর বাড়ীতে হাত পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নেবেন এমন ভাব। কেন? বাবা মায়ের অধিকারের ব্যাপারগুলো কি শুধু ছেলের বাবা মায়ের জন্য তৈরী। মাকে উহ্ শব্দ করতে দেয়া যাবেনা সেটা কী শুধুই ছেলের বাবা মায়ের জ্ন্য প্রযোজ্য? বাবা মায়ের সেবা যত্ন করতে হবে, বাবা মার ভরন পোষণের দায়িত্ব নিতে হবে সে সব নিয়ম কি শুধুই ছেলের বাবা মায়ের জন্য তৈরী? তাহলে যাদের ছেলে নাই তারা কী বাবা মা নন? অনেকেই এই প্রশ্নগুলোকে অবান্তর মনে করবে, কেউবা বাস্তবতা দেখাবে, কেউ আবার এসবের সঠিক জবাবই দেবে। কিন্তু সেই সঠিক জবাব দেয়া মানুষটিই কি তার চারপাশে এসব খেয়াল করেও চারপাশের সবাইকে তা বুঝানোর চেষ্টা করেছেন? অথচ মেয়ের বাবা মাকেই আল্লাহর রাসুল (সঃ) অধিক গুরুত্ব দিয়েছেনঃ ***যে ব্যক্তি মেয়ের বাবা মা কে গালি দিলো সে যেন আমাকেই গালি দিলো, যে ব্যক্তি মেয়ের বাবা মা কে অপমান করলো সে যেন আমাকেই অপমান করলো"। (আল হাদীস) ঘটনা - ৩ বেশ আগে, বসে বসে এক ভাবীর সাথে গল্প করছিলাম, তো উনি প্রসঙ্গক্রমে বললেন, তোমার ভাইয়া আজ কয়েকটা মেয়ের গল্প করছিলো খুব সুন্দরী তারা, তারা কিভাবে কথা বললো কিভাবে হাসলো সবই বললো এসে তোমার ভাইয়ার খুবই পছন্দ হয়েছে, ওদের মতো ড্রেস আমাকে বানাতে বলেছে। ঘটনাটা আমার বিয়ের আগের। আমি হা করে ভাবীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি ভাবীর হাসি মুখের কোন পরিবর্তন ঘটলোনা। আমি অবাক হলাম, বললাম আপনার কী শুনতে খুব ভালো লাগলো? ভাবী হেসেই বললেন, খারাপ লাগলেই কি করার পুরুষ মানুষ! আমার খারাপ লাগলে, হয়তো ঘটনাগুলো আমাকে বলবেনা, কিন্তু সুন্দরী মেয়েদের দিকে তো ঠিকই তাকাবে, ঠিকই বন্ধুদের সাথে এসব নিয়ে আলোচনা করবে, কারো সাথে না বললেও মনের মধ্যে তো ঠিকই রেখে দেবে। তার চেয়ে আমাকে বলে এই ভালো! একটু পরে তার হাসি মুখটা আরো প্রশস্ত হলো, বললেন, তোমার বরও এমন কথাগুলো বলবে দেখো। আমি বললাম আমি অনেক ভালো মানুষকে বিয়ে করবো! উনি আরো হেসে বললেন যত ভালোই হোক পুরুষ মানুষ মেয়েদের দিকে তাকাবেই। আমি তখন বলেছিলাম, ভাবী এক কাজ করবেন ভাইয়া যখন মেয়েদের গল্প করবে তখন আপনিও সুন্দর সুন্দর ছেলেদের গল্প করবেন। ভাবী কেন জানি খুব দ্রুত সেদিন প্রসঙ্গ চেইঞ্জ করেছিলেন। এইভাবে একজন স্ত্রী তার স্বামীকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চায় আসলে আদৌ সে তার মনকে মানাতে পারে কিনা তা আমার বোধগম্য নয়। অথচ স্পষ্ট করে বলা আছে, যে ***সে পুরুষটি উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম (আল হাদিস)। কিন্তু এমন হাদিস সরাসরি নাই যেখানে বলা আছে সেই স্ত্রী উত্তম যে স্বামীর কাছে উত্তম। আর কুরআন সর্বপ্রথম পুরুষের পর্দার ব্যাপারটায় তুলে ধরেছে, সুরা আন নূরের ৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ ***হে নবী মুমিন পুরষদের বলে দাও তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করে। এটি তাদের জন্য বেশী পবিত্র পদ্ধতি। যা কিছু তারা করে আল্লাহ তা জানেন।" অথচ বলা হয় "পুরুষ মানুষ তাকাবেই",একটা জাতি সীমালঙ্ঘনের কোন মাত্রায় গেলে এমন উক্তি মানুষ সগর্বে উচ্চরণ করতে পারে! এখন আসছি এই যে, সমাজে পরকিয়া একটা মূখ্য আকার ধারণ করেছে। মা বাবা তার সন্তানকে হ... করছে। একজন নারীর স্বামী যদি পরকিয়া করে তবে তাতেও ঐ নারীরই দোষ, বলা হয়ে থাকে তুমি সামলে রাখতে পারোনি, যত্ন নিতে পারোনি তাই এমন হয়েছে। এভাবে সব কিছুর মূলে নারীকেই দোষ দেয়া হয়। কোন নারী যদি পরকিয়া করে তো সে সমাজের চোখে কুলোটা, অসতী। আমি নারীর পরকিয়ার পক্ষে কথা বলছিনা। কিন্তু একজন স্বামী যখন ইচ্ছা মতো অন্য নারীর দিকে তাকাচ্ছে তাদেরকে নিয়ে নানা রসালো কথা বলছে, অথবা স্ত্রীর দিকে তাকানোর, তার সাথে কথা বলার সময় বের করতে পারছেনা  যে মহিলাটির ভেতরে ইসলামের বিন্দুমাত্র বিচরণ ঘটেনি, যার দিন শেষে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন কাজ থাকেনা সে মহিলাটি তখন পরকিয়ার দিকে ঝুঁকতেই পারে। তখন তার মনে হতে পারে যার কাছে আমার অস্তিত্বের গুরুত্ব আছে আমি তার দিকেই যাবো। যদিও সেখানে গেলেও তার সাথে একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি হতে পারে। যেখানে নারীর কোন করনীয় নেই সেখানেও সে দোষী যেখানে করনীয় আছে সেখানেও সে দোষী, প্রতিটি ক্ষেত্রে এভাবেই দিনের পর দিন তার অস্তিত্ব নিয়ে চলে নানা ধরনের বিতর্ক। এই ঘুণে ধরা সমাজকে বলতে চাই নারীর যথার্থ মূল্যায়ন করুন, কেননা এই নারীই কখনো আপনার মা, কখনো স্ত্রী আবার কখনো বা বোন, মেয়ে। এই নারীই আপনার মঙ্গল কামনায় সবসময় দোয়া করে।  এদেরকে মানুষ ভাবুন, শুধুই নারী ভেবে, তাদেরকে অন্যসব ব্যবহৃত জিনিস ভাববেননা। তবেই আপনিও নিজেকে মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ