
মানুষের জীবনটা বড় অদ্ভুত! একজন মানুষ কত শত মানুষের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। আর এই জড়ানোটা যেন তেন নয়। মা, বাবা, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী, অন্যান্য আত্মীয় স্বজন, বন্ধু, শুভাকাঙ্খী............... এই সবগুলো সম্পর্কের আলাদা আলাদা পার্ট থেকে যায়। এই জড়িয়ে যাওয়া মানুষটা যেদিন নিঃশেষ হয়ে যায় সেদিন প্রকাশ পায় অন্যদের অনুভূতি, আবেগ! কোথায় জড়িয়ে ছিলো সেই মানুষটা? একটা ঘরের কোন কোন অংশে তার হাত লেগেছিলো, কোন জিনিসটা সে পছন্দ করতো? কোথায় কিভাবে কথা বলতো? কার প্রতি তার বেশী দুর্বলতা ছিলো? স্মৃতির পশরা সাজিয়ে বসে অন্যরা।
অনলাইনের এই সময়ে ভার্চুয়ালী চলে তার স্মৃতির ভাগবাটোয়ারা। আমি ভাবছি আমিও চলে যাবো, ফেইসবুক, ব্লগ, ই-মেইলে যাদের সাথে জড়িয়ে গেছি তারাও হয়তো একদিন টের পাবে আমার অনুপস্থিতি, হয়তো নিজের মনে প্রশ্ন করবে এই মানুষটা এতোদিন নেই কেন? বড়রা বলে কী-ই আর বয়স? এখন এতো গম্ভীর গম্ভীর চিন্তার কী দরকার? আমি যখন বলি অনেক আগের একটা ঘটনা তখন নাইন কিংবা টেনে ছিলাম, পাশের মানুষটি হেসে বললো, তুমি এমনভাবে বলছো যেন তিরিশ চল্লিশ বছর আগের ঘটনা! আমি অবাক হই, মৃত্যুর কাছে তো এক বছরও যা, চল্লিশ বছরও তাই!
যখন কোন খুব কম বয়সী মানুষের মৃত্যুর কথা শুনি তখন আপনাতেই মন বলে ওঠে, আহারে কতো কম বয়সে মারা গেলো! কিন্তু আমরা এও জানি মৃত্যুর জন্য আলাদা বয়স লাগেনা। আমার এক ক্লাসমেট ছিলো মুক্তি নাম! ওকে যখন বলতাম,
-এই মুক্তি, নামাজ পড়োনা কেন?
ও বলতো,
- আমার নামাজের বয়স হইছে নাকী? বিয়ে করি বাচ্চা কাচ্চা মানুষ করে তারপর যতো ধরণের নামাজ আছে পড়বো, আর আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নেবো। ওর এই কথার প্রেক্ষিতে আমার সব ধরণের ভাষা হারিয়ে যেতো! তবে মনে মনে ভাবতাম ও এতো সহজ করে এই কথাগুলো কিভাবে বলছে? বয়সের কারণে আমারও ওর মতো করে ভাবতে ইচ্ছে করতো, ও সবসময় কতো ফুর্তি নিয়ে কথা বলতো!
অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ আলাদা, এই ব্যাপারটা আমি ওকে বুঝাতে সক্ষম হইনি। জীবনের এই যে জড়িয়ে যাওয়া সম্পর্কগুলোকে আমি যখনই শোধরাতে গেছি তখনই আমিই থমকে গেছি, মানুষ আমাকে ভূল বোঝে! আর মনে মনে ভেবেছি, বাহ! দারুণতো খুব সহজেই অন্যের চোখে কী করে ভূল প্রমাণিত হওয়া যায়!
তবে কিছু কিছু সম্পর্ক আছে যে সম্পর্কগুলো আপনাকে শুধু চোখে আঙ্গুল দেয়া শিখাবে, আপনার দুর্বলতাগুলো সামনে নিয়ে এসে আপনাকে কুড়ে কুড়ে খাবে, আপনার দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, তখনই আপনাকে বুঝতে হবে এই সম্পর্কগুলো শুধুই স্বার্থপরতার, শুধুই দায়বদ্ধতার, আপনার মৃত্যুর পরও এই সম্পর্কগুলো আপনার কিসে কিসে তাদের অংশ আছে, সেটা নিয়ে আগে কথা বলবে!
আর এক ধরণের সম্পর্ক আছে যে গুলোতে কোন স্বার্থ নেই, আপনার বিপদে তারা শান্তনা দেয়, আপনার ব্যর্থতায় আপনাকে খোটা না দিয়ে বরং উৎসাহ দেয়। আসলে এই অমূল্য সম্পর্কগুলো তৈরি হয় একটিমাত্র উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে, যার মাপকাঠি পরিমাপ করা কোন মানুষের সাধ্যে নেই, যার মাপকাঠি এতো বিশাল যে মৃত্যুর পর পর্যন্ত আখিরাতের কঠিণ মুহুর্তেও খুব খুব কাজে লাগবে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)