
ভারতের ছত্তিশগড়ে বন্ধ্যাকরণ অস্ত্রোপচারের পর যে ১৫ জন মহিলার মৃত্যু হয়েছে ও আরও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাদের ওপর প্রয়োগ করা ওষুধে বিষাক্ত পদার্থ ছিল বলে রাজ্য সরকার নিশ্চিত করেছে।
ছত্তিশগড় রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অমর আগরওয়াল জানিয়েছেন, তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ঐ ওষুধে জিঙ্ক ফসফাইডের অস্তিত্ত্ব ছিল যে রাসায়নিকটি ইঁদুর মারার বিষে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তবে এর ফলে অস্ত্রোপচারগুলো করেছিলেন যে চিকিৎসক, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খারিজ হয়ে যাচ্ছে না বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
ওষুধে বিষ, মানল সরকার
ছত্তিশগড়ে ১৫ জন মহিলার বন্ধ্যাকরণ-জনিত মৃত্যুর প্রায় দুসপ্তাহ পর এসে জানা যাচ্ছে, সরকারি স্বাস্থ্য শিবিরে তাদের যে সিপ্রোসিন-ফাইভ হান্ড্রেড নামে ওষুধ দেওয়া হয়েছিল তাতে ছিল ইঁদুর মারার বিষ।
ঐ ওষুধগুলির নমুনা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করার পর সরকারকে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তাতেই এই বিষাক্ত পদার্থের অস্তিত্ত্ব প্রমাণিত হয়েছে। ভারতের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের কাছে রোববার এ কথা স্বীকার করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অমর আগরওয়াল নিজেই।
মি. আগরওয়াল বলেন, ''আমরা সব রিপোর্ট পেয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। এখন এই রিপোর্টের ভিত্তিতে তারা তদন্ত করবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ওই ওষুধে বিষাক্ত রাসায়নিক ছিল।''
যখন তাকে নির্দিষ্টভাবে প্রশ্ন করা হয়, জিঙ্ক ফসফাইড ছিল কি না, তিনি বলেন বিষাক্ত পদার্থের মধ্যে ওটাও পড়ছে।
জিঙ্ক ফসফাইড কী?
জিঙ্ক ফসফাইড হল এক ধরনের রডেন্টিসাইড, অর্থাৎ ইঁদুর-জাতীয় প্রাণী মারার জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক। ইঁদুরের দেহের পাচনতন্ত্রের অ্যাসিড এই ফসফাইডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে তৈরি করে বিষাক্ত ফসফিন গ্যাস, যা তাদের মৃত্যু ডেকে আনে।
কিন্তু মহিলাদের বন্ধ্যাকরণের সময় ব্যবহৃত ওষুধে এই রাসায়নিক কীভাবে এল, তদন্তকারীরা এখন তারই উত্তর খুঁজছেন।
কিন্তু ওষুধে বিষাক্ত পদার্থ মিলেছে বলেই অভিযুক্ত চিকিৎসককে নির্দোষ বলা যাবে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সে কথা মানতে চাননি।
তাঁর যুক্তি হল, নাসবন্দী বা বন্ধ্যাকরণ অভিযানের জন্য সরকার যে মাপকাঠি বেঁধে দিয়েছিল, এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। ফলে স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজক ও চিকিৎসকের তরফে অবশ্যই দায়িত্বে অবহেলা ছিল – তারা এই অভিযোগ এড়াতে পারেন না।
বিষ-ওষুধ নির্মাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
অস্ত্রোপচারের সময় নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহের জন্য রাজ্যের একটি ওষুধ-নির্মাতা সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে এর মধ্যেই, তবে সেটা কেবল ৪২০ ধারায় – প্রতারণার অভিযোগে।
কিন্তু এখন তাদের ওষুধে ইঁদুর মারার বিষ মেলার পর অনেক শক্ত মামলা রুজু হবে বলেও সরকার কথা দিয়েছে।
কিন্তু ভবিষ্যতে রাজ্যে এমনটা আর কখনও হবে না, স্বাস্থ্যমন্ত্রী অমর আগরওয়াল কিন্তু সে কথা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না। তিনি বলছেন, ''ওষুধের মধ্যেই বিষ পাওয়া যাচ্ছে এটা তো সারা দেশেই বোধহয় প্রথম ঘটল। আমি তো অন্তত কখনও আগে এমন কথা শুনিনি।''
তাঁর কথায়, ''শুধু ছত্তিশগড়ের জন্যই নয়, গোটা দেশের জন্যই এটা নতুন চ্যালেঞ্জ। সরকারকে যে নির্মাতারা ওষুধ জোগান দেন, তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো ছাড়া কোনও উপায় নেই।''
ছত্তিশগড়ে এই সব মৃত্যুর খবর সামনে আসার পর জানা গিয়েছিল, মাত্র একজন চিকিৎসক চার-পাঁচ ঘন্টার মধ্যে ৮০ জনেরও বেশি মহিলার অস্ত্রোপচার করেছিলেন – তাও আবার একটি পরিত্যক্ত হাসপাতাল-ভবনে।
এখন জানা যাচ্ছে, ওই মহিলাদের দুর্ভোগ এতেই শেষ হয়নি। ওষুধ ভেবে তাদের খেতে হয়েছিল মারাত্মক ইঁদুর-মারার বিষও।
The news is collected from BBC Bangla.
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)