সাহিত্য

মুখোশের ভীড়ে সম্পর্কের গল্প গুলো

মুখোশের ভীড়ে সম্পর্কের গল্প গুলো
Vector illustration of comedy and tragedy theater masks with a red ribbon. ঈদের ছুটির আমেজ চারপাশে বিরাজ করছে। সকালে আসার সময় বেশ কিছু ঘর মুখো মানুষদের সাথেও দেখা হয়েছে,আবার ফেরার সময় হবে। বাহিরের সেই ছোঁয়া ভেতরেও লেগেছে বলা যায়!  অফিসে এসে চেয়ারে বসা মাত্রই অপজিটের কলিগ রিয়াদ ভাই বলল, - ম্যাডাম আপনি ছুটি নিয়েছেন? আমি ব্যাগ রেখে টেবিল সাজাতে সাজাতে মাথা নাড়লাম। আমি মানুষটা সব কিছুতে স্বচ্ছ ভাব পছন্দ করি,রোজ যাওয়ার সময় টেবিল গুছিয়ে যাই,কিন্তু প্রতিদিন এসেও আবার টেবিল টা যত্ন করে গুছিয়ে তারপর কাজ শুরু করি। আবার লাঞ্চ আওয়ারে বের হয়ে যাওয়ার সময়,এবং এসেও একই কাজ করি। মাঝে মাঝে আমার কাজ দেখে কলিগরা মজা করে খুব। ঈদের আর খুব বেশি দেরি নেই,তাই সবাই ছুটি নিয়ে খুব ব্যস্ত। কে আগে নিবে,আর কে পরে নিবে এই সবার মাথায় চিন্তা ঘুরছে! টেলিফোনটা বেজে উঠলো টেবিলে! সালাম দিয়ে বললাম, - হ্যাঁ লোপা'পু বলো। -ছুটি নিয়েছিস? -নাহ,আমার তো ছুটির স্টাইল সেই একই। আগে ১দিন আর পরে ১দিন। -তুই ই শান্তিতে আছিসরে! গ্রামে যাওয়ার ঝামেলা নেই! কথা বেশি বাড়াতে পারলাম না,ইনচার্জ স্যার ডেকে পাঠালো তাই! লাঞ্চ আওয়ারে কথা হবে বলে রেখে দিলাম ফোন। এবারের ঈদের ছুটিটা লোপা'পুর জন্য অনেক স্পেশাল বটে! বিয়ে বলে কথা! বাসায় ঢুকার সময় মালামাল শিফট করতে দেখলাম,বুকটা ধক করে উঠলো! তাহলে কি সত্যিই চলে যাচ্ছে? এমন সময় মাগরিবের আযান পড়লো,আমি দ্বোতালায় বাসায় ঢুকে সালাম দিয়েই আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম, -বাইরে মালামাল কাদের শিফট হচ্ছে? -কাদের আবার?৩ তলার। বলেই আম্মু শরবতের গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। আমি ধীরে ধীরে নিজের রুমে আসলাম। মনে হচ্ছে স্লো-মোশনের কোন রোবট হয়ে গেছি! মন চলে গেছে অন্য জগতে! খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আজকে আর কফি নিয়ে পিসির সামনে বসলাম না। ভালো লাগছে না কোন কিছুই,সব কিছুতেই কেমন যেনো বিরক্তি কাজ করছে! রুমের লাইট অফ করে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম,আকাশটা খুব স্বচ্ছ নীলে সেজেছে আজ,তার মাঝে হাসছে নতুন চাঁদ,মোহনীয় একটা পরিবেশ! ছাদে যাওয়া যায়। ৩তলার সিঁড়িতে গাছের টব গুলোর দিকে তাকিয়ে মনে হলো,কাল এগুলোকে ছাদে রেখে আসতে হবে। এখন আর রোজ এখানে কে পানি দিবে! আম্মুকে বলতে হবে,কাল যেনো এগুলো ছাদে পাঠিয়ে দেয়। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে চেয়ারে বসে অনেকটাই আনমনা হয়েছিলাম,তাই ভাবি কখন এসেছে ছাদে টের ই পাইনি! আমার চমকে যাওয়া দেখে খানিকটা হাসার চেষ্টা করে বললেন, -ঘরের মধ্যে বিরক্ত লাগছিলো খুব,তুমি ছাদে এসেছ তাই ভাবলাম আমিও আসি। -ভালো করেছো এসে! কথা বলা যাবে কিছুক্ষন। খানিকটা সময় চুপ থেকে আবার বললাম, - কি ঠিক করলে ভাবি? কি করবে এখন? ভাবি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন -আপাতত তাই করবো যা আর দশজন মেয়ে করে,সোজা বাবার বাড়ি যেয়ে উঠবো!তারপর দেখি চাকরী-বাকরী কিছু জুটাতে পারি কি না। -চাকরী টা তুমি এখানে থেকেও করতে পারতে,দেখোই না চেষ্টা করে। -নারে,এখানে থাকলে হৃদি-রায়ানের জন্য কষ্ট হয়ে যাবে। আর আশে-পাশের মানুষের সাথেও ওরা এডজাস্ট করতে পারবে না,বাবার বাসায় গেলে অন্তত ওদের কে রেখে আমি নিশ্চিন্তে কাজে যেতে পারবো। আমি একটু চুপ থেকে বললাম, -ভাবি,তোমার কি কোন একশন নেয়া উচিত না? -কার বিরুদ্ধে? আর একশন নিয়েই বা কি হবে?ফিরে পাবো কিছু? নারে,যা হারিয়েছি তা আর ফিরে পাবো না! হয়তো আমার ই কপাল খারাপ না হলে কেন এমন হবে?জীবনে কোনদিন তো কারো কোন ক্ষতি করিনি,কিন্তু আজ আমার এতো বড় ক্ষতি হয়ে যাবে তা যদি বুঝতাম!' বলতে বলতে ভাবি দীর্ঘশ্বাস ফেলল! আর আমি আবারো চুপ হয়ে গেলাম। কতো কিছুই তো বলতে ইচ্ছে করে,কিন্তু বলা আর হয় না,বলা যায়ও না। ৮বছর আগে যখন সুমা ভাবিরা আমাদের বাসায় শিফট হয়,তখন হৃদির বয়স ১বছর হবে। ভাবি আর শিমুল ভাইয়া যেদিন প্রথম আম্মুর সাথে কথা বলার জন্য এসেছিলেন,আম্মু ভেতরে এসে আমাকে বলেছিলো, -মাশাআল্লাহ,চমৎকার জুটি,কি সুন্দর আন্ডার্স্ট্যান্ডিং!দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। দীর্ঘ আট বছর ধরে দেখছি এদের কে।এদের টুনাটুনির সংসার কে। এর মাঝে রায়ান এলো,ভাবির পড়াশুনা শেষ হলো,হৃদি স্কুলে যাওয়া শুরু করলো। ভাবির সাজানো সংসারটায় প্রাচুর্য্য না থাকলেও সুখের কোন কমতি ছিলো না বলেই জানতাম। শিমুল ভাইয়ার ছোট ব্যবসাটা ধীরে ধীরে বড় হলো,সংসারে সব দিক থেকেই পূর্ণতা আসা শুরু হয়েছিলো ওদের,দেখতে দেখতে সুখে-দুঃখে এতো গুলো বছর একসাথেই কেটেছে আমাদের।  কিন্তু সেই সময় গুলো যে এভাবে কিছু স্মৃতিতেই আটকে যাবে কে জানতও?! প্রায় ৬মাসের বেশিই হবে শিমুল ভাই বাসায় আসে না,ফোনও করে না। ভাবি প্রথম দিকে খুব অস্থির হয়ে যেতো,বাচ্চারাও বাবাকে দেখার জন্য ছটফট করতো কিন্তু ধীরে ধীরে ওরা এখন অভ্যস্থ হয়ে গেছে। শিমুল ভাইয়ের এভাবে হঠাত বদলে যাওয়াটা সবার জন্য মেনে নেয়া অনেক কষ্টকর ই ছিলো বটে! যে মানুষটার মাঝে কোন দিন কোন অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি,সেই মানুষটা এতো বদলে যাবে কে জানতো?! নিজের ২য় বিয়ের খবরটা শিমুল ভাই নিজেই ফোন করে জানিয়েছিলেন। এবং খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলেছিলেন, সুমা ভাবিকে এখন আর তার সেভাবে ভালো লাগে না,তিনি এতোদিন ধরে ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড বিরক্ত এবং হতাশ ছিলেন এর ই মাঝে ঐ মহিলা তার জীবনে আসে এবং তিনি নতুন করে বাঁচতে শুরু করেছেন! বাচ্চাদের জন্য তিনি আগের মতোই খরচ ভাবির একাউন্টে দিয়ে দিবেন,তবে সুমা ভাবি যদি চলে যেতে চায় তাহলে যেনো বাচ্চাদের কে দাদার বাড়ি রেখে যায়। এক ঝাটকায় একটা টর্নেডো এসে যেনো সব তছনছ করে দিয়ে গেলো! ব্যাস,সেদিন থেকে বদলে গেলো সব কিছু,বদলে গেলো মানুষ গুলো। খবরটা শুনে আমি যখন সকালে দৌড়ে ভাবির রুমে এসেছিলাম,দেখলাম পারিবারিক এলবামটা সামনে নিয়ে ভাবি ঠায় বসে আছেন। টানা তিন দিন ভাবি কিছু বলতে পারেননি,কেবল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন। একটা সময় হৃদি-রায়ান কে বুকে নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন। রোজ মানুষ গুলোর মুখ দেখতাম আর ভাবতাম,এতো কষ্ট বুকে নিয়ে মানুষ কেমন করে বাঁচে? যাকে পুরো জীবন সঁপে দেয় আর সে ই যখন ছুঁড়ে ফেলে দেয় তখন কেমন করে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়া যায়? যায় সবই যায়,যাবে না কেন?মানুষ ই তো! সব সহ্য করার ক্ষমতা মানুষের অবশ্যই আছে,আর আছে বলেই এমন সীমাহীন কষ্ট আছে। মাঝে মাঝে নিজেকে দেখে অবাক হতাম!আমি এখনো অভ্যস্থ হচ্ছিনা কেন এসব দেখে?! আমার তো এতোদিনে একদমই সয়ে যাওয়ার কথা,এসব কি নতুন কিছু দেখছি? কিন্তু পারিনি! আমি অভ্যস্থ হতে পারিনি। কতোদিন রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার,মনে হয় কেউ কাঁদছে! হৃদি অথবা রায়ান কে দেখলে বার বার চোখ ভিজে উঠে শুধু! মাঝে মাঝে হৃদির মাথায় হাত রেখে খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে! এই ছোট্ট হৃদি যখন আরো বড় হবে,তখন ওর বুকে যে কতো বড় কষ্ট চাপা থাকবে তা কি শিমুল ভাই কখনো বুঝবে? বাবা যে সন্তানের জন্য কি,তার অভাব টা যে কতোটা প্রকট তা কি কখনো ভাবি পারবে পূরণ করতে?! ভাবির বাবার বাড়ি চলে যাবার সিদ্ধান্তটা শুনে আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো, সবাই এভাবে হার মেনে নেয় কেন? আবার মনে হলো,হার না মেনেই বা কি করবে? বেচারী একা একা কতো ফাইট করবে? আঙ্গুল তো বরাবরের মতো ভাবির দিকেই উঠেছে! 'নিশ্চয়ই জামাই কে সময় দিতো না,শ্বশুড় বাড়ির সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো না!আজকাল কার বউদের মতো খালি টিভি দেখতো আর শাড়ি-গয়না চেয়ে চেয়ে জামাইয়ের মাথা খারাপ করে দিতো! 'আরে তালি কি আর এক হাতে বাজে নাকি?এখন তো নিজেকে অনেক ভালো বলে মানুষ কে বলবে,কিন্তু এর জামাই কে জিজ্ঞেস করলে জানা যাবে আসল কাহিনী!' 'শুনেন,মুরুব্বীরা কি সাধে বলছেন,যে পুরুষ মানুষ হইলো,মাথার সিঁদুরের মতো একবার মাটিতে পড়লে আর উঠানো যায় না,সময় থাকতে জামাইয়ের মর্ম বুঝে নাই,এ জন্যই চলে গেছে আরেক জনের কাছে!' 'কি এমন অন্যায় করছে শুনি?বিয়েই তো করছে আরেকটা!আর এমন তো না বাচ্চাদের দায়িত্ব ফেলে দিছে,টাকা তো দিচ্ছেই,এই ই বা আজকাল ক'জন করে!' চারপাশের এমন হাজারো মন্তব্য শুনে মাঝে মাঝে আমি ভাবিকে বোকার মতো বলে বসতাম, -ভাবি তুমি কেন তোমার জীবনটা শেষ করবে?তোমার প্রতি ফিলিংস নাই বলে একজন তোমাকে ছেড়ে আরেকজনের কাছে চলে গেছে,তাহলে তুমি কেন একা একা তার বাচ্চাদের কে নিয়ে বাকী জীবন পার করবে? ভাবি ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতো, -আমি যে মা! মা কি পারে কখনো নাড়ি ছেঁড়া ধন ছেড়ে থাকতে? ওদের বাবা আমার সাথে অন্যায় করেছে,তার শাস্তি অবশ্যই সে পাবে,আমি এই জন্য তাকে মাফ করবো না কিন্তু আমি যদি চলে যাই আর আমার বাচ্চা গুলো যখন মন খারাপ করে,হতাশ হয়ে ঘরে আসবে তখন ওদের কে বুকে টেনে কে নিবে বল? আমি ওদের সুখ দিতে না পারলেও ওদের দুঃখ তো ভাগ করে নিতে পারবো! ভাবির কথা শুনে আমার তখন চোখ ভিজে উঠতো! রাব্বুল আলামীন কতো ভাবেই না মানুষকে বেঁচে থাকার অবলম্বন দিয়েছেন। সব কিছু নিয়েই মানুষ কে বেঁচে থাকতে হয়,সময় গুলো কে সাথে নিয়েই সময় পার করতে হয়। কিন্তু হৃদি-রায়ান কি বড় হয়ে পারবে,ওদের মা ওদের জন্য যা করেছেন তার উপযুক্ত প্রতিদান দিতে? নাকি অন্যদের মতো ওরাও বলবে, 'তোমারো নিশ্চয়ই দোষ ছিলো মা!' কখনো ভুলে যাবে না তো,ওদের মায়ের কথা!! সমরেশ মজুমদারের সেই উক্তিটা খুব মনে পড়ে, 'জীবন বড় মধুময় শুধু এই জন্য যে এই মাধুর্যের অনেকটাই স্বপ্ন আর কল্পনা দিয়ে গড়া।' ৪দিন পর অফিসে এসেই হাঁক ছাড়লাম,'এই হান্নান... জলদি ব্রাশ নিয়ে আসো,আমার টেবিল-চেয়ার ক্লিন করতে হবে!' ওপাশের টেবিলের আনোয়ার ভাই নিজের চেয়ার মুছতে মুছতে বললেন, - হান্নান মিয়া গোশত খেয়ে ভুলেই গেছে,যে নিতু ম্যাডামের চেয়ার-টেবিল ক্লিন করতে হবে!ওরে এবার ঈদের বকশিশ দেয়া হবে না!ঠিক আছে? আমি হাসতে হাসতে বললাম, - বকশিশ আর এখন কি দিবো বলেন?ঈদের আগেই তো দিয়েছি,এবার তা উসূল করবো। দুপুরের দিকে তেমন কোন কাজ নেই বলে সোশ্যাল সাইট গুলো তে ঢূঁ মারছিলাম,হঠাত জয়নাল ভাই আমার টেবিলের অপজিটে ফটোকপি মেশিনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, -নিতু ঘটনা কিছু শুনছো? আমি সালাম দিয়ে মাথা ডানে-বামে নাড়লাম! -কি ঘটনা জয়নাল ভাই? নতুন কোন রুলস আসছে নাকি অফিসে? -আরে না,ঘটনা আমাদের এক সম্মানিতা এমপ্লোয়ির। ঈদের ছুটিতে তার বিয়ের অনুষ্ঠান হইলো শুনলাম,এবং ইন্টারেস্টিং ঘটনা হলো,সে বিয়ে করতে যাকে তার আগে বউ এবং ২বাচ্চাও আছে! আমি কপাল কুঁচকালাম! আগে বউ-বাচ্চা আছে জেনেও ঐ লোককে বিয়ে করছে এমন ক্রিমিনাল আমাদের অফিসে কে আছে?!! - কি বলেন?আগে বউ-বাচ্চা আছে এটা কি মহিলা জানতো না? -জানবে না কেন?অবশ্যই জানে,ঐ ভদ্রলোকের সাথে নাকি বউ এর সেপারেশন চলতেছে,মানে ঐ বউ এরও নাকি এফেয়ার আছে!এখন ঐ ব্যাটা একলা,টাকা-পয়সাওয়ালা,এবং ইমোশনওয়ালাও বটে,ব্যাস মেয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো! আমার মেজাজটা ই এবার খারাপ হয়ে গেলো! এটা কোন কথা হইলো? দেশে কি আজকাল ছেলের অনেক আকাল পড়ে গেছে যে ঐ মেয়েকে একটা সেকেন্ডহ্যাণ্ড লোকের গলায় মালা পড়াতে হবে! - জয়নাল ভাই শুনেন,আরেকটা বিয়ে করার জন্য পুরুষরা সব সময়ই এমন কাহিনী ফাঁদে এটা নতুন কিছুই না,দেখেন যে প্রথম বউ এর আসলে কোন সমস্যা ই নাই,ব্যাটার মাথায় শয়তান চাপছে আর ঐ মেয়ে কে সে ইমোশনালী স্টুপিড বানাইছে আর কিচ্ছু না! আজকাল পরকীয়ার কাহিনী গুলো তো এমনই। -হুম,ইউ আর রাইট! ছেলে বলো মেয়ে বলো,সব গুলো এই সেইম কোন রিজন দেখায়ে আরেকজনের সাথে সম্পর্ক শুরু করে! বাট লোপার জন্য দয়াই হচ্ছে এখন! দেখতে-শুনতে মেয়েটা কোন দিক দিয়ে কম ছিলো বলো?অথচ কি একটা বিয়ে করলো!কি গ্যারান্টি আছে,যে এই লোক ওকে ছেড়ে চলে যাবে না? আমি অনেকক্ষন হতভম্বের মতো পিসির দিকে তাকিয়ে রইলাম!!! জয়নাল ভাই কার নাম বলল এটা??? লোপা আপু????? এটা কিভাবে সম্ভব! কিছুক্ষন পর আস্তে আস্তে নিজেকে স্বাভাবিক করলাম! যা হওয়ার হয়েছে,এগুলো নিয়ে মাথা ঘামিয়ে নিজের এনার্জি-টাইম নষ্ট করার কোন দরকার নাই! ইয়া আল্লাহ,কি সব মানুষ থাকে আশে-পাশে!বুঝাই যায় না যে এদের ভেতরে এতো কুৎসিত মানুষ থাকতে পারে! পরের দিন লাঞ্চে যেতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিলো,তাই অন্য ফ্লোরের কলিগদের সাথে বসতে হলো,যাদের মধ্যে লোপা'পুও আছে। আমি ইচ্ছে করে এক পাশে সরে বসলাম কিন্তু আমাকে দেখেই লোপা'পু হাসতে হাসতে দৌড়ে আমার পাশে এসে বসলেন, -আরে নিতু কেমন আছো?ভালোই হইছে দেখা হলো!দাড়াও আমার বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি দেখাই,ও হ্যাঁ শোন,বিয়ের স্টেজটা তোমার আইডিয়া মতোই সাজাতে বলেছিলাম,কিন্তু লোকগুলো পারেনি! কিছু না বলে মুখে একটা হাসি ঝুলালাম! আর মনে মনে নিজেকে ঝাড়লাম, -স্টুপিড দ্যা গ্রেট নিতু! আরেকজনের সংসার ভেঙ্গে নিজের সংসার সাজাচ্ছে আর তুই গেছিলি এই মাইয়া কে স্টেজের আইডিয়া দিতে! লোপা'পু একটার পর একটা ছবি দেখাতে লাগল,আমিও মুখে হাসি ঝুলিয়ে দেখতে লাগলাম কিন্তু হঠাত ই আমার হাসি বন্ধ হয়ে গেলো!! ৪৮০ ভোল্টেজের শকড খেয়ে আমি লোপা'পু কে জিজ্ঞেস করলাম - তোমার জামাইয়ের নাম কি? আপু লাজুক হেসে বলল, - শিমুল! মেয়েলি টাইপের নাম অনেকটা!তাই না? হিহিহি লোপা'পুর হিহিহি দেখে মুখে অনেক কষ্টে ক্ষীণ হাসি ফুটিয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়ালাম! তা দেখে আপু বলল, -আরে কই যাও?সময় আছে তো এখনো! শোন,তোমাকে একটা কাজ দেই,প্লিজ করে দাও না! আমার আর তোমার ভাইয়ার কিছু ছবি একটু এডিট করে দিবা?তুমি তো পারো এসব কাজ,একটু দাও না করে! আমার চোখ ফেটে তখন পানি আসতে চাচ্ছিলো!অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বললাম, -আমার পিসিটা এখন নষ্ট,ঠিক হলে আপনাকে বলবো! আমি এখন আসি,আল্লাহ হাফেজ। ডেস্কে বসে অনেকক্ষন দু'হাতে মাথা ঢেকে রইলাম। দুর্ভাগ্যবশত আমার আশে-পাশে কোন ফিমেল কলিগ নেই যে,কিছুক্ষন তার সাথে কথা বলবো! অসম্ভব ক্লান্ত লাগছিলো,মনে হচ্ছিলো আমি অনন্ত কাল ধরে কাজ করে যাচ্ছি! অনেক চেষ্টা করেও কাজে মনোযোগ দিতে পারলাম না দেখে দ্রুত ছুটি নিয়ে বের হয়ে আসলাম। কিন্তু রিকশায় বসে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না! ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম!খুব অবুঝের মতো মনে হচ্ছে, আমার জীবন টা এমন কেন?কেন আমাকে এসব এতো এতো দেখতে হয়?? আমার আর ভাল্লাগে না,আর ভাল্লাগে না এইসব মানুষ দেখতে! আমাকে কেন সুমা ভাবির কান্না সহ্য করতে হয় কেনই বা লোপা'পুর খুশী দেখতে হয়? মানুষ গুলো এমন কেন? এতো স্বার্থপর,আর মুখোশধারী হয় কেন? অফিস পাড়া পার হয়ে রিকশা আবাসিক এরিয়ায় ঢুকতেই অসময়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়,রোদের মাঝে বৃষ্টি হলে আমাদের দেশে বলা হয় 'খেশিয়ালের বিয়ে হচ্ছে'! 'বিয়ে' 'সম্পর্ক' গুলোকে নিয়ে আজকাল আর মাথায় কাব্য-গদ্য খেলে না! আজকাল আর মনে হয় না,'সম্পর্ক হচ্ছে একটা শক্তিশালী চুম্বক বিন্দুর মতো আর ভালোবাসা-মায়া হলো চুম্বকের আকর্ষন শক্তি।' একটা সম্পর্ক কে ঘিরে কতো কিছু গড়ে,আর আবার একটা সম্পর্ক কতো কিছু ভেঙ্গে ফেলে! মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অনেক বড় একটা এচহিভমেন্ট বোধহয় এটাই যে,সে সম্পর্ক তৈরী করতে পারে,ভালোবাসা দিয়ে মায়া-মমতা দিয়ে। আর মানুষের অক্ষমতার এচহিভমেন্ট হলো,সে সম্পর্কের ভালোবাসা-মায়াকে ঘৃণায় পরিণত করতে পারে। মাঝে মাঝে খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে!অনেক দূরে... আবার মনে পড়ে যায়,হিমুর সেই কথাটা, "মানব সম্প্রদায়ের সব সদস্যর একটাই আকাঙ্ক্ষা। হারিয়ে যাওয়া। সবাই হারিয়ে যেতে চায়। হারিয়ে যাবার মত জায়গাটা কোথায়!" জায়গা নেই কোথাও হারিয়ে যাবার। তাই ফিরে আসি রোজ,বারবার। সেই শহরে,যেখানে বৃষ্টির পানির সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়,শহরে হাজার মানুষের ভীড়ে থাকা অনেক না জানা নিতুর কান্না,সুমার দুর্ভাগ্যের অশ্রু!

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন