বিবিধ

একান্তই নিজস্ব রান্না বিষয়ক দর্শন

একান্তই নিজস্ব রান্না বিষয়ক দর্শন
imagesXE6VD7AJ আমি রান্না বান্না নিয়ে প্রচুর ভাবি ।ক্লাস ফোর থেকেই ভাবি । কাজের কাজ খুব কিছু না হলেও ভাবনা অব্যাহত আছে - থাকবে । ব্যপারটা এমন না যে মেয়ে হয়ে জন্মেছি - রান্নাবাটি জিনিসটা আমার মজ্জায় প্রোথিত আছে , খুব ভাল হতেই হবে । অনেক ভাল রান্না করাটা আমার কাছে গান কবিতার মতই একটা প্রতিভা । এক রকমের মেধা । সবার সেই মেধা সমান রকম থাকেনা । আম্মু প্রতিদিন ভোরবেলা ভাত তরকারী রেঁধে অফিসে যেত । আমি চুলে ক্লিপ লাগা...তে লাগাতে অনেক দিন ভেবেছি , আজই সেই দিন । কেউ কিচ্ছু টের পাবেনা , আন্দাজও করতে পারবেনা কিন্তু বাসায় ফিরে কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে ভাববে , `বাসায় কোন পরী টরী এসেছিল নাতো ! `আর  আমি মুখ লুকিয়ে খুক খুক করে হাসব ! বিটিভিতে তখন খাদ্যের পুষ্টিমাণ রক্ষায় করনীয় ধরণের একটা অনুষ্ঠান বেশ ঘুরে ফিরে  দেখাচ্ছিল যেখানে  শাকের পাতা কুচি কুচি না করতে  কিংবা আলুর খোসা না ছিলতে উৎসাহ দেয়া হচ্ছিল । এতে খাদ্যের পুষ্টিগুণ অধিক পরিমাণে সংরক্ষিত হয় । আমি  সঙ্গত কারণেই পেলাম বিপুল উৎসাহ । সবে মাত্র একটু একটু চুলা ধরানো শিখেছি । ডিম -আলু সিদ্ধ করতে জানি  । বটি ধরা শিখিনাই । ছুরি দিয়ে কাটাকুটিও শিখিনাই ।  অবশ্য এখানে কাটাকুটিরও তেমন কিছু নাই । খাদ্যের পুষ্টি বলে কথা ! ছয় সাতটা ম্যাচের কাঠি পোড়ানোর পর সাফল্য এলো ।  কড়াই চাপিয়ে তেলের ওপর জাস্ট চারভাগ করা পেঁয়াজ ছাড়লাম । বেশ করে ধুয়ে প্রায়  কেজি হিসেবে খোসা সুদ্ধ আলু ছাড়লাম ,  এবার  কয়েকটা চ্যাটকানো সেদ্ধ ডিম এবং হলুদ লবণ দিয়ে বেশ করে ঘুঁটে দিলাম । একবার অবশ্য ভেবেছিলাম যে পেঁয়াজের খোসা  ছাড়াবো না - কিন্তু পরেই  মত বদলে ফেললাম । থাক , কি হবে এত পুষ্টি দিয়ে ! ছোট ভাই বোনগুলিকে দুপুরবেলা একটু চেখে দেখতেও দেইনি । রাতে আম্মু আব্বু এলে দেব সারপ্রাইজ ! ট্যাট ট্যা ড্যা ! আব্বু বলবে ,` আমার মেয়েটা তো ভীষণ গুণবতী ! বুদ্ধি করে আবার আলুর খোসাও ছাড়ায়নি । ` আমি কিন্তু ভুলেও বলবনা যে , বিটিভি আমাকে এই বুদ্ধি দিয়েছে ! খুব কায়দা করে চেপে যাব । বিকেল বেলা বরাবরের মত বিনা নোটিশের মেহমান নিয়ে আব্বু চলে এল । আমি এখনো জানিনা কারা ছিলেন তারা । দরজার ওপাশ থেকে দুরু দুরু বক্ষে শুধু খুক খুক করে হাসির আওয়াজ পেয়েছি । বেশী উচ্চ কণ্ঠে খুক খুক ছিল আব্বুর । বাসন পত্র রান্নাঘরে রাখতে এসে আব্বু আলুর গাদা গাদা খোসা গার্বেজে ফেলে আর মুখ লুকায় আর খুক খুক করে হাসে । এই ধরণের কাজ আজ অবধি আমি করি ।  আশে পাশে দেখি , চেষ্টা করি , আশায় বুক বাঁধি । আশা ভঙ্গ হয় , হতাশায় নিমজ্জিত হই , আবার দেখি , আবার চেষ্টা করি । রান্নার ব্যাপারে আমার অবস্থা কিছুটা সেই সমস্ত  সঙ্গীত প্রেমীদের মত যাদের গানের জন্য ইচ্ছা চেষ্টা আছে কিন্তু গলাটা সেরকম না । সারা জীবন হারমনিয়ামে টিং টিং ,পিড়িং পিড়িং গিটার , উস্তাদজীর কাছে গান শিখন সবই ঠিক আছে কিন্তু যেইটা দরকার সেইটাতে জিনিস কম আছে । সে জন্যই চেষ্টা চলে আর কি । আমি রান্না করতে পছন্দ করি ।এটা নিয়ে ভাবাভাবি করি । কিন্তু এটা আমার মূল প্যাশন না । সাইড । শাহাদাত উদরাজী ভাইয়ের মত রান্নার মেধা আছে নিজের ভেতর এটা টের পেলে অবশ্যই প্যাশনের প্রায়োরিটি চেইঞ্জ হত । অসাধারণ কিছু সব সময় হাত দিয়ে হয়ত বেরোয়না , তবে মাঝে মধ্যে ভুল করে ভাল একটা কিছু  যখন হয় , তখন খুশীতে আমি মুখ লুকিয়ে কেবলি খুক খুক করি।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ