
বিবিধ
বুড়ি বালিকা

বুড়ি বালিকা…
সেই রমজান মাসে ঈদের চাঁদটা একটু আগেভাগেই উঠেছিল মনে হয়, সেই চাঁদটার একটা টুকরা আল্লাহ রেখে দিয়েছিলেন। সেই সাথে আমার আত্মার অর্ধেকটা, আমার কলিজার অর্ধেকটা। এই সবগুলো আল্লাহ তোর মধ্যে পুরে দিয়ে তোকে দুনিয়ায় পাঠালেন। আম্মুর কোলে করে গোলাপি রঙের চাইনিজ চেহারার কি মায়াকাড়া একটা মেয়ে পুতুল হয়ে এসেছিলি তুই! আম্মু বললো তুই নাকি আমার বোন, আমি বললাম এটা তো পুতুল! খেলার পুতুল! মানুষ বলে জীবনসঙ্গী নাকি কাউকে কমপ্লিট করে। কিন্তু আমার কেবলই মনে হয় তুইই আমাকে কমপ্লিট করে দিয়েছিস!
.
খালি তোকে কোলে রাখতে চাইতাম কারণ তোর সাথে থাকতো একটা বেহেশতি আতরের মিষ্টি সুঘ্রাণ (এখনও আছে!) যেটা নাকে লাগলেই আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসে... শীতকাল ছিল বলে তোকে শীতের জামাকাপড়ে মুড়ে রাখতাম আর বলতাম “প্যাকেট করা বেবি”। বুড়ি বলেও ডাকতাম তোকে, একটু রাগী বাচ্চা ছিলি কি না! কথা বলা শেখার আগে ধমক মারা শিখেছিলি তুই… :D কেউ তোর কিছু ধরলে ধমকের সুরে বলতি “অপপপপপপ্!!” হাহাহা...
.
একটু বুঝ হবার পর তুই অনুধাবন করলি তোকে প্রায়ই “পিচ্চি বুড়ি” “কুটুস বুড়ি” প্রভৃতি বলে ডাকা হয়। ব্যাস তোর ক্ষ্যাপা শুরু হয়ে গেল। তুই তো বুড়ি না, তুই বেবি! ছোট্ট বেবি! বুড়ি বললেই তেড়েমেড়ে ছূটে আসতি। আব্বু যখন প্রায়ই কথার শেষে তোকে মামনি বলে ডাক দেয় আমি তোকে খোঁচানোর জন্য বলি “দেখলি, বাবা তোকে মা ডেকেছে, তার মানে বাবা তোর পেট থেকে হয়েছে, তার মানে তুই কত্ত বুড়ো মানুষ, আমাদের সবার মুরুব্বী”। আর সাথে সাথে তুই আব্বুর কাছে যাস বিচার নিয়ে, “আব্বু আমাকে তোমার বেবিমেয়ে বলো! বলো! এক্ষন বলো! আদর কর! কোলে নাও!...ইত্যাদি”। যদি জিজ্ঞাসা করি “এই, তুই ‘জাদুমনি’, নাকি ‘দাদুমনি’ রে?” তুই চিৎকার দিয়ে প্রতিষ্ঠা করিস যে তুই জাদুমনি।
.
এখন তুই ক্লাস ফাইভে উঠে গেছিস তাও সেই বিল্লি বাচ্চার মতোই রয়ে গেছিস। খালি আমার বিছানাটাতেই গুটিসুটি মেরে শুলে তোর ঘুম আসে, কী জ্বালা... অবশ্য তুই আমাদের সবচে পছন্দের কোলবালিশ :D
আমার দেখা সবচে শুভ্র সফেদ মনের বাচ্চা তুই। আব্বু আম্মুর সব ভালো দিকগুলো আল্লাহ তোর মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ্! সেই সাথে অসম্ভব মায়া। পরিচিত একজনের সদ্য জন্মানো বাচ্চার হার্টের অপারেশন হবে, গতকাল সেটা শুনে নামাজ পড়ে কেঁদে কেঁদে বাচ্চাটার জন্য দোয়া করলি। আদুরে বুড়িটা, এত্ত মায়াবতী তুই...
বই পড়তে পছন্দ করিস, মোটা মোটা কত্তগুলা বই শেষ করে ফেলেছিস... আবার সব বাচ্চা যখন টিভিতে কার্টুন দেখে, তুই দেখিস রান্নার অনুষ্ঠান! বুড়ি কি আর সাধে বলি!
যাই হোক বুড়ি তুই তো আরো বুড়ি (মানে আরো বড়) হয়ে যাচ্ছিস। যদি এমন হতো বুড়ো হওয়ার আগ পর্যন্ত তুই এমন শিশুই থেকে যেতি, সবার আদর কাড়তে থাকতি!! শৈশব আর বার্ধক্যের মাঝে সময়টা অনেক কলুষতাময়... আমার নিশিদিন প্রার্থনা তোর জন্য, কোন কলুষতা যেন তোকে দূরতম স্পর্শও না করতে পারে...
.
[আমার ছোট বোন লাবিবাকে কল্পনা করে লেখা, তবে শেষের দোয়াটা সব ছোট্ট বোনগুলোর জন্য!]
ছবিঃ লাবিবার ছোটবেলার

আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)