পরিবার ও আমি (বিয়ে ,দাম্পত্য,শিশু লালন পালন )
আমাদের সাদাক্বা

আমাদের একটা ব্যাঙ্ক আছে। ইয়াতীম হিসেবে ইয়াতীমদের কথা মাথায় রেখে প্রতি সকালে বাচচাদেরকে নিয়ে আমি একটা সাদাক্বা কার্যক্রম চালাই। কেননা, ইয়াতীমের মাথায় যে হাত রাখে, আল্লাহ তায়ালার হাত তার মাথার উপর রাখাটাকে আল্লাহ নিজের জন্য ফরয করে নিয়েছেন। (এটা সম্ভবত হাদিস, যার অথেন্টিসিটি আমার এখন আর মনে নেই। আমি ইসলামী স্কলার না, কাজেই অথেন্টিসিটি নিয়ে বাধ্য না হলে আমি মাথা ঘামাই না। প্রতিটা সুন্দর কথাই আমার কাছে আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে আসা হিকমতস্বরুপ।) যা'ই হোক,সকালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েন বা নোট নিয়ে আমরা বসি। বাচচারা গত কয়েকবছরে জেনে নিয়েছে সাদাক্বা মানে কি। সাদাক্বা মানে হলো আল্লাহকে খুশি করার নিয়্যতে যে দান করা হয়। বেশ কিছু টাকা জমলে আমরা সেসব দিয়ে দিবো ইয়াতীমদের দেখাশোনার জন্য, তাদের খাওয়া-পরা লেখা-পড়ার জন্য। বাচচারা জানতে চায়, ওদের মা-বাবা নেই কেন। আমি বলি, সবার মা-বাবা থাকে না। কারো কারো মা-বাবাকে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী থেকে নিয়ে যান আল্লাহ্র কাছে। ওরা জিজ্ঞেস করে কেন আল্লাহ নিয়ে যান। আমি বলি যে, যেহেতু আল্লাহ তায়ালাই মা-বাবাকে বাবুদেদেরকে বানিয়েছেন, তাই কখন উনি কাকে নিয়ে যাবেন ওনার কাছে, সেটা ওনার ইচ্ছা। তাছাড়া আল্লাহ তায়ালা দেখতে চান যে, আমরা যারা দুনিয়াতে আছি, তাদের মধ্যে কারা কারা ইয়াতীমদেরকে ভালোবাসে, আদর করে। ইয়াতীমদের মা-বাবা নেই, কাজেই আল্লাহ চান যে, তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব আমরা সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নেই। প্রতিবারেই ওদেরকে বলি সাদাক্বা করলে আল্লাহ তায়ালা কি কি পুরষ্কার দেন। আমরা যা কিছু খারাপ কাজ করে ফেলি বেখেয়ালে, অসাবধানেও, সাদাক্বা করে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করলে সেই আল্লাহ তায়ালা আর আমাদের উপর রাগ করেন না। আমাদেরকে শাস্তি দেন না। আমরা ভালো যা কিছু চাইবো, আল্লাহ তায়ালা খুশি হয়ে একদিন সেসব দিবেন, বা তার চেয়েও ভালো কিছু দিবেন। আর, আমাদের যত বিপদ, অসুখ-সেসব থেকে আমাদেরকে মুক্তি দিবেন। প্রতিদিন একই কাজ আর একই কথা রিপিট করার ফলে ওরা মুখস্থ করে নিয়েছে, সাদাক্বার প্রতিদান কতগুন বেশি। হতে পারে দ্বিগুন, দশগুন, সাড়ে সাতশ' গুন, এমনকি, আল্লাহ তায়ালা অসীম দয়ালূ আর বেশুমার দান করতে কার্পন্য করেন না বলে সাদাক্বার প্রতিদান হিসাব করে বের করা প্রায় অসম্ভব। বাচচারা অবশ্যই বুঝে না, ২ গুন, ১০ গুন বা ৭৫০ গুনের অর্থ, একদিন হয়তো বুঝবে, তখন ক্বুরআন আর হাদিসের এই কথাগুলোর অর্থ বুঝে বিস্মিত হয়ে যাবে, আর তখন নিশ্চয়ই তাদের মায়ের কথা মনে করে দোয়া করবে যে আমার হয়তো খুব বেশি নেকী অর্জনের সামর্থ্য ছিল না, কিন্তু এইসব ছোটখাটো রুটিন শিক্ষার জন্যই আল্লাহ যেন তাদের শিক্ষককে উত্তম প্রতিদান দেন। বাচচাদেরকে নিয়ে আমার এই একান্ত কার্যক্রমের কথা বললাম এজন্য, যে, কেউ না কেউ যদি অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের সন্তানদেরকে বা শিশুদেরকে শেখান, আল্লাহ তায়ালার অসীম দয়ায় হতেও পারে যে, সেই নেকী পৌছে যাবে আমার কাছে। অন্যেদের নেক আমলে অংশিদার হওয়ার বড়ই শখ আমার, কেননা নিজের নেকী অর্জনের সামর্থ্য আমার খুবই কম।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)