সাহিত্য

বিয়ের বাজারে ঝুনুর দাম উঠেছে বিশ(২০)লাখ

বিয়ের বাজারে ঝুনুর দাম উঠেছে বিশ(২০)লাখ
বিয়ের বাজারে ঝুনুর দাম উঠেছে বিশ(২০)লাখ marriage_biye প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার আগেই হাজেরা আপা হাস্যুজ্জোল বদনে কানে কানে পিস পিস করে বলে গেলেন , “পারভীন আপা ,যাবার সময় আমার বাসায় আমাকে একটু সময় দিয়ে দুটো কথা শুনে যাবেন”। আমি ভেবেছি, হাজেরা আপার ,হাজার হাজার তুষার কনা জমা হওয়া বরফের সতুপের মত দুঃখের স্তুপের উপর আর কিছু হয়ত নতুন করে দু;খ জমা হয়েছে ।আজো মনে করেছি অন্য সময়ের মত কিছু সংখ্যক জমা হওয়া কিছু দুঃখ বলবে আর পাহাড়ের ঝর্নার মত কিছু লোনা জল দুই গাল ভাসায়ে প্রবাহিত হয়ে মিলিত হবে ধৈর্যের অধৈই সাগরে।অন্তরের গভীরে রাখা ভালবাসা দিয়ে পাহাড়ের ঝর্নার পাশের ফুলগুলোর মত ধৈর্যের পরামর্শ সহ নানা ভাবে কথা বলে আপার মুখে হাসি ফুটায়ে আলহামদুলিল্লাহ বিদায় নিতে হয়।আজ দেখি সব উলটা ।প্রথম সব শুনে বুঝেছি আজ আপা খুব কঠিন কোন সিন্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন তাই আমার সাথে শেষ আলাপ টা করতে যাচ্ছে।আমি আল্লাহর সাহায্য চেয়ে খুব ধৈর্য্য সহকারে আপার অনেক কথা শুনলাম। আমাকে আপা এরপর বললেন“পারভীন আপা,ঝুনুর জন্য বিয়ের অনেক প্রস্তাব আসছে।এর মাঝে একটা বড়লোকের ছেলে।৪টা প্লাটের মালিক।ছেলেও বাপের এক পোলা।বাবা মারা গেছেন।মা ছেলে এক প্লাটে থাকে আর একবোন কেনাডার বড় ডাক্তার।আর বাকী ৩ প্লাট ভাড়া দিয়ে পায় এক লাখ বিশ হাজার। আলহামদুলিল্লাহ,আমি শুনে মহা খুশি।ঝুনু মামনি কোটিপতির বৌ হবে।আমি মনের আনন্দের সাথে জানতে চাইলাম হাজেরা আপা, ছেলে কি করে? আপা,ছেলে বড়লোকের ছেলে তাই তেমন কিছু করে না।মা বাসা ভাড়া উঠায় আর বাজার সদাই করে এই আর কি?ছেলে পড়া লেখা এইচ এস সি পাস।জন্ম ১৯৭৮ সালে।ছেলে সহজ সরল তাই বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে নেশাপানি এখন আর আগের মত খায় না।মাঝে একবছর মাধক হাস্পাতালে ভর্তি ছিল।এখন মাকে বলেছে বউ পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।মা ছেলে ঝুনু কে দেখে পছন্দ করেছে তাই প্রায় আসে ঝুনুকে দেখতে।এখন ঝুনুর মামা বিশ লাখ টাকা মোহরানা চেয়েছে।ছেলের মা বলে বিয়ের পর দেবে আর মামা বলে বিয়ের আগে নাকি মোহরানা দিতে হয়।আপা আপনি বলেন তো ঠিক কিনা?মেয়ের পক্ষ কি এত কঠিন হতে পারে আপা? আমার মনে হল আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে।তাই কি উত্তর দিব দিশা পাচ্ছিলাম না।কারন ঝুনু যেমন সুন্দরী তেমনি তাকওয়াবান পর্দানশীল ও অনার্স এর ছাত্রী।ইসলামী আন্দোলনের একজন নমনীয় কর্মী।বাবা ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী তাই স্টাপ কোয়াটারে থাকেন।ছয় ভাইবোন।কেউই অশিক্ষিত নয়।সেখানে এই মেয়েটার জীবন নিয়ে অভিভাবকরা এটা কোন খেলতামাশা শুরু করছে।ঝুনু জানে কিনা জিজ্ঞাসা করলাম? আপা জানালেন ঠিক ঠাক হলে সব পরে জানাবে।কারন ছেলে তো মেয়ে দেখে তার সাথে কথা বলে গেছে। মেয়েটার অপরাধ কি? মেয়েটি বাবা মায়ের সন্মান রক্ষার্থে কোন ছেলের দিকে না তাকায়ে পড়া লেখা আর ইসলামের মাঝে নিজেকে বড় করেছে।বাবা সামান্য বেতনের যেভাবে চালিয়েছে সে ভাবেই বড় হয়েছে এটাই কি মেয়েটার অপরাধ?মা বাবা বা আত্নীয় স্বজনরা ঝুনুকে যেখানে দিবে ঝুনু সেখানেই মুখ বুঝে চুপ করে জাহান্নামের আগুনে পুড়ে পুড়ে সংসার করবে।কারন অভাব দারিদ্রতা তাকে বোবা হতে শিক্ষা দিয়েছে।চার প্লাটের প্রাচীরের মাঝে একটা মেয়ের আত্তা নিরবে কেদে কেদে একটা বেকার চাচা/মামা বয়সের নেশাগ্রস্থ্য উম্মাদস্বামীর অত্যাচার সহ্য করে যেতে হবে যুগের পর যুগ।যা হয়ত বাংলার হাজার ঝুনুরা সহ্য করে থাকে।তাদের চেহারা চোখের চাহুনি বলে দেয় তাদের হৃদয়ে লুকিয়ে রাখা করুন মর্মম ব্যাথা।ঝুনুর মা বাবা আত্নীয় ও বান্ধুবীরা দেখবে ঝুনু হাজার হাজার টাকা দামের শাড়ি আর গহনা পরে কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে কোটিপতি স্বামীর সাথে য়ানন্দে দিনাতিপাত করছে।বনের পশুরাও ঝুনুর চেয়ে অনেক সুন্দর ওআনন্দে আছে।তা কি কেউ ভাবছে? ছেলেরা কেন এমন হয়? একটা ছেলে একটা বীজের মত ছোট থেকে যদি সোজা ইসলামের কালচারে যদি বড় হয়ে বেড়ে না উঠে তা হলে সে তার চার পাশের অনেকের ক্ষতির কারন হয়ে দাড়ায়।যেই ক্ষতির শিকলের মত একটার পর একটা র সাথে শুধু নিজেকে জড়ায়ে সবাইর জীবনটা জাহান্নাম করে দেয়।তার কারনে তার বাবা মা ভাই বোন আত্নীয় স্বজন এর তার স্ত্রী বাচ্ছা কেউই নিস্তার পায় না।পোচা আলুর দুর্গন্ধ বস্তার মত কুসন্তানের দুর্গন্ধ পরিচয় কেউ বহন করতে চায় না।মা বাবা যেখানে পরিচয় দিতে চায়না সেখানে একজন স্ত্রী কিভাবে দিবে?ঝুনুর সাথে একা কথা বলে তার মনের কথা হল সে এখানে এই পরিচয়ের স্বামীর চেয়ে একজন রিক্সাও্যালা পরিচয়ের স্বামী অনেক ভাল।ঐ দালান কোঠার চেয়ে গাছ তলায় থাকা অনেক শান্তি। াল্লাহর সাহায্য চেয়ে ঝুনুর জীবন বাচানো অভিযান শুরু করলাম; দ্বীনি বোনদের জীবনের অনেক সমস্যা যখন আমার সাথে শেয়ার করে তখন নিজের জীবনের সমস্যার মত কষ্ট পেতে থাকি ।কারন এই বোনেরা আমার শরীলের অঙ্গের চেয়েও আমার নিকট প্রিয়।তাই আল্লাহর রহমতে আমার সাধ্যের ভিতরে হলে আর কাউকে শুনাইনা ।আর না পারলে আমার প্রান প্রিয় জীবন সাথীর সাথে শেয়ার করে তাকে হাতে নিয়ে বোন্টির জন্য ছুটে যাই।ঝুনুর বেলায় তাই সাহেব কে নিয়ে গেলাম তার মা বাবা কে বুঝাতে।মা বাবা ধরলেন ছেলে কে আর ছেলের মা কে বুঝাতে।ঝুনুর মা বাবা মামা সহ সেখানেও গেলাম। ঘটকেও আনা হল।আল্লাহ ঘটক দেখি ঝুনুদের বাসার পাশের মসজিদের ইমাম।উনাকে দেখে দেখে খালি জিজ্ঞাসা করলাম হুজুর বর্তমান সরকারের সময় দ্রব্যনুল্যের উর্ধ্বগতি দেখে কি আপনার দাও্ইয়াত খাওয়া কম হচ্ছে নাকি?এই ভাবে উলটাপালটা সম্পর্ক করার চিন্তা ইসলামের কোন আলোকে করলেন?হুজুর বুঝতে আর বাকি নেই কাজ টা যে ভুল হয়েছে।ছেলের মা তারিখ করার জন্য খুব ব্যস্ততা দেখাচ্ছেন।ঝুনুর মামা শক্ত ভাবে আবার বিয়ের বাজারে ঝুনুর দাম উঠেছে বিশ(২০)লাখ তা তুলে ধরলেন ওবিয়ে পড়ানোর আগে বা মেয়ে তুলে দেবার আগে দিতে বলল।এতে ছেলে আর তার মা বললেন ,মোহরানা মেয়েরা বাসর ঘরেই মাফ করে দেয়।তিনিও উনার স্বামীকে দিয়েছেন।বাংলাদেশে এটাই নিয়ম ইসলামের। আমি হুজুরকে বললাম,হুজুর মোহরানার উপ্র ইসলামের নিয়ম বলেন আপাকে।হুজুর বললেন,আদম হাওয়া আ;সময় আল্লাহ মহরানা হিসাবে ১০বার দুরুদ পাঠ করতে বললেন।হুজুরের হাদিস শুনে ছেলের মা মহা খুশি দেখে আমি বললাম “হুজুর আপনি প্রথম নবীর কাছে কেন গেলেন আর কোন হাদিসে তা আছে বলেন ?আপনি শেষ নবীর উম্মত ও ইমাম সেই হিসাবে কোরান সুন্নাহর আলোকেই বলেন তিনি চুপ দেখে সাহেব আইঞ্জীবি হিসাবে মুসলিম ল বললেন আর ছেলের মা রেগে গেলেন।আর বললেন আমার ছেলে বেকার আমি তার নামে একটা প্লাটও দেই নাই।আপনারা কি কোরবানের গরুর মত মেয়ে বিক্রি করতে এসেছেন।এতও টাকা মোহরানা বাংলাদেশে কোন মেয়ের হয়েছে। আমি তখন বললাম, আপা শুনেন ,আমিও ছেলের মা।কিন্তু আমি আমার ছেলের জন্য্ও মেয়ে দেখতে পারি নাই।আমার কাছে মনে হয় আমার ছেলের চেয়ে মেয়েদের তাকওয়া যোগ্যতা যদি বেশি হয় তা হলে ঐ মেয়েটার প্রতি এটা জুলুম হবে।আপনি কি মনে করেন আপনার ছেলেটা ঝুনুর মত নামাজী বা ইসলামিক।ইসলাম তো মুমিন ছেলের জন্য মুমিন নারী আর মুমিন নারীর জন্য মুমিন ছেলে নিদিষ্ট করেছেন।আর যেই ছেলে কে আপনি ৪টা ফ্লাটের মধ্যে একটা ফ্লাট দেওয়ার মত বিশ্বাস রাখতে পারেন না সেখানে একটা মেয়ে অন্যের বলে তা কোন বিশ্বাসে দিচ্ছেন।উনারা মেয়ে দেবে না তাই উলটাপালটা মোহরানা চেয়েছে।আপনি তাতে রাজি না বলে মানা করে দেন। আলহামদুলিল্লাহ । পরের দিন আপা আমাকে জানালেন ছেলের মা জানায়েছে তিনি ছেলে বিয়েই করাবেন না। এই ভাবে আল্লাহ ঝুনুর জীবন কে রক্ষা করলেন। আমার দুঃখ হল , মেয়ের মামা কে আমি যখন বললাম ,আপনি এই টাকা দিয়ে করবেন মেয়েটা যদি সুখি না হয় । তিনি আমাকে বলেন সুখি না হলেও ঐ টাকা দিয়ে মেয়ের বাকি জীবন চলে যাবে । আমি অভাক হয়ে গেলাম । কি ভাবে মানুষ দুনিয়ার ধন সম্পদের কাছে এই ভাবে নিজের বিবেককে বিক্রি করে দিতে পারে । আর মেয়ের মা বাবা কিভাবে মেয়ে বলে তাকে আইয়্যামে জাহিলিয়াতের মত জীবন্ত কবর দিতে গেল । মোহরানা যে একটা মেয়ের কত বড় হক তা অনেক পুরুষ বা মহিলা জানে না । মহিলারা প্রথম রাতে ভয়ে লজ্জায় পুরুষ মাফ চায় আর ভিক্ষুকের ভিক্ষার মত মাফ করে দেন । এই শেষ হয়ে গেল । এই ভাবে বহু মেয়েকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয় । আর হুজুররা এই বিষয়ের উপর কখন খুতবা দেন না । কারন নিজেও হয়ত না দিয়ে সেরে যাচ্ছেন

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)