বিবিধ

...............

...............
  গতবছর মার্চ, এপ্রিল এই দু মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সমাজকর্ম সাবজেক্টের অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ফিল্ড ওয়ার্ক চলছিলো। মোট ষাট দিনের কর্মসূচী। আমাদের গ্রুপে আমরা দশজন ছিলাম। সেখানে আমাদের কাজ ছিলো রোগীদের খোঁজখবর নেয়া, তাদেরকে ঔষধ বিতরণ, তাদের নাম তালিকাভুক্ত করণ ইত্যাদি। এই সূযোগে অনেক ধরণের রোগীর সাথে পরিচয় হয়, কথা হয়, যোগাযোগ হয়। সেখানে এমনও একজন রোগী ছিলো যে স্ত্রীর লাথি খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি, অবশেষে এক বৃষ্টিমূখর দিনে তাঁর প্রাণ চলে যায়, ব্যাপারটা শুনে আমরা হেসেছিলাম কিন্তু আমার ভাবনায় সে ঘটনা অনেকদিন ছিলো, ভাবতাম কী করে সম্ভব! বার্ণ ইউনিটে ঢুকলে দম বন্ধ হয়ে আসতো, একএকজনের আহাজারী শুনলে কষ্টে ভেতরটা কেমন চিনচিন করে উঠতো! আই সি ইউ এর পিনপতন নিরবতা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দিতো, রোগীদের নিঃসাড় দেহ দেখে মনে হতো সবাই বুঝি মরেই পড়ে আছে! আই সি ইউতে এমনই একজন রোগীকে দেখেছিলাম যে বাচ্চা হওয়ার পর একলামসিয়ায় আক্রান্ত, একমাস ধরে তার কোন জ্ঞান নেই। তার হাজব্যান্ডের কাছে শোনা, আমরা যখন ঢুকি তখন লোকটি তার স্ত্রীর মাথার চুল ঠিক করে দিচ্ছেন। ঐ একমাস ধরেই উনি তার সাথে, আমি ভালো করে মহিলাটিকে দেখলাম মোটেও সুন্দর না। একটা উপলব্ধি বারবার আমাকে তাড়া করছিলো যে, ভালোবাসতে সুন্দর চেহারার দরকার হয়না, মোটেও দরকার হয়না। ঐ নিঃসাড় নারীটি সেই একমাসে না পেরেছে স্বামীর জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে, না পেরেছে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে, স্ত্রীর যে কর্তব্যগুলো স্বামীরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে বারবার দেখিয়ে দিতে চায় তার এক সুতোওতো সেই মহিলাটি করতে পারেনি, তারপরও কতো ভালোবেসে তার কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিয়েছে লোকটি, দিনের পর দিন করনীয় গুলো একাকী সামলে নিয়েছে। আর আমরা ফেরার সময় বলেছিলো, দোয়া করবেন ও যেন তাড়াতাড়ি সূস্থ হয়ে যায়! আর কেউ করেছে কিনা জানিনা তবে আমি করেছি, প্রাণ খুলে দোয়া করেছি।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ