সাহিত্য

খেয়ালের ভীড়ে আলো-আঁধারীর গল্প

খেয়ালের ভীড়ে আলো-আঁধারীর গল্প
Love-Heart-Happiness-Book-Light কাপের চা টা ফুরিয়েছে সেই কখন,কিন্তু আমি এখনো কাপ হাতে নিয়েই বসে আছি!ভাব খানা এমন যেনো কাপ ভর্তি চা আছে আর আমি খানিক বাদে বাদে কাপে চুমুক দিয়ে চা খাচ্ছি!কি অদ্ভুদ কাজ-কর্ম! তবে আমার জন্য এসবই স্বাভাবিক। বলা হয় মানুষ নাকি বিচিত্র স্বভাবের প্রাণী,তাহলে কিছু অদ্ভুদ স্বভাব থাকাটাই তো স্বাভাবাকি। ইন্টারকমে কল আসার শব্দে আমার অদ্ভুদ কাজে বাধা পড়ল,কিছুক্ষণ লাল ফোন সেট টার দিকে তাকিয়ে রইলাম,বাজতে বাজতে এক সময় ওটা আগের মতো জড় পদার্থে পরিণত হল!আর আমি কাপ রেখে ফাইলটা টেবিলের উপর রেখে কেবিন থেকে বের হলাম।   আমাকে দেখে আশফাক ভাই খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললেন,   -আরে তুমি কই ছিলে?সেই কখন থেকে ফোনে ডাকছি তোমাকে,কিন্তু ফোনই উঠাও না!ডকুমেন্টস গুলো রেডি করেছো?জলদি দাও,আজকের মধ্যে ফাইনাল পেপার রেডি করে বসকে দেখাতে না পারলে ১২টা বেজে যাবে!   আমি খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে আশফাক ভাইয়ের টেবিলের উপর এক পাশে রাখা টিস্যু বক্স থেকে একটা টিস্যু নিয়ে বললাম,   -কিন্তু ঐ ফাইল তো আমি আনিনি আশফাক ভাই!   -হোয়াট??আনো নাই মানে?রেডি করোনাই!হায় হায়,কি বলো?   -কি করবো বলেন?আপনি ৩দিন আগে আমারে ফাইলটা রেডি করতে দিয়েছেন ঠিকই!কিন্তু যতবার আমি ওই ফাইলটা হাতে নিয়েছি,কে যেনো আমার কানের কাছে এসে বলতেছিলো 'এই ফাইল ফালায় দে,ফালতু কাজ!চা খাও চা খাও!'   একটা নামকরা রিয়েল এস্টেট অর্গানাইজেশনের আইডি এর হেড হিসেবে আশফাক ভাই এর উচিত ছিলো এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে কতক্ষন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা!এবং ধীরে ধীরে ক্ষেপে যেয়ে প্রচন্ড রাগী গলায় কিছু বলা!কিন্তু তিনি তেমন কিছুই করলেন না। ল্যাপির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,   -বুঝলা কল্লোল,তোমারে চা খাইতে বলা কেউ টা আসলে আমি ই ছিলাম!আরে এইসব ভ্যাজাইল্লা কাজ তোমারে দেয়ার মানুষ এই পুরা অফিসে আমি ছাড়া আর কে হবে বলো?যাইহোক,আসছ যখন,চলো ক্যান্টিনে যাই,চা খেয়ে আসি!   আমি হেসে বললাম,   -আপনার সঙ্গে চা খাইতে যাওয়া মানেই তো আজকে আরো ২টা ভ্যাজাইল্লা কাজের ফাইল নিজের টেবিলে দেখা!ধুর... আপনিই যান,আমি বরং যেয়ে আপনার ওই ফাইল কমপ্লিট করি,লাঞ্চের আগেই পেয়ে যাবেন।   আশফাক ভাই ল্যাপি অফ করে,উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন,   -ভাবের খ্যাতাপুড়ো মিয়া!তুমি যে কাম ঠিক টাইমে জমা দিবা আমারে সেইটা আমি না জানলেও আমার ঘাড়ে বসা ইবলিশও জানে!এখন চলো,চা খাইয়া আসি... জিন্দেগী তামা হইয়া গেলো,দেশে খাইটা ঐ বিদেশি গো প্রফিট দিতে দিতে!   আমিও 'কি আর করা?'টাইপ ভাব নিয়ে আশফাক ভাইয়ের পিছু পিছু লিফটের দিকে আগালাম।       এক দৃষ্টিতে কেউ আমাকে অবজার্ভ করবে এই কাজটা আমার খুবই অপছন্দ!জীবনে আমার সাথে অপছন্দের কাজ গুলো যারা বেশি করতো তারা যত কাছের কেউ ই হোক না কেন,আমি খুব সযত্নে তাদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতাম।   কিন্তু আফসোস,অভাগার কপাল পুড়লে একেবারেই পুড়ে,এবং ছারখার হয়ে পুড়ে!আর তাই আমার জন্য এমন কঠিন অপছন্দের স্বভাব ওয়ালী একজনকে সারা জীবনের জন্য পাশে থাকার পারমিশন আল্লাহ দিয়েছিলেন!!   আমি যখনই অফিস থেকে বাসায় ফিরি,প্রায় ঘন্টা খানেক যাবত নিতু আমার দিকে এক দৃষ্টিতে,খুব শান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকবে!যেনো তার সামনে কোন ক্রিমিনাল হাঁটা-চলা করছে আর সে ইন্টারপোলের হেড হয়ে তাকে অবজার্ভ করছে!   আমি অনেকবার ওকে বলেছি,'প্লিজ এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে না,খুব্বই অস্বস্তি লাগে আমার' শুনে সে আবারো একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে থেকে বলতো,   -অস্বস্তি লাগে কেন তোমার?কেউ তোমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেই পারে!   -গভীর দৃষ্টি?!!এটাকে গভীর দৃষ্টি বলে!!   -অবশ্যই!কেন?তুমি কখনো রবী-শরৎ বাবুর লেখায় গভীর দৃষ্টির সংজ্ঞা পড়োনি?   আমি জোর গলায় বলি,   -পড়বো না কেন?অবশ্যই পড়েছি,কিন্তু সেগুলো ছিলো ভালোবাসা বা অভিমানের আইমিন,অর্থপূর্ণ ভাষার কোন গভীর দৃষ্টি!বাট তোমারটা সেগুলোর কোন এক ক্যাটাগরিতেও পড়ে না!   নিতু মুখের ভাব আরো গম্ভীর করে,এবং পারলে চোখের দৃষ্টি দিয়ে আমাকে উড়িয়ে দিয়ে বলবে,   -তোমার গভীর দৃষ্টি সম্পর্কে জ্ঞানের লেভেল অনেক খারাপ!সেই জন্যই আমি রোজ এভাবে তাকাই,তাকাবো!আমি চাই আমার জামাইয়ের মাথায় এই সম্পর্কে সঠিক এবং বিশদ জ্ঞানের জন্ম হোক!   আমি হাল ছেড়ে দেই!এই মেয়ের সাথে আসলে তর্ক করে লাভ নেই!নিতুর এই জাতীয় কথা শুনে একবার আশফাক ভাই গম্ভীর মুখে বলেছিলেন,   -বুঝলো কল্লোল,তোমার বউ 'কথা-দৃষ্টি'বিষয়ে ডাবল পিএইচডি করা!তাও আবার থিউরী বেসড না,কেস স্টাডি বেসড!সুতরাং তার সাথে তর্কে যেয়ে লাভ নাই,উল্টা তোমারেই আবার এই বিষয়ে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হইতে হতে পারে!   আশফাক ভাইয়ের কথা বেশিরভাগ সময়ই আমার মনে ধরে,এটাই তেমনি একটা। আর তাই আমি এখন আর নিতুর এই 'গভীর দৃষ্টি'বিষয়ে মোটেও কথা বলি না,যতক্ষন খুশী সে তাকিয়ে থাকে,আমি আমার মতোই কাজ করতে থাকি।   তবে আজ সেভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিতু নিজে থেকেই বলল,   -তোমাদের অফিসে কি কোন সূস্থ-স্বাভাবিক মানুষ কাজ করে?   আমি স্বাভাবিক কন্ঠে ভাবে উত্তর দিলাম,   -নাহ!   -তাহলে কারা কাজ করে?   -করে কিছু আধ-পাগলা,রোবটিক কিছিমের লোকজন!   -বিয়ের আগে তোমার উচিত ছিলো,সিভিতে এই কথাটা উল্লেখ করে দেয়া!তোমার জুনিয়রদের কে বলবে,তারা যেনো এই কাজটা করে।   আমি ল্যাপির দিকে তাকিয়ে মাথা দোলাতে দোলাতে বললাম,   -নিতু,বর্ষাকাল আসলে বৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক!তাই বলে এখন এই স্বাভাবিক কাজের জন্য নিজেদের স্বাভাবিক কাজ রেখে অস্বাভাবিক ভাবে বউকে নিয়ে বৃষ্টিবিলাস করাটা কি সূস্থ মানুষের কাজ হতে পারে?তোমার রবী ঠাকুরও কিন্তু জীবনে এই কাজ করেনাই!   নিতু আগের মতো ভঙ্গিতেই বলল,   -রবীঠাকুরের সময় মুঠোফোন ছিলো না,থাকলে সে অবশ্যই তার বউকে একটা ক্ষুদে বার্তা পাঠাতেন এমন সুন্দর বৃষ্টি দেখে!   এবার আমি হো হো করে হাসতে থাকি! এই হচ্ছে নিতু!   আমার আর নিতুর মাঝে এই একটা জায়গায় এসে বিশাল পার্থক্য কাজ করে। না হলে আমরা দু'জনেই বাহ্যিক দিক থেকে একই ধরনের মানুষ। সে নিজেও সারাদিন ব্যস্ত অফিস-সংসার নিয়ে,পরিবার-ভবিষত,বাস্তবতা-জীবন নিয়ে আমাদের দু'জনের অবস্থান-চিন্তাও প্রায় একই ধরনের কিন্তু সব কিছুর পরেও এই একটা জায়গায় এসে আমি নিতুর থেকে অনেক বেশি আলাদা হয়ে যাই!   আমি বুঝি না,নিতু কিভাবে পারে নিজের ভেতর এমন এক 'আবেগি' সত্ত্বাকে সব অবস্থায় ধারন করে রাখতে! কিভাবে পারে নিজের ভেতরে 'বাউন্ডুলে' সত্ত্বাটাকে খুব যত্নের সাথে লুকিয়ে রাখতে!বুঝি না আমি একদমই!   আমাদের এই দু'বছরের সংসার জীবনে পারিবারিক,আর্থিক সহ অনেক দিক থেকে যথেষ্ট কষ্টকর,জটিল সময় আমরা পার করেছি,জীবনে বাস্তবতার কঠিন রূপের লড়াই করতে করতে যেখানে আমি মাঝে মাঝে ভুলেই যাই,যে আমি বেঁচে থাকা কোন মানুষ সেখানে নিতু সেই অবস্থাতেও পারে আকাশের মেঘের ভাষা পড়তে,রাতের পূর্ণিমার আলো দেখে মুগ্ধ হয়ে গুণ গুণ করতে,কিংবা ব্যস্ত সময়ে হাজারো কাজের তাড়া উপেক্ষা করে গাড়ি থেকে নেমে বেলী ফুলের মালা অথবা এক ডজন লাল চুড়ি কিনতে,খুব সামান্য খুশিতে হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলতে!   অথচ নিতু সম্পর্কে বিয়ের আগে যখন আমি শুনেছিলাম,জেনেছিলাম যথেষ্ট বাস্তববাদী,আর গম্ভীর প্রকৃতির মেয়ে,জীবনে লড়াই করে চলতে অভ্যস্থ,সব অবস্থার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। নিতুর সাথে বিয়ে আগে কয়েক বার দেখা করেছিলাম যখন,তখন আমি ওকে হাসতে দেখেনি! কৌতুহলের বশে জিজ্ঞেস ও করেছিলাম,   -নিতু আপনি কি খুব কম হাসেন?   নিতু গম্ভীর মুখে বলেছিলো,   -নাহ,আমি হাঁসি তবে সব সময় না,কারণ আমি হাসলে আমাকে সুন্দর দেখায় না!মানুষের হাঁসি সব সময় সুন্দর হলেও সবাই কে হাসলে সুন্দর দেখায় না,আমি তেমনই একজন!   আমি সেদিন যথেষ্ট অবাক হয়েছিলাম! কেউ এভাবে নিজের সম্পর্কে বলতে পারে আমার জানা ছিলো না,কিন্তু নিতুর ব্যাপারটা আলাদা। আর তাই তো ২বছরে এই মেয়ের সাথে থাকতে থাকতে আমি নিজেও যথেষ্ট অদ্ভুদ-স্বাভাবিক স্বভাবের মানুষ হয়েছি!মাঝে মাঝে ভেতরে ভেতরে নিতুর মতোই একটা বাউন্ডুলে স্বভাবের মানুষকে খোঁজার চেষ্টা করি!কিন্তু এই এতোদিনেও আমি নিতুকে একবারো বলতে পারিনি,   'তোমার নিজের সম্পর্কে ধারনাটা ভুল ছিলো,তোমাকে হাসলে আসলে অনেক সুন্দর লাগে,কেমন যেনো বাচ্চা মেয়ের মতো মায়াময় তোমার হাঁসি'। বলা হয়নি কখনো তবে মাঝে মাঝে একটা অদ্ভুদ খেয়াল কাজ করে ভেতরে!আমার কেন জানি মনে হয়,আমি একদিন নিতুকে হারিয়ে ফেলবো,হয়তো সে আমার সাথেই থাকবে তবে আমার থেকে অনেক দূরে...!!কেন মনে হয় জানিনা,তবে প্রায়ই মনে হয়!       আশফাক ভাই একদিন অফিসে না আসা মানে,যথেষ্ট ঝামেলায় পড়া!উনি যেদিন না আসবেন,সেদিন সব কিছু ম্যানেজ করবেন বারী সাহেব!আর এই লোককে আমরা আড়ালে ডাকি 'গ্যাজর'!সারাক্ষন তিনি এটা-ওটা নিয়ে ঝামেলা করতেই থাকেন তাই। এক নাগারে অনেকক্ষন কাজ করে আমি ক্যালেন্ডারের দিকে তাকালাম। আজ ২৮শে মে!আশফাক ভাইয়ের 'নিরুদ্দেশ' দিবস। বছরের যে ক'দিন আশফাক ভাই গায়েব থাকেন তার মধ্যে এই দিনটা অন্যতম। কেন থাকেন,কোথায় থাকেন,কি করেন এই দিনে এসব নিয়ে এক সময় কিউরিসিটি থাকলেও এখন আর তা কাজ করে না।   রাতে বাসায় ফিরে কফি খেতে খেতে ল্যাপিতে সোশ্যাল সাইট গুলোতে ঢুঁ দিচ্ছিলাম,নিতু এসে বলল,   -আজ তোমার আশফাক ভাই অফিসে যাননি?   আমি মাথা এপাশ-ওপাশ নাড়লাম।   -আমি আজকে উনাকে দেখেছি।   -কোথায়?   -বাংলা মোটরের মোড়ের ওভারব্রীজের উপরে। দাঁড়িয়েছিলেন একাই,এক দৃষ্টিতে শূন্যে তাকিয়ে ছিলেন,সাহিত্যকেন্দ্র থেকে বই নিয়ে ফেরার পথে দেখলাম।   আমি কপাল কুঁচকে থেকে কিছুক্ষন পর বললাম,   -ওখানে কি করছিলো সে?!যাইহোক,আজকে তার নিরুদ্দেশ দিবস ছিলো,হয়তো তাই বাইরে বাইরে ঘুরছিলো!   খানিক সময় চুপ থেকে নিতু বলল,   -উনি এভাবে মাঝে মাঝে কেন ডুব দেন?কাজলকে খোঁজার জন্য?   আমিও কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম,   -হবে হয়তো!   নিতু আর কিছু বলল না,আমিও না। বলতে পারলাম না হয়তো...!       আজকের দিনটা আমার জন্য যথেষ্ট বিরক্তিকর!কাজ কাজ করতে করতে বার বার মনে হচ্ছিলো,   'বেঁচে থাকাটা এতো ঝামেলার কেন?কেউ কেন বুঝতে চায় না!'নিতুর কাছে কি আমি খুব বেশি কিছু এক্সপেক্ট করি?তারপরেও কেন ও এরকম করে!সামান্য কিছু ব্যাপারে মাঝে অনেক বেশি রিএক্ট করে,আবার কখনো দেখা যায় খুব কঠিন সময়েও অনেক ভালো বুঝে!''   বিরক্তি নিয়ে লাঞ্চ আওয়ারে ক্যান্টিনে এসে বসলাম। ভাবতে ভাবতে খাবার অর্ডার করতেও ভুলে গেছি,খানিক পর দেখি আশফাক ভাই দু'জনের জন্য লাঞ্চ নিয়ে এসে আমার পাশে বসলেন।   -কি মিয়া?কই হারাইলা?আরে যেখানেই হারাও খাওয়ার কথা কি ভুললে চলবে?ইঞ্জিনিয়ার মানুষদের ইঞ্জিনটাই আসল বুঝলা?   আমি খানিকটা হাসার চেষ্টা করে বললাম,   -ঠিকই বলছেন,আমাদের আছে খালি ঐ ইঞ্জিনটাই!এছাড়া আর কিছু আছে বলে তো মানুষ ভাবে না!জীবনটা তো চলে গেলো এই ইঞ্জিনে তেল দিতে দিতেই!   -কি হইছে আজকে?নিতুর সাথে ঝগড়া?   -হুম,তাও খুবই সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে!   -হাহাহা... দম্পতিদের মধ্যে বেশির ভাগ ঝগড়াই হয় সামান্য ব্যাপার নিয়ে!আমি তো ঝগড়া করতাম সামান্য টুথপেষ্ট নিয়া!   আমি বিরস মুখে বললাম,   -কিন্তু নিতুর সমস্যা হলো মাঝে মাঝে সে খুবই অবুঝের মতো আচরন করে!তার মামাতো বোনের বিয়ে,এখন তার শখ হইছে একটা লাল জামদানী শাড়ি কিনবে!কিন্তু সে খুব ভালো করেই জানে আমার এইসব খরচ পছন্দ না,দরকার নাই শুধু শুধু কেন কিনবে?এই কথা বললাম কেন,তার জন্য রাত থেকে কোন কথাই সে বলতেছে না,একদম বরফের মতো আচরন করতেছে,যেনো আমি তাকে ইলেক্ট্রিক শক দিয়েছি,এমনকি ও বাসায় ফোন করে মামীকে বলছে,সে শুধু বিয়ের দিন যেয়ে চলে আসবে,১দিন আগে যাওয়ার প্ল্যান বাতিল! কোন মানে আছে এসবের?   -হুম!যদিও কমন সমস্যা,এমন টুকটাক হয় ই কিন্তু নিতু কি সব সময় শাড়ি-গয়না নিয়ে শখ করা মানুষ নাকি?   -নাহ,তা না।আর এটাও একটা সমস্যা বুঝলেন!সে সহজে কিছু চাইবে না,কেনার শখও করবে না,কিন্তু যদি একবার শখ করে তো হইছে সেটা না পেলে শোক দিবস পালন করা শুরু করে দিবে!এখন আমি পড়ছি জ্বালায়!   আশফাক ভাই সাথে সাথে কিছু বললেন না!আমিও কথা গুলো বলে কিছুটা হালকা বোধ করতে লাগলাম দেখে খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম।   খানিক পর আশফাক ভাই বললেন,   -কল্লোল,আমার মনে হয় তোমার উচিত,আজ অফিস শেষে বাড়ি ফেরার সময় খুব সুন্দর দেখে একটা লাল জামদানী কিনে নিয়ে যাওয়া,আমাদের এদিকে তো দাম বেশি নিবে,তুমি হকার্সে দেখতে পারো।   আমি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললাম,   -আশফাক ভাই,আমার এইসব পছন্দ না!বিরক্ত লাগে আমার,তারচেয়ে বরং ওকে টাকা দিয়ে দিবো,নিজের মতো কিনে নিবে।   আশফাক ভাই খুব গম্ভীর হয়ে বললেন,   -টাকা তো নিতুর কাছেও ছিলো,ও তো চাইলে নিজেরটা নিজেই কিনতে পারতো,কিন্তু ও তোমাকে কেন বলেছে বলতো?ও চায় শাড়িটা তুমি কিনে দাও!আর একবার ভাবতো,তুমি শাড়িটা নিয়ে যখন ওর সামনে যাবে ও কি পরিমাণ খুশী হবে!   আরে মিয়া,প্রিয় মানুষের খুশীর জন্য একটু নিজের স্বভাব বদলানো কি এমন কঠিন কাজ শুনি?একদিন ব্যতিক্রম হলে কিচ্ছু হয় না,বুঝলা? সময় চলে গেলে আর ফিরে আসে না,সময় থাকতে কাজে লাগাও,না হলে একদিন সময়ের সাথে সাথে মানুষকেও হারিয়ে ফেলতে পারো...!   শেষের কথা গুলো শুনে চমকে উঠলাম আমি!বুকের ভেতর আবারো সেই খেয়ালটা যেনো জেগে উঠলো!       বিয়ের অনুষ্ঠানের ঝামেলা শেষ করে ঢাকায় ফিরে এসে জানলাম,আশফাক ভাই কিছুদিন যাবত অসূস্থ,অফিসে এসেও ছুটি নিয়ে চলে গেছেন একদিন!আমি অফিস শেষ করে উনার বাসায় যেয়ে দেখলাম,জ্বর ভালো ভাবেই বাঁধিয়েছেন!উনার বোন গেছে এক আত্নীয়ের বাড়ি। ডাক্তার দেখিয়ে কিছু টেস্টের ঝামেলা শেষ করে উনাকে মেডিসিন খাইয়ে বাসায় রেখে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেলো!   হালকা কিছু মুখে দিয়ে শোয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে নিতে বললাম,   -আশফাক ভাইয়ের জন্য মাঝে মাঝে খুব কষ্ট লাগে!এভাবে একলা কতদিন থাকা যায়!   নিতু খুব হালকা ভাবেই বলল,   -বিয়ে করিয়ে দিলেই পারো।   আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,   -সে চেষ্টা কি আর কেউ করেনি?কিন্তু না করলে কি করা!   -উনি কি আর কোন দিন ই বিয়ে করবেন না বলেছেন!আজব কথা!   আমি আর কিছু বললাম না। মাথার কাছের জানালাটা খুলে পর্দা টেনে দিতে দিতে নিতু বলল,   -একটা কথা জিজ্ঞেস করি?   -হুম,করো।   -আশফাক ভাই মানুষটা কি শুরু থেকেই এমন ছিলেন?নাকি পরে বদলেছেন?   আমি খানিকটা ভেবে বললাম,   -আমি উনাকে চিনি ৪ বছর ধরে,যতটুকু জানি,শুরুতে হয়তো এমন ছিলেন না!কিন্তু ঐ এক্সিডেন্টের পর এই ক'বছরে অনেক অনেক বদলে গেছেন তিনি এটুকু বলতে পারি!   নিতু চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে খানিকটা আপন মনেই বলতে লাগল,   -আল্লাহ মানুষের জীবন কত ভাবে বদলে দেন!হয়তো আজ আশফাক ভাই মানুষটাকে যেমন দেখছি ক'বছর আগেও হয়তো তেমন ছিলেন না,কাজল ভাবিকে হয়তো তিনি অনেক ভালোবাসতেন কিন্তু ভাবি তা বুঝলেও বিশ্বাস করতে পারতো না!অথবা ভাবি জানতেন এবং অনেক ভালোবাসতেন বলেই হয়তো আজ আশফাক ভাই পারছেন একা একা থাকতে,নিজেকে বদলাতে!কিন্তু আমার এই ব্যাপারটা কেন জানি বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না,মেনে নিতে পারি না আমি!   আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,   -কোন ব্যাপারটা?!   -এই যে,উনি মাত্র দেড় বছর আইমিন আশফাক ভাইয়ের ভাষায়, ৯৪৫দিনের সংসার জীবনের গল্প নিয়ে গত ৩বছর সময় পার করছেন,এমনকি বাকী জীবন ও পার করার চিন্তা করছেন!কাজল ভাবি উনাকে যেমন দেখতে চাইতেন ঠিক তেমন হওয়ার চেষ্টা করছেন,একি সম্ভব?মানুষ তো পারে না,পারে না তো মানুষ থাকতে,মানুষ অনেক স্বার্থপর হয়,সুখের লোভে মানুষ অনেক কিছু বেমালুম ভুলে যায়,আর তাই স্মৃতির তাড়া নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকতে চায় না।   আমি কিছু বলতে চেয়েও পারলাম না,নিতুর কথা ঠিক,মানুষ এভাবে থাকতে পারে না,থাকতে চায়ও না। নিতু আবার বলে উঠলো,   -আচ্ছা,যদি আশফাক ভাই থাকতে পারেন,তাহলে কেন আমার বাবা থাকতে পারলো না,বলতো?!   কথাটা শুনে আমি কিছুটা চমকালাম!খানিকটা অসহায়ের মতো নিতুর মুখের দিকে তাকালাম!বেচারীর চোখে তখন জল থৈ থৈ করছে!আর সেই সাথে রাজ্যের অভিমান! অনেকটা আপন মনেই বলতে লাগল,   -কাজল ভাবি তো আশফাক ভাইয়ের জন্য কোন সন্তান ও রেখে যাননি,হুট করে একদিন রোড এক্সিডেন্টে চলে গেছেন,আর আমার মা?আমার মা তো আমার বাবার জন্য আমাদের ২ভাই-বোন কে রেখে গিয়েছিলেন,দীর্ঘ ১৪বছর আমার মা বাবা কে,তার সংসারকে প্রচন্ড ভাবে ভালোবেসেছিলেন,কিন্ত তারপরেও কিভাবে পেরেছিলো আমার বাবা মা যাবার ২মাসের মাথায় আবারো বিয়ে করতে?! ২টা মাসও সময় লাগেনি বাবার সব কিছু মাটি চাপা দিতে!নতুন বউ নিয়ে আমাদের ২ভাই-বোনকে হোষ্টেল,আত্নীয়দের কাছে দিয়ে আলাদা সংসার শুরু করতে! আমার না বিশ্বাস করতে অনেক কষ্ট হয়,আর তাই বুঝি আশফাক ভাইয়ের কথা শুনলে আমার রাগও হয় খুব! ''বলতে বলতে কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে!   আমি কিছু বলতে পারলাম না,চুপ করে থাকলাম। নিতু কাঁদছে। আমি উঠে এসে আলতো করে ওর হাত দু'টো চেপে ধরলাম। নিতু কেঁদেই চলল!   আমার আর নিতুর ভাগ্য অনেকটা একই। একদম ছোট বেলায় আমি বাবা হারিয়েছি,আর কিশোরী বয়সে নিতু হারিয়েছে মা। আমার মা আমাকে দাদীর কাছে রেখে চলে গেছেন আর নিতুর বাবা নিতুকে ওর খালা মানে আমার মেঝ চাচীর কাছে রেখে চলে গেছেন। বাবাকে খুব ভালোবাসতো নিতু। ছোট বেলায় সব থেকেও হারানোর মতো দিন কাটানোর কারণেই হয়তো, আমাদের দু'জনের জীবনেই ভালোবাসা,মজবুত বন্ধনের প্রতি বিশ্বাস অনেক কম ছিলো!ছোট থেকেই আমাদের মধ্যে সংসার সম্পর্কে এক রকমের নেগেটিভ ধারনা কাজ করতো,আর আল্লাহরই কি ইচ্ছে,আমাদের দু'জনের মাঝেই সেই বন্ধন তৈরীর সুযোগ করে দিলেন। কত বছর পেরিয়েছে এর মাঝে,কিন্তু কৈশরে জমা হওয়া সে রাগ-অভিমান থেকে বলা যায় আমরা কেউ ই বেরিয়ে আসতে পারিনি! তবুও,আশফাক ভাইয়ের জীবনটা দেখলে অবাক লাগে!   এক সময়ের প্রচন্ড অহংকারী,রাগী,খেয়ালি মানুষটা আজ কতো বদলে গেছেন!কাজল ভাবি ছিলেন অসম্ভব শান্ত,সংসারী আর ধার্মিক মানুষ,বিয়ের পর খুব কষ্ট হতো বেচারীর এডজাস্ট করতে। কিন্তু কেন জানি তিনি ছোট বেলায় বাবা-মা হারা এই আশফাক ভাইকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। আর তাই হয়তো আজ তার চলে যাবার পর আশফাক পুরোদমেই নিজেকে বদলে ফেলেছেন বলা যায়,শুধু মাঝে মাঝে হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলেন,আর কখনো সব কিছু ফেলে নিরুদ্দেশ হয়ে যান!       আমার আজকাল কেন জানি মনে হয়,নিতু আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে!এতো ভালোবাসার মাঝে থাকার অভ্যেস আমার নেই!বরং এতো মায়ার টান আমাকে বিরক্ত করে,মনে হয় এই মায়ার মোহে পড়লে আর রেহাই নেই,একদম চুরমার হয়ে যেতে হবে।   আশফাক ভাই সুস্থ্য হয়ে অফিস জয়েন করেছেন,আজকাল তাই অফিসটাই আমার ভালো লাগে!কাজ করি,কাজের মাঝে ডুবে থাকি,আর বাড়ি ফিরে নিতুর মায়াভরা মুখটা দেখলেই বুকের ভেতর ঝড় উঠে! নাহ,সুখ সইতে পারাটাও অনেক কষ্টকর!   এরই মধ্যে একদিন খবর এলো নিতুর বাবা খুব অসূস্থ!খবরটা শুনে ক'দিন নিতু খুব একটা প্রতিক্রিয়া দেখালো না,শেষ পর্যন্ত আমিই জোর করে ওকে নিয়ে সিলেটে গেলাম। অনেক বছর পর বাবার মুখটা দেখে নিতুর ভেতরের সব রাগ-অভিমান গুলো যেনো এক ঝাটকায় ভেঙ্গে পড়লো! বাপ-মেয়ের সেই কান্নার দৃশ্য দেখে সত্যিই হিংসে হচ্ছিলো!   ২দিনের মাথায় এক ভোরে চলে গেলেন নিতুর বাবা। আমি ফিরে এলাম নিতুকে নিয়ে। সব কিছু কেমন যেনো বদলে গেছে মনে হচ্ছিলো!নিতু একদমই চুপ হয়ে গিয়েছিলো। ফেরার পথে বাসে বসে আমার কাঁধে হেলান দিয়ে হঠাত নিতু আমার হাত চেপে বলল,   -শোন,আমি কি তোমাকে খুব যন্ত্রণা দেই?   প্রশ্নটা শুনে অবাক হয়ে বললাম,   -এটা কেমন কথা?!অবশ্যই না।   নিতু ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,   -তুমি খুব ভালো একটা মানুষ,আর দুনিয়াতে ভালো মানুষদের জন্য কষ্ট বেশি!তুমি পারবে আমার দেয়া কষ্ট সহ্য করতে?আমি একদিন তোমাকে অনেক কষ্ট দিবো! তারপরেও তুমি আমাকে মনে রেখো,না হয় খানিকটাই মনে রাখলে,তবুও মনে রেখো আমাকে!প্লিজ!   আমি সাথে সাথে কিছু বলতে পারলাম না,বুকের ভেতর পুরনো খেয়ালটা আবারো ঝড় তুললো! নিতুর হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বললাম,   -কষ্ট দিবে তুমি?তাহলে তো কষ্ট তুমিই আবার পাবে!তাই না?এসব ভেবো না,এভাবেও বলোও না প্লিজ!জীবনে কষ্ট কম পাইনি আমি,আর কষ্টের ভয় দেখিও না!   নিতু কিছু বলল না আর,শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল! কোন ফাঁকে যেনো আমার চোখ দু'টোও ভিজে উঠলো!       ৫বছর পর,       আমার এখন মাঝে মাঝে মনে হয়,নিতু অসম্ভব পাজি একটা মেয়ে ছিলো,ওর আমাকে কষ্ট দেয়া ছাড়া আর কোন কাজ ছিলো না। ভালোবাসতো না ছাই,খালি যন্ত্রণাই আমাকে দিতো এখনো দেয়!না হলে এমন ফুটফুটে একটা পরীকে আমার কাছে রেখে কেউ চলে যায়?   নিতু ঠিকই ওর কথা রেখেছিলো,আর তাই যাবার আগে অনেক বড় কষ্ট আমাকে দিয়ে গিয়েছিলো। আমাদের পরীটার জন্মের চার মাস ধরা পড়ল নিতুর ব্রেন টিউমার,ডাক্তার প্রথমে বলেছিলেন মিডল স্টেজে আছে,কিন্তু মাস ছ'য়েকের মধ্যে অবস্থার আরো অবনতি ঘটার পর আমি নিশ্চিত হলাম,আমার সেই খেয়ালটা সত্যি হতে চলেছে!নিতুকে আমি সত্যিই হারিয়ে ফেলবো!   পাজি মেয়েটা হসপিটালের বেডে শুয়ে আমাকে বলতো,   -যাবার আগে একটা বিয়ে খেয়ে যেতে চাই,পরীর তো বিয়ের সময় হয়নি,তাই তোমাকেই আরেকটা বিয়ে দিয়ে যাই কি বল?পরে তো করবাই,মাঝখানে না হয় আমিই একটু দেখে যাই!   -বাজে কথা বলবা না একদম!   -আরে?বাজে কথা কিসের?ইশশ...কি সাধু পুরুষ আমার!যেনো সে বিয়ে করবে না আর!একা একা কিভাবে থাকবে?কে খেয়াল রাখবে তোমার?পরীকে কে দেখবে?করো না প্লিজ,আমি না হয় একটু দেখে যাই,এত বছর আমার সাথে থেকে তোমার পছন্দের কেমন উন্নতি হয়েছে!   আমার চোখ ফেটে কান্না চলে আসে!এই মেয়েটা এমন কেন?খালি কষ্ট দেয় আমাকে!না হয় আমি মানুষটা না হয় ওর একদম মনের মতো ছিলাম না,কিন্তু তাই বলে কি আমাকে এভাবে কষ্ট দিবে?   আমার চুপ করে থাকা দেখে নিতু হাসতো!হাসতে ওর খুব কষ্ট হতো,কিন্তু তবুও আমাকে দেখলেই হাসতো!আমি অভিমান করে বলতাম,   -হাসো কেন?মায়া বাড়াও না?   -হুম,যাতে করে তুমি আমাকে ভুলে না যাও!   -হাসবা না,হাসলে তোমাকে সুন্দর লাগে,আর সেটা দেখে আমার আরো বেশি কষ্ট লাগে!   নিতু তবুও হাসতো,কখনো ছলছল চোখে,কখনো রাজ্যের সব ভালোবাসা নিয়ে। তারপর একদিন ভোরে চলে গেলো।   নিতুকে কবর দিয়ে আসার পর আমার মনে হয়েছিলো,আমার তো অনেক কথা বলার ছিলো নিতুকে! অনেক কথা...আমি তো কিছুই বলতে পারলাম না!! কিছুই আর বলা হলো না আমার! শুধু একরাশ শূণ্যতার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম,নিতুকে হারিয়ে ফেললাম! সেই থেকে আমার অজস্র না বলা কথা গুলো নিয়ে আমি ঘুরছি।   পরী কে নিয়ে আমার দুনিয়ায় মাঝে মাঝে আশফাক ভাই আসেন,পরী তাকে ডাকে বড় বাবা বলে!ও যখন 'বড় বাবা' বলে তার দিকে দৌড়ে যায় খুশীতে আশফাক ভাইয়ের চোখে পানি চলে আসে। ছুটির দিনে আমি আর আশফাক ভাই পরীকে নিয়ে বেড়াতে যাই,পরী খেলে,হাসে আর আমরা দু'জন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি,কখনো লুকিয়ে চোখের পানি মুছি। শত আঁধার ছাপিয়েও আমরা একটু আলোর মাঝেই বেঁচে থাকার চেষ্টা করি।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)