বিবিধ
শেষ কোথায়???

সেদিনের সকালটা ছিলো একটু ভুতুড়ে যেন।
তিন মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে সংসার বিধবা মহিলাটির, স্বামী ট্রাকে চাপা পড়ে দু বছর আগে মারা গেছেন। তারপ থেকেই দেবর ননদদের সাথে চলছিলো জমি সংক্রান্ত ঝামেলা। সেদিন খুব ভোরে উঠে ফজরের নামাজ পড়লেন, মুখে পান গুঁজে ছেলে মেয়েদের ডাকলেন, ওঠো পড়তে বসো। তারাও ওঠে, ধীরে ধীরে সকালের সব প্রয়োজন সেরে পড়তে বসে। বাড়িতে বাথরুমটা দুরেই বেশ, গ্রামের বাথরুম গুলো এমনই হয়। কলপাড় থেকে বালতি ভরে পানি আনতে যান রান্না করবেন বলে, পানি নিয়ে ফিরবেন ঠিক তখনই তার এক দেবর বালতিতে একটা লাথি মেরে ফেলে দেয়, উনি একটু চিৎকার করেই বলেন, - হেলাল এ কী অসভ্যতা, এইটা করলা ক্যান? হেলাল লোকটির দুচোখে আগুন যেন ঠিকরে বেরুচ্ছে, -ভাবী তুমি তো আর কচি খুকী না তাইনা যে বোঝনা? ঐ জমিটা দিয়ে দাও, কেচ্ছা খতম।
খুব ভয় পেয়ে যান তিনি, কাঁপা গলায় বলেন, -দ্যাখো হেলাল আমার ছেলে মেয়ে গুলো তো এখনও বড় হয়নি, ওদের ঠিকমতো বোঝার বয়সও হয়নি, তুমি ঐ জমি নিলে অন্যরাও তো......... চিৎকার করে ওঠে হেলাল, বিধবা মহিলাটির জিহবা টেনে ধরে, শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে। জিহবার এক অংশ ছিড়ে রক্ত পড়তে থাকে, মহিলা স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে সাদা শাড়ী পরতেন, শাড়ী রক্তে লাল হয়ে যায়, কথা বলতে পারছেননা তিনি গুমরে গুমরে মানুষের হেল্প চাইছেন, কিন্তু সেদিন সকালে যেন কারো ঘুম ভাঙ্গেনি। তিনি শুনতে পাচ্ছিলেন ছেলেমেয়ের পড়ার শব্দ, জোরে জোরে পড়ছে ওরা, কিন্তু ওদের কানে মায়ের এই গোঙ্গানোর আওয়াজ পৌঁছতে পারছেনা। জিহবা ছেড়ে দিয়ে ঐ বালতিটা হাতে নেয় হেলাল, এলো পাথাড়ী মারতে থাকে, -আজ তোকে মেরেই ফেলবো, এতো জেদ কেন তোর? অনেকটা সময় ধরে মেরে নিস্তেজ করে দিয়ে নিজের বাড়িতে যায় হেলাল। পরে অন্য কেউ চিৎকার করে ডাকে থাকে, - মিনু, মুসা তোমার মা দ্যাখো কিভাবে পড়ে আছে হায় আল্লাহ এটা কী কে হলো? অনেকের সাথে বেরিয়ে আসে হেলালও, সবাই যখন গাড়ী ঠিক করা, বাচ্ছাদেরকে শান্তনা দেয়াতে ব্যাস্ত তখন সবার অজ্ঞাতে দুফোটা বিষ ওনার মুখে ঢেলে দেয় হেলাল, তারপর লোক দেখানো তাড়হুড়া, মিনু মুসাদের কান্না যেন আল্লাহর আরশ কাঁপিয়ে তুলছিলো! আর সাথে মা মা ডাকে ওদের ভেতরটা হাহাকারে ভরে উঠছিলো! ইস সে কী বেদনা দায়ক দৃশ্য! এরপর ওদের মা চিরতরে পাড়ি জমান ওপারের পথে।
ঘটনার প্রতিটি শব্দ সত্য। আমার খুব পরিচিত মহিলার ঘটনা এটা। হাজব্যান্ড মারা যাওয়ার পর সন্তানদের মুখ চেয়ে তাদেরকে অবলম্বন করে বাঁচতে চেয়েছিলেন, কিন্তু অন্যদের সম্পদের লোভ তাকে দুনিয়া থেকে তাড়িয়ে বিদায় করেছে যেন। তারপর আর কী খু...ীরও কোন শাস্তি হয়নি, ষড়যন্ত্রকারীদেরও না, সবাই দুদিন পরই সব জেনেছিলো, কিন্তু কেউ কোন উদ্যোগ নেয়নি। আজ ওনার চার ছেে মেয়েই বড় হয়েছে, বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে, কিন্তু ভাইকে হারানোর ভয়ে আজ পর্যন্ত কোন স্টেপ নিতে পারেনি। এভাবেই বুঝি অপরাধ গুলো কালের আবর্তে অন্য কিছুর সাথে লুকিয়ে থাকে আর বীর দর্পে জমীনের বুকে হাঁটাহাঁটি করে অপরাধীরা। এসবের শেষ কবে?
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)