পরিবার ও আমি (বিয়ে ,দাম্পত্য,শিশু লালন পালন )

প্যারেন্টিং ভাবনা- ১

প্যারেন্টিং ভাবনা- ১

 

"প্রথম ৭ বছর আপনার সন্তানের সাথে খেলা করুন, ২য় ৭ বছর তাকে ডিসিপ্লিন শেখান এবং ৩য় ৭ বছর তার বন্ধু হয়ে যান।"

প্যারেন্টিং এর উপর পড়াশোনা করতে গিয়ে এই লাইনটাতে যখন আমার চোখ আটকে যায় তখন আমার মনে হয়েছে এটাকে প্যারেন্টিং এর মূল সূত্র হিসেবে ধরা যেতে পারে।

এখানে ৩টা ৭ এর কথা বলা হয়েছে:
১×৭=৭
২×৭=১৪
৩×৭=২১

১ম ৭ বছর তার সাথে খেলুন। শুধু নিছক খেলাই নয়, তাকে খেলাচ্ছলে সব কিছু জানান, শেখান।

২য় ৭ বছর অর্থাৎ ১৪ বছর পর্যন্ত তাকে ডিসিপ্লিন শেখান। তাকে কোন টা ভালো, কোন টা মন্দ, লাইফের পুরো ওয়ে টা তাকে তার ভাষায় বুঝিয়ে দিন। তাকে শিষ্ঠাচারিতা শেখান।

৩য় ৭ বছর তার বন্ধু হয়ে যান। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট। ২য় স্টেজে আপনি যা শেখাবেন বা পরিবেশ পারিপার্শিকতা থেকে যা শিখবে তাই সে এই বয়সে এপ্লাই করবে।

আমরা অধিকাংশ বাবা মা এই ২য় ও ৩য় স্টেজে এসে ভুল টা করে ফেলি। এরপর সন্তান যখন বিপথে চলে যায় তখন সব দোষ তার উপর চাপিয়ে দেই।

৭ বছর পর্যন্ত খেলতে বলা হয়েছে। আর এই খেলাটাই চালিয়ে যাই তার টিন এজ পর্যন্ত। তবে খেলাটার ধরণ ভিন্ন, আবদার মেটানোর খেলা। সে যা যা চায় সব পেয়ে যায়, ক্ষেত্র বিশেষে চাওয়ার আগেই পেয়ে যায়। মোবাইল, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট এক্সেস, ফেসবুক একাউন্ট সব ( অনেকেই এখন সন্তান জন্মের পরেই তার নামে একাউন্ট তৈরি করে ফেলি)।
এরপর যা হয় তা ৩য় স্টেজে। যেখানে বাবা মা ই হবে সন্তানের প্রকৃত বন্ধু সেখানে সন্তান বাইরের জগতে বন্ধু খুঁজে ফেরে।

২য় স্টেজে ভিত নড়বড়ে করে এসে এই স্টেজ বিপথে যাওয়ার। তখন চরম মারাত্মক ভুল করে বসেন অভিভাবকরা। বকা দিয়ে, শাসন করে, ডিসিপ্লিন শিখিয়ে। না, এটা ডিসিপ্লিন ও শাসনের বয়স না, এটা বন্ধু হওয়ার বয়স।

বন্ধু মানে কি তার সাথে তার বন্ধুদের মত বাল্যসুলভ আচরণ করতে হবে? না। বাবা মায়ের সাথে সন্তানের বন্ধুত্ব মানে সাপোর্টিভ ওয়ে তে তার গতিবিধি খেয়াল রাখা। যে কোন সমস্যা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে মোকাবেলা করা। তার সাথে এ আচরণ এমন হওয়া যাতে সে সব কিছু বাবা মায়ের সাথেই আগে শেয়ার করে এবং বাবা মাও তার সুহৃদ হোন।

কিন্ত আমরা কি দেখি? এই আধুনিক যুগে সব কিছুই আধুনিক থেকে আরো আধুনিক হচ্ছে। আমাদের প্রজন্ম প্রযুক্তির যেসব সুযোগ পাচ্ছি আমাদের বাবা মায়েরা তা পান নি, নাম ও শুনেননি। আমরা যা এখনো পাই নি, নাম শুনি নি আমাদের সন্তানেরা তা পাবে। তাহলে তারা আর কি কি পেতে পারে সেগুলো কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি?

বর্তমান সময়ে সন্তান পালন একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। বিশেষ করে গ্রামের তুলনায় মফস্বল, মফস্বলের তুলনায় রাজধানী। লেভেল যত উপরে উঠবে( এলাকা হিসেবে এবং সামাজিক স্ট্যাটাস হিসেবে) চ্যালেঞ্জের মাত্রা তত বাড়বে।

আগে টিন এজারদের স্কুল ব্যাগে পাওয়া যেত গল্পের বই, নাটক সিনেমা রিলেটেড পেপার কাটিং ইত্যাদি । আর এখন পাওয়া যায় ইলেক্ট্রিক সিগারেট বা তার চেয়েও ভয়ঙ্কর কিছু।

এসবের কারণ, ২য় স্টেজে আমরা সঠিক শিক্ষা দেইনি, এবং ৩য় স্টেজে আমরা বন্ধু হইনি। ফলে তারা অন লাইন/ অফ লাইন জগতে বন্ধু খুঁজে নিয়েছে ও তাদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছে।

তবে আরেক টা কথা থেকে যায়, অনেকে পরিবার থেকেও কু শিক্ষা পায়। কেন? কারণ, শিশুরা চোখ দিয়ে শেখে। আমি আপনি যা করছি সে তা দেখেই শিখছে। এই দেখা ও শেখা সে বড় হয়ে করছে না, বরং যখন থেকে দেখে বুঝার চেষ্টা করছে তখন থেকেই শিখছে। ছোট পুঁচকে শিশুর ব্রেইন কম্পিউটারের রিফ্রেশড ব্ল্যাংক মেমোরির মত। যা ইনপুট দেবেন তাই সে গ্রহণ করবে। তাই তাকে যোগ্য গাইডলাইন দিতে আগে নিজেকে বদলাই।

এই লকডাউনের সময়ে কর্মজীবী বাবা মা যারা গৃহবন্দী তাদের সন্তানদের জন্যে এটা বিশাল পাওয়া। গৃহকর্মীর কাছে থেকে তারা যে পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এতদিন তা আমরা তাদের দেয়ার চেষ্টা করি । আমরা নেগেটিভিটির মধ্যে না থেকে তাদের জন্যে পজিটিভ হই, আমাদের জন্যে তাদেরকে পরীক্ষার বস্তু না বানিয়ে সাদাকায়ে জারিয়া বানাই।


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
আমার ডিভাইস ভাবনা

আমার ডিভাইস ভাবনা

২২ জানুয়ারী ২০২৪

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

২৮ ডিসেম্বার ২০২৩

আমার বাচ্চা খায় না!!????

আমার বাচ্চা খায় না!!????

২৪ ডিসেম্বার ২০২৩

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

১৩ ডিসেম্বার ২০২৩

লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন