বই পরিচিতি/বই রিভিউ

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ বৃষ্টি ও মেঘমালা

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ বৃষ্টি ও মেঘমালা

 “বৃষ্টি ও মেঘমালা” হুমায়ুন আহমেদের অসাধারণ উপন্যাসগুলোর একটি। মায়ানগরের গল্প, মায়ার গল্প, মোহের গল্প, কষ্টের গল্প, “জীবনের গল্প”...  উপন্যাসের শুরু হাসানের গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়া দিয়ে। অর্থাৎ স্বপ্ন পূরণের জন্য রওনা দেয়ার পর প্রথম বাঁধা এই গাড়ি নষ্ট হওয়া। হাসান তার পিএ লীনাকে নিয়ে যাচ্ছিলো ইয়াকুব সাহেবের থেকে নতুন  প্রজেক্ট পাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে...

 

ঝামেলাগুলো পেরিয়ে জয় করা প্রজেক্ট কি হাসান সফল ভাবে শেষ করতে পেরেছিলো? হাসানের প্রজেক্টটি তৈরীর সময় লক্ষ্য ছিল ইয়াকুব সাহেবের মন জয় করা। অন্যদিকে ইয়াকুব সাহেবের লক্ষ্য ছিল নাতনী এলেনের মন জয় করা। শেষ পর্যন্ত কি তারা সফল হতে পেরেছিল জানতে চাইলে বইটি পড়ে ফেলুন। ইয়াকুব সাহেব জীবনে প্রচুর সফলতার পেছনে যে ব্যর্থ মানুষকে লেখক দেখিয়েছেন ইয়াকুব সাহেবের চারপাশের মানুষরা কি এ সম্পর্কে জানে? হাসান সফল হয়েছিলো কিনা জানার জন্য সফলতা কি তা আমাদের জানা দরকার... সাময়িক সাফল্য বা চূড়ান্ত সাফল্যের আবরণকেই আমরা সাফল্য বলবো? সফলতা অর্জনের পেছনে ছুটতে যেয়ে জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে দিলে শেষ পর্যন্ত কি প্রশান্তি পাওয়া যায়? পরিবার, কর্মক্ষেত্র, পারিপার্শ্বিক সব কিছু মিলিয়ে একটা ব্যালেন্স রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে কি?

 

 যাই হোক-তাই হোক... তাত্ত্বিক কথা বাদ... উপন্যাসের শেষটা যেহেতু আপনারা পড়ে নিবেন। আমরা আবারো চলে যাই উপন্যাসের শুরুতে... ইয়াকুব সাহেবের সাথে দেখা হবার আগের ঘটনাগুলোতে আমরা দেখতে পাই হাসানের প্রতি লীনার মুগ্ধতা এবং মোহ। কিন্তু হাসানের জীবনে কি মোহ নামক শব্দটির কোন জায়গাই নেই? নাকি নির্লিপ্ত হয়ে অন্যদেরকে মোহাচ্ছন্ন করাটাই নিজের অজান্তে হাসানের মোহতে পরিণত হয়েছে। স্ত্রী, কন্যার প্রতি বাহিরের নির্লিপ্ততাই কি হাসানের ভেতরের সত্তাকে ফুটিয়ে তুলছে?

বাবাভক্ত ছেলে অন্তু যখন অসুস্থ হয়ে ভয়ানক যন্ত্রণায় ছটফট করছিলো তখন কাজপাগল হাসান কি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলো? অন্তুর এ হাহাকারের পেছনে কি শুধুই মায়া ছিল? আচ্ছা! লীনার বোন বীনা কি অচেনা এই ছোট্ট অন্তুর কথা ভেবে ভেবে ঘন্টার পর কাটিয়ে দিতে পারে? নাকি সারাদিন কঠিন কঠিন কথা বলা এবং অন্যের কঠিন কঠিন সমস্যার সমাধান করা নিয়ে ব্যস্ত থাকা বাস্তববাদী বীনাদের কখনও কিছুতে কষ্ট হয় না?

লীনারা ঠিক ঠিক সব মোহ কাটিয়ে সুখের সংসার করতে পারে ঠিক আছে। কিন্তু বীনারা কি সুখী হয়? আর... লীনাদেরকে বুঝতে পেরে অতি সাধারণ ফিরোজরা এভাবেই সব জটিলতা মুছে ফেলতে পারে?  উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত খুঁজে সবগুলো উত্তর হয়তোবা পাঠক পাবেন, হয়তোবা পাবেন না। মায়ানগরের বৃষ্টি ও মেঘমালার এ উপন্যাসটি পড়া খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলেও একরাশ মায়া বা নিঃসঙ্গতার ছোঁয়া রেখে যায়... এ উপন্যাসের একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শেষ করছিঃ

 

"সব পাখি জোড়ায় জোড়ায় ওড়ে। পক্ষীকুলে শুধুমাত্র চিলকেই নিঃসঙ্গ উড়তে দেখা যায়। নিঃসঙ্গতার আনন্দের সাথে এই পাখিটার হয়তো বা পরিচয় আছে।"

অদ্ভুত আমাদের জীবন! এই মায়ানগরে নিঃসঙ্গতাকে বাস্তবতা হিসেবে মেনে নিয়ে এর আনন্দগুলোকে খুঁজে নিলেই হয়তোবা শান্তিতে থাকা যায়! 


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)