অনির্ধারিত

কল্পলোকের গল্প নয়-৫

কল্পলোকের গল্প নয়-৫
সোনার হরিণ- পাঁচ [শেষ পর্ব]  আলাদা সংসার পেয়ে মালা মহাখুশি। সে নিজের মত করে সংসার গুছিয়ে নিচ্ছে। চার/ পাঁচ বছর চলে গেল। এবার তার নতুন কাজ হল শফিকের কানে নাজু সম্পর্কে বিভিন্ন কথা তুলে দেয়া। একবার দুইবারের পর শফিক নাজুর কাছে এটা ওটা কৈফিয়ত চায়। নাজু তার মতামত ব্যক্ত করে। আপাতত ঝামেলা মিটে যায়! কিন্তু আবার শুরু হয়............।  কয়েকবারের পর নাজু যখন বুঝতে পারলো এসবের পিছনে মালার হাত আছে, তখন সেও এসব নিয়ে তুমুল ঝামেলা করতে থাকল। শ্বশুরবাড়িতে নালিশ করেও কোন ফলাফল নেই। এদিকে শফিক দুই বউকেই হুমকি ধমকি দিল। শাসনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হল। কিন্তু কেউই কথা শুনতে বা মানতে নারাজ। শফিক এক পর্যায়ে নাজুকে চাকুরী ছেড়ে দেয়ার জন্য জোর নির্দেশ দিলো।  কিন্তু এই ব্যাপারে নাজু কোনভাবেই রাজি হলনা। তার সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবাই-ই তাকে এব্যাপারে শক্ত থাকার পরামর্শ দিল। এদিকে শফিক চূড়ান্ত নোটিশ দিলো চাকুরী না ছাড়লে সে নাজুকে তালাক দেবে।  তখন শুভাকাঙ্ক্ষীরা পরামর্শ দিলো আপাতত কিছুদিন হাসপাতাল থেকে ছুটি নিতে। নাজু হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে স্বামীর কাছে মিথ্যা বলল যে সে চাকুরী ছেড়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নাজু শফিককে সব খুলে বলল। শফিকও বেশি উচ্চবাচ্য করলো না। কারণ তার ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। এদিকে খরচও অনেক বেড়ে গেছে। আগে নাজুকে সামান্য খরচ দিলেই চলত, এখন তাকে সম্পূর্ণ সংসার খরচ দিতে হয়।  আবার মালার জন্য বাসা ভাড়া করায় ওখানেও বেশ ভালো পরিমাণ টাকা খরচ হয়ে যায়। আগে সবার সাথে থাকায় ওখানেও খরচ অনেক কম হত। বাসা ভাড়া লাগত না। এখন দুই সংসার চালাতে গিয়ে সে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। তার উপর ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। ফলে নাজু আবারও হাসপাতালে যাওয়া শুরু করলো।  এদিকে শফিকের ব্যবসা দিনদিন খারাপ হতে হতে এক পর্যায়ে সে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হল। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পারিবারিক সিদ্ধান্তে সে বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। প্রবাসে যাওয়ার জন্য যা খরচ হচ্ছে তা কয়েকদিক দিক থেকে ম্যানেজ করা হয়েছে। রেস্টুরেন্ট বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া গিয়েছিলো তার কিছু অংশ এখনও আছে, বাবা ও বড়ভাই কিছু দিয়েছে, নাজু ঋণ করে কিছু দিয়েছে, শফিক নিজেও ঋণ করে কিছু টাকার ব্যবস্থা করেছে। শফিক চলে গেল। পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্বাভাবিক। দুই বউকেই আলাদাভাবে খরচের টাকা পাঠায়। বাবামা ও ভাইবোনদেরও কিছুকিছু দেয়। দিন মাস কেটে যায়......। দুই বছর পর শফিক দেশে আসলো। ৩/৪ মাস থেকে আবার চলে গেল। আবারও দুইবছর পর দেশে আসলো। এভাবে সে প্রায় ৯/১০ বছর ঐ দেশে থাকলো। এরপর ওখানে কি জানি একটা ঝামেলা হওয়ায় দেশে চলে আসলো। কিছুদিন থেকে এবার অন্য একটি দেশে গেল।  এদিকে নাজু আর মালার ঝামেলা কিন্তু বন্ধ হয়নি! শফিকের অনুপস্থিতি এবং উপস্থিতি উভয় অবস্থাতেই দুজনের মনোমালিন্য লেগেই আছে। সামান্য বিষয়েই দুজনের ঝগড়া হয়! আবার মিটমাট করে। দুজনে দুজনের বাসায় যায়। কিছুদিন পরে আবারও ঝামেলা.....................।  একদিন কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মালা নাজুকে হুমকি দিলো- তুমি দেখে নিও আমি একদিন শফিককে দিয়ে তোমাকে তালাক দেওয়াবই......। ওর এই হুমকি যে একদিন তারই দিকে ফিরে আসবে তখন তা কেউই বুঝতে পারেনি!!!  শফিকের ভয়েই হোক বা অন্য যে কোন কারনেই হোক একটি বিষয়ে সবসময় দুজনের মিল ছিল তা হল উভয়েই অন্যজনের ছেলেকে বেশ আদর যত্ন করত। অবশ্য এ ব্যাপারে নাজুই অগ্রগামী ছিল।  শফিক এবার যে দেশে গিয়েছে এখানে তিন চার বছর কেটে গেছে। সে এখানে ছেলেদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। দুই ভাই-ই ইতিমধ্যে এইচ.এস.সি পাশ করেছে। সে তার দুই ছেলেকেই ওখানে নিয়ে গেল। তাদেরকে সেখানে রেখে বছর খানেক পর শফিক একেবারেই দেশে চলে আসলো।  মালার যখন বিয়ে হয় ওর সবচেয়ে ছোট বোন মিতুর বয়স তখন সাত বা আট বছর ছিল। বর্তমানে তার বয়স প্রায় তিরিশ এর কাছাকাছি। এখনও বিয়ে হয়নি। শফিককে একটা প্রয়োজনে মালার বাবার বাড়ী গিয়ে কয়েকদিন থাকতে হয়। এই শ্যালিকাই তখন তার দেখাশোনা করে। কাজ শেষে শফিক ঢাকা চলে আসে। তার কিছুদিন পরে আবারও তাকে ওখানে যেতে হয়। এইভাবে ঘনঘন কয়েকবার সে শ্বশুরবাড়ি যায়।  শফিক তার পারিবারিক ঝামেলাগুলি সব সময়ই মিতুর সাথে শেয়ার করে। মিতুও সহানুভূতি সহকারে সব কথা শোনে। এভাবে ধীরে ধীরে দুজন দুজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এক সময় তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলো। কিন্তু সামাজিক ও ধর্মীয় বাধা কিভাবে অতিক্রম করবে? শফিক মালাকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো এবং তা কার্যকর করলো। আর বোকা , স্বার্থপর মেয়েটিও তার বোন বা ভাগ্নের কথা চিন্তা না করে একসময়ের দুলাভাইকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে নিলো। ফলে বাবামা ভাই বোন সবাই তাকে ত্যাগ করেছে।  নাজু এখনও আইনত শফিকের স্ত্রী। কিন্তু কেন জানি তার এখন আর রুচি হয়না শফিকের সাথে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে। ফলে শফিক আর এ বাসায় আসেনা। সে মিতুকে নিয়ে ঢাকার পাশেই ছোট্ট একটি শহরে থাকে। এই ঘরে তার একটি ছেলে আছে।  মালার দেখাশোনা করে তার ছেলে। ওরা দুইভাই এখন প্রতিষ্ঠিত। তারা দুজনেই নিজ নিজ মায়ের প্রতি বেশ দায়িত্বশীল। ওরা ওদের বাবার সাথে কোন যোগাযোগই রাখেনি।  সুখ নামের সোনার হরিণ নাজু বা মালা কারও হাতেই আসেনি! শফিকও কি তা পেয়েছে? অথবা মিতু? 

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)