বিবিধ

“জার্নি টু রোহিংগা ক্যাম্প”

“জার্নি টু রোহিংগা ক্যাম্প”

পর্ব:১

প্রায় অনেক দিন ধরেই পেপার পত্রিকায় পড়ে আসছিলাম, লাখো লাখো মানুষ মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে পায়ে হেটে নাফ নদী পাড় করে বাংলাদেশের দিকে আসছে, পিছে ফেলে তাদের আপনজন, বাড়িঘর সব কিছু। অসহায় সেই বাস্তুহারা জনগোষ্ঠির নাম শুনলাম রোহিংগা। তারপর থেকেই এই ইস্যু নিয়ে ফেইসবুকের বিভিন্ন পোস্ট ফলো করা শুরু করলাম। মনের ভেতর কি জানি একটা বাঁধছিল। বিভিন্ন প্রশ্ন কড়া নাড়ছিল। কেউ যেন ভিতর থেকে খটখটিয়ে বলছিল “আগায় যাও”! 

পরিচয় হলো হাসান আল বান্না ভাইয়ের সাথে। এক মানবদরদী মানুষ- যে কিনা বারবার তার লাইভ ভিডিও পোস্ট করার মাধ্যমে আমাদের মন কেড়ে নিয়েছিল।একটু পর পর লাইভে এসে সেখান কার কার্যক্রম সম্পর্কে বর্ণনা করে যাচ্ছিল। আবার মাঝে মধ্যে অঝরে চোখের পানি ঝরাতেও দ্বিধাবোধ করেনি ক্যাম্প এর করূন অবস্থা দেখে। সেই উত্তরা থেকে কক্সবাজার, কক্সবাজার থেকে উত্তরায় বারবার যাওয়ার মাধ্যমে সে যেনো নিজের নাম লিখে ফেলেছিল ওই আদম সন্তানগুলোর মাঝে তত দিনে। মানুষটার এত ধৈর্য আমাকে বারবারই মুগ্ধ করছিল। সুরেলা কন্ঠ, হাসি, পজিটিভ চিন্তা শক্তি সব কিছুই যেনো আর বেশি মোটিভেট করেছিল আমাকে। তারপর থেকেই ফলো করা শুরু করলাম তাকে এবং আবিষ্কার করলাম একজন সাদা মনের মানুষ কে। নাম দিলাম ইন্সপাইরেশন।যদিও তারিখটা ভুলে গেছি, কিন্তু সেই মুহূর্তে আমি খুব ডিটারমাইন্ড যে আমাকেও কিছু করতে হবে কারন তারা আমাদের অভিশাপ না বরং হতে পারে আশির্বাদ এবং ভাইয়াকে ক্নক দিয়ে জানতে চাইলাম, কীভাবে আমি সাহায্য করতে পারি রোহিংগা ইস্যুতে। তিনি সাথে সাথেই আপন ভাই নামে একজনের ফোন নাম্বার দিয়ে দিলো আমাকে যোগাযোগ করার কথা বলল। আপন ভাই মূলত নাগরিক সেবা পরিষদ নামে একটি সংস্থার সাথে আছেন। দীর্ঘদিন ধরে অসহায় মানুষদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। হাজার ব্যস্ততার মাঝেও মানুষটা আমাকে সব সময় তাদের প্রতিটি প্লান প্রোগ্রামের বিষয়ে জানান দিতেন। ভাইয়া আমাকে বললেন, আপু আপনি সম্ভব হলে শিশু খাদ্য (দুধ), পুরান কাপড়, চাল/ডাল এসব কিছু সংগ্রহ করতে পারেন। মনে মনে ছোট্ট একটা প্লান করে ফেললাম এবং তারপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর সাহায্যে পরিচিত অপরিচিত সবার কাছে সাহায্য চাওয়া শুরু করলাম। এরপর কয়েক দিনের মধ্যেই আমি এত সাড়া পেয়েছি সবার কাছ থেকেই যে বলে বুঝাতে পারবোনা। মানুষ গুলো যেনো নির্দিধায় চোখ বন্ধ করে পরম বিশ্বাসের সাথেই তাদের দুয়া আর ভালবাসাগুলো আমার বাসার ঠিকানায় পাঠানো শুরু করলো। কখনো কখনো আবার এত সব প্যাকেট এর ভেতর আমার জন্য ও তারা খুব সুন্দর কিছু উপহার পাঠিয়ে দেয় এই ট্যাগ লাগিয়ে “তুমি আরেকজনের পাশে আছো আর আমরা তোমার পাশে আছি।” মাঝে মধ্যে চোখে পানি চলে আসতো লিখাগুলো পড়ে। এদিকে দিনের পর দিন কাপড় এর স্তুপ এ পরিনত হতে থাকলো আমার বেডরুমটা। হাহ হাহ! কখনো দুধের কার্টুন, কখনে বস্তা ভর্তি কাপড় আবার কখন ক্যাশ টাকা দেওয়ার মাধম্যে সবাই সাহায্য করার চেষ্টা করলো তাদের সাধ্যমত। কে বলে আমার দেশের মানুষ ভালো না?? আমি পাঠিয়ে দেওয়া শুরু করলাম ত্রানগুলো। বিশ্বস্ত সেই আপন ভাইয়ের কাছে।

 

এভাবেই পৌছাতে থাকলো আপনাদের ভালবাসাগুলো অসহায় মানুষ গুলোর হাতে। তারপর আবার একদিন জিজ্ঞেস করলাম তাকে- ভাই, সামনে আর কি লাগতে পারে? সেদিন আপন ভাই খুব ভরাক্রান্ত কন্ঠে আমাকে জানায়, আপুরে বেশির ভাগ বোনই রেইপড, পায়ে হেটে এই অবস্থায় এই লম্বা রাস্তা পাড় করার সময় অনেকের ই আবার এর ভেতর আবোরশন হয়ে গেছে, প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে সম্ভব হলে স্যানিটারি ন্যাপকিন এর ব্যবস্থা কইরেন। এক সেকেন্ডও অপেক্ষা না করে সাথে সাথে ক্নক করলাম শ্রেয়া গ্রুপের আডমিন স্বর্ণা আপুকে। জানানলাম অবস্থা সম্পর্কে এবং এই বিষয়ে তার সাহায্য চাইলাম।আপু সাথে সাথে উইংস ন্যাপকিন এর মেইন ওউনার এর সাথে কথা বলিয়ে দিলেন এবং আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমার এক কথাতেই আপু ২৫০ প্যাকেট ন্যাপকিন পাঠিয়ে দিল আমার বাসায়। আমি যে কি পরিমান খুশি ছিলাম সেই দিন বলে বুঝাতে পারবেনা। চোখের সামনে শুধু মেয়েগুলোর ছবি ভাসছিল আমার। পাঠিয়ে দিলাম নাগরিক সেবা পরিষদ এর অফিসে রোহিংগা ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে। কিন্তু নাহ মন আমার এত টুকুতেই শান্তি পেলোনা, আমার মা’র ভাষায় এবার মন ছুটেছে সুরের স্বর, কোথায় বাড়ি কোথায় ঘর! মিড টার্ম, কুইজ, আসাইনমেইন্ট সব একদিকে রেখে যাত্রা শুরু হল উখিয়ার থাইংখালি ক্যাম্প এ…

(২য় পর্বে আসছে- “জার্নি টু থাইংখালি ক্যাম্প”)


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ