বিবিধ

এই লজ্জার অনুভূতি ক'দিনের জন্য?!

এই লজ্জার অনুভূতি ক'দিনের জন্য?!
গতকাল ছিলো ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিসিবি কর্তৃক আয়োজিত ওয়ার্ল্ড টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। জমকালো এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই শুরু হলো,আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ এই আসর। নিঃসন্দেহে একজন বাংলাদেশি হিসেবে আয়োজক দেশ হতে পেরে গর্ববোধ করছি!কিন্তু আমার সেই গর্বটাই এখন লজ্জায় পরিণত হয়েছে!! গতকাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যারা যারা দেখেছেন তারা সবাই দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলেন,এটা কি আসলে বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠান ছিলো?নাকি ভারত?! আমাদের দেশটা আয়তনে ছোট হতে পারে,উন্নত দেশের তুলনায় গরীব হতে পারে,কিন্তু আমাদের মেধা-গুণ,যোগ্যতা এসবের দিক থেকে আমরা কোন ভাবেই শূণ্য নই। আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দিকে যদি আমরা তাকাই,তাহলে দেখবো আমরা যথেষ্ট স্বয়ং সম্পূর্ণ,শুধু মাত্র পৃষ্ঠপোষকতা আর প্রচারের অভাবেই আমরা পিছিয়ে আছি হয়তো। বিসিবি যদি গতকাল তাদের আয়োজনে 'বিদেশি' শিল্পীদের বদলে আমি তাদেরকে বিদেশি বলতে চাই না,বরং পার্শ্ববর্তী দেশ যারা একটা স্বাধীন রাস্ট্রকে অবৈধ ভাবে নিজেদের অঙ্গরাজ্য বলে প্রচার করে,সেই দেশের শিল্পীদেরকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এনে,তাদের সংস্কৃতি প্রচারের সুযোগ না দিয়ে যদি দেশের শিল্পীদেরকে সারা বিশ্বের সামনে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ দিতো তাহলে কোন অংশে এই অনুষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মানদন্ডে পিছিয়ে পড়তো না। বরং এটাই প্রমাণ হতো,বাংলাদেশ যেমন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের জন্য যোগ্য,তেমনি একটি আন্তর্জাতিক মানের অনুষ্ঠান আয়োজনেরও যোগ্য। সারা বিশ্ব দেখতে পারতো,এই দেশে যেমন সেরা অলরাউন্ডাররা আছে,তেমনি সেরা পারফর্মেন্সারও আছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা এই দেশ,আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলাধূলা-সংস্কৃতির দিকে থেকে কোন অংশেই পিছিয়ে নেই। আমরা আয়তনের দিক থেকে ক্ষুদ্র দেশ হতে পারি,কিন্তু মেধার দিক থেকে নই। অথচ দুঃখের ব্যাপার হলেও সত্য,গতকাল এই অনুষ্ঠানে আমাদের দেশিয় শিল্পীদেরকে যেভাবে অপমান করা হয়েছে,প্রকাশ্যে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে তা যে কতটা দুঃখজনক,আমাদের জন্য কতটা লজ্জার তা বুঝার সামর্থ্য আমাদেরই নেই! আমরা এ আর রেহমান,একনদের জন্য নেচেছি,দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে বড় স্ক্রীন লাগিয়ে 'ধিংকাচিকা'গানের তালে নেচেছি কিন্তু ওদিকে আমার দেশের রত্ন,আমাদের গর্বের প্রতীক,দেশিয় শিল্পীদেরকে প্রচন্ডে গরমে নন-এসি রুমে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রেখেছে,এবং স্টেজেই উঠতে দেয়নি,কাউকে কাউকে দিলেও ২০মি এর বেশি পারফর্ম করতে দেয়নি,সে নিয়ে আমাদের কোন কথাই ছিলো না!আমরা বলতেই পারিনি,এ্গুলো কি কোন বিবেচিত কাজ ছিলো? এই কি আমাদের দেশপ্রেম?এ কেমন দেশপ্রেম,যেখানে আমরা আমাদের দেশকেই অপমান করি,অবমূল্যায়ন করি!কুন্ঠিত বোধ করি সারা দুনিয়ার সামনে নিজেকে বাংলাদেশি বলে পরিচিত করতে!! বিসিবির কর্মকর্তাদের বেতন কি আইসিসি/ভারত দেয়?নাকি তা তারা  এই দেশের সাধারণ জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে পায়? তাদেরকে কতটা ফ্যাসিলিটিস দেয় আইসিসি?যার থেকে অনেক গুণ বেশি দেয় এই দেশ! আনুগত্য করা ভালো,কিন্তু অন্ধ আনুগত্য না,সম্মান দেয়া উচিত,কিন্তু নিজেকে অসম্মানিত করে,অন্যকে আকাশ ছোঁয়া সম্মান দেয়ার মাঝে কোন ব্যক্তিত্ত্বের পরিচয় থাকে না। আজ আইয়ুব বাচ্চু,মাইলসের মতো দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতীক দল গুলোকে অপমান করে,উদিত/এ আর রেহমানদেরকে এনে তাদের গানের তালে মানুষকে নাচিয়ে,বিসিবি আরেকবার প্রমাণ করলো,তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতকে মোড়ল মানতে চায়,এই দেশের ক্রিকেটকে তারা মাধ্যম বানাতে চায়,অন্য সংস্কৃতি তুলে ধরার জন্য! পোষ্টার থেকে শুরু করে,অনুষ্ঠান সূচি সব কিছু থেকে দেশি সংস্কৃতিকে বাদ দেয়ার মাধ্যমে বিসিবি প্রমাণ করলো,তারা বাংলাদেশের পরিচয়ে বিশ্বে পরিচিত হতে লজ্জা পায় আর তাই,ভারতের সাহায্য সবচেয়ে চায়! আর কিছুই না! কিন্তু এই লজ্জা,এই অপমানের অনুভূতি আমাদের প্রজন্ম ক'দিন লালন করবে?তারা কি আদৌ পারবে,বিসিবি কাল যেভাবে আমাদেরকে ছোট করেছে তার বদলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে?পারবে কি তারা,ঐসব 'ধিংকাচিকা/তেরে বিনা/জ্যায় হো'কে ছুঁড়ে ফেলে 'সোনার বাংলা'কে তুলে ধরতে?  

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ