বিবিধ

নারী ! তুমি আরও সচেতন হও

নারী ! তুমি আরও সচেতন হও

 পৃথিবীর সকল মানব-মানবী নারীর কাছে ঋণী । কেননা নারী সত্ত্বার আছে কেবল মাতৃত্বের ক্ষমতা । এই নারীই অসীম যন্ত্রনা সহ্য করে তার মাতৃত্বকে পূর্ণ করে সন্তানের জন্ম দেয় । কাজেই সকল সভ্যতা কিংবা আজকের এই সুন্দর ধরণী সজ্জিত করণে নারীর ভূমিকা অসীম । একজন মা তার সন্তানকে প্রসব করতে গিয়ে কতটুকু যন্ত্রনা ভোগ করেন তা অনুভব করার ক্ষমতা কোন পুরুষের নাই । কোন মানুষ মায়ের অবদান-ত্যাগ ছাড়া পৃথীবির আলোতে আসতে পারেনি কিংবা পারবেও না কোনদিন । সময়ের আবর্তনে প্রত্যেক নারীই আবার মা । মানুষের মধ্যে নারী জাতিই সবচেয়ে বেশি সম্মানিত । সকল ধর্মে মাকে সম্মানের আসনে আসীন করেছে । শুধু মা হিসেবে নয় বরং নারীকূল, তারা সব অবস্থানেই সম্মানের আসনে । ইসলামে যেমন মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত বলে ঘোষণা করা হয়েছে তেমনি সন্তানের পক্ষ থেকে উত্তম আচরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে মায়ের স্থান নির্ধারিত হয়েছে । মায়ের তুলনা কেবল মা-ই । একজন নারী কি শুধু মা হিসেবেই সম্মানিত ? মোটেই না । সমাজ-ধর্ম স্বীকৃত সব অবস্থানেই নারী সম্মানিত । বোন, স্ত্রী কিংবা সন্তান-কোন আসনেই নারী মোটেও কম সম্মানের নয় । অথচ সু-সভ্যতার এই আলোতেও কিছু অসভ্য মানুষের কুসংস্কারপূর্ণ মানসিকতা কিংবা পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে নারীকে পিছিয়ে রাখা হয়েছে । যেসব পুরুষ নারীকে পিছিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে তারাও হয়ত স্ব-পরিবেশে তাদের মা, বোন, স্ত্রী কন্যাকে সম্মান করে কিন্তু সামগ্রিকভাবে নারীর ওপরে পুরুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দিতে চায় । এটা তাদের একান্তই ভুল ধারণা । সার্বিকভাবে পুরুষ যেমন নারীর প্রতিদ্বন্দ্বি নয় তেমনি সম্মানের ক্ষেত্রে কোনভাবেই পুরুষের চেয়ে নারীর সম্মান কম নয় বরং বহু ক্ষেত্রে বেশিই বটে । তবুও অবাক হয়ে যাই যখন শুনি-দেখি নারীরা সমান অধিকার পাওয়ার আন্দোলন করছে । আমাদের বুঝতে হবে, জন্মগতভাবেই নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি সম্মান-অধিকার পেয়ে জন্মেছে । কিন্তু সমাজের কতিপয় সঞ্চালক নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার দিচ্ছে না । নারী কেন সমান অধিকার পাওয়ার আন্দোলন করবে ? নারীতো আন্দোলন করবে পূর্ণ মানবাধিকার নিশ্চিত করার; জন্মগতভাবে যে সম্মান তার প্রাপ্য ছিল অথচ পায়নি তা উদ্ধারের ।    

 

 

 

 

 

পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব সমাজকে যে উন্নতির দিকে টানছে না বরং পশ্চাৎপদে ঠেলে দিচ্ছে এটা কতিপয় পুরুষ অনুধাবন করতে না পারার কারনেই সমাজে আজ এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা । শুধু ধর্মান্ধ জনগোষ্ঠীই নারীকে পিছিয়ে রাখেনি বরং যারা আজ যারা সভ্যতার আলোয় আলোকিত বলে দাবী করছে তারাই সবেচেয়ে বেশি বৈষম্য করছে নারী-পুরুষের মধ্যে । পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব আজও তাদের সত্ত্বা থেকে বিলীন হয়নি । তারা নারী-পুরুষকে নির্দেশের ক্ষেত্রে তাদের মাতৃভাষায় যে শব্দ দুইটি উদ্ভাবন করেছে তাই প্রমাণ করে নারী-পুরুষদের নিয়ে তাদের মনোভাব । নারী-পুরুষকে নির্দেশ করার জন্য তারা যে শব্দ দু’টি ব্যবহার করে সে দু’টির অর্থ হচ্ছে যথাক্রমে ‘ফুটো কলসি’ এবং ‘সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ/প্রভূ’ । নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপনের ধারণাও পৃথিবীবাসিকে তারাই প্রথম দিয়েছে । পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের কারনে যে নারীরা পিছিয়ে পরেছিল তাদের অসহায় অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে তারা নারীকে ভোগ্য পণ্যের সাথে সাথে ব্যবসায়িক পণ্যও বানিয়েছে । আর তাদের প্রতিটি কর্মকান্ডের অন্ধ অনুসরণ করতে গিয়ে আজ আমাদের মা-বোনও ভোগ্য ও ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে উপস্থাপিত হতে উৎসাহী হচ্ছে । নারীদের উৎসাহকে পুঁজি করে একদল স্বার্থালোভী পুরুষ আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছে অথচ এটা নারীরা বুঝেও যেন বুঝতেছে না এবং এ কারনে দিন দিন নারীরা তাদের সম্মানের স্থান থেকে বিচ্যুত হচ্ছে । অতীতে নারীকে সমাজের সকল কাজে অংশগ্রহন থেকে পিছিয়ে রাখাটা অবশ্যই অন্যায় ছিল কিন্তু সে অন্যায়ের প্রতিশোধে যখন আর কয়েকটি অন্যায়-অবৈধ কাজ করা হয় তখন সেটাও বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না । সুতরাং নারীকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে; তারা কি মা-বোন, স্ত্রী-কন্যার ভূমিকায় সম্মানের স্থানে থাকবেন নাকি ভোগ্য ও ব্যবসায়ী পণ্য হিসেবে অন্যান্য সাধারণ পণ্যের কাতারবদ্ধ হবেন ? তাদের উত্তর যদি প্রশ্নের দ্বিতীয়াংশ হয় তবে বলার তেমন কিছু নাই; তবে শুধু এটুকু বলতেই হবে যে, আপনার শুধু ভুল করছে না বরং মাতৃত্বের গুনাবলী থেকে বিচ্যুত হয়ে একটি সমাজকে ধ্বংস করার উপলক্ষ্য হচ্ছেন । আর যদি তাদের উত্তর প্রশ্নের প্রথমাংশ হয় তবে আপনাদের প্রতি শ্রদ্ধায় আবারও জগতের সকল মানুষের চিত্ত বিনীত হবে । সেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন দিন আজ আর নাই । নারীকে তার স্বমহিমায় সম্মান নিয়ে সমাজে আজ প্রতিষ্ঠিত হবে । নারী তার মেধার যোগ্যতায় আজ সকল কাজে অংশগ্রহনের সমান সুযোগই শুধু পাচ্ছেনা বরং রাষ্ট্রের বহু ক্ষেত্রে তাদের জন্য স্বতন্ত্র আসন সংরক্ষিত রয়েছে । কাজেই ক্ষণিকের চাকচিক্যময় পেশা ছেড়ে সম্মানের পেশায় নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে নারীর চেয়ে মর্যদার আর কে থাকবে ? একজন মা হিসেবে সন্তানদের লালন-পালন করে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তোলা, স্বামীর বিশ্বস্থ সহচরীর ভূমিকা পালন করা সর্বোপরি তার কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার দাবীদার একমাত্র নারীই । কাজেই নারীদের এমন কোন পেশা কিংবা কর্মে জড়ানো উচিত নয় যা সমগ্র নারীসত্ত্বার সম্মান ক্ষুন্ন করে ।    

 

 

 

বহু সংখ্যক পুরুষ সানি লিউন, নায়লা নাঈমসহ এই জাতীয় নারীদের নাচ দেখতে পছন্দ করে, তাদের মধ্যদেশ ও পশ্চাৎদেশের দুলুনি দেখে ভালো লাগে, তাদের সাথে কিছু সময় কাটানোর ইচ্ছাও হয়ত পোষন করে কিন্তু সেই পুরুষদের জিজ্ঞাসা করুণ-তারা নিশ্চয়ই এই শ্রেণীর নারীদেরকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করবে না । যা পণ্য হিসেবে উপস্থাপিত হয় তা কেবল পণ্য হিসেবেই বিবেচিত হয় । কাজেই নারীকে আরও সচেতন হতে হবে । আমি একথা বলছি না যে, সমাজের পরিবর্তনের দায় শুধু নারীর । নারীর চেয়ে পুরুষের দায় কোন অংশে কম নয় । পুরুষের দায় বেশি একথা না বললেও অন্তত সমপর্যায়ের মনে করি । তবে পুরুষের চরিত্র সংশোধনের কিংবা ধ্বংসের ক্ষমতা অবশ্যই নারীর রয়েছে এবং সেটা অনেক বেশি । একজন মা-বোন, স্ত্রী-কন্যা হিসেবে নারী তার আপন আঙ্গিকে পুরুষকে পরিচালিত করার ক্ষমতা রাখে । একটি সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর জন্য মা-ই যেমন সে শিশুটির প্রথম শিক্ষকের ভূমিকা পালন তেমনি নারীরা পুরুষ জাতির সংশোধনকারীর ভূমিকায় রয়েছে । সে ভূমিকা ছেড়ে তারা যদি অন্যপথ বেছে নেয় তবে সেটা গোটা সমাজকে বিশৃঙ্খল করে তুলবে । জন্মগতভাবে নারীর প্রাপ্য অধিকার নারীকে বুঝিয়ে দিতে পুরুষ সম্পূর্ণ সফল হয়নি ঠিক তাই বলে যদি নারীও তার দায়িত্বে অবহেলা দেখায় তবে বিশৃঙ্খলার শেষ থাকবে না ।

 

 

 

আজ অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি, আমার সোনার বাংলাদেশের নারীর অবস্থা । তবে স্পষ্ট করা দরকার, এখানে নারীর যতটুকু ভুল তারচেয়েও পুরুষের পুরুষান্ত্রিক মনোভাবের স্বার্থ বেশি জড়িত । নারীকে ব্যবহার করে পুরুষ ধনবান হচ্ছে অথচ নারী আজও পুরুষের সিদ্ধান্তের বলি হচ্ছে । বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারীর সুরক্ষিত অঙ্গকে এমনভাবে প্রদর্শিত করা হচ্ছে যা দেখে বোঝাই যাচ্ছে না, মূলত কোন পণ্যের বিজ্ঞাপন হচ্ছে । নারীর অধিকার নিয়ে যারা সংগ্রাম করছে তাদের এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক । নারীর অধিকার বলতে যদি স্বার্থালোভী পুরুষের উদ্দেশ্য হাসিল হওয়ার জন্য নারীর ব্যবহার হওয়া বোঝায় তবে এই যুগ সেই যুগের থেকে মোটেও পার্থক্য হয়নি, যখন নারীরা শুধু পণ্য হিসেবে, যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহৃত হত । খাবার পণ্যের কোন বিজ্ঞাপনে যখন নারী সত্ত্বার আকর্ষণীয় অঙ্গ প্রদর্শন করা হয় তখন সেটা নারীকে সম্মানীত করে না বরং আরও বেশি সহজলভ্য পণ্য হিসেবে উপস্থাপিত করে । কাজেই নারীর সচেতনতা আজ খুব দরকার । সেটা যতটা দরকার পুরুষ ও সমাজের স্বার্থে তার চেয়ে অধিক বেশি দরকার নারী জাতির নিজস্ব স্বার্থে । সম্মানের আসন থেকে নারী যদি একবার বিচ্যুত হয়ে যায় তবে সকল ভোগ্য পণ্যের চেয়েও নারী অধিকতর অবহেলিত হয়ে যাবে । নারী স্বার্থ রক্ষায় যেমন নারীকেই অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে হবে তেমনি তাদের সম্মানও যাতে অক্ষুন্ন থাকে তার জন্য নারীকে যথেষ্ট সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে । সবশেষে বলব, আমাদের নারীর দিকে আঙুল তুলে কেউ যেন বলতে না পারে-

 

 

 

দস্তার চেয়েও সস্তা সে যে, বস্তার চেয়েও ভারী

 

মানুষ হয়েও সঙের পুতুল, বঙ্গ দেশের নারী ।

 

 

 

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।

 

[email protected]

 

 

 


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ